পোস্ট শোকেস - সাহিত্যবাসর

অন্ধ ভস্মের গৌরব — ফজলুররহমান বাবুলের কবিতা

Reading time 7 minute
4.9
(32)
অন্ধ ভস্মের গৌরব …
ফজলুররহমান বাবুল-এর কবিতা
Locked Door; @thirdlanespace.com

পুরনো দরজার হাতল

তোমার জন্য এনেছি—
একটি দরজার হাতল।
যেটা দিয়ে বহু বছর
কোনও ঘরে ঢোকা হতো না।

এটা এখন আর কেবল হাতল নয়—
এ এক অপ্রকাশ দিনের স্মারক।
যেখানে জমে আছে
না-বলা অনেক সময়,
আঙুলচাপা অভিমান,
ভিতর থেকে আটকানো
আলো-অন্ধকারের গন্ধ,
সন্ধ্যায় ফেলে যাওয়া
অর্ধেক উচ্চারিত ‘ভালো থেকো’।

কখনও একা থাকলে
হাতলটা হাতে নিয়ো—
হয়তো অনুভবে খুলবে
একেকটি নিঃশব্দ দরজা,
যেগুলো বাইরে থেকে বন্ধ,
ভিতরে সারাক্ষণ খোলা।
. . .

পৃথিবীর পথে

কোন মুখরতায় আত্মহারা তুমি?
যাপন করো কীর্ণ-জীবন!
সয়ে যাও ছাই-ধুলো, ধুলো-জীবন!



ঠান্ডা হাওয়ায়, গরম হাওয়ায়
যেন এই পৃথিবীর পথে
কিছুই ঘটেনি কোনওদিন—
যেন কোনওদিন
কেউ গায়নি কোনও গান
আর
কোনও ছবিটবি আঁকেনি কেউ

শ্লথপায়ে স্মৃতিরা
অন্ধকারে নির্বাসিত হয় আর
নৈঃশব্দ্যের ভিতরে ঘুমিয়ে পড়ে
আবার কখনও-সখনও
জেগে ওঠে
কথা বলে
আবার ঘুমিয়ে পড়ে…

জীবন একটি ঘুমিয়েপড়া গান
জীবন ঘুম থেকে জেগে ওঠার গান


কোথায় যাচ্ছে পৃথিবীর যৌবন?
পথের ওপর রক্ত-ঝরা পথ!
কুকুরগুলো চেঁচিয়ে ওঠে!

শুকনো-জীবন, রুক্ষ-জীবন
মানুষ গর্জায়, মেশিন গর্জায়
গর্জন রাত্রিদিনে

ভয়-পাওয়া পাখিদের মতো
মানুষ পালায়, কুকুর পালায়

পথেঘাটে আনন্দ ও পরিতাপ
খাড়া হয়ে থাকে নানান রঙে…
আর নিদ্রামগ্ন সময়ের অস্থির মোহ এবং
অপরিশোধ্য ঋণ নদীর স্রোতের মতো
পৃথিবীর পথে পথে
বয়ে যায় তোমাকে সঙ্গে নিয়ে…

তোমার ভিতর চলেছ তুমি
স্রোতের টানে…


যেন পৃথিবী আজ এক বিষ-বুড়ো!
পথের ওপর রক্ত-ঝরা পথ!

নিজেকে বলি, শুয়ে পড়ো,
একটু জিরিয়ে নাও—
লাল-হলুদ আকাশটা অন্ধকার হয়ে যাওয়ার আগে
শুয়ে পড়ো,
এই বিকেলের অলস আলোয়
শুয়ে পড়ো, শুয়ে পড়ো

বিষণ্ন সময়ের ভিতরে-বাইরে
বেদনার অলিগলিতে
হাতঘড়িটা না-দেখে
বোকা হাওয়ায় শুয়ে পড়ো

শুয়ে পড়ো
শুয়ে পড়ো… মানুষ…

পথে বেরোনোর আগে
জখমি হৃদয়ে কিংবা
সহজ আনন্দে একটু শুয়ে থাকো তুমি—
এই পথই শেষ পথ নয়…
. . .

Melancholic Sleep by Chat GPT Model-4; @thirdlanespace.com

গোলকধাঁধা

কোনও-এক বিষণ্ন সূর্যের মতো
তোমার মুখের ছায়া অর্থহীন—
তা আমরা কীভাবে বলি?

তোমার মুখটি শুধু তোমার…

আমরা কেবল পেছন থেকে দেখি
এক গোলকধাঁধা

তোমার মুখের ছায়া
দেখতে দেখতে দিন চলে যায়

আমাদের বিস্মৃত গল্পের পরিবর্তে
তোমারই গোলকধাঁধায়
বার বার ফিরে আস তুমি
আর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাক

আমরা তোমাকে দেখি না
কেবল দেখতে থাকি ছায়া।
. . .

আমরা বিশ্বাস করি

সব মানুষেরই আছে শিকড়
আমরা বিশ্বাস করি—
এটা বিশ্বাস করতে হয়

আমরা বিশ্বাস করি
পাটখেতেও আগাছা হয়
আমরা বিশ্বাস করি
ঘাসের শিকড়েও মাটি থাকতে হয়
আমরা বিশ্বাস করি
ঘাসের শিকড়ে থাকা মাটিও বৈচিত্র্যময়—
যেমন বৈচিত্র্যময় টিলা, পাহাড়
বন্যার জল, নিষিদ্ধ পল্লির নারী
কিংবা সবুজ ভূট্টাগাছ সারি সারি

সব মানুষ (নারী-পুরুষ)
সারি সারি ভূট্টাগাছের মতো নয়—
তবু বিশ্বাস করি
মানুষের শিকড় থেকে
বৈচিত্র্যের জন্ম হয়…
. . .

অন্ধকারে আমার ছায়া

কোনও-একরকম তাকাও আমার দিকে
হয়তো দেখতে পাবে পাথর
পথের ওপর পড়ে থাকা পালক
তোমার ছায়া দেখে নিরন্তর
তাকাও তুমি আমার দিকে
তাকাও কোনও-একরকম
অন্ধকারে হারিয়ে-যাওয়া পথের ওপর
তাকাও তুমি তাকাও
তোমার ছায়ায় সাদা চোখে
চেষ্টা করো দেখতে আমায়
অন্ধকারে আমার ছায়া
হারিয়ে যাওয়া পথের ওপর…
. . .

তুমি হাসলে

তুমি হাসলে পাতাবাহারে বসে প্রজাপতি
গাছে গাছে ফোটে ফুল
তুমি হাসলে আকাশ তার সমূহ দরজা খুলে দেয়
আর সুখের তরণিতে ভাসে পাথরের দেয়াল
সুখে ভাসে হাওয়া মেঘ নদী পাখি
মেঘের আড়ালে চাঁদ হাসে সূর্য হাসে

তুমি হাসলে তারায় তারায় বাজে গান
তুমি হাসলে আমি মহীয়ান!
. . .

You the tree by Chat GPT Model-4; @thirdlanespace.com

তুমি, আমি

তুমি তেমনই বৃক্ষ—
যাতে সারাবছর ফুল ফোটে
লাল নীল গোলাপি…

তুমি তেমনই—

তোমার শাখা থেকে
ঝরেপড়া ফুলগুলো গন্ধ বিলায়—
হৃদয়ে জাগায় বিদ্যুতের ঝলক

এইসব জানে যে-জন
তাকে আর কতটা জানে
ঐশ্বর্যের জলে ভরা নদী…

ফাউস্ট দেখেনি তোমাকে
কেবল দেখেছি আমি

আর, আমি
কেবল আমি ছাড়া আর কিছু নই
আমি কেবল অপ্রতিভ—
অন্ধ ভস্মের গৌরব…

তুমি তেমনই বৃক্ষ—
যাতে সারাবছর ফুল ফোটে…
. . .

মৌনব্রতে

মৌনব্রতে আজও মনে রাখি তোমায়…

হালকা বৃষ্টির ফোঁটার মতো
ঝরে পড় তুমি—
কেবল তুমি মাথার ছায়ায়

তুমি শুধু তুমি রুপালি রেখায়
শান্ত, সুধীর সন্ধেবেলায়

স্মৃতিপথের অগ্নিজমা মৌনব্রতে
কোটিবছর তোমাকে মনে রাখা যায়

শান্ত, সুধীর সন্ধেবেলায়
তোমার খোঁজে বাতাস অধীর…

তুমি কেবল তুমি মাথার ছায়ায়।
. . .

Book Cover of Poet Fazlurrahman Babul; Image Source – Google Image
অন্ধ ভস্মের গৌরব : পাঠ-অনুভবে ফজলুররহমান বাবুল-এর কবিতা
@thirdlanespace.com

কিছু কবিতা বারবার পাঠ করলেও কখনো পুরাতন হয় না! তুমি তেমনই বৃক্ষ-এর কবিতারা আমার পাঠ-অভিজ্ঞতায় এরকম এক অনুভূতি বয়ে আনে সদা। ভণিতাহীন সহজতা কবিতাগুলোর প্রাণ। বাবুল ভাইয়ের পক্ষেও দ্বিতীয়বার এই মানের কবিতা সৃজন কঠিন থাকবে চিরদিন। সত্তার গহিন থেকে আচমকা উদ্ভাসের মতো বেরিয়ে এসেছিল বলে এর অনুকরণ-অনুরণন স্বয়ং কবির পক্ষে নয় সম্ভব!

কোথাও মেদ নেই একরতি! না আছে শব্দের চালিয়াতি দিয়ে গোপন ছলনা তৈরির চেষ্টা! পড়তে সহজ, তবে অনুভবে ধরতে বসলে অনেকক্ষণ স্তব্ধ থাকা যায় অনায়াস! আমার এই অভিজ্ঞতাটি তখন হয়েছিল। যেমন হয়েছিল কবি জাহেদ আহমদের। জ্বরাক্রান্ত জাহেদকে বাবুল ভাই তুমি তেমনই বৃক্ষ দিয়ে বশ করেছিলেন তখন।

কিছু কবি ও কবিতা একশো চার ডিগ্রি জ্বরে পাঠ করা ভালো। যেমন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে জ্বরের ঘোরে বেশ পাঠ করা যায়। তখন মনে হয়, কবিতার খোলস ভেদ করে বেরিয়ে আসছে শিহরন। আবার কোনো-কোনো কবিতার সম্মোহন এমন, জ্বরেও যেমন, জ্বরবিহীন দিবসেও মনকে তারা আউলা করে। এই ধরনের কবিতাকে আমি বলি অ্যানেস্থেটিক। যেমন, জীবনানন্দ দাসের অবসরের গান, কিটসের ওড টু অ্যা নাইটিঙ্গেল, এলিয়টের ফোর কোয়ার্টেটস, স্যাঁ-জন পের্স-র আনাবাজ, আর উৎপলকুমার বসুর কবিতারা এরকম বটে! আরো আছে। নাম নিতে গেলে শেষ করা যাবে না।

কবি ফজলুররহমান বাবুলের তুমি তেমনই বৃক্ষ জ্বর ও জ্বরবিহীন… দুরকম পরিস্থিতিতে বসে পড়া যায়। পড়তে-পড়তে এর সহজতাকে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছা করে। কোনো কবিই সম্ভবত ইচ্ছে করে কঠিন লিখতে চায় না। লেখেও না। সে কেবল তার সত্তার মর্মরধ্বনি শব্দজালে ধরতে উতলা বোধ করে। অজান্তে তা কখনো-কখনো জটিল ও দুরারোহ হয়ে পড়ে!

Poet Fazlurrahman Babul; @thirdlanespace.com

জটিলকে পাঠ করার আনন্দ নেই,—সে-কথা বলি কী করে! বিষ্ণু দে’র জন্মাষ্টমি ছাড়াও একাধিক কবিতার নাম নেওয়া যাবে,—একবসায় পড়তে পারার মতো নয় তারা, তবু পড়তে লাগে বেশ। রেফ্রেন্সে ভেদ করলে বেরিয়ে আসে দ্যুতিমর্মর।

তথাপি, সহজ কথায় জটিল অনুভবের বাণ হানতে থাকে যেসব কবিতা, সেগুলো জগতের সবচেয়ে দুরূহ। তুমি তেমনই বৃক্ষ-এ সহজ কথার মালায় জটিল প্যাঁচ মেরে দিয়েছেন কবি। আমার তাই মত। অন্যদের দ্বিমত সেখানে থাকলেও থাকতে পারে।

ইচ্ছে করলে অনেক উপায়ে এই সহজতার ব্যাখ্যা সম্ভব। লেখা সম্ভব থান ইটের মতো ভারী কিতাব। হয়তো বাবুল ভাইয়ের তুমি তেমনই বৃক্ষ পাঠে মুগ্ধ কোনো পাঠক কাজটি করবেন একদিন। না করলেও ক্ষতি নেই। কবি তার সত্তার জাগরণ থেকে লিখেছেন;—এটুকু যথেষ্ট মনে করি। এই যেমন, অনায়াস বলছেন এখানে :

জীবন একটি ঘুমিয়েপড়া গান
জীবন ঘুম থেকে জেগে ওঠার গান


তাই তো চিরসত্য হে কবি। ধরে নিলাম,—তারারাজির ভস্ম থেকে জন্ম ধূলিমলিন এই জীবনের। অন্তে ভস্মপুরিষে সমাধি। তার মাঝখানে কত না কোলাহলমুখর যাপন চলে সেথা। মেশিনের গর্জনে মিশে মানুষের গর্জন অথবা আর্তনাদ। চাপা পড়ে কত-না হাসি ও অশ্রুগাঁথার ইতিহাসধূসর কাহিনি! নিজের গন্তব্য সেখানে কীভাবে নির্ধারণ করছেন কবি? প্রশ্নের উত্তর কবিতার শেষ স্তবকে পাচ্ছি। কবি সেখানে বলছেন :

পথে বেরোনোর আগে
জখমি হৃদয়ে কিংবা
সহজ আনন্দে একটু শুয়ে থাকো তুমি—
এই পথই শেষ পথ নয়…

কবিতাটি কেন জানি অন্য কবিতার সঙ্গে সংযোগের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বলাকার দৃশ্যপট আচমকা ইয়াদ হয় চিতে। ঝিলম নদীতীরে দাঁড়িয়ে দূরের দেবদারুসারি পানে কবি তাকিয়ে। নদী ও দেওদারসারি ছাড়িয়ে আসমানে বলাকারা উড়ছে মণ্ডলাকার। সেদিপানে তাকিয়ে কবির দেহে বয়ে গেল শিহরন। চকিত মনে এলো,—এই ঝিলমের স্রোত, দেওদারবন, আর ঘনীভূত মেঘমালার মতো হংসবলাকার উড়ানে সৃষ্টির চিরসত্য প্রকাশিত।

Poet Fazlurrahman Babul; @thirdlanespace.com

কী সেই সত্য? কবির তখন মনে হচ্ছিল, যে-অজানা অন্ধকার গুহা থেকে অস্তিত্বের উন্মোচন, সেটি ওই চক্রাকারে উড়তে থাকা হংস বলাকার পাখসাটের মতো মদমত্ত উল্লাসে নির্ভয়া। মরণ থেকে সে জাগছে ফিরেফিরে। ঘুমিয়েপড়া গানের আবেশে নিশ্চল হচ্ছে, এবং পুনরায় সেখান থেকে পাখসাটে উড়ান আসমান পানে দিচ্ছে উড়ান! জন্ম জন্মান্তরের চক্র কাজেই বেগের আবেগ বৈ অন্য কিছু নয়। অভিন্ন অনুভব আমরা বিশ্বাস করি কবিতার সহজ কিন্তু দ্ব্যার্থক উচ্চারণে কবি ফজলুররহমান বাবুলও বলছেন এখানে :

সব মানুষেরই আছে শিকড়
আমরা বিশ্বাস করি—
এটা বিশ্বাস করতে হয়

আমরা বিশ্বাস করি
পাটখেতেও আগাছা হয়
আমরা বিশ্বাস করি
ঘাসের শিকড়েও মাটি থাকতে হয়
আমরা বিশ্বাস করি
ঘাসের শিকড়ে থাকা মাটিও বৈচিত্র্যময়—
যেমন বৈচিত্র্যময় টিলা, পাহাড়
বন্যার জল, নিষিদ্ধ পল্লির নারী
কিংবা সবুজ ভূট্টাগাছ সারি সারি

সব মানুষ (নারী-পুরুষ)
সারি সারি ভূট্টাগাছের মতো নয়—
তবু বিশ্বাস করি
মানুষের শিকড় থেকে
বৈচিত্র্যের জন্ম হয়…

বাবুল ভাইয়ের এই কবিতাটি নিয়ে বাড়তি মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন! ফিরে-ফিরে পাঠে কেবল আনন্দ। তুমি তেমনই বৃক্ষ-র কবিতামধ্যে কবির নীরব ট্রান্সফর্মেশন নিহিত রয়েছে। ব্যক্তি-আমি থেকে ব্যক্তি-তুমিতে শব্দশিকারি কবি তার সত্তাকে এখানে বদলে নিয়েছেন। ব্যক্তি-তুমি হয়ে যাপন ও অনুভব করতে চেয়েছেন ব্যক্তি-আমির সত্তা ও অস্তিত্ব।

কবিতাবইয়ে গুঞ্জরিত সত্তার দ্বৈরথ নিয়ে বোধহয় গানপার-এ লিখেছিলাম কোনো একদিন। কথা তাই বাড়াচ্ছি না আপাতত। তারচেয়ে গোলকধাঁধা কবিতাটির পঙক্তিচরণ আস্ত পাঠ যাই এবার। কবিতাটি কি তুমি তেমনই বৃক্ষ-এ পড়েছি? এখন ইয়াদ হচ্ছে না! বই দেখলে পাবো।

সেখানে থাকুক বা না থাকুক,—বড়ো কিছু যায় আসে না তাতে। যেটি যায় আসে ও আসছে এখন,—সেটি হলো এর নির্মিতি। হাইকু কবিতার মতো এক লহমায় পড়ে ফেলা যায়, কিন্তু তার শব্দদেহে আঁকা দৃশ্যপট চোখের সামনে সক্রিয় করলে কবিতাটি ডাবল মিনিং তৈরি করার পাশাপাশি কল্পনাকে উসকে দিতে থাকে বেজায়। ভালো কবিতারা এমনই হয়, এমনটি তার হওয়া প্রয়োজন :

কোনও-এক বিষণ্ন সূর্যের মতো
তোমার মুখের ছায়া অর্থহীন—
তা আমরা কীভাবে বলি?

তোমার মুখটি শুধু তোমার…

আমরা কেবল পেছন থেকে দেখি
এক গোলকধাঁধা

তোমার মুখের ছায়া
দেখতে দেখতে দিন চলে যায়

আমাদের বিস্মৃত গল্পের পরিবর্তে

তোমারই গোলকধাঁধায়
বার বার ফিরে আস তুমি
আর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাক

আমরা তোমাকে দেখি না
কেবল দেখতে থাকি ছায়া।
. . .

রাতভর
বারান্দায় টুপটাপ বৃষ্টি পড়ে,
ঘুম এসে দাঁড়ায় দরজায়—
বলে, ‘চলো, চোখ দুটো বন্ধ করো,
আমি তোমার ক্লান্তি জানি।’

. . .

ছোটকাগজ ঋতি-র সম্পাদক কবি ও গদ্যকার ফজলুরহমান বাবুল-এর সূচনাদশক নব্বই। তারপর থেকে নিরবচ্ছিন্ন রয়েছেন কবিতা, গদ্য ও সম্পাদনায়। বিশ্বনাথের নৈসর্গিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন কবি। সেখানে নিবাস। প্রথম কবিতাবই ঋণী হবো সোহাগী জলে। গদ্য ও কবিতা মিলে তারপর একে-একে বেরিয়েছে সপ্তস্ফুট, ভাষামুখী নিবন্ধ, কবিতার পথে, জন্মতীর্থভূমি, তুমি তেমনই বৃক্ষ ও আপাত সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ দীর্ঘ ঘুমের পরে। গত তিন দশক ধরে ছোটকাগজ ঋতি সম্পাদনা করছেন। ছোটকাগজ ও অন্তর্জাল থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপত্রে নিয়মিত কলম চালানোর পাশাপাশি ভাষাচর্চা, বিশেষ করে বানানরীতির ব্যাপারে মনোসংযোগী। যেমন সংযোগী বন্ধুসঙ্গ ও আড্ডায়। 
. . .



How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 32

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

One comment on “অন্ধ ভস্মের গৌরব — ফজলুররহমান বাবুলের কবিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *