
কালঘুম
কালঘুমে পাইছে তোমারে,
উঠনের নাম নাই!
আর কত ঘুমাইবা তুমি,
চক্ষু মুদে সইবা অনাচার!
আসমানে মেঘের মিনার মনোহর!
তোমার জমিন রক্তের ছিটায় লাল
বড়ো মনোহর, বড়ো মনোহর মাবুদ,
ধানখেতে মানুষের লাশ!
আর কত ঘুমাইবা তুমি,
চক্ষু মুদে সইবা অনাচার!
কালঘুমে দংশিছে তোমারে,
বাহানা ধরে পড়ে থাকো মেঘের বিছানায়!
জমিনে ছেড়ে দিছো হায়েনার দল
সোনালি ধানখেতে পিতলা ঘুঘুর পাল
কত-না টেটন ছেড়ে দিছো জমিনে
শিরালি কী পারে তার সব ঠেকাতে?
হায়েনার দল খেয়ে যায় হে মাবুদ,
সোনালি ধানখেতে সোনার মানুষ!
আর কত ঘুমাইবা তুমি,
চক্ষু মুদে সইবা অনাচার!
সাত আসমানের নিচে এই দেশ,
তুমি বানাইছো মনোহর!
পুবাল গাঙ্গে পুবাল মানুষ,
দেখতে মনোহর
সবুজ ধানখেতে সবুজ মানুষ,
বড়োই মনোহর
ক্ষীরের মতো পলি দিয়া মাটির মানুষ
যতন করে গড়িয়াছো আদমসুরত
দেখতে মনোহর
দিবারাতি তবু ঠোকাঠুকি হে মাবুদ,
সোনালি ধানখেতে জবাই মানুষ
রক্তের ছিটায় লাল মেঘের মিনার!
চক্ষু মুদে তুমি কালঘুমে,
উঠনের নাম নাই!
আর কত ঘুমাইবা তুমি?
নিদ ভেঙে দেখিবা না একবার,
সোনালি ধানখেতে জবাই মানুষ!
আর কত ঘুমাইবা তুমি,
চক্ষু মুদে সইবা অনাচার!
. . .

সংযুক্তি
এআইকে দিয়ে এই গানের সংগীত আয়োজন দুটি কারণে কঠিন ছিল। প্রথম কারণ, উপভাষা আশ্রিত উচ্চারণে গানটি লেখা। এই ধাঁচের উচ্চারণে এআই অ্যালগরিদম এখনো পুরোপুরি সড়গড় নয়। দ্বিতীয় কারণ, গানটির ভাবার্থ ও আবহ ফুটিয়ে তুলতে পারবে এরকম কম্পোজিশন তাকে দিয়ে করানো এখনো বেশ দুরূহ।
গানটির জন্য যে-কম্পোজিশন মনে-মনে ভেবে রেখেছিলাম, এআইকে দিয়ে তা করানো ঝামেলার বুঝে বিকল্প পথ বেছে নিতে হলো। একটি গানের সংগীত আয়োজন বাস্তবে অনেকভাবে করা সম্ভব। এআইর সাহায্য নিয়েও তা করা এখন আর কঠিন নয়, তবে সবসময় মনঃপূত হয়ে ওঠে না। মন ভাবে এরকম করা গেলে বেশ হয়, এআই দেখা যাবে সেখানে অন্যদিকে ধাইছে! রাশ টেনে ধরা সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। সংযুক্ত গানের সংগীত আয়োজনে সেটি ঘটেছে।
লোক-আশ্রিত সুরের সঙ্গে রক ঘরানায় স্বচ্ছন্দ গায়নরীতির সংমিশ্রণকে গানটির সংগীত আয়োজনে মূলত বিবেচনায় নিয়েছি আমি। একাধিক সংস্করণ থেকে দুখানা মনে হলো গানের মূল ভাবরসের প্রতি কিছুটা হলেও সুবিচার করতে পেরেছে। বাস্তবে অবশ্য কার কেমন লাগবে শুনে তার অনুমান আমার কাছে কঠিন বোধ হচ্ছে। ভালো লাগার সম্ভাবনা শূন্য ধরে নিয়ে আপাতত সংযুক্ত করছি এখানে।
গানে ব্যবহৃত কিছু শব্দ, ধারণা করি, শ্রোতাকানে বেখাপ্পা লাগতে পারে। ঝুঁকি থাকছে জেনেও শব্দগুলো রেখে দিয়েছি। এর মূল কারণ,—মরীচিকা শহর-র আওতায় এ-পর্যন্ত লেখা ও এআই স্টুডিও ব্যবহার করে তৈরি গানগুলো খসড়া ধরে করা। গানের সঙ্গে জানাবোঝা নিবিড় করার উদ্দেশ্য এখানে মুখ্য। বাস্তবে কোনোদিন উপযুক্ত সংগীতকার যদি কপালে জোটে, এগুলোকে চূড়ান্ত রূপ দানের বাসনা রাখে মন। আর, তা যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে এআইর (বিশেষত ‘সোনো’) পেইড সংস্করণ দিয়ে প্রতিটি গানের কমপক্ষে একটি করে গ্রহণযোগ্য সংস্করণ তৈরির ভাবনা ও পরিকল্পনা আছে বটে! বাকিটা ঈশ্বর জানেন।

সবটাই মূলত অস্থির-উন্মূল সময়ের চাপ থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে করা। টানা গদ্য লেখার ভার থেকে মুক্তি নিতে এসব গান-কবিতার ঝকমারিতে গমন করতে হচ্ছে ইদানীং। উদ্দেশ্য বলতে এটুকুন;—এবং এর বাইরে এসব কাজবাজ নিয়ে আকাশচুম্বি কোনো প্রত্যাশা অধমের নেই।
আমি অজ্ঞ নরাধম। গান ও কবিতা পছন্দের বস্তু হতে পারে, কিন্তু কবি ও গাতক হওয়ার ভাবনা ইহজীবনে ভাবিনি। এখনো ভাবি না তা। দূর ভবিষ্যতে ভাববার নেই সুযোগ। নিজ গলায় গান করার তো প্রশ্নই আসছে না সেখানে। গাইতে গেলে যে-ক্ষমতা মানুষের থাকতে হয়,—অধমকে তার থেকে বঞ্চিত রেখেছেন ঈশ্বর। মনের মধ্যে যদিও সুর গুনগুনিয়ে ওঠে হামেশা, কিন্তু তাকে গলা দিয়ে গাওয়ার প্রতিভা আমার নেই! জীবন থেকেছে চরম গদ্যিক ও নিরস। সৃজনকলার শীর্ষ দুটি মাধ্যমে আগ্রহ বলতে বিচ্ছিন্ন পাঠ ও ধারাবাহিক গান শ্রবণের চেষ্টা;—এর বেশি ছিল না ও নেই জানাবোঝার পরিসীমা। কথাগুলো আগেভাগে বলে রাখা দরকারি মনে করছি, নয়তো উলটা বোঝার সম্ভাবনা বাড়বে সামনে।
নিজের সীমাবদ্ধতা যেহেতু জানা,—এসব গান লিখে ফেলা হুটহাট ও এআইকে দিয়ে গাওয়ানোর ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে মনে কোনো স্বপ্ন ও উচ্চাশা কাজ করে না। কেউ যদি ভুল করে গানগুলো শোনেন ও কদর করেন, তা আমার জন্য প্রেরণা হলেও সেখানে কোনো প্রত্যাশা নেই। শুনে যদি গালি দিয়ে বসেন কোনো শ্রোতা, সেজন্য মন খারাপ করার যুক্তি বা কারণ আসলেও নেই। গালি দেওয়ার ফলে বরং নিজের বোকামি বুঝতে পারা যাবে। আর, কেউ যদি না শোনেন, তাহলেও নেই তিলেক ক্ষতি।
‘অকারণ পঙক্তিমালা’ ও ‘গানালেখ্য’র মোড়কে এইসব গান-কবিতা, এগুলো জন্ম নিচ্ছে অনামা-অচেনা এক লোকের মনের মাটিতে;—বিনা কারণে। সময় হলে তার সঙ্গে তারা মাটির ধরা থেকে চিরবিদায় নেবে। তার আগ পর্যন্ত… লেট দিজ থিংস বি বর্ন অ্যান্ড লেট দেম বার্ন, আনটিল আনলেস দিস স্টুপিড ম্যান হ্যাজ গন্ টু সাইলেন্স।
. . .
—আহমদ মিনহাজ : অবদায়ক : থার্ড লেন স্পেস.কম

বিশেষ দ্রষ্টব্য : ‘মরীচিকা শহর’-এ শিরোনামবন্দি সিরিজ-গানের আওতায় আহমদ মিনহাজ রচিত ও গানালেখ্য বিভাগে খসড়া রূপে প্রকাশিত।
. . .


