দেখা-শোনা-পাঠ - পোস্ট শোকেস

ওজি অসবর্ন — বিদায়, ক্লেদজ কুসুম

Reading time 7 minute
5
(56)

পশ্চিম গোলার্ধে রকগানের ব্যাপ্তি ও প্রভাব নিছক গানের একটি ঘরানায় সীমাবদ্ধ নয়। রকগানের ভাগ্যলিপিতে লেখা ছিল,—এই গানের ভাণ্ডারিরা যুগসন্ধিক্ষণকে দেবেন নতুন ভাষা। তাঁদের দেওয়া ভাষা কেবল পাশ্চাত্য জীবনধারাকে নাড়িয়ে দেবে তা নয়,—স্বয়ং হয়ে উঠবে জনসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার প্রভাব ও প্রসার ঘটবে বিশ্ব জুড়ে। স্থানকালের বালাই থাকবে না সেখানে। জাতিধর্ম নির্বিশেষ, আবালবৃদ্ধবণিতা নিজের মতো করে একে যাপন করবেন;—এবং অবিরত দিতে থাকবেন বিচিত্র স্বরূপ।

রকগান সুতরাং কেবল বিদেশ হইতে আগত বস্তু নয়। তা নয় কেবল আটলান্টিক মহাসাগরের এই-পার যুক্তরাজ্য হইতে ওই-পার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছড়ে পড়া কোনো বিস্ফোরণ। একই সময়রেখায় পৃথিবীর সকল সাগর-মহাসাগর এটি পাড়ি দিয়েছিল অনায়াস।

রকগানের এই বিশ্বযাত্রায় ষাট ও সত্তর দশক মিলে যে-কালপর্ব পাচ্ছি,—সেটি ছিল মহেন্দ্রক্ষণ। ইংল্যান্ডে মূলত তার জোয়ার ওঠে প্রথমে। ইংরেজদের জনসংস্কৃতির ইতিহাসে জোয়ারটিকে স্বর্ণযুগের প্রারম্ভ মানা যেতে পারে। একের-পর-এক রকব্যান্ড জন্ম নিয়েছিল তখন। তারা আবার পরবর্তীতে মার্কিন দেশে পল্লবিত রকগানকে দিয়েছিল গভীরতা। অন্যদিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন ভূমিতে হিপি-বিটনিকব্ল্যাক আর্টস মুভমেন্ট জন্ম নিলো। ১৯৬৯ সনে উডস্টকে লক্ষ-লক্ষ ছন্নছাড়া তরুণ প্রজন্ম সমবেত হয় রকগানের মহোৎসবে। এর ঠিক পাশাপাশি নিউ ইয়র্কের হার্লেমে কৃষাঙ্গরা জন্ম দিয়েছিলেন আরেকটি সংগীত মহোৎসবের।

Summer of Soul (…Or, When the Revolution Could Not Be Televised) documentray clip by Questlove; Source – E! News YTC

গণমাধ্যম উডস্টককে ব্যাপকভাবে প্রচার করলেও হার্লেমে সমবেত শ্রোতা ও শিল্পীর গানে-গানে অধিকার আদায়ে সোচ্চার উৎসবের সংবাদ প্রচারে ভয়ংকর কৃপণতা করেছিল। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের ভূত যাবে কোথায়! ওইসময়ে ধারণকৃত ফুটেজ থেকে নির্মিত তথ্যচিত্র সামার অব সোল দেখলে অবশ্য পরবর্তীতে ব্ল্যাক উডস্টক নামে খ্যাত এই সংগীত উৎসবের ব্যাপ্তি ও গভীরতা অনায়াস টের পাওয়া যায়। বৈষম্য তা-বলে রকগানের সর্বজনীন আবেদনকে গায়ের রং ও আরোপিত সব বিভাজনে বন্দি করে রাখতে পারেনি। সময়-মানচিত্রে তীব্র হতে থাকা সংগীতের ভাষাকে লিঙ্গ-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে মানুষ অন্তরে যাপন করছিলেন সবিরাম।

ষাট ও সত্তর দশকেই মূলত রকগানের ভাষাকে বর্ণিল বৈচিত্র্য দানের সকল আয়োজন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সমাধা হতে থাকে। যুক্তরাজ্যে পাঙ্ক গানের ঘরানা ওই সময়রেখায় পায় গতি। আশির দশকে পা রাখার দিনকালে সে লাভ করে পূর্ণতা। ষাট-সত্তরের কালসীমায় হিপহপ সংস্কৃতির অংশ Rap গানের পটভূমিও এভাবে তৈরি হতে থাকে। নব্বইয়ে এসে যেটি হয়ে ওঠে দুরন্ত দুর্বার। এবং, তার মধ্যে চলছিল কান্ট্রি ফোক ও পপগানের চমকপ্রদ সব বিবর্তন। রকগানের জন্য যুগান্তকারী কালপর্বে দেখা দেওয়া রকারসদের তালিকায় উজ্জ্বলতম একটি গানের দল তখন জন্ম নিয়েছিল। ব্ল্যাক সাবাথ নামে বিদিতি ও বন্দিত সেই দলটির কাণ্ডারি ওজি অসবর্ন অদ্য পৃথিবী ছেড়ে অজানায় বিলীন হয়েছেন!

রকগানের ইতিহাসে হেভি মেটাল ব্যান্ডগুলোর মধ্যে নমস্যদের একটি এই ব্ল্যাক সাবাথ;—আর, ওজি অসবর্ন সেখানে চূড়ামণি। বিটলস, পিঙ্ক ফ্লয়েড তো অবধারিত নিয়মফেরে প্লে-লিস্টে থাকে সবসময়। ঠিক যেমন, আয়রন মেডেন, স্কর্পিয়ন্স, গানস অ্যান্ড রোজেস বা লেড জেপেলিনের পাশাপাশি ব্ল্যাক সাবাথও ছিল সবসময়। বাংলাদেশে যারা ইংলিশ নাম্বার শুনে অভ্যস্ত কমবেশি, তাদের জন্যও ঘটনাটি ছিল স্বাভাবিক। ওজি অসবর্নের স্বকীয়তা হেভি মেটাল বাদন ও গায়নপ্রণালিতে ছিল না সীমাবদ্ধ। রকগানের দুনিয়াবিতে তিনি ও তাঁর দলটি সার্থকভাবে কৃষ্ণ আবহ বা ডার্ক অ্যাম্বিয়েন্সকে গানে সফল করে ছেড়েছিলেন।

গানে কৃষ্ণ আবহের সফল রূপকার আর জীবিত নেই শুনে অনেককে দেখলাম প্রিন্স অব ডার্কনেস ব্যানার সেঁটে তাঁকে শেষবিদায় জানাচ্ছেন। সত্য বটে,—মিথ হয়ে ওঠা এই শিরোনামে নিজেকে চিনিয়ে দিতে ভালোই লাগত তাঁর। পেছনে কারণও ছিল যথেষ্ট। রকগানের যেসব ঘরানা তাঁর উত্থানের দিনকালে একে-একে আতুঁরঘরে ভূমিষ্ট অথবা বালেগ চেহারা-সুরত নিয়ে প্রসার লাভ করতে থাকে, যেমন ওই হার্ড, সাইকেডেলিক, প্রগ্রেসিভ, অল্টারনেটিভ ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে শুরু করে এমনকি ডেথ রক…,—ওজি এর কোনোটাই গানে ধারণ করতে উন্মুখ হলেন না। হেভি মেটালকে আরাধ্য করলেন শিল্পী;—যেটি তখনো জিমি হেন্ডরিক্সের বিধ্বংসী গিটাররিফে একলা গুমরে মরছিল। ওজি এবার একে দলীয় বাদনে দিলেন পূর্ণতা। ব্ল্যাক সাবাথকে অনেকে ওই-যে হেভি মেটাল রকগানের জনয়িতা হিসেবে দেখেন, তা এদিক থেকে ভেবে দেখলে,—মিছে নয় একরত্তি।

Ozzy Osbourne; Image Source – BBC.com

ওজি অসবর্ন ছিলেন হেভি মেটালের সেই বিস্ময়কর চরিত্র, যাঁর কন্ঠ ও সংগীত আয়োজনে আলোর নিচে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারকে অনুভব করে শ্রোতারা শিহরিত হয়েছিল। এই অন্ধকারে নিহিত ছিল ক্রোধ। ছিল একাকীত্বের মর্মর। সেখানে ছিল মরণভীতিকে মুঠোয় নিয়ে চেখে দেখার দুর্দমনীয় ক্ষুধা। ছিল দ্রোহ। আর ছিল,—অশুভকে স্বেচ্ছা-আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে শুভ সচেতনাকে বাঁচিয়ে রাখার সংগোপন কত-না অশ্রু! ওজি অসবর্নই সম্ভবত প্রথম,—সময়রেখায় ঘটে চলা অশুভের উত্থানকে গানের ভাষায় আলিঙ্গন করতে থেকেছেন দ্বিধাহীন।

রক কিংবদন্তির প্রয়াণ সংবাদ কানে আসার পর থেকে ভাবছি,—ব্ল্যাক সাবাথ, ওয়ার পিগস, প্যরানোয়েড, আয়রন ম্যান, অর্ডিনারি ম্যান, এনআইবি-র মতো আরো-আরো গানগুলো কি কেবল তাঁর ঈষৎ কাঁপা-কাঁপা ও মাঝেমধ্যে অস্পষ্ট হতে থাকা সুরেলা কণ্ঠে গুঞ্জরিত জীবনযন্ত্রণার প্রকাশ? না;—একদম তা নয়। গানগুলোয় গুঞ্জরিত শুভ-সচেতনাকে অবিরত জখম হতে দেখার চাপা সংক্ষোভ থেকে ওঠে আসা হাহাকার। সেখানে গুঞ্জরিত শার্ল বোদলেয়ারের ক্লেদজ কুসুম।

রকগানে ওজির কন্ঠ ধারণ করেছিল মৃত্যুভয়, পাপ ও বিকারকে উদযাপনের দুরন্ত সংবেদন। অন্যরা কি সেগুলো উদযাপন করেনি। বিটলস, পিঙ্ক ফ্লয়েডরা করেছে। জিমি হেন্ডরিক্স ও দ্য ডোরস-এ নিজেকে ফাটিয়ে দিতে উন্মত্ত জিম মরিসন মারাত্মকভাবে তা করেছে। ওজি তথাপি পৃথক কী-কারণে? উত্তরে বলতেই হচ্ছে,—তাদের উদযাপনে ছিল বিষাদ, নৈরাশ্য ও অর্থহীনতার ধ্বনিমর্মর। তারা হয়ে উঠেছিল ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতাচরণের অনুরণন : ওয়াটার ওয়াটার এভরিহোয়ার/ নট আ ড্রপ টু ড্রিংক।

ওজি অসবর্নের কণ্ঠস্বর চিরে বেরিয়ে আসা গানের কলিতে অন্ধকার রূপ নিয়েছিল এমন এক সাড়ম্বর উদযাপনে,—একে যাপন করতে না জানলে মানুষ কখনো আলবেয়ার কামুর সিসিফাসকে উপলব্ধি করতে পারবে না। ওজি তাই আক্ষরিক অর্থে গ্রিক পুরাণে মর্মরিত সেই অভিশপ্ত সিসিফাস। ধরায় তার আগমন ও মর্মান্তিক যাপনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে বসে শুভর পরিবর্তে আশুভকে এই সিসিফাস আঁকড়ে ধরেছিল। কর্দমে আবিল ধরায় অবিরত তালাশ করেছে প্রস্ফুটিত কুসুম। শার্ল বোদলেয়ারের মতো মন্দ ও অশুভের বন্দনায় থেকেছে অটল;—যেখানে আবার মিশেছিল অশুভের প্রতি কত-না চোরা উপহাস!

রিয়েলিটি ডার্ক;—ওজির গানের চরণ ও বাদন এ-কারণে ডার্ক। বাস্তবতা অমানিশায় ঢাকা;—ওজি এখন কী করে গাইবে আলোর জয়গান? সময়কে ডায়াবোলিক বা অশুভর দ্যোতক রূপে গানে পাঠ করেছেন ওজি। শয়তানের সার্বভৌম পরাক্রমকে মেনে নেওয়ার ছলে তাকে করেছেন উপহাস ও অভিসম্পাত।

Black Sabbath – End of the Beginning – Stage Performance; Source – Black Sabbath YTC

গানের দল ও প্রথম অ্যালবামের নাম ওজিরা দিয়েছিলেন ব্ল্যাক সাবাথসাবাথ মূলত হিব্রু শব্দ। ইহুদিরা একে জগৎ সৃষ্টি শেষে ঈশ্বরের বিশ্রামে গমনের দিন বলে জানে ও বন্দনা করে। ওজি অসবর্ন সেই বিশ্রামবারকে পাঠ করছেন জগতে যা-কিছু শুভ সৃজন করলেন ঈশ্বর,—তার গভীরে নিহিত অশুভের প্রারম্ভ রূপেও। সাবাথ হওয়ার কথা ছিল শুভ বিশ্রামবার। তার হওয়ার কথা ছিল পবিত্রতায় উষ্ণ ও মনোরম। ওজি দেখছেন,—দিনটি অন্ধকারে নিমজ্জিত, যেমন নিমজ্জিত ঈশ্বর স্বয়ং। তাঁর গানের সহজ-সরল গীতল চরণে অনায়াস ধ্বনিত এই দ্বৈতাভাস :

Make a joke and I will sigh
and you will laugh and I will cry.
Song: Paranoid

তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত :

Generals gathered in their masses
Just like witches at black masses.
Song: War Pigs

অশুভ কি আসমানি কেবল? মোটেও তা নয়। ওজির প্রতিটি গানের চরণে পরিষ্কার বিঘোষণ পায় শ্রোতা :—অশুভ বাস করে আমাদের অন্তরে; এবং অধিকতরভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিসীমায়। আমাদের বানিয়ে তোলা জীবনধারায়;—যেখানে আলোকায়নের মধ্যে সংগোপন থাকে ফুকোর মানব। সংগোপন থাকে নির্দয় যত পীড়ন, শোষণ, আর নরকতুল্য নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণের ইতিহাস। স্বাধীন ইচ্ছার ঠাঁই মানবধরায় হয়নি কখনো। না কেউ অন্তরতম নিখাদ উচ্চারণ ‘ভালোবাস’-র দেখা পেয়েছে কোনোদিন।

Parabola by Tool; Source – Tool YTC

ওজি অসবর্নের অশুভ-বন্দনা যে-কারণে ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণকে চিনিয়ে দিতে আয়োজিত হয় নতুন করে। তাঁর গানের টেম্পো নিচে নামে আকস্মিক। ভয়াল আবহ জন্ম দিতে গথিক কাঠামোর করেন ব্যতিক্রম ব্যবহার। গিটার ও ড্রামস চড়াতালে উঠার মুহূর্তে ধাম করে নিচে নেমে আসে। আর, ওজির অদ্ভুত সুরেলা কণ্ঠস্বরে কম্পন ও নিচুলয় অথির করে পরিবেশ। আয়রন মেডেন কিংবা গানস অ্যান্ড রোজেস-এর মতো হেভি মেটাল যেখানে গতিময়, উত্তেজক, পরাক্রমশালী ও দাপুটে;—ব্ল্যাক সাবাথ সেখানে ততটাই অমাবস্যায় গুম! ভয়কাতর শিহরনে তারা ভূতুড়ে;—এবং হয়তো-বা মর্বিড। তারা দেখা না দিলে টুল ব্যান্ডকে বোধহয় শ্রোতারা পেতো না কখনো। যাদের হাতে পড়ে ডার্ক হয়ে ওঠে বডিহররের প্রতীক। দেহ যেখানে স্টয়িক নীতি মেনে পীড়নকে করেছিল আলিঙ্গন :

Saturn comes back around. Lifts you up like a child o r
Drags you down like a stone
To consume you till you choose to let this go.
Song: The Grudge, Tool Band

This body. This body holding me. Be my reminder here that I am not alone in
This body, this body holding me, feeling eternal
All this pain is an illusion.
Song: Parabola
, Tool Band

কিংবা লেডি গাগায় বিস্ফারিত কিম্ভূত;—যার প্রতিটি রন্ধ্রে গমনে মধ্য দিয়ে গাগা সুন্দরের মাহাত্ম্যকে করতে চায় অনুভব! এরকম অনেককিছু হয়তো আরো প্রলম্বিত কোনো পর্বে এসে শ্রোতাদের কাছে হাজির করত নিজেকে। 

ওজি অসবর্নের এই মাতাল তরণী সময়টানে ধীর হয়ে এলেও জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি তা অন্ধকারকে আরো গভীরতলে করেছে অনুভব। জীবনের শেষপর্বে এসে Under the Graveyard-এর গানের চরণে তাঁকে বলতে শুনছি :

Under the graveyard
We’re all rotting bones
Everything you are
Can’t take it when you go.

এই ওজি কি তাহলে মরণের পায়ে নতজানু? সে কি বুঝে গেছে,—মাটির নিচে পচতে থাকা তার এই দেহ তাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে না? কেবল ওই হাড়টাই সার! সে এখন জীবশ্ম হবে অথবা মাটি তাকে গিলে খাবে চিরতরে! আর, ওজি অসবর্ন ঈশ্বর ও শয়তান, শুভ ও অশুভ, ঘৃণা ও ভালোবাসা, আলিঙ্গন ও বিচ্ছেদের মাঝখানে ঝুলতেই থাকবে চিরকাল?
. . .

