দেখা-শোনা-পাঠ - পোস্ট শোকেস

ওহ কাশ্মীর!

Reading time 6 minute
5
(40)

এমন দিন কি আসতে পারে, বিশ্ব জুড়ে ইংরেজি গানের শ্রোতারা লেড জেপেলিন-এর কাশ্মীর গানটি শুনতে ভুলে যাবেন? মনেই পড়বে না,—কোনো এক শরৎকালে বিমানযানের নামে গড়া দলটি এই ভাবনায় উদ্দীপ্ত হয়েছিল,— কখনো শেষ হবে না এমন এক উড়ানের গল্প তারা বলবে গানের কথায়?

লেড জেপেলিনের ছোকরারা ইংরেজের বংশধর হলেও দুনিয়াজুড়ে মাতবরি আর অন্যের ওপর দখলদারি কায়েমের লোভে তাদেরকে পায়নি। তারা ছিল, এবং এখনো তাই আছে বটে,—রকগানের জোয়ারে বখে যাওয়া ছোকরার দল। দেশ থেকে বেরিয়েছিল মরক্কো ঘুরবে বলে। হিপি আর বিটনিক মিলে তখন এশিয়া মহাদেশে ভারত, চীন, জাপান, আর আফ্রিকায় মরক্কোর মতো দেশগুলোয় সমানে ছড়িয়ে পড়ছিল। পেছনে ছিল ভিয়েতনামকে ঘিরে আম্রিকা ও রুশ বাবাজির ঠেলাঠেলির চাপ। ছিল, পৃথিবীর দেশে-দেশে ঘটতে থাকা মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটির রক্তাক্ত নির্দয় সব ঘটনার কু-প্রভাব।

ঘটনাগুলোর কোনোটি বিপ্লবের নামে ওইসময় ঘটছিল। কোনোটি আবার গোলামির শিকল কেটে নিজেকে মুক্ত করার দুর্নিবার ক্রোধ থেকে সমানে ঘটছে তখন। ছিল, না খেতে পাওয়ার দল। ছিল, অতিরিক্ত সম্পদের ভার সামলাতে হিমশিম টালমাটাল বড়োলোকের দল। তালগোল গোলতালে ভরপুর পৃথিবীতে লেড জেপেলিনের মতো শয়ে-শয়ে ছোকরা ও ছুকরিরা কী করিব, কোথা গেলে শান্তি পাবো…তার কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। অনেকে মাদককে আপন করে নিলো সকল যমযাতনা ভুলে থাকার আশায়। কারো মনে আবার ধ্যানী যোগী হওয়ার বাই চেপেছিল। শুরু হলো নতুন এক যুগ।

Woodstock Festival 1969: Source – Fernando Mattana YTC

ছোকরা-ছুকরিদের অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়েছুড়ে কবিতার খাতা হাতে বেরিয়ে পড়েছিল। কেউ আবার গিটার-ড্রামসে তুলতে আরম্ভ করে বিকট আওয়াজ। কণ্ঠনালী থেকে তারা বের করে দিতে চাইল রক্ত। লেড জেপেলিনের ছোকরাদলও অগত্যা বেরিয়ে পড়ে মরক্কোয়। মরু ও সাগরঘেরা দেশটিতে তারা ঘুরছিল উদ্দেশ্যহীন। মাইলের-পর-মাইল জুড়ে ছড়ানো বর্জ্যভূমির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বাই চাপে নতুন গান লেখার। ঠিক হয়,—গানটির নাম রাখা হবে কাশ্মীর।

কেন কাশ্মীর? সে তারা ভালো বলতে পারবে। হিমালয়ের কোলঘেঁষে ছড়ানো বরফস্বর্গে ইংরেজ ছোকরারা কখনো যাওয়ার কথা ভাবেনি। পরে গিয়ে থাকলে আমার তা জানা নেই। গান লেখা ও গাইবার কর্মটি ততদিনে তারা সেরে ফেলেছে। তারপর থেকে লেড জেপেলিনের স্টেয়ারওয়ে টু হ্যাভেন (stairway to heaven)-এর মতো দারুণ সব গানের সঙ্গে এই গানটি শ্রোতারা শুনে চলেছে…শুনেই চলেছে! এক-একসময় মনে হয়, গানটি তারা শুনতে থাকবে অনিঃশেষ!

এরকম একটি গান তাহলে কোনো একদিন কেউ শুনবে না অথবা ভুলে যাবে বলে ভাবছি কেন? ভাবছি এ-কারণে,—গানটির সংগীত আয়োজনে লেড জেপেলিনের ছোকরাদল যে-মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিল তখন, মিউজিক স্কেলের বিচারে সেটি অবিশ্বাস্য মাত্রার নিরীক্ষায় পড়ছে। প্রায় নয় মিনিট থেকে চৌদ্দ মিনিট ধরে গাইতে থাকা গানে কী করেনি তারা! ভাবতে বসলে মাথা ঘোরে আগে।

গলার স্বরের ওঠানামায় সচরাচর যেসব ব্যাকরণ থাকে,—কাশ্মীর গানের সাংগীতিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টিতে নেমে লেড জেপেলিন সেগুলো সবার আগে ভেঙে দিয়েছিল। রকগানের জোয়ারে তখন হার্ড রক, সাইকেডেলিক, প্রগেসিভ ইত্যাদি ঘরানাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সফল গায়ক ও গায়কদলের বাড়াবাড়ি জোয়ার চলছে। তার মধ্যে বইছিল বব ডিলান আর বিটলস ঝড়। লেড জেপেলিন সুতরাং হার্ড রক ও প্রগেসিভ রক সেখানে জুড়তে দেরি করেনি। এর পাশাপাশি ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র সেতার থেকে শুরু করে বিচিত্র অনুষঙ্গ গানের কম্পোজিশনে সংযুক্ত করে তারা। গানটির মিউজিক স্কেলকে যে-সংযুক্তি দিয়েছিল রহসময় গভীরতা ও আবেদন।

সংগীত সৃষ্টির কারবারির কাছে জেপেলিনের নিরীক্ষা এতই দামি,—কাশ্মীর গানের মিউজিক ক্রিয়েশন নিয়ে গবেষণা এখনো চলমান। ভোকাল কর্ডের ডিস্টর্শনে সেইসময় গোথিক আঙ্গিক জুড়েছিল দলটি। গান শ্রবণের মুহূর্তে কানে ধ্রুপদি স্বরের ব্যঞ্জনা বহে বেশ;—রকবাজির গুঞ্জন ও আর্তনাদ তা-বলে চাপা পড়ে না সেখানে।

Kashmir by Led Zeppelin; Source – Led Zeppelin YTC

তবে এর মধ্যে প্রায়শ যেটি চাপা পড়ে, পড়তেই থাকে, সেটি হচ্ছে তাদের গানে কথার আজব বিন্যাস! উড়ানের বিবরণ দিচ্ছে ছোকরাদল। কাশ্মীর ও শাংগ্রিলার মতো স্থানবিবরণী ছুঁয়ে যাচ্ছে তারা, এবং এখন একে অবাস্তব ও উদ্ভট ভাবতে শ্রোতাকে বাধ্য করছে একপ্রকার! হিমালয় উপত্যকার একাংশ জুড়ে ছড়ানো কাশ্মীরে বরফঝড় হয় ঠিক আছে,—ধূলিঝড়েরর খবর অজানা! মরক্কোয় বরং সেটি স্বাভাবিক ঘটনা। গানের কথায় ছোকরাদল মরক্কোকে অবলীলায় পাঠিয়ে দিচ্ছে কাশ্মীর! অন্যদিকে তিব্বতে নাকি শাংগ্রিলা নামে এক স্থান থাকতে পারে বলে অনেকে মত দিয়ে থাকেন। বাস্তবে তার সাক্ষাৎ ইয়েতিমানবের মতো বিমূর্ত অতিকল্পনায় ভরপুর। ছোকরাদল গানের ভাঁজে শাংগ্রিলাকে রেখেছে গোপন।

ফ্যান্টাসিতে ডুবে থেকে উড়ানের বিবরণ এভাবে লাইনের-পর-লাইন ধরে দিয়ে গেছে তারা। পাশাপাশি গানটির চৌহদ্দি জুড়ে হিপি-বিটনিক প্রজন্মে সাবালক ছেলেমেয়েদের গাঁজার ছিলিমে দম দিয়ে আজব খোয়াবে নিজেকে যোগী ভাবার অনুরণন কানে স্পষ্ট বাজে। সব মিলিয়ে উড়ানটি বাস্তবে ঘটছে মনে হলেও, আসলে তা চলতে থাকে লেড জেপেলিনে সমবেত ছোকরামনের গহিন পাতালে। যেখানে এই জীবন লইয়া কী করিব? প্রশ্নটি নির্মম হয়ে কানে বাজে। কাঠবাঙাল বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধায় ধ্রুপদি প্রশ্নখানা একদিন তুলেছিলেন। লেড জেপেলিনের শ্বেতাঙ্গ ছোকরাদল এখন কখনো শেষ হবে না এরকম এক স্বপ্নভারাতুর উড়ান ছাড়া দ্বিতীয় বিকল্প পায় না খুঁজে!

গানটি যতবার শুনি, মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনির হাত দিয়ে বেরিয়ে আসা জেব্রিস্কি পয়েন্ট ছবির দৃশ্য চোখে ভাসে। হিপি প্রজন্মের প্রবল উত্থানের যুগভাষা বুঝতে ইতালীয় নির্মাতা আমেরিকায় বসে ছবিখানা তৈরি করেছিলেন। এক মার্কিন যুবা বলা-কওয়া নেই প্রাইভেট জেটবিমান চুরি করে আকাশে উদ্দেশ্যহীন উড়তে থাকে। সে কোনো দক্ষ বিমানচালক নয়। কী করবে তার কিছু ঠিক করতে না পেরে বিমানযানটি চুরি করে প্রথমে, তারপর চলতে থাকা উলটা-পালটা উড়ান।

Zabriskie Point movie scene by Michelangelo Antonioni; Source – infinitegeneration YTC

স্থান থেকে স্থানান্তরে তার বিমান উঠেনামে। সে উড়ে; মাটিতে গোত্তা খেয়ে পড়ে; আবার উড়ে… আবার নেমে আসে। এভাবে চলতে থাকে আমেরিকার সঙ্গে তার বোঝাবুঝির খেলা। লেড জেপেলিনের গানে উড়ানের অর্থ ভিন্ন হলেও জাব্রিস্কি পয়েন্ট থেকে দূরবর্তী নয়। উড়ান যেন কখনো থেমে না যায়, আর যদি থামে তাহলে এমন কোনো স্থানে এসে যেন থামে, যেটি ওই কাশ্মীর অথবা শাংগ্রিলার মতো কোনো স্থানকে মনে ভাসিয়ে তুলবে;—গানে এই হলো তাদের অবস্থান! স্থানকালের বিদ্যমান থাকটা এখানে বড়ো কোনো বিষয় নয়। লেড জেপেলিন একে বাস্তবাতীত ধরে নিয়ে গাইছে। জব এক প্রহেলিকায় এসে ইতি টানছে দার্শনিক খেয়াবে রঙিন সেই উড়ানের!

আমরা প্রত্যেকে হয়তো বুকের ভিতর লালন করি এরকম কোনো কাশ্মীর অথবা শাংগ্রিলা। বাস্তবিক সেখানে কেউ নামতে পারে না। সেখানে কেবল তারা যায় ও যেতে পারে, যারা খোয়াব দেখে যাওয়ার। সুতরাং স্বপ্ন ও অতিকল্পনা ছাড়া জীবন লইয়া কী করিব-র সদুত্তর মিলানো কঠিন!

এখানে এসে মানতে হচ্ছে,—সেই সত্তরের দশকে লেড জেপেলিনের ছোকরাদের হাতে সৃষ্ট কাশ্মীর গানটির মরণ-সম্ভাবনা ক্ষীণ;—যদি এর সাংগীতিক অনন্যতার সঙ্গে কথার মেলবন্ধনটি শ্রোতারা খেয়াল করেন ভালোভাবে। গানটি কেবল লেড জেপেলিনের নয়, রকগানের ইতিহাসে অন্যতম সিগনেচার সং। আনফরগেটবল পিস অব মিউজিকে তার স্থান সদা থাকবে অটুট।

মাতৃভাষায় অর্থ বোঝার খাতিরে করা গানটির প্রায় আক্ষরিক ভাষান্তর নিচে সংযুক্ত করছি। লেড জেপেলিনের এরকম একখানা গানের ভাবানুবাদে আমার সায় নেই। কিছু-কিছু গানে ভাবানুবাদ উলটো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়;—হারিয়ে যায় গানের প্রকৃত আবেদন। তবে এর প্রেরণা থেকে নতুন গান বাঁধতে বাধা নেই। অন্যমাত্রা পাওয়ার আশা থাকে।

আর হ্যাঁ, এআই সৃষ্ট সাংগীতিক আয়োজন কাজে লাগিয়ে বাংলায় করা ভাষান্তর অবলম্বনে গানের কৃত্রিম দুটি সংস্করণও সংযুক্ত থাকছে এখানে। মূল গানকে সসম্মানে কুর্নিশ ঠুকে ভিন্ন রকমফের করে গাইলে কেমন হতে পারে, তার একটি ধারণা পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া দুটি সংস্করণের পৃথক কোনো গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা নেই। সুতরাং কারো মন চাইলে শুনে দেখতে পারেন, না শুনলেও ক্ষতি নেই।

Kashmir song live by Led Zeppelin; Source – Led Zeppelin YTC

একটি সংস্করণে হার্ড, সাইকেডেলিক, গ্রাউলিং ও থ্রোট ভোকালসহ ডেথ মেটালের সঙ্গে সম্পর্কিত যন্ত্রানুষঙ্গ থাকছে। এসব এখন আর কোনো ব্যাপার নয়। বাংলায় অহরহ গাইছে রকবাজ তরুণ প্রজন্ম। তবে যারা শুনে ডর খাবেন, তারা এড়িয়ে যেতে পারেন গানের কথার অন্তিম স্তবকের নিচে সংযুক্ত সংস্করণটি। রকের কফিনে পেরেক ঠুকে দেওয়া পাঙ্ক যুক্ত করলে ঘটনা কী দাঁড়াত, সেটি ভাবাচ্ছে বেশ! পাঙ্ক যদিও তার মতো করে তৈরি করে পৃথক আবহ। সেক্স পিস্তল বা জয় ডিভিশন যে-কারণে আমরা আজো শুনেই চলেছি।

অন্য সংস্করণটি অপেক্ষাকৃত সহনীয় যন্ত্রানুষঙ্গ ও প্রচলিত গায়কি ব্যবহার করে গাওয়ানোর চেষ্টা থেকে নির্মিত। গানটির আবেদন বাংলায় প্রায় আক্ষরিক ভাষান্তরে কী দাঁড়াতে পারে, সে-ব্যাপারে একটি ধারণা শ্রোতারা পাবেন আশা করি। নারীকণ্ঠে ডিপ ভোকাল ও পুরুষালি ব্যারিটোনের স্বরধ্বনিগত অ্যাফেক্ট আনার চেষ্টা ছিল। এই ধাঁচের নারীকণ্ঠের অভাব নেই বাংলায়।

লেড জেপেলিনের আদলে এআইকে দিয়ে গান করানো সম্ভব নয়। মনুষ্যকণ্ঠ ও বাদনপ্রণালী এখানে এগিয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। তারপর কী দাঁড়াবে, সেই অনুমান আপাতত নাহি সম্ভব। সুতরাং আবারো বলছি,—এগুলোকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। গানের কথায় বরং থাকুক মনোযোগ। যদিও বাংলায় মূলভাব (তাও আক্ষরিক এবং সংগীত-উপযোগী) তুলে আনা সহজ নয়।

বাংলাদেশে ওয়ারফেজ বা অর্থহীনের মতো রকব্যান্ড কাশ্মীর গানটির বাংলা-উপযোগী পরিবেশন নিয়ে কি ভেবেছেন কখনো? হয়তো ভেবেছেন, কিন্তু জেপেলিনের আবেদন বহানো সম্ভব নয় বুঝে আর আগাননি। আমার বিচারে তা সঠিক। তবে এই গানের অর্থমূল্যকে প্রেরণা ধরে যদি নতুন কোনো গীত লেখেন গীতিকার, আর সেটি ওয়ারফেজ বা আজকের অ্যাভয়েড-রাফারা পরিবেশনের কথা ভাবেন, তাহলে দারুণ কিছু সম্ভব হলেও হতে পারে।
. . .

Kashmir Album Cover; Image Source – Google Image

কাশ্মীর : লেড জেপেলিন (বাংলা ভাষান্তর)
গীত রচয়িতা : রবার্ট প্ল্যান্ট; জন বনহাম; জিমি পেজ

কাশ্মীর : লেড জেপেলিন – সংস্করণ-১
বাংলা ভাষান্তর অবলম্বনে যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মিত ও মূল গানের সংগীত আয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; @thirdlanespace.com

. . .
সূর্যের কিরণধারা পড়ুক মুখের ওপর,
আকাশের তারা পূর্ণ করুক স্বপ্ন আমার।
এতদিন ছিলাম যেখানে, ফিরতে সেখানে
আমি হয়েছি মুসাফির সময় ও স্থানের।
প্রবীণ সেই জাতির সাথে কাটবে ক্ষণিক,
—পৃথিবীতে তার দেখা পাওয়া নয় তো সহজ।
কিছুই যেদিন থাকবে না গোপন—
সেই দিনের গল্পে তারা মশগুল,
—অপেক্ষায় গুনছে প্রহর।

মধুর গুঞ্জন কথা ও গানের
আমার কানে তার আলতো পরশ।
অর্থ তার কিছু বুঝি না,
গল্প তবু মনে হয় পুরোটা জানা।

প্রিয়তমা, দেখো উড়ছি আমি,
মা নেই যে করবে বারণ, কেউ নেই বলবে আমায়,
—আমি উড়িনি কখনো
মা আমার, কেউ নেই বলবে—আমি উড়িনি কখনো,
না, কেউ নেই, নেই …

যেদিকে তাকাই, সব বাদামিতে ভরে যায়,
সূর্য পুড়ে ছাই করে মাটি।
আমার চোখে জমেছে বালির পাহাড়,
যখন দেখে চলি এই পোড়োজমি।
চেষ্টা করছি খুঁজে পেতে, চেষ্টা করছি খুঁজে পেতে,
এতদিন কোথায় ছিলাম… ঠিকানা আমার …
আহা… আহা …

ঝড়ের মুখে পড়েছে যে-বিমান, সে রাখেনি চিহ্ন কোনো,
স্বপ্নের ভিতরে যেমন থাকে ভাবনারা গোপন।
আমি মনোযোগী পথের দিকে,
যে-পথ আমাকে হলুদ মরুস্রোতের খবর জানাবে।
গরম-দিনের ভরা পূর্ণিমায় আমার শাংগ্রিলা রেখেছি গোপন,
জেনে রাখো,—আমি ফিরে আসবো পুনরায়।
জুন মাসে কাশ্মীরের পথে যেমন
ধুলো বয়ে চলে প্রবল।

ওহে, চারকোণ বায়ুর দেবতা,
—আমার পালে লাগুক হাওয়া।
বছর জুড়ে সাগর দেই পাড়ি,
মেলে না সহায়, নিরুপায় মুখে পাড়ি দেই
ভয়ের প্রণালী।

এই তো যাচ্ছি আমি, ধরেছি নিজের পথ, আহা
যখন দেখি, প্রিয়তমা তুমি রয়েছো দাঁড়িয়ে,
ওহ, আমি যখন নামছি নিচে, আহা
আমি যখন নামছি নিচে, অনেক অনেক নিচে …
আহা, প্রিয়তমা, প্রিয়তমা… চলো আমরা দুজনে মিলে যাই সেখানে …
তুমি-আমি দুজনে মিলে যাই সেখানে …
দুজনে মিলে যাই সেখানে, আহা, আহা
তুমি-আমি মিলে… চলো …
যাই সেখানে … 
. . .

কাশ্মীর : লেড জেপেলিন – সংস্করণ-২
বাংলা ভাষান্তর অবলম্বনে যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মিত ও মূল গানের সংগীত আয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; @thirdlanespace.com

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 40

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

One comment on “ওহ কাশ্মীর!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *