
তোমাকে বলছি শোনো
হেলাল চৌধুরী
তোমাকেই বলছি, শোনো
তোমাকেই বলছি পিয়াইন—শোনো
জ্বলে ওঠো তুমি সুকান্তের দেশলাই ঠোঁটে, বারুদে
এখানে বারবার জীবনানন্দের রূপসী গতর পোড়ে
নখর হায়েনা শকুন শৃগালের প্রখর চক্ষুর আগুনে…
এখানে জীবনানন্দের সুচেতনা বোধে
বিকারগ্রস্ত মগজের কীটেরা বারবার হানা দেয়
তিমির ঘন-ঘোর অন্ধকারে
এখানে
ভাই বোন বন্ধু পরিজন কাঁদে সুচেতনারে চেয়ে
তাই
তোমাকেই বলছি, শোনো
তোমাকেই বলছি পিয়াইন—শোনো
জ্বলে ওঠো তুমি সুকান্তের দেশলাই ঠোঁটে, বারুদে
এখানে বারবার জীবনানন্দের রূপসী গতর পোড়ে
নখর হায়েনা শকুন শৃগালের প্রখর চক্ষুর আগুনে…
এখানে জীবনানন্দের কল্লোলিনী তিলোত্তমা জলে
ধানসিঁড়ি নদী শুকায় শুশুক অসুরের তীব্র বাড়বানলে
এখানে দিবালোকে হাঁটে বিভীষণ রাবণ
কালনেমি এবং দুঃসাশন
হাঁটে পিরামিড-মানুষ আলখাল্লা দুর্বৃত্ত দুর্জন
তাই
তোমাকেই বলছি, শোনো
তোমাকেই বলছি পিয়াইন—শোনো
জ্বলে ওঠো তুমি সুকান্তের দেশলাই ঠোঁটে, বারুদে
এখানে বারবার জীবনানন্দের রূপসী গতর পোড়ে
নখর হায়েনা শকুন শৃগালের প্রখর চক্ষুর আগুনে…
. . .
সংযুক্তি

জীবনানন্দ দাশের টেক্সটের ভিতর কবি হেলাল চৌধুরীর ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার আসল মতলব নিয়ে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কয়েক দফা তর্কালাপ হয়েছিল আগে। থার্ড লেন স্পেস-এর সাইটে দুই পর্বে তার খণ্ডাংশ সংকলিত হয়েছে ইতোমধ্যে। আলাপের তৃতীয় কিস্তি সাইটে তোলার প্রস্তুতি চলছে এখন। তার মধ্যেই নিরক্ষাধীন এই যাত্রার আরো কিছু নমুনা কবি আমাদেরকে পড়তে দিলেন।
অতীতে এই আলাপ হয়েছিল বটে,—জীবনানন্দের টেক্সটকে প্রায় অবিকল ব্যবহার করে কবি ধরতে চাইছেন সেই সুর, যেটি এই সময়ে ঘনীভূত অন্ধকারের ওপর আলো ফেলবে। আমাদের মনের মাটিতে এভাবে জীবনানন্দের উসিলায় প্রতিভাত হবে ঘনিয়ে আসা অমাবস্যার দিনলিপি;—যেটি এখন চলছে, এবং এর অবসান কবে ঘটবে তা আপাতত সকলের অজানা।
হেলাল চৌধুরী কবিতাগুলো এমনভাবে বুনছেন, যেন সেখানে সাংগীতিক গুণ থাকে, যেন ইচ্ছে করলে এগুলোকে গান ভাবতে পারেন পাঠক। এ-পর্যন্ত পঠিত কবিতার মধ্যে সাংগীতিকতার আভাস কোনটায় কী-পরিমাণ তীব্র… এই তর্কালাপে আপাতত আমরা নাই-বা গেলাম। কবি তাঁর প্রজেক্ট শেষ করুন আগে;—আরো ভাবা ও তর্ক করতে তখন বাধা থাকবে না। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের পরিসরে আলাপ চলাকালীন ফয়েজ ভাই তাঁর পাঠ-অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কবির যে-কবিতাটিকে গানের জন্য মানানসই বলে মন্তব্য ঠুকেছিলেন,—থার্ড লেন স্পেস-এর নিয়মিত আয়োজন ‘গানালেখ্য’-এ এর দুখানা সাংগীতিক সংস্করণ কেবল সংযুক্ত করছি এইবেলা। আগ্রহীরা শুনে দেখবেন আশা করি।
মার্কিন দেশের গানবাজনায় ব্লুগ্রাস (Bluegrass) নামে একখান ঘরানা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। গানকে কবিতার আদলে গাওয়ার ধারাটি মূলত মার্কিন দেশের লোকগানের রূপরস শুষে ডানা মেলেছিল আকাশে। যেখানে জ্যাজ, রক, পপসহ বিচিত্র সব ঘরানারা পরে ক্রমাগত এসে মিশেছে। ব্লুগ্রাস স্বয়ং নিজদেহে সেগুলোকে মিশিয়েছে ইচ্ছেমতো। হেলাল চৌধুরী বিরচিত কবিতার সংগীত-আয়োজনে ওই আঙ্গিকটি দ্বিতীয় সংস্করণে অনেকখানি ব্যবহার করেছি। প্রথমটি অবশ্য প্রচলিত গায়ন পদ্ধতির ওপর ভর দিয়ে করা, যেখানে ব্লুগ্রাস প্রকটিত নয়।
এআই মহাশয় সময়ের সঙ্গে ব্যাপক উন্নতি করলেও, ‘জীবনানন্দ’ ও সমাসকৃত ‘বাড়বানল’ শব্দের সুরস্বীকৃত উচ্চারণ করতে যেয়ে হোঁচট খেয়েছেন ভালোই। জীবনানন্দ দাশ বেঁচে থাকতে লোকজন তাঁর নামের উচ্চারণে হামেশা ভুল করতেন। এআই তা অনুসরণ করেছেন এখানে। শুধরে নিতে খাটনি গিয়েছে বেশ। গানে ব্যবহৃত শব্দের সুরস্বীকৃত উচ্চারণে কিছু খামতি উভয় সংস্করণে কাজেই এড়ানো গেল না! তবে খামতিগুলো এমন নয় যে, ভবিষ্যতে শুধরে নেওয়া যাবে না।সুতরাং এইটুকুন বিচ্যুতি (খসড়া বিবেচনায়) উপেক্ষা করেছি এখানে।
কেমন হয়েছে সেই ব্যাপারে আমার পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। সাক্ষাৎ কবিবরের পছন্দ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ ধরে নিচ্ছি। বাকিরা কী বলবেন জানি না। আরো কয়েকটি সংস্করণ হাতের নাগালে মজুুদ রয়েছে। পরে সময়-সুযোগ বুঝে এগুলো নিয়েও কাজ করা যেতে পারে।
একটি গানের কম্পোজিশন মানে এমন নয়-যে, এখানেই ইতি ঘটছে তার। অন্য মেজাজে এর সংগীত আয়োজন পরে সময়-সুযোগ বুঝে করে ফেলার অবকাশ থাকে। কবির চাওয়া-পাওয়া সম্যক জানতে পারলে, ভিন্ন বাদন ও গায়কির সাহায্যে (এমনকি এআই দিয়েও) কাজটি করা সম্ভব। সবদিক বিবেচনা করে গান দুখানায় কান পাতা ও মন্তব্য যোজনার অনুরোধ থাকছে।
—আহমদ মিনহাজ : অবদায়ক : থার্ড লেন স্পেস.কম
. . .

. . .