Ozzy Osbourne; Image Source – Google Image
সংযুক্তি : ওজি অসবর্নকে সবসময় পীড়িত করেছে এই অভিজ্ঞান,—মানুষ সজ্ঞানে ও নির্জ্ঞানে অন্তরতমভাবে সহিংস। নিজের সৃষ্ট সহিংসতা দেখে সেই মানুষই আবার হয়ে ওঠে ভীত ও ভূতুড়ে। ষাট ও সত্তর দশক জুড়ে সহিংসতা পয়দা হয়েছিল বেশুমার। ক্রিয়ার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া থেকে জন্ম নিয়েছে যুদ্ধ, মন্বন্তর, মাড়ি ও মড়ক। দ্রোহের বিপরীতে রূঢ় থেকেছে দ্রোহ দমনের পাঁয়তারা। ব্ল্যাক সাবাথ-এর মতো হেভি মেটাল রকবাজিকে অনিবার্য করতে একলা ভিয়েতনাম যুদ্ধই ছিল যথেষ্ট। 

দলের নামে নামাঙ্কিত অ্যালবামের সবকটি গান এদিক থেকে যুগান্তকরী আবেদন শ্রোতামহলে জন্ম দিয়েছিল। ওয়ার পিগস বা প্যারানোয়েড-এর মতো সিগনেচার সং নিয়ে নতুন করে ধান ভানার আবশ্যকতা নেই। হেভি মেটাল রকগানের লম্বা সফরে ওজিরা আরো-আরো স্মরণীয় গান পরে জন্ম দিয়েছেন বটে, তবে সেগুলো যদি সৃষ্টি না হতো, তবু প্রথম অ্যালবামের গানগুলোর জন্য শ্রোতারা এই দলটিকে ইয়াদ করত ফিরে-ফিরে।

ওয়ার পিগস এমন একটি গান যেটি দশকে-দশকে প্রাসঙ্গিক হতে থাকবে। মূল গানটির সঙ্গে বাংলা ভাষান্তর থাকছে এখানে, এটি মনে করিয়ে দিতে,হেভি মেটাল হচ্ছে সময়ের এমন এক ধারাবিবরণী, তাকে বাদ দিয়ে অনুভব করা সম্ভব নয় মানুষের অকারণ হিংস্র মজাক ও শয়তানের মন্ত্রণায় বিপথে গমনের চিরাচরিত ইতিহাস।
Black Sabbath – War Pigs; Source – GIVI YTC

যুদ্ধ-শূকর

সমর কর্তারা সব জুটেছেন একসাথে
ডাইনির কালোজাদু ভর করেছে জনতায়
ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বদমাশ মন
মরণের জাদুটোনা চালায় ওঝাগণ
দেহগুলো পুড়ে ফসলের মাঠে
যুদ্ধের ডঙ্কা উঠেছে বেজে
মানুষের প্রতি মরণ ঘৃণায়
বিষে নীল তাদের মগজধোলাই মন—
প্রভু হে;—মালিক আমার

নেতারা নেই ত্রিসীমানায়
তাদের কাজ তো যুদ্ধটা বাঁধানো
যুদ্ধে নেমে পড়া কি সাজে বলো?
গরিবের পিঠে দিয়েছেন ভার
—যুদ্ধটা চালানোর

সময়ে ফাঁস হবে ক্ষমতালোভী মনের গোমর
যুদ্ধ বাঁধানোটা ছিল নিছক মজাক
মানুষ সেখানে দাবার গুঁটি ছাড়া কিছু নয়
অপেক্ষা রোজ হাশরের ময়দানে তাদের বিচার—
প্রভু হে;—মালিক আমার

অমানিশায় থেমে আছে পৃথিবীর চাকা
দেহগুলো পুড়ে ছাই
ক্ষমতার সিংহাসনে নেই কোনো যুদ্ধ-শূকর
সময়ঘড়িতে চাবুক হেনেছেন দয়াল-হাত
রোজ হাশরের ময়দান দিয়েছে ডাক
হাঁটুতে ভর দিয়ে যুদ্ধ-শূকরের হামাগুড়ি
তারা চায় ক্ষমা;—ভিক্ষা মাগে করুণার
শয়তান হাসছে দেখো, অনন্তে মেলে দিয়ে ডানা
প্রভু হে;—মালিক আমার…
. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 56

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *