পোস্ট শোকেস - সাহিত্যবাসর

ফানা — আহমেদ বেলালের কবিতা সিরিজ

Reading time 4 minute
5
(30)
Lonely Journey by Chat GPT Model-4; @thirdlanespace.com

ফানা : আহমেদ বেলাল-এর কবিতা সিরিজ

ফানা-৪৮

ঘুমাও নিরব শিকড়ের আঁকাবাঁকা পথ হয়ে।
জলের তৃষ্ণা পেলে ইশারায়
সাড়া দিও জলোচ্ছ্বাসের মতোই…

যাতনা দূরে রাখো—
নয়তো ইঁদুরেরা বিধ্বস্ত সময়ের গল্প নিয়ে
বহদূর সুড়ঙ্গ পথে হারাবে অনায়াস…

পথে পথে হেঁটে হেঁটে হিসাব মিলাতে গেলে
পথই সমাধি হয়ে যায়। কারণেরও অকারণ থাকুক সেই পথের মুঠোয় জমা।

শুধু আমাদের বুকে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া মৃত্যুর আর কোনো দাবি নেই। সে কথা জেনে খুব মায়া হয়—বড়ো শূন্য শূন্য লাগে মৃত্যুর জীবন…
. . .

ফানা-৫০

কাউকে না বলে যত জখম অগ্রগামী আকাশের দিকে চেয়ে থাকে অহংবোধহীন—আমি তার চারপাশে রেখে দেই মায়াবি কন্যার দেওয়া সব অশ্রুধারা।

কিছুই রেখে যায়নি সে— পাতা ও পাথরে লেখা কিছু
গল্প ছাড়া…
. . .

সন্ধ্যার নিভু নিভু আলোয় যে-কথা বলবে বলে বুকে অবোধ্য ঝড়
সে-কথা বলে বলে ক্লান্ত গালিবের মন।

পাখিওয়ালা নিয়ে গেছে বাবার তছবি মালা
এই বুকে আর কোনো আরশের নাম নেই—
তোমার নামটি ছাড়া…
. . .

ফানা-৫২

কঠিন পিচ্ছিল পথ
কনকনে শীতল হাওয়া
এইসব সন্ধ্যার অন্ধ অন্ধ আলোয়
বেঁচে থাকে শেষ বিপন্ন মানুষের ইশারা।

যেতে যেতে শৈশবের স্বপ্নের মতো
একবার ফিরে তাকাও গহীন রাতের সুর
যেতে চাইলে আজ আর কেউ আটকাবেনা—মানুষের আবাস এখন একে অন্যের থেকে যোজন যোজন দূর।

গড়তে গিয়ে কতকিছু ভেঙেছি এই হাতে—জানলেও জানতে পারো আমজনতার লোক
অভিমানে পুরো দেশ কারাগার হলো কেন—এই প্রশ্ন তোমার রক্তেই লেখা থাকুক…
. . .

Imprisoned – Image Source – istock

ফানা-৫৩

তারার দিকে ধাবমান মন—
এখনো জানে না ভোরের পাখিরা গান গায়—
নাকি এটা শুধুই সাধারণ একটি আহবান।
অভিমান—
ঘিরে রাখে জলেশ্বরীর বুক—
সে নিজেও জানেনা কেন সৃষ্টি করেছিল জটিল প্রাণের যাতনা।

সময় সবসময়ই আনমনাই ছিলো—ঝিনুকের রুপালি কান্নার মতো—বাকি সব সাগরজলের সাধনা …
. . .

ফানা-৫৪

এখানেই উত্থান পতন।

ঝরঝর বৃষ্টির মতো নিরলস বীর্য ও বজ্রপাত…
দূরে—
মাজার ভাঙার আর্তনাদ—এখানেই কেন খুব তীব্রভাবে বাজে!
অচেনা আউলিয়ার দরবারে
একটি ভোরের মোহিনী মৃদু তৃষ্ণার মতো দাঁড়িয়ে ছিলে তুমি অনন্তকাল
কেউ একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি তোমায় দেখে!
আকাশ অতিক্রম করে চলে যাবে বলে যখনই পৃথক ও প্রবাহিত করেছো তোমার ডানা…
তখনই তুমি শ্রবণ করলে ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ধ্বনি : ফানা…
. . .

The Seventh Seal (1957) by Ingmar Bergman; Image Credit – Google Image

ফানা-৫৫

আজই ঘোষণা করা হবে তোমার মৃত্যুদণ্ড অথবা তুমি বেইজ্জতির জীবন আর কতটুকু পাবে।
তোমাকে পর্যুদস্ত করার জন্য শক্তিমান পুরুষেরা আজই সংসার-মন্ত্রণালয়ে বসবে তাদের সমস্ত প্রতিভাকে সাথী করে।
কেন তুমি অন্য কারো বুকের ব্রহ্মাণ্ডে
গহীন কালো তিলের উপর হাত রেখে হারিয়ে যেতে চাইবে?

ঘরনীর ঘর কত ছোট এই বাংলায়—এটা না জেনেই আজ উপহার পাবে এক তিক্ত, মুমূর্ষু নারকীয় জীবন!

আজ অপেক্ষায় সকল পণ্ডিত, আত্মীয়স্বজন তোমার অন্তরের ক্ষত কতটুকু গাঢ় হলো তা দেখবে বলে…

তোমার আত্মা কার আত্মীয়তায় এতো পাষাণ ও ব্যাকুল হলো তা কেউ দেখবে না…
জানতে চাইবে না—
কেন কেউ সমস্ত ভুবনের নাম ভুলে তোমার নামটি শুধু জপে : ফানা…
. . .

ফানা-৫৬

তুমিই বইতে লুকিয়ে রাখা প্রথম পুষ্পের ইশারা, সন্ধ্যায় ঘরে না ফেরা কিশোরের প্রেরণা।
প্রথম বাইসাইকেলের অনন্ত উড়াল—তুমিই ঈশ্বর ও আমিত্বের মধ্য গগনের দেয়াল।
ছুঁয়েও না ছোঁয়ার অনিঃশেষ আকুতি,
তুমিই আড়াল যত ঘ্রাণের—দূরে নিমগ্ন গানপাগল বয়াতি।
তুমিই কবি ও কবিতার অধিক যাতনা—রাবেয়া বসরির কথা মনে পড়ে যায়—যখন কেউ আত্মবিভোর হয়ে জপে অবিরাম : ফানা…
. . .

Solaris (1972) movie scene by Andrei Tarkovsky; Source – Google Gif

…. ফানা : কবির অনুভব …
(পড়তে নিচের বাটন চাপুন)

ফানা, আজ জন্মদিন তোমার…

পুষ্পের পাতায় ভোরের শিশিরের মতো জীবন পাইনি আমরা। হয়তো গভীরভাবে সেরকম জীবন চাইওনি কোনোদিন । দোয়েল ও চড়ুইদের চঞ্চলতাও নাই আমাদের স্বভাবের অলিগলিতে।

তাই হয়তো
চারপাশে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। মায়া ও মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর মাটি থেকে। শৈশবের সবুজ দিনগুলো স্বপ্নের দৃশ্য মনে হয়—এমন ধূসরতা গলা টিপে ধরেছে এই নির্মম সময়।
যন্ত্র গিলে ফেলেছে স্বতঃস্ফূর্ত জীবনের ফল্গুধারা…

এতো হতাশার ভিতরেও স্বপ্ন তবু যে দেখি—তা তুমি এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছো বলে। তোমার অপরূপ কথা বলার ভঙ্গি, সরলতম হাসির উল্লাসময়তা, সামান্যতেই সন্তুষ্ট থাকার প্রায় অপার্থিব আয়োজন দেখে আমি ধ্বংসপ্রাপ্ত জীবনের কিনারে দাঁড়িয়েও স্বপ্ন দেখার সাহস পাই নিজের অন্তর সত্তায়…

আজ ৩৫ পূর্ণ হলো তোমার!
অনেক অসুখ, মানসিক আঘাত, স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের সংঘাত পেরিয়ে এই-যে ৩৫ পেরিয়ে এসেছো, তা আমাদের মায়াবী বন্ধনের পূর্ণ ও অপূর্ণতা অনুভব করবে বলেই এসেছো মনে হয়…

ফানা,
পুরোপুরি কোনোকিছুই অর্জন যেমন করা যায় না, তেমনি বিসর্জনও।
মায়া সবসময় যে-আনন্দে আপ্লুত করে রাখবে, তা কজনই-বা বলতে পারে? কোমলে-কঠিনে ঘেরা এই জীবন।
পাথরের পাহাড়ের পাশেই থাকে নরোম জলের নদী।
এই কারণেই হাজারো ঝড়-ঝাপটায়
একাকার হয়ে রবো জীবন থেকে মৃত্যু অবধি…

আমার সামান্য এই কথার ভুবন আর যা-কিছু বলি আমি সুরে-বেসুরে—
তার সবই শুধুমাত্র তোমায় লক্ষ করে…

শুভ জন্মদিন, হে আমার মায়াবী মৌনতা…

. . .

কথা ছিলো একই ধরিত্রীপুরে একই আত্মা, একই মানবতার মায়ায় জড়িয়ে থাকব সবাই । অথচ আমরা নিজেদেরকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে, ভিতরে অসীম অর্থহীন শূন্যতা নিয়ে বেঁচে আছি। হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। ফিলিস্তিনের ধূসর জমিনে ঐক্যের ফুল ফুটবে। হয়তো একদিন বুকের আকাশে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরার জন্য মানুষ হওয়াটা যথেষ্ট হবে... হয়তো একদিন তেমন দূরে কোথাও না গিয়েও জীবনানন্দের মতো ‘বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি’ বলার পাশাপাশি বিশ্ববিবেকের রূপও আমরা দেখতে পাবো খুব সহজে... এই বসুন্ধরার বুকে একদিন শৈল্পিক, নান্দনিক ও জটিলে-সরলে -সুন্দরে ভরে উঠবে সকল মানুষের মন;—এই আশা ত্যাগ করেও করতে পারে না আমার বিহ্বল মন;—নদীর মতো এই ভাঙে এই গড়ে যখন তখন... 

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 30

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

One comment on “ফানা — আহমেদ বেলালের কবিতা সিরিজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *