
স্ট্রাগল ও অন্ধস্তবক
১
শরীরে রাষ্ট্র আঁকছি
আমাদের পোষা অন্ধকারে
বসে আছেন—
একজন সক্রেটিস
২
আমরা অন্ধ সিভিলাইজেশনের
পা ধরে
দাঁড়িয়ে আছি—
বাকহীন তামাশায়…
৩
রক্ত-জলাসারে
রাত্রি কাটছে—
অন্ধকারে স্তূপ হচ্ছে
স্মৃতিভস্মের ছাই
শরীরময়
৪
ছুঁয়েও দেখনি
চিতা জ্বলছে—
আমার একলা একলা লাগে
বিরহ বিপন্ন জীবন
৫
এই মরু-কাফেলায় বহর নিয়ে
আরবের দেশে যাচ্ছ
এতো সংশয় জেনেও
মনে মনে বেঁধেছি—
নীরবে মদিনা মনোয়ারা
৬
দেহপাশে বইছে
জলপয়ার
মাতাল রাত্রিজুড়ে
বৃষ্টি ভারি কামকাতর
৭
সব ট্যাটু আঁকা আছে
অশ্লীল
নগ্ন কার্নিভ্যাল এক
ছদ্মবেশী
নিদ্রালসা …
৮
দেহে দোল খাচ্ছে
লাল মেটাফোর
মহাজগতের মতো
নিমগ্ন-চারপাশ
৯
আমরা মরা রোদের মতো
হাঁটছি—
মস্তিষ্ক নিউরনে অজস্র
অ্যালজাইমার নিয়ে
১০
কেঁদো না ময়ূরাক্ষী
সুরার গন্ধ নিয়ে কেন
রাত করে বাড়ি ফিরো
আমি জানি

অন্তর্বাস
সময়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে চলে যাচ্ছে—
এ-ভবঘুরে জীবন
সবকিছু বিমুখ হয়ে আছে
ধস নামছে
শূন্য-অনুভূতি নিয়ে
সমর্পণে ফিরব না জেনো
গুটিয়ে নেবো, সয়ে যাব
সকল ধসের রেস
. . .
বিরাগ
কেন যে গায়ে পড়ে ক্ষুব্ধ করো, বিরাগ করো, বার বার
আমি তো নদীহারা, জলহারা
রাতগুলো সঙ্গী করে দেখেছি—
জলে ভেসে যাওয়ার
স্বপ্ন শুধু মনে মনে আজ
শরীরে আমার বণিক বণিক গন্ধ গেল না
. . .
ব্যঞ্জনা
আমার শরীরে কোথায়ও না কোথায়ও একটা ক্ষত আছে, একটা তীব্র তীর গেঁথে আছে জীবন
হৃদয়ে করুণ ভায়োলিন …
প্রতিদিন বেজে যাচ্ছি
তোমার
অন্তঃপুরে রাত্রি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অস্ফুট আভা নিয়ে দূরে
শীত-উপত্যকায়
. . .

নব্বই দশকি কবিতায় অন্তর্মগ্ন স্বরব্যঞ্জনায় আলাপ সারতে অভ্যস্ত কবিদের একজন জওয়াহের হোসেন সুরমা পাড়ের ছেলে। বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই কবি তিন দশক অতিক্রম করেছেন কবিতায়। দীর্ঘ সময় ধরে কবিতায় যাপন করলেও লিখেছেন কম। প্রথম প্রকাশিত কবিতাবই নগরমুসাফির ও মোনাজাত। যুগিভাব সঙ্গ বেরোয় তার কিছুদিন পর। যুক্তরাজ্যে গমনের পর বেরিয়েছে কবির আপাত সর্বশেষ কবিতাবই একাকী, শব্দ নৈঃশব্দ্য। একতারা নামে ছোটকাগজ সম্পাদনা করেছেন কবিজীবনের গোড়ায়। কাগজটি এখন হিমঘরে পুনর্জন্ম লাভের অপেক্ষায় থাকলেও, ছোটকাগজ ও অনলাইন সাহিত্য মুখপত্রে বিচরণে স্বচ্ছন্দ এই কবি। কবি ও গদ্যশিল্পী খোন্দকার আশরাফ হোসেন সম্পাদিত একবিংশ-এর সঙ্গে ছিল নিবিড় সংযোগ। জওয়াহের হোসেনের কবিতা ধারণ করে ব্যক্তির বোহেমিয়ান হওয়ার বাসনাঘন সংবেদ। কবি যেখানে সাবলীল মিশিয়ে দেন প্রেম ও যৌনকাতর সংরাগ। জওয়াহের হোসেনের কবিতা বিচিত্রভাবিক নয়। পূর্ববর্তী কবিতা-দশকের অনুরণন বড়ো একটা প্রবল নয় তাঁর কবিতায়। কবি গোড়ায় ধারণ করেছেন নব্বই দশকি কবিতার বিশিষ্ট ঘরানা,—মোস্তাক আহমাদ দীনসহ আরো অনেকে যার চর্চা করেছেন ব্যাপক। লোকায়ত অনুষঙ্গ, বিশেষভাবে বাউলাঙ্গের প্রতি ঝোঁক কবি জওয়াহের হোসেনের কবিতায় ফিরে-ফিরে প্রাসঙ্গিক দেখে পাঠক। নগর মুসাফির থেকে যুগিভাব সঙ্গ অবধি নিজের ব্যক্তিসত্তাকে নগরবন্দি বাউল ভবঘুরে ভাবার প্রবণতায় কবি স্থির থেকেছেন কমবেশি। জওয়াহের হোসেনের কবিতায় নতুন বিবর্তনরেখা পাঠক পাচ্ছেন তাঁর আপাত সর্বশেষ কবিতাবই একাকী, শব্দ নৈঃশব্দ্য-এ এসে। সম্প্রতি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থে কবিতা-আঙ্গিক ও ভাষায় নিজেকে অধিক সংহত করেছেন কবি। পাশাপাশি লিখে চলেছেন হাইকু ধাঁচে ছোট-ছোট পঙক্তিচরণ। বাকপ্রতিমায় ব্যক্তিসত্তার ভবঘুরে যাপন-বাসনা ও সেখান থেকে উদ্ভাসিত সংবেদ মিতবাক্যে বন্দি করতে অদ্য নিবিষ্ট এই কবি।

. . .



