
জহরে আজম
ইসমে আজম মাওলা,
তুমি ইসমে আজম
পান করে হইয়াছে ফানা,
বান্দা নাদান
গাউসুল আজম তুমি,
গাউসুলে আজম
দেখিয়া তাজাল্লি তোমার,
মুসা নবি হইয়াছে বেহুঁশ
গাউসুল আজম তুমি,
গাউসুল আজম
জহরে আজম তুমি,
জহরে আজম
তোমার জহরে মাওলা,
দুনিয়া রওশন
দুনিয়া রওশন মাওলা,
দুনিয়া রওশন
কুদরতি জহরে তুমি
ভরিলে পেয়ালা—
ভরিলে পেয়ালা তুমি,
ভরিলে পেয়ালা
পয়দা করিলে তুমি,
বেহেস্তের বাগান
প্রেম-বিষে পয়দা করিলে,
তোমার গুলবাগান
তোমার গুলবাগান,
মাওলা, তোমার গুলবাগান
ফেরেস্তা নূর তুমি,
করিয়াছো পয়দা
তোমার শানে জানাই মাওলা,
সেলাম হাজার
সেলাম হাজার,
মাওলা—
সেলাম হাজার
ইশকে এলাহি তুমি,
জাল্লে জালালু
মাটিতে ফুঁক দিয়া
পয়দা করো আদমে,
মা হাওয়া করিলে পয়দা—
পেয়ালা ভরিলো বিষে,
মাওলা, পেয়ালা ভরিলো বিষে
ইশকে জহর তুমি,
ইশকে জহর …
আরশে কুর্সি তোমার,
তুমি আলম্পনা
ফেরেস্তা ইবলিশ ছিলো,
তোমার জিকিরে ফানা—
জিকিরে ফানা,
মাওলা—
তোমার জিকিরে ফানা
জিকিরে আজম তুমি,
জিকিরে আজম
কুদরত্ তোমার মাওলা,
কে করে শুমার
ইবলিশ ফেরেস্তা ছিলো,
আশিক তোমার
আশিকে আজম তুমি,
মাশুকে আজম
আশিকে আজম তুমি,
মাশুকে আজম
কুদরত তোমার বলো,
কে করে শুমার
মাশুক হইবে তুমি আদমের,
ধোঁকা দিলে ইবলিশে—
তুমি ধোঁকা দিলে আশিকে
আশিকে আজম তুমি,
মাশুকে আজম
তোমার কুদরত মাওলা,
না বুঝি নাদান
দাগা দিলে ইবলিশে তুমি,
সাজিলে পাষাণ
সাজিলে পাষাণ,
মাওলা—
সাজিলে পাষাণ
গাউসুল আজম তুমি,
জহরে আজম
তোমার প্রেমের বিষ,
কে করে শুমার!
ইসমে আজম তুমি,
জহরে আজম
জহরে আজম,
তুমি জহরে আজম …
. . .
সংযুক্তি :
সুফি তরিকায় গান বাঁধবো, ভাবিনি কোনোদিন। সুফি কাওয়ালি, বিশেষ করে হিন্দুস্তানি ও আমাদের এখানকার মাইজভাণ্ডারী শুনে আসছি জনমভর! ভালোবাসি কাওয়ালি। রক্তে সহজাত হয়ে আছে নানান সময়ের শ্রবণ-অভিজ্ঞতা। তবে, সুফি তরিকায় গীত কাওয়ালি ও নানান পদের গান তথাপি আমাদের সংস্কৃতিদেহে অবিচ্ছেদ্য মনে হয়নি কখনো। আমাদের এখানে তার প্রবেশ ও প্রভাব মোটের ওপর মাজার ও ফকির কেন্দ্রিক বলয়ে স্থির থেকেছে দীর্ঘদিন।
বাউল অঙ্গে সৃষ্ট গানভাণ্ডার যে-অর্থে বাঙালি-রক্তে সহজাত, সুফিভাবে বিরচিত গানের ধারা সেরকম নয়। সুফি তরিকার অংশ হলেও, বাউলগানে এসব গানের প্রতিক্রিয়া গভীর ছাপ ফেলেছে কি? আমার তা মনে হয়নি। এমনকি দরবেশি/ ফকিরি গানেও হিন্দুস্তানি ঘরানায় গীত কাওয়াল বা সুফি অঙ্গের গান শিরায়-মজ্জায় মিশতে পারেনি। ভারত ও পাকিস্তানে রাগ সংগীত আশ্রিত অঞ্চলে সুফিপদে বাঁধাই গানের প্রভাব গভীর। আমাদের এখানে তার আবেদন শেষাবধি আগন্তুকের। চর্চা কম হয়নি এ-পর্যন্ত, কিন্তু প্রভাব শিকড় ছড়াতে যেয়েও গভীর হতে পারেনি। এর একটি কারণ হয়তো এখানে নিহিত-যে, সুফি কাওয়াল ঘরানার গানে হিন্দুস্তানি রাগ সংগীতের সহজাত অধিকার বাংলায় এসে খেইতাল হারিয়েছে।
যাইহোক, দুইহাজার চব্বিশে সংঘটিত নাইটমেয়ারের পর সাংস্কৃতিক প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যমূলক উপদ্রবের ঠেলায় সুফি তরিকার গানবাজনা, বিশেষ করে কাওয়ালি শ্রবণের অভ্যাস কঠিন করে তুলেছিল এই দেশের উগ্রপন্থীরা। কাওয়ালি নিয়ে তাদের মাথা খারাপ বাড়াবাড়ি মাথা ধরার উপক্রম করে তখন। সংগীতের এই শানদার আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনার রং-রূপ-রস উপভোগ বিবমিষার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সময়ে তা কাটিয়ে উঠা গেছে অনেকখানি। এর জেরে হবে হয়তো, বিচিত্র ঘরানায় গান লেখার ফিকিরে অবশেষে একখানা কাওয়াল পদ লিখে ওঠা গেল। মগজে আপনা থেকে এলো লাইনগুলো।
মাইজাভাণ্ডারী তরিকায় গানটি বাঁধার বাসনা ছিল মনে। সমস্যা হলো,—এআই মহাশয়ের কাছে মাইজভাণ্ডার এখনো অতটা বোধগম্য নয়। অগতির গতি হিসেবে দুটি সংস্করণে প্রচলিত হিন্দুস্তানি কাওয়ালিকে অনুষঙ্গ রূপে ব্যবহার করতে হয়েছে। বাদ্যযন্ত্রে হারমোনিয়াম ও ঢোলককে মাইনর করে দফ, রাবাব ও সারেঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়েছি। উপমহাদেশে কাওয়ালে এরা বাজেন বটে, তবে নিয়মিত নন সবসময়।
যন্ত্রকণ্ঠে গীত গানের কলির দু-এক জায়গায় বিচ্যুতি ঘটেছে বৈকি। সেটি মূলত গানের সংগীত আয়োজনে ব্যবহৃত মেজাজের সঙ্গে গায়কির তান-লয়ের সমস্যার কারণে ঘটেছে। দুটি সংস্করণের কথায় যৎসামান্য ভিন্নতা রয়েছে। বলে রাখা ভালো, শতভাগ কাওয়াল আমি এখানে ইচ্ছা করে এড়িয়ে গিয়েছি। চেয়েছি পৃথক একটি স্বরব্যঞ্জনা তৈরি করতে, যেখানে সুফি ভাবাবেশ হবে মন্দ্র জিকিরে মতো। শান্ত ও খানিক মেদুর।
দুটি সংস্করণের মধ্যে প্রথমটি অপেক্ষাকৃত দ্রুতলয়ের ও কাওয়ালি সেখানে প্রধান অনুষঙ্গ। দ্বিতীয়টি কাওয়াল মেজাজ ধারণ করলেও গতি ধীর ও শমিত। আমাদের ভাটিয়াল টানের লোকসুর দুটি সংস্করণেই জুড়েছি। যেটি গানকে হয়তো-বা কাওয়ালের প্রচলিত মেজাজ থেকে অনেকটা ভিন্ন পথে নিয়ে গেছে। নিরীক্ষা বলা যেতে পারে কি? হয়তো! অথবা সীমাবদ্ধত? হয়তো। ঘটনা যেমন হোক, আপাতত খসড়া জমা রাখছি এখানে। পরে সময়-সুযোগ মতো চূড়ান্ত রূপ দিতে তো আর বাধা নেই…
. . .
—আহমদ মিনহাজ : অবদায়ক : থার্ড লেন স্পেস.কম

. . .



