টেক বুলেটিন - নেটালাপ - পোস্ট শোকেস

কোয়ান্টাম কম্পিউটার — সম্ভাবনা ও পরিণাম

Reading time 10 minute
5
(37)
@thirdlanespace.com

. . .

আজকে চ্যাট জিপিটির সাথে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা কনভারসেশন হয়েছে। বিষয়টা নিয়ে কে কী মনে করে,বিশেষ করে মিনহাজ ভাই… সময় থাকলে বিশ্লেষণ করে মন্তব্য জানাবেন…
. . .

কনভারসেশনটি উপভোগ্য ছিল তাহসিন ভাই। আপনার প্রশ্নগুলো চ্যাট জিপিটি ভালো ডিল করেছে। এই সন্দেহ অনেকে করেন,—কোয়ান্টাম কম্পিউটার মূলত ধাপ্পাবাজি ছাড়া কিছু নয়। সরকার ও বহুজাতিক থেকে টাকা হাতানোর মতলবে ট্যাক জায়ান্টরা স্ক্যামটি সাজিয়েছে। সে যাইহোক, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মোদ্দা কথা মহামান্য চ্যাট জিপিটি সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। কম্পিউটারের মস্তিষ্ক অর্থাৎ প্রসেসর যে-চিপ থেকে তৈরি, সেটি আয়তনে যত ক্ষুদ্র আকৃতি ধারণ করবে, সেখানে সন্নিবেশিত পরমাণুকণা তাপগতিবিদ্যার নিয়মে অধিক ঘনীভূত অবস্থায় উপনীত হবে। ঘনীভূত হওয়ার ফলে তাদের মাঝে সংঘটিত বিদারণ (Fission) ও একীভবন (Fusion) প্রক্রিয়ায় ব্যাপক শক্তি ও গতি উৎপন্ন হয়।

বিগ ব্যাং বা বৃহৎ বিস্ফোরণের প্রাক-মুহূর্তে পরমাণুকণার এহেন জটলা পাকানো (Quantum Entanglement) সন্নিবেশ থেকে বিশৃঙ্খল গতি ও শক্তি উৎপাদনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলাফল স্বরূপ ঘনীভূত কণারাজ্যে কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের মতো পরিস্থিতির জন্ম হয়। পরিস্থিতিটি মহাবিশ্বের প্রজনন ও পরবর্তীতে সীমানাবিহীন দশায় সম্প্রসারিত হওয়ার গণ্য কারণ বলে অনেক পদার্থবিদ রায় দিচ্ছেন। কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির লক্ষ্যে কম্পিউটার ল্যাবে অনুরূপ একখানা পরিবেশ তৈরির কাজে খেটে মরছেন প্রযুক্তিবিদরা। উদ্দেশ্য,—প্রচলিত কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে অধিক দ্রুত গতির কম্পিউটার তৈরি করা।

বিট নির্ভর (Bit-based) অ্যালগরিদমে তৈরি প্রচলিত বা ধ্রুপদি কম্পিউটারে ইলেকট্রনের ঘূর্ণি একরৈখিক। সে হয় নিচে ঘুরে (যা বাইনারি ম্যাট্রিক্সের বিচারে ০) অথবা ওপরে পাক খায় (বাইনারি ম্যাট্রিক্সে ১)। শূন্য ও এক-র বাইনারি বিন্যাসে সৃষ্ট কম্পিউটার প্রসেসর আর কণারাজ্যে জটলা পাকানো (Quantum Entanglement) কণায় ইলেকট্রনের অনিশ্চিত ঘূর্ণনকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলায় বেঁধে তৈরি প্রসেসর তাই গুণগতভাবে ভিন্ন।

পরমাণুর জটলা পাকানো সংঘাতের কারণে বিশৃঙ্খল দশায় পতিত ইলেকট্রন একাধারে ওপর-নিচ অথবা যেমনখুশি পাক খেতে থাকে। তাপগতিবিদ্যার নিয়মে এটি বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চিত দশার কারণ হলেও, কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা একে শৃঙ্খলায় বেঁধে বাড়তি গতি ও শক্তি উৎপাদন সম্ভব বলে মানছেন। বিট নির্ভর অ্যালগরিদম থেকে তখন তার যাত্রা ঘটবে কোয়ান্টাম বিটস (Qbits) নির্ভর অ্যালগরিদমের দিকে। যে-কম্পিউটার সেখানে সৃজিত হবে,—তার গণনা ও তথ্য সরবরাহের ক্ষমতা অধুনা প্রচলিত কম্পিউটার থেকে দশ হাজার গুণ বেশি হবে। ধরার বুকে মানুষের জীবন-যাপনের ছবি সংগত কারণে ব্যাপক বদলে যাবে তখন।

In Light of Music Creation: Quantum Superposition Explained; Source – SandboxAQ YTC

তাত্ত্বিকভাবে এটি সম্ভব বলে কম্পিউটারবিজ্ঞানীরা মোটের ওপর ঐকমত্যে উপনীত হয়েছেন। আর, ট্যাক জায়ান্টার একে বাস্তব করতে নেমেছেন মাঠে। এর কিছু খবরবার্তা থার্ড লেন স্পেস-এ তোলা কোয়ান্টাম বিপ্লব কি আসন্ন? রচনায় আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি কিছুদিন আগে। সময়-সুযোগ করে দেখে নেওয়ার অনুরোধ থাকছে। চ্যাট জিপিটির কাছে আপনি এই প্রশ্নটি রেখেছিলেন : Still they need a classical processor to manage the quantum processor? উত্তরে যেসব তথ্য ও ব্যাখ্যা সে দিয়েছে, সেগুলো আবার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মস্তিষ্ক (প্রসেসর) তৈরির অন্তরায়কে সামনে হাজির করছে।

আমরা এখন যে-কম্পিউটার প্রসেসর ব্যবহার করি, সেটি নিউটন ও আইনস্টাইনের সূত্রে বাঁধা ম্যাক্রো ওয়ার্ল্ড বা সামষ্টিক বস্তুজগতের মতোই নির্ধারিত। তাকে ব্যবহার করে কোয়ান্টাম বিটস নির্ভর কম্পিউটার তৈরি ও ঝটপট কাজ সেরে নেওয়া সময়সাপেক্ষ তো বটেই,—এটি সেখানে ধীরগতির ফলাফল প্রদান করবে বলে ধরে নিতে পারেন। যে-কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গতি আহামরি কিছু নয়। প্রচলিত/ধ্রুপদি কম্পিউটার থেকে পাওয়া গতির কাছাকাছি ফলাফল দিচ্ছে এখনো।

ধ্রপদি কম্পিউটারের জন্য ব্যবহৃত তরিকায় যখন ইলেকট্রনকে আপনি বাঁধছেন, সেখানে তার স্পিনিং নির্দিষ্ট বা ওই বাইনারি শূন্য (০) আর এক (১)-এর ম্যাটিক্সে এসে ধরা খাচ্ছে বারবার। সুতরাং এ-পদ্ধতি থেকে বের হতে না পারলে সত্যিকার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আমরা এখানে তাপশক্তির কারণে সৃষ্ট কণার বিশৃঙ্খল অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে স্থির ও নির্দিষ্ট, কিন্তু অতিব গতিশীল ফলাফল পেতে চাইছি।

গাণিতিকভাবে সম্ভব হলেও, ল্যাবে কাজ করতে গিয়ে বেশিদূর আগানো সম্ভব হচ্ছে না। আপনি প্রশ্নটি এমনভাবে রেখেছেন, চ্যাট জিপিটি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা পিক করেছে, এবং ভালো আনসার দিতে দেরি করেনি। শুরুতে ওই-যে কাব্য করে বলেছে : Building a violin out of spider silk and playing a symphony at absolute zero. তার কাব্যিকতা এখানে যথার্থ। ক্লাউডে কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে ব্যবহার করা থেকে পরবর্তী যেসব কথা সে বলেছে,—সেগুলো হচ্ছে সম্ভাবনা; কিন্তু এখনো কোনো নিশ্চয়তা নয়। তবে, ধ্রুপদি কম্পিউটারের মডেলে রেখে কাজ করানোর ঝামেলা যদি এড়ানো যায়,—অবিশ্বাস্য গতিতে ফলাফল প্রদান ব্যাপার থাকবে না।

আপনার রাখা অন্য একটি প্রশ্ন, যেখানে আপনি তার কাছে জানতে চেয়েছেন,—হার্ডওয়্যার ছাড়া কেবল প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি সম্ভব? উত্তর কিন্তু ভালোই দিয়েছে সে। ধরুন, আপনি গ্রোগ্রামিং কোড ব্যবহার করে ভার্চুয়াল বা বায়বীয় কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করলেন,—এখন তাকে অপারেট করবেন কোথায়? ধ্রুপদি কম্পিউটারে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার (অর্থাৎ মাদারবোর্ড, প্রসেসর ও RAM ইত্যাদি) একে চালাতে পারবে না। আবার এর উপযোগী হার্ডওয়্যারও আপনি পাচ্ছেন না। সফটওয়্যার কাজেই কোনো কাজে আসবে না। এমনকি প্রচলিত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে যেসব সোর্স কোড আপনি লিখবেন, সেগুলোর জন্য ওই প্রচলিত ল্যাঙ্গুয়েজকে নতুন করে সৃষ্টি করতে হতে পারে। যেরকম, আদিতে ইউনিক্স দিয়ে সি-কে পুনরায় লিখেছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা।

Futuristic Model of a Super Quantum Computer – Prescribed Chat GPT; Image Source – From GPT Conversation

এখানে এসে জিপিটি আপনাকে কনভিন্স করতে নিজের বাহাদুরি জাহির করেছেন। কী সেটা? নিজেকে, মানে এআইকে তিনি মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাবনা রেখেছেন। মানুষ আগে সুপার এআই তৈরি করবে, যেটি হবে আচরণের দিক থেকে জৈব গুণসম্পন্ন, এবং তাকে দিয়ে সৃষ্টি হবে সুপার কোয়ান্টাম কম্পিউটার! কাজটি করতে গেলে এআইকে আগে ইলেকট্রনের পাগলাটে আচরণকে সীমায় বাঁধার ক্ষমতা করতে হবে অর্জন। সেটি কীভাবে ঘটবে? তার দেওয়া প্রেসক্রিপশন বারবার পড়েও ধরতে পারিনি। সে যদিও বলেছে,—এটি তৈরিতে সে কী ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করবে ইত্যাদি।

যেমন, নিউরাল-সিম্বলিক চিপ (neural-symbolic chip), মেমোরি মডেল (memory model), অ্যানালগ অথবা নিউরোমরফিক সিলিকন (analog or neuromorphic silicon),—কোয়ান্টাম বিটসকে যারা নিশ্চিত আচরণে বেঁধে রাখবে। চ্যাট জিপিটির প্রস্তাবনা মোতাবেক কোয়ান্টাম বিটসের বল্গাহারা অনিশ্চয়তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম কাঁচামালগুলো না-হয় জোগাড় করা গেল;—কিন্তু এর সাহায্যে যে-মস্তিষ্ক তৈরি হবে,—তার ব্যাপারে জিপিটির ব্যাখ্যা ধাঁধার মতো শোনাচ্ছে!

It doesn’t need actual qubits—it transcends them by computational abstraction. জিপিটি আপনাকে এই-যে কথাটি বলেছিল, এর মানে যদি সঠিক বুঝে থাকি, তাহলে ধরে নিতে হয়,—কোয়ান্টাম মেকানিক্সে নিহিত অনিশ্চয়তা দূর করতে সে এখানে ট্রিকস বা চাতুরির আশ্রয় নিতে চাইছে। ইলেকট্রনের পাগলা ঘূর্ণন বা ওপর-নিচে যেমন খুশি গমনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ভাবনা বাদ দিয়ে বায়বীয় ও কোয়ান্টাম বিটস সদৃশ বা সিমুলেটেড কিছু তৈরির প্রস্তাব দিচ্ছে সে! ক্যামনে সম্ভব! আমার মাথায় ঢোকেনি! সুতরাং, This is a whole new category — not fake quantum, not real quantum, but computationally emergent intelligence with quantum principles baked in. জিপিটি মামার খোয়াবঘন কথাবার্তার আরো বিস্তারিত ব্যাখ্য বোধহয় তার কাছে আপনি চাইতে পারেন।

কম্পিউটারের সাহায্যে বাস্তব জগতের প্রতিলিপি বা সদৃশ জগৎ তৈরির ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির ভাবনা চ্যাট জিপিটি বাতিল করেছেন। আপনি তাকে এআই ও কোয়ান্টাম অ্যালগরিদমের যোগসূত্র থেকে তৈরি Super AIQAP (Artificial Intelligence + Quantum Algorithmic Processor)-এর আউটলাইন দিতে বলেছিলেন। জিপিটি মহাশয় তা চটলজলদি সরবরাহও করেছেন আপনাকে। এখন, তাঁর দেওয়া আউটলাইনকে বর্তমানে ব্যবহৃত ধ্রুপদি কম্পিউটারের সাহায্যে তৈরি সিমুলেটেড রিয়েলিটি বা বাস্তবতার প্রতিলিপি থেকে তো আলাদা করা যাচ্ছে না! একইরকম লাগছে দেখে!

Chat GPT on Super AIQAP Computer Model; Image Source – From GPT Conversation

কোনো সন্দেহ নেই, বর্তমানে প্রচলিত কম্পিউটারের সাহায্যে যে-জগৎ আমরা তৈরি করেছি, সেখানে এআই অ্যপস থেকে আরম্ভ করে ফেসবুক ও আরো যত কিছু এ-পর্যন্ত এসেছে,—তার সবটাই সিমুলেশন/প্রতিলিপ বা সদৃশতার ছক মেনে সৃজন করেছে মানুষ। নকল এক বাস্তবতাকে আমরা যেখানে আসল ভেবে অনলাইনে পড়ে থাকি। ধ্রুপদি কম্পিউটারে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার অত্যন্ত মসৃণভাবে পরস্পরের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কারণে সিমুলেশনটি সম্ভবপর হয়েছে।

Super AIQAP কম্পিউটারের ক্ষেত্রে জনাব জিপিটির প্রস্তাবনা পাঠের পর প্রখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিংয়ের কথা আগে মনে পড়েছে আমার। ইংরেজ এই গণিতবিদ বিজ্ঞানীকে আমরা বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটার মডেল ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদি রূপকার হিসেবে মানি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনিশ্চয়তাভরা দিনগুলোয় অ্যালান দুটি সমস্যা নিয়ে জেরবার ছিলেন। নিজ দেশের সরকার তাঁকে গোয়েন্দাসূত্রে পাওয়া ও নাজিদের ব্যবহৃত সাংকেতিক বার্তার অর্থ উদ্ধারের জন্য চাপ দিচ্ছিল। কাজটি করতে গিয়ে টুরিং মেশিনের ভাবনায় তিনি গমন করলেন।

এখন, বেচারা অ্যালান টুরিং ওইসময় তার যৌনজীবন নিয়ে ছিলেন বিপর্যস্ত। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সহজাত আকর্ষণ ও প্রেমানুভূতি তারও ছিল;—কিন্তু, কুইন ব্যান্ডের ফ্রেডি মারকারির মতো নিজের সত্তায় সমকামের তীব্রতা আকস্মিক আবিষ্কার করে বসেন তিনি। সামাজিকভাবে এটি তাঁকে অনেকের কাছে সন্দেহের পাত্র করে তুলেছিল। এমনকি নিজ দেশের সরকার সন্দেহে ভুগতে থাকে;—তিনি কি তবে ডাবল এজেন্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ! এই টানাপোড়নের মধ্যে সাংকেতিক বার্তার অর্থ উদ্ধার ও নির্ভুল তরিকায় দ্রুতগতিতে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম যন্ত্রের ভাবনা তাঁকে কুরে-কুরে খাচ্ছিল।

সে যাইহোক, টুরিং মেশিন নামে পরে বিখ্যাত হয়ে ওঠা যন্ত্রের গাণিতিক মডেল ও প্রস্তাবনা নিয়ে বিস্তারে যাচ্ছি না। The Imitation Game ছবিটি যারা দেখেছেন, তারা এর সবটা ভালো জানবেন। গুগল বা চ্যাট জিপিটিকে জিজ্ঞেস করলেও গড়গড় করে সব বলে দেবে। তবে হ্যাঁ, মেশিনটির গাণিতিক মডেল তৈরিতে তিনটি বিষয় টুরিং তখন আমলে নিয়েছিলেন :

Turing breaks Enigma – The Imitation Game (2014); Source – Weyland YTC

তথ্য বা ডেটাকে প্রসেস করতে সক্ষম মেমোরি বা স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য টেপজাতীয় কিছু এখানে লাগবে।

তথ্যকে পড়তে ও লিখতে পারবে এরকম কোনো যান্ত্রিক উপাদান, যাকে তিনি হেড বলছেন,—সেটি বানিয়ে নিতে হবে। এবং…

তথ্যকে ইলেকট্রনিক সিগন্যালে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া, অর্থাৎ ট্রানজিশন টেবিল নামক কোডিং সিস্টেম তৈরি করে নিতে হবে।

মানে দাঁড়াল, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের একখানা যুগলবন্দি তাঁর প্রস্তাবনায় আমরা তখন পাচ্ছি। সার্কিটবোর্ডে সন্নিবিষ্ট প্রসেসর, RAM, হার্ড ডিস্ক ইত্যাদি, এবং এগুলোর সঙ্গে সমন্বিত হয়ে কাজ করতে সক্ষম প্রোগ্রামিং কোড দিয়ে তৈরি সফটওয়্যার বা অ্যাপস। যে-কারণে টুরিং মেশিনের ভাবনা পরে বর্তমান কম্পিউটার তৈরিতে যুগান্তকারী অবদান রেখেছিল। চ্যাট জিপিটি প্রস্তবিত Super AIQAP-কে আমার এখন ওই টুরিং মেশিনের মতো কিছু একটা মনে হচ্ছে।

তার কাছে অগত্যা জানতে চেয়েছিলাম,—টুরিং মেশিনের ধারণা ব্যবহার করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সৃজন সম্ভব কি-না! উত্তরে সে ডেভিড ডয়েচের নাম নিয়ে জানাল, তিনি নাকি আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে কোয়ান্টাম টুরিং মেশিন (Quantum Turing Machine) তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই মেশনটি কোয়ান্টাম সুপারপজিশন অবস্থায় অনেকগুলো গাণিতিক পথকে একসঙ্গে হিসাব করতে পারবে। এর ফলে কম্পিউটারের গণনা ও ডেটা প্রসেস অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে ঘটতে থাকবে।

জানতে চেয়েছিলাম,—ইলেকট্রনের অনিশ্চিত আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে ফেইক ট্রিকস কতখানি কার্যকর ফল এনে দিতে পারবে? যেখানে আমরা বাস্তবিক কোয়ান্টাম বিটস নিয়ে কাজ করছি না, কিন্তু কোয়ান্টাম বিটস ব্যবহার করলে যে-গতি পাওয়ার কথা,—কম্পিউটার প্রসেসর তা দিতে থাকবে। উত্তরে সে আপনাকে যা বলেছিল, তার কাছাকাছি তথ্য আমাকেও দিয়েছে। তার মতে, তাত্ত্বিকভাবে এটি সম্ভব,—যদি আমরা কোয়ান্টাম সিমুলেটর (quantum emulator) নামক কিছুর কথা ভাবি। তবে সীমাবদ্ধতাগুলো সে ভাগ করে দেখিয়েছে সেখানে; —যেমন :

ক. ক্লাসিকাল (ধ্রুপদি কম্পিউটার)-এর ভিত্তি ও বৈশিষ্ট্য

ভিত্তি : টুরিং মেশিন ও বিট;
প্রকৃতি : নির্ধারিত;
সিমুলেশন বা সদৃশতা : সম্ভব, কিন্তু সীমাবদ্ধ
আচরণ : নিশ্চিত ও নির্ধারিত

খ. কোয়ান্টাম কম্পিউটার

ভিত্তি : কিউবিট, সুপারপজিশন;
প্রকৃতি : অনির্ধারিত;
সিমুলেশন বা সদৃশতা : নিজস্ব আইন দিয়ে চলে;
আচরণ : সম্ভাব্যতা নির্ভর ফলাফল প্রদান করবে;

যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে Super AIQAP-র ক্ষেত্রে তার প্রস্তাবনা আমার পুরোপুরি বোধগম্য হয়নি। সফটওয়্যারে নকলি কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির মতো একেও যে-কারণে অবাস্তব লাগছে কানে!

David Deutsch Explains Quantum Computers; Source – elzr YTC

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ফিলোসফি এখানে আসলেও জটিল। বর্তমানে আমরা যে-কম্পিউটার ব্যবহার করছি, তার আচরণ নির্ধারিত ও নিশ্চিত। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার মিলে সুনির্দিষ্ট চাহিদা পূরণে তারা সদা হাস্যমুখ। এমএস ওয়ার্ড বা গুগল ক্রোম খোলার জন্য আপনি মাউসে চাপ দিলেন। প্রসেসরের কাছে সিগন্যাল চলে গেল। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারে কোনো ঘাপলা না থাকলে মাউস মারফত পাওয়া অনুরোধে সম্মতি জানাতে প্রসেসর দিরং করে না। এমএস ওয়ার্ড কিংবা ক্রোম খুলে যাচ্ছে ঝটপট। কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে এই ধরনের নির্দিষ্ট আদেশ পালনে অভ্যস্ত করানো হচ্ছে কঠিনতম কাজ! এর জন্য ব্যবহৃত মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ গড়ে তুলতে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এখনো হিমশিম খাচ্ছেন মনে হলো।

অন্যদিকে, তাত্ত্বিকভাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সক্ষমতা মারাত্মক হওয়ার সকল সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন, কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে আমার-আপনার মস্তিষ্কের সংকেত পড়তে পারঙ্গম করে তোলা খুবই সম্ভব। তখন দেখা যাবে, আপনি তার সংস্পর্শে আসা মাত্র এমএস ওয়ার্ড বা গুগল ক্রোম মনিটরে সে আগেভাগে খুলে রেখে বসে আছে! মাউস-ফাউসের দরকার হচ্ছে না। কারণ, সে আপনার ব্রেন থেকে আগেই তথ্য নিয়ে নিচ্ছে, এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করে এই আন্দাজ করছে,—এমএস ওয়ার্ড বা ক্রোম খুলে কাজ করার মতলবে আছেন আপনি।

মানুষের মন পড়ার এই তরিকা কেবল কল্পবিজ্ঞানের বিষয় নয়;—সামনে এটি বাস্তব হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।নৈতিকতার প্রসঙ্গ সেখানে নতুন করে ঝড় তুলবে সমাজে। এভাবে প্রিয় কোনো গান হয়তো মনে-মনে আওরাচ্ছেন আপনি। ব্যাটা তা ধরে ফেলবে। ঝটপট সেটি প্লে করতে দেরি করবে না। এখন তার এসব কাজের ধারাকে সবসময় নির্দিষ্ট পথে করানো কঠিন। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের যেটি মূল নীতি, অর্থাৎ সুক্ষ্ম পর্যায়ে পরমাণুর অভ্যন্তরে সক্রিয় ইলেকট্রনের আচরণ অনিশ্চিত, এবং সে-কারণে জগৎ নিশ্চয়তার মধ্যেও অনিশ্চয়তায় ঠাসা;—ইত্যাদি কারণে কোয়ান্টাম বিটসের মাধ্যমে দ্রুতগতির কম্পিউটার সহসা আমরা পাবো বলে মনে হচ্ছে না!

ইলেকট্রনের যে-স্পিনিংকে আপনি এখানে ব্যবহার করে ফায়দা তুলতে চাইছেন,—কোয়ান্টাম সুপারজিশনের অবস্থায় ইলেকট্রনের পাগলা ঘূর্ণিকে বশে এনে সবসময় নিখুঁত ফলাফল প্রদান,—কাজটি মাইক্রো লেভেলে পরমাণুর অনিশ্চিত আচরণের কারণে সহজসাধ্য নয় মোটেও। সেল বায়োলোজি ওরফে কোষবিজ্ঞানে প্রায় অনুরূপ সমস্যা বিদ্যমান বলে বিজ্ঞানীরা আওয়াজ দিচ্ছেন। যেমন, ডারউইন প্রাণীজগতের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেছেন নিবিড়ভাবে। তাঁর থেকে এই তত্ত্ব আমরা পেয়েছি,—প্রকৃতিতে বিবর্তন ও অভিযোজনের শৃঙ্খল মূলত আমাদের দৈহিক গঠনকে লম্বা সময় ধরে পরিবর্তীত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করছে। সেখানে আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা, যেমন ধরা যাক অব্যাহত পরিবেশ দূষণ, ক্ষতিকর রাসায়নিক বিকিরণ বা পরমাণুযুদ্ধ জীবজগতের স্বাভাবিক বিবর্তনকে ত্বরিত ও নাটকীয় করে দিতে পারে।

ওদিকে, জিনবিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স পরিষ্কার বলে দিয়েছেন,—জিনে নিহিত রাসায়নিক সংকেতের ইতিহাস হচ্ছে স্বার্থপরতার ইতিহাস। অস্তিত্বরক্ষার খাতিরে প্রতিটি প্রাণী কমবেশি জেনেটিক পর্যায়ে স্বার্থপর। কোষবিজ্ঞানীরা এখানে আবার উলটো সুর গাইছেন। ডারউইন বা ডকিন্সের তত্ত্ব ভুল, সে-কথা তাঁরা বলছেন না, তবে তাঁদের তত্ত্বকে ম্যাক্রো বা বৃহৎ বস্তু ও প্রাণীজগতে খাটে বলে রায় দিচ্ছেন।

Inventing Game of Life – John Conway; Source – Numberphile YTC

কোষের অভ্যন্তরে অন্য ছবি আভাসিত বলে মানছেন তাঁরা। কোষগুলো পরস্পরের সঙ্গে যেখানে মিতালি পাতিয়ে বসবাস করে। যেটি আবার জন হর্টন কনওয়ে’র কম্পিউটারে সৃষ্ট সেলুলার অটোম্যাটন বা জীবনখেলার অনুরূপ ছকে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকার মধ্যে বাঁচে-মরে। বৃদ্ধি পায় ও নিকাশ হয়। সেখানে রয়েছে ঐক্য ও সংহতি। স্বার্থপরতার লেশমাত্র নেই। তারা একে নাম দিয়েছেন সিমবায়োসিস। গণিতবিদ কনওয়ে এভাবে মন সৃষ্টির নেপথ্য কার্যকারণকে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর জীবনখেলা গেমটি একসময় কম্পিউটারে বসে খেলেছি, যেখানে কোষের জন্মমৃত্যু ও অসীমতার সবটাই পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল। কনওয়ের শর্ত জানাচ্ছে :

Conway’s Game of Life; Source – Wikipedia

একটি নিঃসঙ্গ জীবিত কোষ যদি দুই থেকে তিনটি জীবিত কোষকে প্রতিবেশী রূপে কাছে পায়, তাহলে তাদের মিলন থেকে নতুন কোষ দেহে জন্ম নেয়

জীবিত কোষ যদি দুইয়ের কম (১ অথবা ০) কোষকে প্রতিবেশী হিসেবে পায় তবে জনসংখ্যায় ঘাটতি (Under Population) থাকায় মারা যায়।

প্রতিবেশী কোষের সংখ্যা তিনের বেশি হলে অধিক জনসংখ্যার (Overpopulation) কারণেও মরতে হয় তাকে। এবং...

মৃত কোনো কোষ যদি তিনটি জীবিত কোষকে কাছে পায়, তাহলে পোয়াবারো। মৃতসঞ্জীবনীর পরশে সে বেঁচে ওঠে। নতুন করে জীবন ফিরে পায়।

পুনর্জন্মচক্র বোধকরি এভাবে কাজ করে জগতে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে সত্যিকার অর্থে নির্দিষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত ফলাফল সরবরাহে অভ্যস্ত করতে হলে ইলেকট্রনকে এরকম সিমবায়োটিক স্বভাবে বাঁধা প্রয়োজন। এখানে এসে চ্যাট জিপিটি সিমুলেশনের আলাপ তুলেছিল। সে বলছে,—কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে আমরা ভানের আশ্রয় নেবো।

Conway’s Game of Life; Source – Wikipedia

আমরা কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে ইলেকট্রনের আচরণ কেমন হতে পারে তা জানি, এবং এর ফলে কতটা অস্বাভাবিক গতি সে পয়দা করতে পারে,—তার ব্যাপারেও ধারণা রাখি। এখন, একে নকল করা যায় এরকম প্রোগ্রামিং কোড ব্যবহার করে আমরা গড়ে তুলব নকল পরিবেশ, এবং সেখানে ওপরে-নিচে তার অনিশ্চিত ঘূর্ণিকে নির্দিষ্ট করে দেবো। কিউবিটসের সমপরিমাণ গতি সে পয়দা করবে আমাদের দেখানো নির্দিষ্ট পথ ধরে।

অর্থাৎ তার স্বভাবকে বাস্তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় জেনে বাস্তবানুগ কিন্তু নকল বাস্তবতায় তাকে নিয়ন্ত্রণ করব আমরা। এটি তো তাহসিন ভাই,—ঘুরেফিরে বর্তমানে চলতে থাকা সিমুলেশন থেকে পৃথক মনে হচ্ছে না! পৃথক করতে হলে অতিকায় মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করা লাগবে। কে তৈরি করবে তা? এর পেছনে খর্চা ইত্যাদির কিনারা কিন্তু জিপিটি দিতে পারেনি। 
. . .

The Simulation Hypothesis Explained by Nick Bostrom; Source – Science Time YTC

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 37

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *