দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং কিতাবে ফ্যাসিবাদ কীভাবে নিজেকে সক্রিয় করে বোঝাতে মিলান কুন্দেরা লিকুইডেটিং (liquidating) শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। যেসব ঘটনা ও বয়ানকে ঘিরে আবর্তিত স্মৃতিকে কোনো জাতি তার বিকাশ-বিবর্তনের ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের নিশান বলে জানে, এবং সহজ অভ্যাসে স্মৃতিকোষে তা সংরক্ষণ করেছে এতদিন,—সেগুলোকে এখন উপড়ে ফেলা অথবা মুছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ তার কাজ শুরু করে।
লিকুইডেটিং বলতে মিলান কুন্দেরা এখানে ব্যক্তিস্মৃতিতে জাগরুক ঘটনা ও বয়ানের পরিবর্তন অথবা নতুন পরিস্থিতির চাপে এর তরলীকরণকে বুঝিয়েছেন বলে আমার মনে হয়নি। স্মৃতির সামষ্টিক তরলীকরণকে উপজীব্য করেছিলেন তিনি। মিলান কুন্দেরার কাছে স্মৃতি গুরুত্বপূর্ণ। মানব-অস্তিত্বকে বুঝে ওঠার ভাষাসংকেত সেখানে নিহিত ও সক্রিয় থাকছে। ব্যক্তিমানুষের যাপন ও নিজেকে শনাক্তযোগ্য অস্তিত্ব রূপে বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে তার স্মৃতিকোষে সংরক্ষিত চিহ্নগুলোর ভূমিকা কোনোভাবেই গৌণ নয়। ব্যক্তির সমাবেশ থেকে গড়ে ওঠা সমষ্টি (অথবা জাতিসত্তার) মতো এককের ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা থাকে যুগান্তকারী।
নোবেলজয়ী স্নায়ু ও মনোবিদ্যা বিশারদ এরিক ক্যান্ডেল তাঁর স্মৃতির তালাশে (In Search of Memory) বইয়ে স্মৃতিকে স্বল্পস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী দুইভাগে শ্রেণিকরণ করেছিলেন। তাঁর ভাষায়, মস্তিষ্কে সংরক্ষিত স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি মূলত টানা অভ্যাসের ভিতর দিয়ে একসময় দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকা স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। জটিল স্নায়বিক ব্যাধি কিংবা দুর্ঘটনাজনিত ট্রমার কারণে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি অনেকসময় মনে হবে মুছে গেছে চিরতরে। স্বল্পস্থায়ী বা নিকটবর্তী সময়ের স্মৃতি ছাড়া কিছু বেঁচে নেই সেখানে! অনুরূপভাবে, দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি থাকতে পারে অটুট, যেখানে স্বল্পস্থায়ী ও নিকটবর্তী সময়ে সংরক্ষিত স্মৃতিকে অবলুপ্ত মনে হতে পারে। ব্যাধি ও দুর্ঘটনাজনিত শক বাদ দিলে মানব অস্তিত্বে মূলত স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিরা গড়ে তোলে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির ভাণ্ডার।

মিলান কুন্দেরা একে এখন নিরিখ করছেন ইতিহাসের যুগান্তকারী কালপর্বে সংঘটিত ঘটনার অভিঘাত হিসেবে,—যেখানে সমষ্টির মস্তিষ্কে সংরক্ষিত স্মৃতিকোষকে পরিকল্পিতভাবে গুম-লোপাট অথবা স্মৃতির নতুন/বিকল্প রসদ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। গুম ও প্রতিস্থাপনের এসব বিবরণ কুন্দেরা তাঁর বইয়ে দিয়েছেন বটে। স্টালিনশাসিত সোভিয়েত ইউনিয়ন, তাঁর নিজের দেশ চেকোশ্লাভাকিয়া, সমাজতান্ত্রিক চীন… স্মৃতি গুম ও প্রতিস্থাপনের বিচিত্র বিবরণে বইকে বোঝাই করতে ত্রুটি করেননি। চীনের উদাহরণটি এখানে দেখে নেওয়া যেতে পারে এককঝলক :
রাজতন্ত্র হটিয়ে মাও সেতুং ক্ষমতায় আসীন হলেন। শোষিত, নিপীড়িত ও হতদরিদ্র চীনাদের ভাগ্য বদলাতে অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নিতে কালবিলম্ব করলেন না বন্দুকের নলকে সমাজবদলের নিয়ামক গণ্য করতে থাকা লাল বিপ্লবী। প্রথমাবস্থায় তাঁর নেওয়া সংস্কার কোনো কাজে আসেনি। মহাচীনে উলটো ভয়াবহ খাদ্যভাব দেখা দিয়েছিল তখন। পাঁচ বছর স্থায়ী দুর্ভিক্ষে বেশুমার মানুষ অনাহারে মারা যায়। ইতিহাসের পাতায় যেটি কেবল গ্রেট চাইনিজ ফেমিন হিসেবে বর্ণিত তা নয়,—সমাজতান্ত্রিক সরকারের অদক্ষতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ গণহত্যা হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে পরে।
কলঙ্কজনক অধ্যায়টিকে চীনের সরকার আজো তাদের ব্যর্থতা বলে মানতে নারাজ। এ-সংক্রান্ত দলিল-দস্তাবেজ ও তথ্য-প্রমাণ মাও সেতুংয়ের শাসনামলে প্রথম দফায় বিনষ্ট করা হয়। বানোয়াট বয়ান তারা হাজির করেন ত্বরিত। অতঃপর, চীনে সমাজতান্ত্রিক রাজকে ঘিরে অবিরত তৈরি হতে থাকা বয়ানের স্তূপে ভয়ানক অস্বস্তিকর ঘটনায় কেন্দ্রীভূত স্মৃতি প্রতিস্থাপনের কর্ম প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বজায় থাকে। চীনের পরবর্তী প্রজন্ম মূলত সেই প্রতিস্থাপনকে স্মৃতিকোষে ধরে সাবালক হয়েছে;—যেখানে এর প্রকৃত সত্য উদঘাটনে গমনের সকল উপায় গুম, লোপাট ও রুদ্ধ করা হয়েছিল। এবং, আজো তা রুদ্ধই থেকে গেছে।
আমাদের এখানে একাত্তরের জনযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় ও আত্মসমপর্ণের ঘটনাও তাই। এখানে দুটি ভিন্ন বয়ান আমরা পাচ্ছি। সেকালের পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর কাছে এই জনযুদ্ধ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের চাপিয়ে দেওয়া শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ। ভারতের এগিয়ে আসাটা যেখানে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনির সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল। পক্ষান্তরে পাকিস্তান এই জনযুদ্ধকে ভারতের প্ররোচনায় বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে সবসময় দেখানো চেষ্টা করেছে।
একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মের স্মৃতিকোষে মিলিটারি শাসিত দেশটি এই বয়ান অবিরত প্রতিস্থাপন করে,—অখণ্ডতা বিনষ্ট করার মাধ্যমে পাকিস্তানকে দুর্বল করার মতলবে ভারত আগাগোড়া সক্রিয় ছিল। শেখ মুজিবকে গুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি সমাজকে তারা খেপিয়ে তুলেছিল। ভারতের অসৎ মতলব প্রতিহত করার স্বার্থে পাকিস্তানকে যুদ্ধে গমন করতে হয়। বাংলাদেশে এমনকি পাকিস্তানকে কিবলা মানতে থাকা একটি অংশ গোড়া থেকে একই প্রচারণায় লিপ্ত;—যেখানে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্ক্যাম তথা পাতানো ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টায় বিরাম ঘটেনি কখনো।
এমনসব তথ্য-প্রমাণ তারা হাজির করে, যেগুলো উক্ত কালপর্বে সংঘটিত ঘটনার নিক্তিতে যাচাই করলে বানোয়াট ও অভিসন্ধিমূলক প্রতিপন্ন হতে বাধ্য়। সমস্যা হলো, বিবিধ ঘটনাচক্রে মিথ্যে মাঝেমধ্যে এতটাই শক্তিশালী আর বিভ্রান্তি ছড়ানোয় অতুল হয়ে ওঠে,—মানুষের স্মৃতিকোষে সংরক্ষিত সত্য বয়ান তাতে মুছে যাওয়ার উপক্রম করে। মিলান কুন্দেরা যেটিকে অ্যামনেশিয়া (Amnesia) বা স্মৃতিভ্রংশ হিসেবে দেখছেন এখানে।
ব্যক্তির সমাবেশে গড়ে ওঠা জাতির এই গণবিস্মরণের অভিঘাত মারাত্মক হতে পারে। অতীতে সংঘটিত ঘটনা ও একে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইতিহাসচেতনার সঙ্গে তার এতদিনকার অভ্যস্ত সংযোগ তখন ভেঙে পড়ে। এর ফলে জাতির স্মৃতিকোষে যে-শূন্যতা তৈরি হয়, তা দ্রুত পূরণ করতে নতুন বয়ান তার মন-মগজে প্রবেশ করানোর বিকল্প থাকে না। দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি আপাতত অবলুপ্ত। ঘাটতি পূরণে অবিরত নতুন-নতুন স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি পয়দার কাজ চলতে থাকে।

স্থাপনা স্মৃতি মুছে দেয়;—এরকম একটি কথা প্রচলিত বটে! সড়কের ধার ঘেঁষে প্রাচীন কোনো ভবন হয়তো এতদিন দাঁড়িয়ে ছিল। ভবনটি চোখে সয়ে যাওয়ার কারণে মানুষ তাকে দেখেও দেখেনি এতদিন। ভবন ভেঙে নতুন কাঠামো যদি মাথা তুলে সেখানে,—এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সচরাচর আজব হয়ে থাকে। আগে এখানে কী ছিল তা অনেকে তাৎক্ষণিক স্মরণ করতে পারে না অথবা অচিরে ভুলে যায়। বিস্মরণের খেলাটিকে ইতিহাসের এক-একটি কালপর্বে সংঘটিত ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ভাবা যেতে পারে। পৃথিবী জুড়ে মতলবি শাসনযন্ত্র মূলত লিকুইডেশন বা স্মৃতির তরলীকরণকে সেখানে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে। বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলোকে যদি ভালোভাবে খেয়াল করি, তাহলে মিলান কুন্দেরার বইয়ে সক্রিয় বিবরণের সারসত্য বুঝতে কারো বেগ পাওয়ার কথা নয়।
এটি কিন্তু কোনোভাবেই বয়স, দুর্ঘটনা অথবা জটিল ব্যাধিজনিত ডিমেনশিয়া বা বিস্মরণের মতো ঘটনা নয়। এটি হলো পরিকল্পিত পথ ও পন্থায় অতীতের সঙ্গে সংযুক্ত স্মৃতিকে নতুন স্মৃতিচিহ্ন দিয়ে প্রতিস্থাপন। লিকুইডেটিংয়ের এ-হলো সারকথা। বর্তমানে সক্রিয় বিষচক্র কাজটি কুশলতার সঙ্গে সারছে এখন। যদি সফল হতে পারে, তাহলে পুরোনো স্মৃতির সঙ্গে বিজড়িত ঘটনার সত্যমিথ্যা ও যৌক্তিকতা প্রমাণ পাহাড় ঠেলার শামিল হবে তখন। অনেক জাতির ক্ষেত্রে মুছে যাওয়া স্মৃতি পরে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রোমানিয়া ব্যর্থ হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ব্যর্থ হয়েছে। চীন ও ইরানকে ব্যর্থ হতে বাধ্য করা হচ্ছে। উদাহরণের অন্ত নেই। বাংলাদেশ সেদিকপানে হাঁটছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।
মানুষের স্মৃতিতে একাত্তর অবলুপ্ত হতে যাচ্ছে। অবলুপ্ত হওয়ার পেছনে রাজনীতির গতি পরিবর্তন ছাড়াও অতীত সরকারগুলোর দায় রয়েছে। একাত্তরে কেন্দ্রীভূত বয়ান নিয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সক্রিয় থেকেছে। যেখানে, এই বয়ানকে নিজের একলার কৃতিত্ব রূপে কুক্ষিগত করার সমস্যা নিয়ে বিতর্ক ও পালটা-পালটি সংঘাত জারি ছিল সবসময়। বিবিধ কার্যকারণে বিভ্রান্ত ও হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষিত সমাজের সংখ্যালঘু অংশে লিকুইডেশনকে কেন্দ্র করে হইচই কাজেই কোনো কাজে আসবে না। এটি দিয়ে কুন্ডেরা বর্ণিত ছকের অনিবার্যতাকে রোখা সম্ভব নয়। সহসা কোনো ঝড়ে এই বিষচক্রটি যদি ধ্বংস না হয়, সেক্ষেত্রে জাতির স্মৃতিতারল্য ও স্মৃতিবিলোপকে অনিবার্য হতে দেখব আমরা।
একাত্তর অতঃপর বেঁচে থাকবে কবিলেখকের বিবরণনামায়। কেউ হয়তো-বা রোমানিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতা রাদু জুডের মতো তখন I Do Not Care If We Go Down in History as Barbarians-এর মতো ছবি বানাবেন তখন। এটি স্মরণ করিয়ে দিতে,—ইতিহাসের বুকে সংঘটিত প্রকৃত সত্য ঘটনাকে জাতি বিস্মৃত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ওইসময় রোমানিয়ায় রাজ করতে থাকা শাসককুল যে নজিরবিহীন অন্যায় করেছিল, তার ব্যাপারে আজকের প্রজন্ম আর নয় সচেতন। অন্যায়কে তারা এখন উলটো ন্যায্য ও সঠিক ছিল বলে ভাবছে;—এর সপক্ষে যুক্তি ও নজির তুলে ধরতেও দ্বিধা করছে না। অন্যায় চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিলে সো হোয়াট (!) বলে গা থেকে অপরাধ ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছে অনায়াস! ঝেড়ে ফেলার খাসলতকে মিলান কুন্দেরা তাঁর বইয়ে বিপজ্জনক প্রবণতা হিসেবে দেখেছেন, যেটি মানব-অস্তিত্বে সক্রিয় অশুভকে কেবল ন্যায্য করে তুলছে তা নয়,—তার স্মৃতিকোষে নির্দয় শয়তানকে এটি জাগিয়েও রাখছে।
বাংলাদেশে যেমন সম্প্রতি ঘটে চলা স্মৃতি অবলোপকে বিপ্লবের অনিবার্যতা রূপে প্রমাণের চেষ্টা আমরা দেখছি। কর্তৃত্ববাদী একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জের ধরে সংঘটিত ঘটনাটি আদৌ কোনো বিপ্লব ছিল না যদিও;—এবং তা ইতোমধ্যে ভালোভাবে প্রমাণিত। তর্কের খাতিরে একে বিপ্লব বলে যদি ধরেও নেই, এখানে স্মৃতি অবলোপের পন্থাগুলো কেবল অশুভই নয়, তথাকথিক বিপ্লবীদের ফ্যাসিস্ট রূপে তারা চিনিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং নিয়ে ফিলিপ রথের সঙ্গে আলাপচারিতায় মিলান কুন্দেরা এ-কারণে হয়তো বলেছিলেন :
লোকজন বলে : বিপ্লব সুন্দর। তবে তার মধ্যে যে সন্ত্রাসেরও জন্ম হয় সেটিই অশুভ। তবে এসব সত্য নয়। সুন্দরের মধ্যেও শয়তান থাকে। স্বর্গের স্বপ্নের মধ্যে নরক। আমরা যদি নরকের সারমর্ম বুঝতে চাই, আমাদের অবশ্যই স্বর্গের সারমর্ম বুঝতে হবে, যেখান থেকে সে উদ্ভূত। — সুন্দরের মধ্যেও শয়তান থাকে : ফিলিপ রথের সঙ্গে আলাপচারিতায় মিলান কুন্দেরা; ভাষান্তর : উপল বড়ুয়া; প্রতিধ্বনি

মিলান কুন্দেরার লিকুইডেটিং নিয়ে আগেও একাধিকবার কথা বলেছি। দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং-এ তাঁর বিখ্যাত বচনাংশ (অনেকে এটি হামেশা উদ্ধৃত করে থাকেন) স্মরণ যাই পুনরায়। কুন্দেরা সেখানে বলছেন :
কোনো জাতিকে স্মৃতিহীন করার পয়লা কদম হচ্ছে স্মৃতি মুছে ফেলা। বইগুলো ধ্বংস করো, তার সংস্কৃতি ও ইতিহাস গুঁড়িয়ে দাও। তারপর নতুন কেউ নতুন বই লিখবে। নতুন সংস্কৃতি পয়দা করবে, নয়া ইতিহাস লিখবে। জাতি ভুলে যেতে বসবে সে কে ছিল বা অতীতে কী ছিল পরিচয়। ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামের অর্থই হচ্ছে বিস্মৃত হওয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। —মিলান কুন্ডেরা : দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং; ভাষান্তর : স্বকৃত;
পরিস্থিতি সেদিকপানেই যেহেতু যাচ্ছে, ক্ষুব্ধ ও আশ্চর্য হওয়ার শক্তি তিরোহিত হচ্ছে ক্রমশ! এই-যে ক্ষুব্ধ হতে না পারা, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে সহংত হওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলা,—একে এখন আমাদের ব্যর্থতা ও পরাজয় বলা যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে আমার মতো আরো অনেকের স্মৃতিকোষ অবলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা অনেকে তা ধরতে অক্ষম বলেই মনে হচ্ছে!
. . .
. . .



