
শৈশবের মাঠে আটকে গেছে খাতা
সূর্য মাথায় নিয়ে ধরেছি ফড়িং, শৈশবের মাঠে
ভাই-বোন মিলে বিক্রি করেছি আনন্দ।
আজ ছেলের বিন্দু-বিন্দু আনন্দ দেখে
দুর্বল হাতের ক্লান্তিগুলো দেখি।
বয়স বেড়ে গদ্যগ্রন্থ হয়ে গেছে; কিন্তু ফড়িং
ভাবার বয়সে আটকে গেছে কবিতার খাতা।
. . .
ফেলে দেওয়া হিসাব
খাদ্য তালিকায় সহজ ভাবা মুশকিল—
কে কাকে খেল, কে কার রঙে ভরল
ধূলি গোনার মতো এক অন্তহীন হিসাব।
মাছের সহজ খাদ্য, তারই ভাই-ব্রাদার; মানে
সমুদ্রসীমা জুড়ে, মাছের সংখ্যা যত
তার সবই তাদের ভাগ্যলিপি।
মানুষের ভিন্নতা এখানেই—
সে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বলেই— মাছ, শস্য তার খাদ্য
ফল, মাংসও তার তালিকায়; আর
অন্য মানুষের মাংস খায় না বলেই
তার ‘গন্ধ’ ও ‘স্মৃতি’— রেখে ফেলে দেয়।
. . .

উৎসবের আলো
পরিমিতি সবখানেই প্রযোজ্য—
গাছটা পানি পেলে যেমন সতেজ হয়
ফুল ও ফলের উৎসব আনে; কিন্তু
অধিক পানি নামিয়ে আনে ঝরা পাতার শোক
সামান্য হাওয়াতেই ভেঙে পড়ে তার দেহ।
শিশুরাও তাই—
আদর আর শাসনের ভারসাম্য না থাকলে
তাদের কণ্ঠে জমে ওঠে না হাসির গান
পৃথিবীর বুকেও জ্বালাতে পারবে না
কোনো উৎসবের আলো।
. . .
সমুদ্র
সমুদ্র দেখতে গিয়ে দেখে এলাম
পৃথিবীর পুষে রাখা গর্জন;—
তার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে শিশুর নিদ্রা।
নোনা জলে পা ডুবিয়ে জেনেছি,
অন্ধ পৃষ্ঠার মর্মকথা—
সবই সে আগেই জেনে গেছে।
. . .

সুরমা পাড়ের ছেলে আহমদ সায়েম মার্কিন দেশে ডেরা পাতলেও জন্মমাটির সঙ্গে তাঁর সংযোগ কখনোই ছিন্ন হতে দেননি। ব্যস্ত প্রবাসজীবনের মধ্যেই সক্রিয় আছেন কবিতায়। একসময় ছোটকাগজ সূনৃত তাঁর সম্পাদনায় ছিল ধারাবাহিক। নতুন শতাব্দীতে পা রাখার দশকে কাগজটি নিয়মিত বের করার কাজে লেগে পড়েন সায়েম। ধারাবাহিক প্রকাশনার পুরো সময়জুড়ে দুই বাংলার কবিলেখক ও পাঠক-মহলের নজর কাড়ে সূনৃত।
শূন্য দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ছোটকাগজের মধ্যে সূনৃত নানাকারণে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। নয়টি সংখ্যা প্রকাশের পর স্বকীয়তায় উজ্জ্বল কাগজটির প্রকাশনায় আপাতত বিরতি টেনেছেন কবি আহমদ সায়েম। অনলাইন মুখপত্র রাশপ্রিন্ট সঞ্চালনায় সক্রিয় রেখেছেন নিজেকে।
ছোটকাগজ ও অনলাইন মুখপত্র সঞ্চালনার বাইরে কবিতা লিখছেন নিয়মিত। এ-পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতাবই কয়েক পৃষ্ঠা ভোর, অনক্ষর ইশারার ঘোর ও রুদ্ধজনের রাগ ও সম্বিৎ। কবি আমিনা শেলীর ভাষান্তরে কয়েক পৃষ্ঠা ভোর The Layers of Dawn নামে বেরিয়েছিল বছর ছয়-সাত আগে।
প্রতিদিনের জীবন ও পরিপার্শ্ব থেকে কুড়িয়ে নেওয়া ছোট-ছোট অনুভবের কারুকাজ আহমদ সায়েমের কবিতায় পাঠক তরঙ্গিত দেখতে পায়। ইশারাঘন শব্দব্যঞ্জনায় পরিমিত এক কবিতাভুবন এভাবে গড়েপিটে নিয়েছেন তিনি। কবিতা ছাড়াও কবিতা-নিবিড় গদ্য লেখেন মাঝেসাঝে। দেশ-যাপনের দিনকালে ক্যামেরা হাতে আলোকচিত্রে সক্রিয় ছিলেন কিছুদিন। ভালোবাসেন বন্ধুসঙ্গ ও আড্ডা। আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে যাপনের দিনকালেও তা অটুট এখনো।

. . .




One comment on “সমুদ্র ও অন্যান্য — আহমদ সায়েম”