নেটালাপ - পোস্ট শোকেস

চার্লি কার্ক কতটা ‘বিকল্প’ ছিলেন?

Reading time 5 minute
5
(30)
@thirdlanespace.com

. . .

. . .
একটা আমেরিকান লোককে আমার বেশ ভালো লাগে, সে কথা বলে নীতি নিয়ে, কথা বলে দুর্নীতি নিয়ে, অসঙ্গতি নিয়ে, ওভাররেটেড ফেমিনিজম নিয়ে, অতি ওভাররেটেড জেন্ডার আইডেন্টিটি নিয়ে, কথা বলে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। লিখেছেন বইও।

লোকটা মারা গেলো। আসলে মারা যায়নি, মরে গেছে গুলি খেয়ে। ঘাড়ে গুলি খাওয়ায় ঠিক ইমিডিয়েট আগ মুহূর্তে সে আমেরিকার বন্দুক ও গুলি ব্যবস্থা এবং ওপেন/ পাবলিক প্লেইস গান শুটিং নিয়েই কথা বলছিল, একটা ছাত্রের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে, ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে।

Charlie Kirk: In conversation on the gun shooting at Utah University just before his assassination; Image Source – Collected; Google Image

চার্লি কার্ক (Charlie Kirk), বেশ অনেক কমবয়সী একটা মানুষ, তবে দীক্ষার দিক থেকে চরম শিক্ষার মানুষদের থেকেও অনেক বেশি জ্ঞানে সে গুণী … ছিল। আল্লামা জর্ডান পিটারসন, ওলামা বেন শাপিরো, ইমাম ম্যাট ওয়ালশকে যেমন বা যতটা ভালো লাগে, এই মুরিদকেও আমার অনেক ভালো লাগত।

জানি না আপনারা তাকে কে কতটুকু চেনেন। তাই @Minhaj ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলি, যদি তার সম্পর্কে কিছু বলতেন বা লিখতেন…
. . .

পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনে চার্লি কার্ক অতিরঞ্জিত ও বিষাক্ত হয়ে ওঠা কিছু মিথ ভেঙেছেন;—এই ব্যাপারে সন্দেহ নেই তাহসিন ভাই। প্রচণ্ড জনপ্রিয় ছিলেন। তরুণ প্রজন্মের কাছে তো বটেই, প্রবীণ প্রজন্মেও তাঁর ব্যাপারে আগ্রহ ও সমর্থন দুর্বার হতে দেখেছি। ট্রাম্পকে মসনদে বসাতে Turning Point USA-এর ব্যানারে চার্লির তৎপরতা কারো অজানা নয়। এতো অল্প বয়সে খ্যাতির অকল্পনীয় চূড়ায় ওঠার কারণে তার পতন-সম্ভাবনা দ্রুততর হচ্ছিল। গলায় গুলি খেয়ে চেয়ার থেকে ধাম করে পড়ে গেলেন চার্লি কার্ক;—দৃশ্যটি মর্মান্তিক হলেও এটি কিন্তু অনিবার্য ছিল। কেন, তা আমার যৎসামান্য পর্যবেক্ষণে তুলে ধরার চেষ্টা করব :

Charlie Kirk during election campaign; Source – Charlie Kirk YTC

সায়েব-মেমদের দেশে নারীমুক্তিকে কেন্দ্র করে যেসব বয়ান এখন গড়ে উঠেছে, সেগুলো পুরুষ ও নারীকে একে অন্যের প্রতিপক্ষ করে তুলেছে। উগ্র পুরুষবাদের মোকাবিলায় উগ্র নারীবাদ;— ভেবে দেখলে যা প্রাকৃতিক বিধির লঙ্ঘন। এখানে এসে নারী তার প্রাকৃতিক সত্তা ও স্বকীয়তার অনেকখানি খুইয়ে বসেন। নারীবাদ সেদিকে গমন করায় ম্যারি ওলস্টোনক্রাফট থেকে সিমন দ্য বেভোয়ার অবধি নারীমুক্তির লড়াইয়ে প্রশ্ন ও পুনবির্বেচনার যে-পরিসরটি তাঁরা ধারণ করতেন,—সেটি পরে বজায় থাকেনি। নারী হয়ে উঠতে চাইছে পুরুষের অনুলিপি, যেখানে তার নারীসত্তা স্বয়ং নিখোঁজ।

গর্ভপাত ও পরিবার পরিকল্পনাকে ইস্যু করে চার্লি কার্ক এই জায়গায় আঘাত হেনেছিলেন। আঘাতটি যৌক্তিক, কিন্তু চার্লি যে-উদ্দেশ্য থেকে এটি করছিলেন,—আমার কাছে তা সৎ মনে হয়নি। এর পেছনে শ্বেত আধিপত্যে আমেরিকাকে ফেরত নেওয়ার মতলব আপনি তলিয়ে দেখলে পাবেন। অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের সংযোগও রয়েছে সেখানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিকভাবে আমরা দেখে এসেছি,—ডেমোক্র্যাটরা সরকারে থাকলে গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইনটি তুলে দেয়। অভিবাসী আইন শিথিল করে আনে তারা। রিপাবলিকরা সেখানে উলটো পথে হাঁটে। ক্ষমতায় এলে গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইন বহাল করে। অভিবাসী আইনেও কড়াকড়ি আরোপ করে তারা। চার্লি কার্ক যেহেতু ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন-এর দলে নাম লিখিয়েছিলেন, নারীবাদের সমস্যাগুলো অ্যাড্রেস করলেও, সেখানে তাঁর সমাধান সাধু ছিল না।

সমাধান বলতে চার্লি বুঝেছেন পলিটিক্যাল কারেক্টনেস। অর্থাৎ, আমেরিকানদের উচিত খ্রিস্টান ঐতিহ্য মেনে পারিবারিক মূল্যবোধে ফেরত যাওয়া। তিনি কোনো ধর্মপ্রচারক ছিলেন না। কিন্তু পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের প্রশ্নে বিবলিক্যাল টেক্সটকে হাতিয়ার করেছিলেন। জেন-জিরা দেখা যাচ্ছে, বিকল্প ভাবাদর্শের খরা থাকায় সকল দেশেই ধর্মীয় ভাবাদর্শকে সহজে গিল নিচ্ছে! চার্লিও তাঁর চমৎকার যুক্তি ও পালটা যুক্তির খেলায় জিততে এটি ব্যবহার করেছেন। যে-কারণে বলেছেন,—অবাধ মেলামেশার ফলে গর্ভে সন্তান এলে তাকে হত্যা করা মেয়েদের উচিত নয়। সোজা কথায়, শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ানোর ট্রাম্প-মিশনকে ডিফেন্ড করতে এসব বলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ওপর এর প্রভাব ক্রমশ গভীর হচ্ছিল।

Stop In the name of God বইটি সম্ভবত চার্লি বাজারে ছাড়তে যাচ্ছিলেন। বইটির ব্যাপারে আগাম অনেক কিছু বলেছেনও। যান্ত্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বাতলেছেন সেখানে। পরিবার, অবসর, বিশ্রামবারে গুরুত্ব… কোরিয়ান ভাবুক বুয়িং চুল-হানের মতো তিনিও সভ্যতার সঙ্কটকে আধ্যাত্মিক শূন্যতার জায়গা থেকে পড়েছেন। কিন্তু এর পেছনে ওই পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের ভাবনা, আখেরে একে বিপজ্জনক করে তুলত। বুয়িং চুল-হানে সমস্যাটি নেই, কারণ তিনি নিখাদ ভাবুক একজন। তাঁর প্রস্তাবনার সঙ্গে কার্ককে গড় করা যাবে না।

এখন, একে সাপোর্ট করা কঠিন। এটি সমস্যা, কিন্তু সমাধানের পথটি বিপজ্জনক। চার্লি হয়তো একদিন তা বুঝতেন, কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে যেত অনেক!

Charlie’s Book; Image Source – Collected; Google Image

প্রগতিশীলতার যেসব বয়ান পশ্চিমা বিশ্বে অনেকদিন ধরে গণতন্ত্র চর্চার আবরণে গড়ে উঠেছে, সেখানে ফল্টলাইন তো নিশ্চয় রয়েছে। চার্লি শিক্ষা ও প্রযুক্তিক দক্ষতা, রাজনীতি ও দুর্নীতির মতো বিষয়গুলোকে একটি মোড়কে ঢুকিয়ে প্রচুর আলাপ তুলেছেন সবসময়। এতদিনের বানিয়ে তোলা সিস্টেম যে ঠিকমতো ওয়ার্ক করছে না, সেটি তাঁর ব্যাখ্যায় ভালোভাবে উঠে আসতে দেখেছি। কিন্তু, বিকল্প কী সেখানে? অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ? প্যালেস্টাইন ইস্যুর সমাধানে ইসরায়েলের গৃহীত নীতিকে জাস্টিফাইড ভাবা? আমেরিকাকে মহান করে তোলার নামে রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদের পারদকে ওপরে তোলা? চার্লিকে এসব প্রশ্ন যখন তরুণ প্রজন্মের অনেকে করেছে, সেখানে প্রশ্নগুলো হ্যান্ডেল করতে গিয়ে প্রায়শ যেসব যুক্তি তাঁকে দিতে দেখেছি, আমার কাছে তা শ্যালো মনে হতো।

প্যালেস্টাইনে গণহত্যার প্রসঙ্গ তুললে, হামাসের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হাতে ইহুদিরা কী পরিমাণে মারা পড়েছে, সেই প্রসঙ্গ টানতেন চার্লি। একজন খ্রিস্টান ও মুসলমান খোদ ইসরায়েলে কতখানি নিরাপদ, যা সে মুসলমান অধ্যুষিত কোনো অঞ্চলে নয়… এসব দিয়ে প্রশ্নকর্তাকে কচুকাটা করতেও দেখেছি তাঁকে। এখন তাঁর দেওয়া তথ্য অসত্য বা অবাস্তব নয়। হত্যা ও পালটা হত্যা উভয় তরফেই ঘটছে। আমার এটি মনে হয়েছে,—ইসলাম ও মুসলমান সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক বিবর্তন ও পলিটিক্যাল ইসলামের হাতে জিম্মি হওয়ার মনোজাগতিক পরিণাম বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও ধারণা ছিল সরলরৈখিক। এর ফলে মুসলমান ও ফিলিস্তিনিদের সমস্যা তিনি বুঝেও বুঝতে চাইছেন না বলে মনে হতো। বায়াসড্ ছিলেন।

এই পৃথিবীতে নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইনের মতো বুদ্ধিজীবী রয়েছেন, এবং তিনি ইহুদি হলেও খাস মার্কিনি। তাঁর বাবা-মা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত ইহুদি নিধনের চাক্ষুষ সাক্ষী ও ভুক্তভোগী ছিলেন। কোনোমতে প্রাণে বেঁচে আমেরিকায় পাড়ি জমান পরে। হলোকাস্টকে জায়োনিস্টপন্থী ইসরায়েল মারণাস্ত্র রূপে কীভাবে ব্যবহার করে আমেরিকায় বসে,—এসব নিয়ে বিস্তর লিখেছেন নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন। নিজে ইহুদি হলেও তাঁর কথা সেখানে স্পষ্ট,—ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের আচরণ কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। এটি কোনো বৈধতার কাতারেই পড়ে না।

এরকম জটিল বিষয়ে চার্লি কার্ককে দেখেছি জায়োনিজমের পক্ষে ওকালতি করছেন। ইসলামে নিহিত খবিসিকে উৎপাটন করার পন্থা যদি হয় টিট ফর ট্যাট, সেটি বোধহয় আরববিশ্বে কাজ করবে না। তিনি বরং ইরানকে এর জন্য দায়ী করতে পারতেন। মুসলমান বিশ্বে ফেতনা বাঁধানোয় ইরানের খামেনি সরকারের ভূমিকা অতিব তাৎপর্যপূর্ণ। আবার আমেরিকা যে-মতলবে ইসরায়েলকে হাব বানিয়ে আরববিশ্বে অশান্তি জিইয়ে রাখে, সেগুলো উপেক্ষা করা কঠিন।

এসব কারণে চার্লির শক্ত যুক্তি, তর্কে দক্ষতা, মিথ ভেঙে দেওয়ার মতো ডেসপারেট স্টান্স শুনতে ও দেখতে চমকপ্রদ হলেও আখেরে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। হোয়াইট সুপ্রেমেসিকে তিনি গ্লোরিফাই করেছেন অবিরত। পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের জায়গা থেকে করেছেন; কখনো বুঝে, এবং অনেকক্ষেত্রে তলিয়ে দেখতে চাইছেন না বলে মনে হতো। তর্কপটু হওয়ার কারণে তাঁকে বাগে ফেলে কাত করা অনেকের কাছে কঠিন ঠেকেছে।

শেষের দিকে তাঁকে দেখেছি ইসরায়েলের ব্যাপারে আমেরিকার নীতিকে কিছুটা ক্রিটিকই করছেন। তাঁর কাছে মনে হয়েছে, এতে করে আমেরিকা হত্যার খেলায় টাকা অপচয় করছে। চার্লি ইম্প্রেসিভ ছিলেন, কিন্তু তাঁর পথ আমার কাছে আত্মঘাতী মনে হয়েছে। যে-কারণে রবিনসন তাঁকে নিখুঁত নিশানা করতে পিছপা হয়নি। তার হয়তো মনে হয়েছে, এই হেট কালচার প্রমোট করতে থাকা লোকটিকে এবার থামানো দরকার। রবিনসন দক্ষ স্নাইপার তা মানতে হবে। বৈশ্বিক মেরুকরণের নতুন বাস্তবতায় চার্লি কার্কের আমেরিকা কেন্দ্রিক ফ্যাসিনেশন এসব কার্যকারণে সফল করা কঠিন।
. . .

Who Was Charlie Kirk? – BBC Documentary; Source – BBC News YTC

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 30

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *