পোস্ট শোকেস - বিবিধ ও বিচিত্র

গানের শ্রোতা যখন মহান প্রাণীকুল

Reading time 3 minute
5
(28)
Singing for Animals compilation; Artist: Robthedrums; Source – Plumes YTC

প্লুমস (Plumes) ফরাসি শিল্পী ও শব্দকুশলী। সাউন্ড ডিজাইনের পাশাপাশি নিজে গান করেন। ফরাসি ব্যান্ড রব-দ্য-ড্রামস-র (Robthedrums) হয়ে পশু-পাখিদের গান শোনানোর কাজে নেমেছিলেন। প্রকৃতির অনন্য মহান সৃষ্টির সামনে গিটার হাতে গান করে বেড়িয়েছেন টানা। চিড়িয়াখানা ও সাফারির উন্মুক্ত প্রান্তরে বসে বাঘ-সিংহ-হাতি-গন্ডার আর পেট অ্যানিমেলদের গান শোনাচ্ছেন, আর তারাও বেশ কৌতূহল নিয়ে শুনছেন বটে! শান্ত মনে সমজদার শ্রোতার মতো শুনছেন প্লুমসের (Plumes) গিটার বাদন ও গলার কারিকুরি। ঘোড়া বাবাজিরা আবার এই সুযোগে হাগ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন,—মন্দ গাইছো না বাছা, ভাল্লাগছে বেশ। হাতি, আমরা সকলে জানি, অতি উচ্চমাত্রার সামাজিক প্রাণী ও বুদ্ধিমান। দলবেঁধে চলাফেরা করে সবসময়। প্লুমসের (Plumes) স্বপ্ন ছিল এই বুদ্ধিমান দানবের সামনাসামনি গান করার। ফলাফল, তাঁর প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।

হাতির মতো সিংহও পারিবার অন্তপ্রাণ জন্তু। সাফারিতে আমরা দেখি,—বনের রাজা তার টেরিটোরি দখলে রাখতে পরিবার নিয়ে ঘোরেন-ফিরেন রাজসিক। সিংহের পাল যে কোন মাত্রায় সামাজিক ও ভালোবাসা ফেরত দিতে ওস্তাদ, সেটি সুইস নাগরিক ডিন স্নাইডারের (Dean Schneider) ভিডিও দেখলে অনেখানি ঠাহর হয়। বিলাসবহুল জীবনের মায়া ত্যাগ করে ডিন বন্য জীবজন্তুর সঙ্গে অধিক সময় কাটান। দক্ষিণ আফ্রিকায় হার্টল্যান্ড নামে অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন নিজ উদ্যোগে। পাবলিক সোজা কথায় মারাত্মক! বাঘ-সিংহ-চিতা-হায়েনার মতো শিকারি প্রাণীর সঙ্গে তার মেলামেশা ও ভালোবাসা দেখলে চোখ কপালে ওঠে। ডিন তা-বলে তথাকথিত ট্রেইনার না। বন্য জন্তুকে একজন ট্রেইনার যেসব নিষ্ঠুর পদ্ধতিতে বশে আনে, তাঁর কাজকারবার সেখানে একদমই আলাদা।

সিংহের মতো ভয়ানক শিকারির সঙ্গে তাঁর সহবত অন্য পথে গড়ে উঠেছে। দোস্তি দেখলে জাস্ট মাথা ঘোরে! ক্যামনে সম্ভব! দুটি কৌশল রপ্ত করার মধ্য দিয়ে সিংহ পালে আদরের হয়ে উঠেছেন ডিন। দিনের-পর-দিন আফ্রিকার সাফারি ও সিংহ সংরক্ষণ কেন্দ্রে সিংহপালের বডি ল্যাাঙ্গুয়েজ তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁর মতে,— দলবদ্ধ সিংহ পরিবারের একজন হতে গেলে তোমাকে নিজের মর্জি শতভাগ ছাড়তে হবে আগে। তাদের দেহের ভাষা ও গর্জন কী বার্তা বহন করে,—সেগুলো খুব ভালোভাবে ধরতে পারা চাই। যেখানে, বডি ল্যাঙ্গুয়েজের ভূমিকা একুনে নব্বই শতাংশ, আর বাকিটা মুখের। বুঝতে হবে পুরুষ ও মাদী সিংহের মনমেজাজ। একটি টেরিটোরিকে শাসন করে বেড়ানো পুরুষ সিংহ ও সিংহিনী, তাদের ছানাপোণা ও ভাইবেরাদরের পরস্পরের প্রতি মমতা ও দায়িত্ববোধ, শাসন, আর লড়াইয়ের ভাও যখন রপ্ত করতে পারবে, তুমি নিজে বুঝে যাবে,—কীভাবে তাদের কাছে গেলে তারা তোমাকে আপনা করে নেবে। তুমি তখন হয়ে উঠবে তাদের পরিবারের একজন। 

How to cuddle a Lion! – Dean Schneider; Source – Dean Schneider YTC

ডিনের ভিডিও প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙে দেয়। মানুষ ধরে নিয়েছে,—ক্ষুধার্ত কোনো সিংহ বা সিংহের পাল নিশ্চিতভাবে ভয়ংকর। তাদের সামনে পড়লে ভবলীলা সাঙ্গ হওয়া অবধারিত। ডিন জানাচ্ছেন,—মনুষ্যসমাজে প্রচলিত এই ধারণাটি ভুল। ক্ষুধার্ত থাকার পুরো সময়জুড়ে সিংহপাল পরস্পরের সঙ্গে নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ হয়ে চলাফেরা করে। তারা জানে, এছাড়া শিকারকে পাকড়াও করা সহজ নয়। তাদের সামাজিক সংহতি ওই সময় বরং পিক মোমেন্টে থাকে। ডিন এভাবে তাদের সঙ্গে থেকে দেখেছেন কীভাবে তারা শিকার ধরে।

তো এই পরিবারঅন্তপ্রাণ রাজসিক প্রাণী, যার গর্জন পাঁচ মাইল দূর থেকে শোনা যায়, যে-তার গর্জন দিয়ে জানান দেয় পরাক্রম ও রাজসিক অস্তিত্ব,—সেই সিংহকে চিড়িয়াখানার খাঁচার বাইরে বসে গান শুনিয়েছেন প্লুমস (Plumes)। একলা পুরুষ সিংহ যেখানে গানের শ্রোতা! কী নির্মম! যার বনে ঘুরে বেড়ানোর কথা রাজসিক চালে, তাকে মানুষ খাঁচায় পুরে সঙ বানায়। প্লুমস (Plumes) তা ধরতে পেরেই যেন-বা সিংহরাজাকে সেই গানখানা শুনালেন, যেটি তার এই রাজ্যহারা নিঃসঙ্গ যাপনের বেদনা তুলে ধরছে। সে যাইহোক, গানের ব্যাপারে সিংহমামাও বিরক্ত নন মনে হলো। শুনলেন বেশ মন দিয়ে;—হাত-পা টান করে মাটিতে শুয়ে। ঝাক্কাস! আর নাচুনে টিয়া পাখি ও সর্বদা অস্থির বানরবাহিনি তো গানের তালে নাচ ও হাততালি দিলেন বেশ।

ভাবছিলাম, হবে না কেন! সংগীতের সকল স্বর ও সুর তো মানুষ প্রকৃতি থেকে নকল করে গলায় আর বাদ্যযন্ত্রে তুলেছে। ধ্রুপদি রাগ সংগীতের সবটাই প্রকৃতির অনুকরণে সৃষ্ট। পশুপাখি থেকে আরম্ভ করে বিচিত্র সব আওয়াজ প্রকৃতিতে অবিরত তরঙ্গ তুলছে, তার থেকেই তো সবটা শেখা মানুষের।

প্রকৃতি এক মহান শিল্পী, আর আমরা সকলে তার গর্ভ থেকে ধরায় ভূমিষ্ঠ হয়েছি। প্লুমস (Plumes) ওই-যে বব ডিলান থেকে আরো যত শিল্পীর গান পশুপাখিদের শোনালেন, সেখানে শব্দতরঙ্গে নিহিত স্বর ও সুরধ্বনির সবটা আদিতে তাদের কাছ থেকে মানুষের নেওয়া। তিনি এখন কেবল এর অতি উন্নত ও বৈচিত্র্যে বর্ণিল সংস্করণ নিয়ে হাজির হয়েছেন তাদের সামনে। তাদের মস্তিষ্ক এই শব্দকম্পনকে মিত্র বলে বুঝে নিতে ভুুল করেনি।

যেমন ভুল করে না তৃণলতা। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় এটি প্রমাণিত,—বাখ-বিথোভেন-মোজার্টদের হাতে সৃষ্ট ধ্রুপদি সংগীত তৃণলতাকে সতেজ ও পরিপুষ্ট রাখতে ভূমিকা রাখে। শব্দকম্পনে নিহিত সুর তাদের জন্য ক্ষতিকর না হয়ে বরং রিফ্রেশিং হয় অনেকখানি। তবে, উচ্চনাদের গানবাজনা যে-শব্দকম্পন ছাড়ে, এর প্রভাবে তৃণলতার শুকিয়ে যাওয়ার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। প্লুমস (Plumes) যদি হেভিমেটালে ঠাসা হার্ড বা ডেথ রক গাইতেন পশুপাখিদের সামনে, তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা হয়তো প্রবল হতো। উচ্চকম্পাঙ্ক সচরাচর পশুপাখিদের ভীত ও বিরক্ত করে থাকে। মানুষের চেয়ে তাদের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হাজারগুণ শক্তিশালী হলেও উচ্চনাদ তারা পছন্দ করে না। সইতে পারে না একদম। চড়ুইপাখির শ্রবণশক্তি হারানোর পেছনে যেমন মোবাইল টাওয়ার থেকে ছড়ানো তরঙ্গের ভূমিকা গবেষণায় উঠে এসেছে।

মানুষের শ্রবণশক্তি ক্ষমতার দিক থেকে অতটা শক্তিশালী নয় বলে উচ্চনাদকে সুরের মোহময় বিন্যাসে অন্যরূপ দিয়েছে;—যেন তার ফিল সে ভিতরে নিতে পারে। বাঘ-সিংহ-হাতি-গন্ডার অথবা মহাসাগরে সাঁতার কেটে বেড়ানো তিমি-ডলফিন-হাঙ্গরের মতো সুমহান প্রাণীর ক্ষেত্রে উচ্চনাদ অনাবশ্যক। কারণ, তাদের গর্জন অথবা মুখ নিঃসৃত আওয়াজে নিহিত পরাক্রম ও বৈভব নিজেই রক! রকারদের সেখানে কী-বা প্রয়োজন! 
. . .

All animals love Plumes music; Podcast with Mark A Kyle; Source – The Fur Real Podcast with Mark A Kyle YTC

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 28

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *