স্ট্রাগল ও অন্যান্য-২
জওয়াহের হোসেন-র কবিতা সিরিজ
নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোকে নিবেদিত

দ্য ব্ল্যাক হারমিট
নির্জন অতিথিদের যাত্রা
রাত্রির উলটোদিকে যেন তুমিও
ভেসে যাচ্ছ মৃত ভাইয়ের শোকে
চূর্ণ চূর্ণ মূর্ছিত তোমার আলোর স্বদেশ—
ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিতাড়িত করতে খুব উদ্গ্রীব ছিলে
আমাদের সম্মুখে তোমার সকল
কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছেগুলো আজ বিবর্ণ বিষাদে
ম্রিয়মাণ… তোমার ক্ষত—রক্তাক্ত স্বদেশ কাঁদছে
আজও মৃত রাষ্ট্রের আত্মাকে
বেঁধে রেখেছ—
অজস্র অশ্রুর এ-পৃথিবীতে
. . .
তপ্ত দ্রাঘিমা
গায়ে ভীষণ জ্বর, জল চোখ দুটো পাথর কাঁপছে—
ওপারে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে এক দণ্ডায়মান—
কালো অমানিশা কেঁদেছে খুব
এই তপ্ত-দ্রাঘিমা ঘিরে—এই নীল নীল আরতি নিভে গেছে দূরে কোথাও…
এত ঊর্ধ্বারোহণে রেশ রয়ে গেছে
এ ভরা জল কিনারায়
ভাঙা ভাঙা হতাশার ছায়া ছিন্ন করে যাচ্ছে দুরাত্মারা, তারা ফিরবে না,
সব জেনেও
চুপচাপ তাদের পাশে বসে আছ তুমি এক চির-কালো সন্ন্যাস
. . .

শুয়ে থাকো, মৃত পেরেক
জড়িয়ে আছো—
দূরে দূরে দীর্ঘ নিদ্রালসা…
ভিজিয়ে রেখেছি এই তপ্ত বুক
চোখ তো কবেই
অন্ধ হয়ে গেছে
জল সেতো অনন্তেই গেছে
পাশে কেউ নেই
চিরদিন দেখা নেই
চিরদিন দূরে দূরে
চিরদিন সন্ন্যাস
. . .
ক্রন্দনভরা
কুলকুল দীর্ঘ ধ্বনি নিয়ে
তুমি বেঁধে রেখেছো বহুদিন—
একলা একলা নদী, একলা একলা দেহ
ওপারে দীর্ণ-কুহক, মন পুড়ছে
হিম হিম হাওয়া আসে, একলা একলা লাগে ভীষণ
অভিমানী জল নিয়ে দেহ পুড়ছে দেখো
তুমি দীর্ঘ নদী, আমি তো রাখতে পারি না ধরে
বাঁধতেও পারি না যে, চলে যাও সমুদ্রে
বৃষ্টি-বিভোর সারাদিন, একলা একলা লাগে
. . .
যামিনী ঘিরে
ঘুঙুর বেজেছিল মাতাল যামিনী ঘিরে
তার মুখ যেন এক টুকরো চাঁদ
লুপ্ত আমোদ তাকে কতজন টানে…
একদিন জলের ঘুঙুর পায়ে
সব আনন্দ বিলুপ্ত করে—
সে জলে যায় মিশে…
. . .

নব্বই দশকি কবিতায় অন্তর্মগ্ন স্বরব্যঞ্জনায় আলাপ সারতে অভ্যস্ত কবিদের একজন জওয়াহের হোসেন সুরমা পাড়ের ছেলে। বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই কবি তিন দশক অতিক্রম করেছেন কবিতায়। দীর্ঘ সময় ধরে কবিতায় যাপন করলেও লিখেছেন কম। প্রথম প্রকাশিত কবিতাবই নগরমুসাফির ও মোনাজাত। যুগিভাব সঙ্গ বেরোয় তার কিছুদিন পর। যুক্তরাজ্যে গমনের পর বেরিয়েছে কবির আপাত সর্বশেষ কবিতাবই একাকী, শব্দ নৈঃশব্দ্য। একতারা নামে ছোটকাগজ সম্পাদনা করেছেন কবিজীবনের গোড়ায়। কাগজটি এখন হিমঘরে পুনর্জন্ম লাভের অপেক্ষায় থাকলেও, ছোটকাগজ ও অনলাইন সাহিত্য মুখপত্রে বিচরণে স্বচ্ছন্দ এই কবি। কবি ও গদ্যশিল্পী খোন্দকার আশরাফ হোসেন সম্পাদিত একবিংশ-এর সঙ্গে ছিল নিবিড় সংযোগ।
জওয়াহের হোসেনের কবিতা ধারণ করে ব্যক্তির বোহেমিয়ান হওয়ার বাসনাঘন সংবেদ। কবি যেখানে সাবলীল মিশিয়ে দেন প্রেম ও যৌনকাতর সংরাগ। জওয়াহের হোসেনের কবিতা বিচিত্রভাবিক নয়। পূর্ববর্তী কবিতা-দশকের অনুরণন বড়ো একটা প্রবল নয় তাঁর কবিতায়। কবি গোড়ায় ধারণ করেছেন নব্বই দশকি কবিতার বিশিষ্ট ঘরানা,—মোস্তাক আহমাদ দীনসহ আরো অনেকে যার চর্চা করেছেন ব্যাপক। লোকায়ত অনুষঙ্গ, বিশেষভাবে বাউলাঙ্গের প্রতি ঝোঁক কবি জওয়াহের হোসেনের কবিতায় ফিরে-ফিরে প্রাসঙ্গিক দেখে পাঠক। নগর মুসাফির থেকে যুগিভাব সঙ্গ অবধি নিজের ব্যক্তিসত্তাকে নগরবন্দি বাউল ভবঘুরে ভাবার প্রবণতায় কবি স্থির থেকেছেন কমবেশি।
জওয়াহের হোসেনের কবিতায় নতুন বিবর্তনরেখা পাঠক পাচ্ছেন তাঁর আপাত সর্বশেষ কবিতাবই একাকী, শব্দ নৈঃশব্দ্য-এ এসে। সম্প্রতি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থে কবিতা-আঙ্গিক ও ভাষায় নিজেকে অধিক সংহত করেছেন কবি। পাশাপাশি লিখে চলেছেন হাইকু ধাঁচে ছোট-ছোট পঙক্তিচরণ। বাকপ্রতিমায় ব্যক্তিসত্তার ভবঘুরে যাপন-বাসনা ও সেখান থেকে উদ্ভাসিত সংবেদ মিতবাক্যে বন্দি করতে অদ্য নিবিষ্ট এই কবি।
. . .

. . .



