নদীমাতৃকা গ্রামতন্ত্র
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী-র কবিতা

ঘ্রাণযাপন
যাদের নাম দিয়েছিলাম
শান্তির ছায়া—
তাদের করতলে ছিল
ভাঙা পিঞ্জরের ছুরি
আসলে এরা চেতনার নপুংসক
উত্তর-উপনিবেশ কালেও
যারা জল ঢেলে
আত্মজীবনী ধুয়ে ফেলতে চায়
তারা জানে না
আগুনে স্নান করলে ছায়াও পুড়ে যায়;
আর সেই ছায়ার ঘ্রাণ
পৃথিবীর বাতাসে জমে থাকে
জবানহীন পাখির মত
এই যে এত মুখোশের উল্লাস
গণিকার ভ্রু-পল্লব
পুরনো নুনের স্বাদ যেন
আবারও লাগে জিহ্বায়
একটি থুথু গড়ায়
কাঠপিঞ্জরে জন্মানো ফুলের দিকে
সেই থুথু নয় ঘৃণা
বরং ইতিহাসের লালিত প্রতিবাদ
ভোরের আগে যে ডাহুক ডাকে
তার কণ্ঠে রক্ত জমে থাকে
যতদিন না সত্য
নিজের ছায়া থেকে উঠে দাঁড়ায়
দাগ মুছে ফেলা যায়,
তবুও—
ঘ্রাণ রয়ে যায়
সভ্যতার শ্বাসে…।
. . .
ঘামে লেখা রোদ্দুর
সূর্য ডুবে না যার কাঁধে
সে-ই তো জাগায়
ফসলের ঘ্রাণ
পুড়ে পুড়ে গড়ে সে ভূমি
চোখে তবুও
জ্যোৎস্নার বিস্ময়
গরমে পুড়ে হাওর হাঁপায়
মাঠে হাসে কৃষক
হিজলপাতার নিঃশব্দে
ঘামেই জাগে অন্নধারা
শ্রমে রচিত জীবন
বয়ে যায় নিঃশব্দ ধারা
অস্তিত্বের মাধুর্য
শস্যের গন্ধে লুকায়…।
. . .

নদীমাতৃকা গ্রামতন্ত্র
আয়ুস্মতি ঠোঁট
নিঃশব্দ পুকুরপাড়
শব্দেরা ভয়ে কুঁচকে
ঝরে পড়ে
পাতার জলে
মাছেরা খোঁজে প্রেমের ছায়া
নদী নয়
জ্বলে ওঠে রক্তলিপি
আর্দ্র ধানের শীষে
ভাষাহীন গীতির অগ্নিস্রোত
বৃক্ষ নই
নিষিদ্ধ নেটওয়ার্ক
যেখানে প্রতিটি ছোঁয়া—
হ্যাকড ইতিহাসের স্ক্রিনশট!
ব্যালকনিতে ঝোলে
অভিসন্ধিময় নিঃসরণ
মানুষ নয়—
টিন-ছাওয়া বারান্দায়
দুপুরের নিঃশ্বাস ধোঁয়াটে
হাওর
অনুনয়প্রবণ লগইন
ভুলে গেছে প্রেমের পাসওয়ার্ড
ভুল পথে ভাসে—
মেঘ আর
কাকের শ্লোকে ঢাকা
নৌকাভরতি নীরবতা
অদৃশ্য মুখ
আমার চোখে এঁকে দেয়
কৃত্রিম চেতনার
কিউআর ট্যাগ
ভালোবাসা নেই
আছে কেবল
ক্যাশড কনসেন্টের
জ্যোৎস্নাহীন গন্ধ
‘সাহসিকা’র জরায়ু—
প্রতীক্ষমাণ সার্ভার
ঋতুচক্রের শ্বাস
ধানের কাঁপুনিতে ধরা পড়ে
রিভিউ পায়
নীরবতার একক নক্ষত্র।
আমি রিলস নই
মুছে যাওয়া বর্ণমালা
যাকে শরীর ভাবলে
ভুল করবে সময়ও
খোলা আকাশের নিচে
ক্যাশড রোদের পাশে
নিঃশব্দে ঝরে
হারানো নদীমাতৃকা গ্রাম।
. . .

হাওরমেখলা সুনামগঞ্জের সন্তান কবি মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী। দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া গ্রামে বেড়ে উঠেছেন। পল্লী মায়ের কোলে বেড়ে ওঠার সময় প্রান্তিক সাংবাদিকতায় সক্রিয় করেন নিজেকে। কবিতায় যাপন প্রথম পছন্দ। ছোটকাগজ বাঁশতলা সম্পাদনা করছেন নিয়মিত। নদী-হাওর মেখলা জনপদে যাপন করলেও প্রযুক্তি সৃষ্ট বায়বীয় বিশ্বের সঙ্গেও রয়েছে সংযোগ। বায়বীয় বিশ্বে বিচরণের সুবাদে মানুষজন যেসব শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন, প্রযুক্তি-নিবিড় এরকম শব্দের এক জগৎ তাঁর কবিতায় চোখে পড়বে। মানবিক আবেগ ও সংবেদনের জায়গা থেকে শব্দগুলো ব্যবহারের ঝোঁক তাঁর কবিতাভাষায় লক্ষণীয়। এখনো কোনো কাব্যগ্রন্থ মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত নয়, তবে অন্তর্জালে ছড়ানো সাহিত্য মুখপত্রগুলোয় কবি লিখছেন নিয়মিত।
. . .




