সাম্প্রতিক

ভূরাজনীতির খেল ও আমাদের হালত

Reading time 10 minute

মানব-সভ্যতার ইতিহাসে ভূরাজনীতি সকল যুগে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে তার ভূমিকা নিভিয়েছে। রাজা-রাজড়াদের সময় কোনো রাজ্যের সঙ্গে মিত্রতা ও বৈরিতার নীলনকশায় রাজন্যরা অনেক হিসাব-নিকাশ মাথায় নিয়ে আগাতেন। রাজ্য দখলের মধ্য দিয়ে নিজের আধিপত্য জানান দেওয়ার প্রথা প্রাচীন ও মধ্যযুগে হামেশা ঘটলেও ভূরাজনৈতিক অঙ্কগুলো সেখানে যথেষ্ট জটিল থাকত। আধুনিক রাষ্ট্রে যা আরো সূক্ষ্ম রূপ নিয়েছে।

সমস্যা হলো বাংলাদেশে যাঁরা ভূরাজনীতির নিরিখে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন, খেয়াল করলে দেখব, সেগুলো প্রায়শ ক্লিশে ও গতানুগতিক হয়ে থাকে। নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হয়ে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা এ-নিয়ে কথা বলেন বটে, কিন্তু এর বাইরে নিবিড় গবেষক এখনো দুর্লভ! বিদেশনীতি নিয়ে গবেষণা পর্যায়ে কাজের পরিধি সীমিত। অন্যদিকে দেশের গণমাধ্যমে ভূরাজনীতির শতেক প্যাঁচের পাত্তা লাগানোর মতো ঝানু সাংবাদিকের সংখ্যা শোচনীয়। তারচেয়েও বড়ো সমস্যা হলো,—সকলেই কমবেশি বাায়াসড। একটি পক্ষ আগে ঠিক করে নিয়ে ভূরাজনীতির জটিল সমীকরণ জাতির কাছে ব্যাখ্যা করতে বসেন। নির্মোহ চিত্র যে-কারণে ওসব ব্যাখ্যা থেকে বেরিয়ে আসে না।

তারেক শামসুর রেহমান যতদিন বেঁচে ছিলেন, এসব নিয়ে নিয়মিত ব্যাখ্যা দিতেন। ক্ষেত্রবিশেষ বায়াসড হলেও তাঁর ব্যাখ্যার মধ্যে অনেকসময় দূরদৃষ্টির ছাপ দেখেছি। মুহাম্মদ জামির, ড. ইমতিয়াজ মাহমুদ, আমেনা মহসিন ছাড়াও আরো দু-একজন থাকতে পারেন, তবে সামগ্রিকভাবে এই ব্যাপারে আমাদের পর্যবেক্ষণ, গবেষণা ও ব্যাখ্যার মান সন্তোষজনক নয়। যে-কারণে পশ্চিমের গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞদের ওপর ভরসা করতে হয় অত্যধিক। দেশের বিদেশনীতি এসব কারণেও সবল হতে পারছে না। ঝানু কূটনীতিবিদ তৈরি না হওয়ার পেছনে নিবিড় গবেষণা ও তার থেকে উঠে আসা অনুমানকে আমলে নেওয়ার পরিসর এখানে সীমিত। দক্ষ কূটনীতিবিদ তৈরির ক্ষেত্রে একে প্রতিবন্ধকতা গণ্য করা যেতে পারে।

Decoding Bangladesh : Navigating the Present on Indian Perspective; Source – Strategic Frontlines YTC

এসব ব্যাপারে পরামর্শক নিয়োগের প্রথা আছে, তবে বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট থাকায় প্রথাটি সবসময় অনুসরণ করে না দেশের সরকার। বিদেশনীতি সাজানোর ক্ষেত্রে আমরা দেখি সরকার সবসময় পরাশক্তির মুখাপেক্ষী থাকে, যেখানে তার নিজস্ব ডিনামিকস বড়ো একটা চোখে পড়ে না। শেখ হাসিনার শাসনামলে হাসিনা স্বয়ং অলিখিতভাবে বিদেশনীতি ডিল করতেন। মন্ত্রণালয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা পরামর্শ দিয়ে তাঁকে খুব ভালোভাবে সাহায্য করতে পেরেছেন, এরকম নমুনা বিশেষ চোখে পড়েনি। গোড়া থেকে এখানে একধরনের স্বৈরতন্ত্র জারি আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরুদণ্ড যারপরনাই আজো সবল হতে পারেনি।

বর্তমান সরকারের অবস্থা এদিক থেকে ভেবে দেখলে আরো নাজুক! তৌহিদ সায়েব অভিজ্ঞ লোক, কিন্তু যে-বিশৃঙ্খল অবস্থায় তিনি দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়েছেন, সেখানে তাঁর পক্ষে কিছু করে ওঠা মুশকিল। সরকারের রাজনৈতিক অভিলাষকে প্রভাবিত করার মতো বিচক্ষণতা ও ব্যক্তিত্ব তাঁর মধ্যে দৃশ্যমান নয়। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে দৃঢ়তা ও চতুরতা বিশেষ চোখে পড়ে না। জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রথম এক-দুই দফায় দেখলাম বেশ কথাটথা বলছেন। সর্বশেষ সাক্ষাতে তাঁকে দেখে মনে হলো ভিজে বেড়াল! গুডবয়মার্কা ভাব ধরে কথা বলছেন বটে, কিন্তু মুখের রেখায় আত্মবিশ্বাস উধাও! শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার কথা তুলতেই পারলেন না বেচারা! প্রত্যয়হীন এক জড়ভরত লাগছিল তাঁকে দেখে।

সুতরাং ভূরাজনীতিতে গত আট মাসে যেসব নাটকীয় রদবদল ঘটছে, এখন সেগুলোকে স্টাডি করার মতো অবস্থায় তৌহিদ সায়েব আছেন বলে মনে হয় না। যেমন ধরা যাক, কিছুদিন আগে গণমাধ্যম এই মর্মে খবর ছেপেছিল,—সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদেরকে আরাকান আর্মি আটক করেছে। ফেরত আসার পর সাংবাদিকদের জেরার মুখে তারা বলছিল,—আরাকান আর্মি তাদের কাছে বিজিবির চেকপোস্টসহ নানান বিষয়ে খবর নিয়েছে। কেন নিয়েছে? উত্তর কার কাছে চাইবে জাতি?

Bangladeshi Fisherman’s statement about Arcana Army; Source – The Daily Star YTC

মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের প্রায় আড়াইশো কিলোমিটারের ওপর সীমান্ত রয়েছে। যার আওতায় টেকনাফ, সেন্টমার্টিন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশ পড়ছে। তারা কি তাহলে ওই সীমান্তরেখার কিছু অংশ নিজের করে নিতে চাইছে? হাসিনা আমলে সমুদ্রসীমানার যে-অংশটি আন্তর্জাতিকভাবে স্থির হলো, এখন কৌশলগত কারণে সমুদ্রসীমানায় কি কোনো রদবদল ঘটানোর মতলব আঁটছে তারা? এসব নিয়ে সবিস্তার কোনো আলোচনা গণমাধ্যমে অনুপস্থিত।

আরাকান আর্মিকে অস্ত্রশস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা কারা দিচ্ছে? চীন? ভারত? নাকি বাইডেন-সোরস গংয়ের জামানায় সক্রিয় মার্কিন বিদেশনীতির ভূমিকা আছে সেখানে? মিয়ানামারের জান্তা সরকারকে চীন দীর্ঘদিন ধরে পেট্রোনাইজ করে আসছে। আমরা তা জানি। এর পেছনে খনিজ সম্পদে ভরপুুর রাখাইন স্টেটে চীনের বৃহৎ আকারে বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিলের ইস্যুরা সক্রিয় থেকেছে। চীন সরকারের বিশাল আকারে বিনিয়োগ রয়েছে সেখানে। ভারত ওদিকে সামরিক জান্তা ও আরাকানদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে রাখাইন স্টেটে বিনিয়োগ করেছে। উপরন্তু চিকেন নেক সমস্যার সমাধানে সিটওয়ে সমুদ্রবন্দর থেকে মণিপুরে যাওয়ার একটি করিডোর তৈরিতে তারা নাকি টাকা ঢালছে। জলপথ ও স্থলপথ মিলে করিডোরটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ করে এনেছে ভারত।

ভারতীয় হল্লাবাজ গণমাধ্যম ও কতিপয় ইউটিউবার এই তথ্যটি নিয়ে হইচই করেন বেশ। তাদের মতে,—বাংলাদেশ যদি চিকেন নেককে অবরুদ্ধ করে সেভেন সিস্টার্সে প্রবেশে বাগাড়া দিতে যায়, সেক্ষেত্রে বিকল্প করিডোরটি ভারত ব্যবহার করবে তখন। এখন এর সত্যমিথ্যা নিয়ে কোনো আলোচনা আমাদের এখানে কেউ করে না! কেন করে না সে এক রহস্য বটে! দেশেন নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে এমন যে-কোনো সংবাদের উৎস যাচাই ও বিশ্লেষিত হওয়া জরুরি। যে-কোনো সংবাদকে কেবল গুজব বলে নাকচ করার মধ্যে সম্ভবত কোনো কৃতিত্ব নেই। মানসিকতাটি দেশের অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের নাজুক অবস্থাকেই নগ্ন করে এখানে।

Volker Türk – Are we sleepwalking into a dystopian future?; Source – BCC Hard Talk

রোহিঙ্গাদের নিয়েও জাতি আদতে অন্ধকারে আছে এখন। মিয়ানমারের জান্তা সরকার আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়তে সেখানকার রোহিঙ্গাদের বাধ্য করেছিল। এখন এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে আরাকানদের পরিকল্পনা কী হতে যাচ্ছে? বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে কি আবারো একটি পুশব্যাক আমরা ঘটতে দেখব? জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর নিয়ে অবশ্য সমাজমাধ্যমে অনেকে বিশ্লেষণ করেছেন, যেখান থেকে এটি অন্তত পরিষ্কার,—এই সফরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘ ও প্রধান উপদেষ্টার কথাবার্তার সবটাই পলিটিক্যাল রেটোরিক, এবং অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছু নেই সেখানে। উপরন্তু বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা এম্নিতেও বিতর্কিত।

খয়রাতি নির্ভর সংস্থাটি মার্কিন বিদেশনীতিতে গৃহীত ডিপ স্টেট পলিসির অংশ হিসেবে কাজ করেছে এতগুলো বছর। এই দাসত্ব তার মেরুদণ্ড সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে চাপের সম্মুখীন সংস্থাটির মাথা থেকে পুরোনো ভূত এখনো নামেনি বোঝা যাচ্ছে। মধ্যস্থতাকারী সংস্থা হিসেবে এর কার্যকারিতা যে-কারণে এখন প্রচণ্ড প্রশ্নের সম্মুখীন। বাংলাদেশে সরকার পতনে নিজের ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার টার্ক বিবিসি হার্ড টক-এ যে-বক্তব্য রেখেছেন, সেটি রীতিমতো আপত্তিকর ছিল। তাঁর যেটি করার কথা নয় সেই কাজ তিনি আগ বাড়িয়ে কেন করলেন এই প্রশ্নটি কজেই উঠেছে।

হাসিনা আমলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে একটি গুলিবর্ষণের ঘটনাও কিন্তু খবরে এসেছে। টকশোয় আলোচ্য হয়েছে এর কার্যকারণ। সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে গলদঘর্ম হতে দেখেছি আমরা। এখন এর সবটাই হিমঘরে। গণমাধ্যমকে ডেডঅ্যান্ড করে রাখার মতলব যদি আমরা না বুঝি তাহলে সামনে বিপদ আরো ঘনীভূত হবে। পাকিস্তানের ইণ্টেলিজেন্স নাকি রোহিঙ্গাদের তাতাচ্ছে? খবরটি ভুয়া হতে পারে। সত্য হওয়া বিচিত্র নয়। কারণ, সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের একমাত্র পাকিস্তান দূতাবাসকে পুরোদমে সক্রিয় দেখছে জাতি। ভারতের গণমাধ্যম যেটি নিয়ে হামেশা খবর ছাপছে। যা রটে তার কিছু তো ঘটতেই পারে, ঘটার সম্ভাবনা রাখে। জবাব এখানে কার কাছে চাইবে দেশের মানুষ? ভূরাজনীতির জটিল খেলার প্যাঁচে পড়ে বাংলাদেশের মানচিত্রে যদি আকস্মিক পরিবর্তন আসে, অবাক হওয়ার কারণ থাকবে না।

Bangladesh scores a win for Western hegemony – Shahid Bolsen; Source – Middle Nation YTC

মুসলমানপ্রধান দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করে আসছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক শহীদ বোলসেন। শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন নিজের ডিডিও পডকাস্টে পতন কেন নিশ্চিত তার চমৎকার ব্যাখ্যা পেশ করেছিলেন বোলসেন। পতনের পরের দিন আরেকটি ভিডিও পডকাস্ট অনলাইনে উন্মুক্ত করেন তিনি। বাংলাদেশে সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট পলিসি কীভাবে কার্যকর ছিল সেটি ব্যাখ্যা করেছিলেন। মতলব হাসিলে যুক্তরাষ্ট্রের রেজিম চেঞ্জের খেলাটি দশকের-পর-দশক ধরে কীভাবে নির্দিষ্ট নকশা ধরে কাজ করে, সেই বিবরণ উঠে এসেছিল তাঁর ব্যাখ্যায়। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ কেন ও কীভাবে বৈদেশিক পরাশক্তির খেলার মাঠ হতে যাচ্ছে, এর পরিষ্কার আভাস দিয়েছিলেন শহীদ বোলসেন। বলেছিলেন বটে,—বাংলাদেশের মানুষ ক্রমশ বুঝতে থাকবে,—স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারকে গদিছাড়া করতে নেমে তারা এরচেয়ে শতগুণ খারাপ ও স্বৈরাচারী এক সরকারকে গদিতে বসার মওকা করে দিয়েছে। গত সাত মাসের ঘটনাবলী বোলসেনের বক্তব্যের সঙ্গে মোটের ওপর অভিন্নতা রেখে ঘটছে।

যাইহোক, আরাকান আর্মির প্রসঙ্গে আবার ফেরত যাওয়া যাক। আরাকানদের সাম্প্রতিক উত্থানের পেছনের বিগ বস কে বা কারা সেটি আন্দাজ করা কঠিন। ভারত হতে পারে। চীন অথবা খোদ আরাকান আর্মি নিজ প্রয়োজনে এরকম কাণ্ড ঘটাতেও পারে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মনোবল ভেঙে দিতে গিয়ে যেসব কাণ্ড ড. ইউনূসের সরকার শুরুর দিকে ঘটালেন, এখন সেটি ব্যাকফায়ার করার সম্ভাবনা রাখছে। পাহাড়িরা হয়তো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে মনে-মনে প্রিফার করছে। কেন করছে তার পেছনকার ইতিহাসে আপাতত না যাই। সকলেই কমবেশি সেগুলো জানেন বলে ধারণা করি। এই প্রশ্নটি বরং তোলা প্রয়োজন,—দেশকে সকল প্রকার সংখ্যালঘু থেকে মুক্ত করার মতলব কার থাকতে পারে? মতলব তারাই করে সচরাচর, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠের একচ্ছত্র শাসন এখানে কায়েম করার খোয়াব দেখছে। দেখনেওয়ালাদের দলে কি কেবল ইসলামি উগ্রবাদী শক্তি একমাত্র নিয়ামক? চীনাপন্থী বামরা কি সেখানে গাঁটছাড়া বাঁধেনি? পিনাকী-ইলিয়াস গংদের সৃষ্ট মবের হাতে হেনস্থা হওয়ার ভয়ে অনেকে এসবের যৌক্তিক বিচার-বিশ্লেষণে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারছেন না বলে মনে হচ্ছে।

পেছনে মদদ কে দিচ্ছে? চীন ও পাকিস্তানকে আমরা ভাবতে পারি, যদিও সেটি প্রমাণিত নয়। এর জন্য হয়তো ট্রাম্প মহাজনের বিদেশ দফতরের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে। তুলসী গ্যাবার্ড ও এস পল কাপুর মিলে কোন ছক কষছেন, তার ওপর অনেককিছু খোলাসা হওয়া নির্ভর করবে। সরকার তো প্রবালদ্বীপ সুরক্ষার কথা বলে সেন্ট মার্টিনে পর্যটন সীমিত করলেন। এমন সময় করলেন যখন আরাকান আর্মি রাখাইন স্টেটে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে, আর অন্যদিকে মার্কিন ডিপ স্টেট পলিসি ট্রাম্পঝড়ে সম্পূর্ণ বদলাতে বসেছে।

Debate With Arnab: Mizoram CM’s Veiled Call For A Separate Christian State; Source – Republic World YTC

ভূরাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ভারতকে এক্ষেত্রে বিপন্নর কাতারে রাখতে হচ্ছে। কেন বিপন্ন সেটি বুঝতে একটু পেছনে যাওয়া প্রয়োজন। বাইডেন জামানায় মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন। খ্রিস্টান চার্চ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি যে-বক্তব্য রাখেন, সেটি ভারতের অখণ্ডতার জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরূপ ছিল। মিজোরমকে খ্রিস্টান কিংডম করতে মার্কিন ধর্মযাজক ও সরকারের কাছে সরাসরি সকল প্রকার সাহায্যের আবেদন করে বসেন তিনি। কেবল তাই নয়,—মিজোরাম রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে তাঁর বক্তব্য পুরোটা তুলে দেওয়া হয় তখন। সংগতকারণে ভারতীয় গোদি মিডিয়ায় এটি নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল।

জানুয়ারির সাজানো নির্বাচনের ছক কষতে ব্যস্ত শেখ হাসিনা ওইসময় মাত্র যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি খ্রিস্টান কিংডমের আলাপ তুললেন। জনৈক সাদা সায়েব তাঁর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বরবার ভূখণ্ড দাবি করে বসেছেন বলে জানালেন হাসিনা। উদ্দেশ্য, তারা সেখানে একটি বিমানঘাঁটি তৈরি করতে চাইছেন। এর পেছনে চীন ও ভারতের ওপর নজরদারি ছাড়াও ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে নৌবাণিজ্যে চীনের অধিপত্য খর্ব করার মতলব ছিল। পরে এই ঘটনাও দিবালোকের মতো প্রকাশ্য হয়েছে যে,—ভারতে মোদী সরকার ও চীনে শি জিনপিং সরকারকে গদি থেকে বিতাড়ন ও মার্কিনীদের মনপসন্দ পুতুল সরকার বসানোর উদ্দেশ্য ছিল সেখানে। বাইডেন প্রশাসনের বিদেশনীতিকে নেপথ্যে প্রভাবিত করার জন্য সুবিদিত জর্জ সোরস ও তাঁর পুত্রধন অ্যালেক্স সোরসের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম ছিল যার মূল উদ্দেশ্য ছিল।

কার্ল পপারের ভক্ত জর্জ সোরস আকর্ষণীয় চরিত্র। একাধারে প্রচণ্ড ধনী ও ম্যাগলোম্যানিক সোরসের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় অভিজ্ঞতা নিজ চোখে দেখার বিভীষিকা এখনো সক্রিয়। তিনি তখন নাবাল কিশোর ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে উদ্বাস্তু জীবনের চাপ সইতে হয়েছিল। হিটলারের বিপুল উত্থান তাঁর বালকমনে রেখাপাত ঘটায়। মনের গহিনে জার্মান ফুয়েরারকে তিনি হিরোর আসনে বসিয়েছিলেন। একদিকে হিটলার এবং অন্যদিকে কার্ল পপারের দার্শনকিতা তাঁর মনোভূমে এমন এক আজব বৈপরীত্য জন্ম দিয়েছে, যেটি সোরসকে একইসঙ্গে সাহসী, বিচক্ষণ ও ধূর্ত হিসেব চিনিয়ে দেয়। শেয়ার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার মধ্য দিয়ে সোরস প্রমাণ করেন,—মার্টিন স্কোরসিজের ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান নামক ছবির ন্যারেটিভ অন্তত তাঁর ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য হওয়ার দাবি রাখে।

The Great Speculator – The Mysterious Life of George Soros; Source – FINAiUS YTC

বৈপরীত্যের সমাহারে জটিল জর্জ সোরসের স্বৈরাচারী সরকার ঘোরতর অপছন্দ। অভিবাসীদের বিভিন্ন রাষ্ট্রে ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটনোর মাধ্যমে স্থানীয় ও অভিবাসীদের মধ্যে লড়াই বাঁধানো আবার পছন্দের। আপাতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় নিবেদিত মনে হলেও তাঁর আসল মতলব হচ্ছে বিশ্বব্যাপী এমন এক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে তিনি ও তাঁর পরিবার নেপথ্য প্রভাবক হিসেবে বিরাজ করবে। একচ্ছত্র অথবা অদ্বিতীয় নিয়ন্ত্রক হবে তারা। সুতরাং হাসিনা তখন এই ধারণায় উপনীত হয়েছিলেন,—হতভাগা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের সঙ্গে মিয়ানমারের ভূখণ্ড জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র আদতে পূর্ব তিমুরের মতো একটি খ্রিস্টান কিংডম তৈরির খোয়াব দেখছে। যার মধ্য দিয়ে চীন ও ভারতের অখণ্ডতাকে সে বিপন্ন করবে হয়তো। হাসিনার দাবিকে বিরোধীরা তখন নাটকবাজি বলে উপহাস করলেও ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার জের ধরে যেসব তথ্য ইদানীং বেরিয়ে আসছে, সেগুলো ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করলে এরকম মতলবকে অবান্তর বলে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন হয়।

USAID-র বরাদ্দ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ট্রাম্প কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন, এখন এর থেকে না বোঝার কিছু নেই,মার্কিন ডিপ স্টেট নীতি সোরসছকে অগ্রসর থেকেছে এতদিন। সুতরাং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে উক্ত ছকের সংযোগ থাকতেও পারে। বাংলাদেশের ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞরা যদিও বিষয়টি নিয়ে একটি কথাও আজ-অবধি বলেননি। ফ্যাক্ট চেকিং করেনি কেউ।

. . .

এই সুবাদে আরো পেছনে ফেরত যাই এবার। দেশভাগের সময় ভারতবর্ষের প্রায় পাঁচশোটি এলাকা ছিল, ইংরেজরা যেগুলোকে প্রিন্সলি স্টেট বা রাজা ও নবাবশাসিত অঞ্চল বলে গণ্য করত। ইংরেজ সরকারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তারা সরকারকে কর প্রদান করতেন। ইংরেজ প্রণীত আইনের আওতায় থাকলেও নিজ পরগনার জমিদারি ও নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল। পুরাতন ছকটিকে ইংরেজরা মেনে নিয়েছিল এখানে। দেশভাগের সময় এরকম প্রিন্সলি স্টেট এখন ভারত অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে যাবে, নাকি তারা আলাদা থাকবে, এর বাটোয়ারা ইংরেজরা মুলতবি রেখেছিল। কোনো মীমাংসায় পৌঁছাতে পারেনি ভারত ভাগ-বাটোয়ারার মানচিত্র প্রণয়নে নিয়োজিত রেডক্লিফ মিশন। সর্দার বল্লভভাই পটেল কংগ্রেসের হয়ে বিষয়টি ডিল করেছিলেন তখন।

ভারত মোটের ওপর সবগুলো প্রিন্সলি স্টেটকে তার সীমানায় একীভূত করতে সফলকাম হয়। হায়দ্রাবাদকে নিয়ে জটিলতা ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। বলে রাখা ভালো, রাজাকার শব্দটির আদি ইতিহাসের সঙ্গে হায়দ্রাবাদ জড়িত। বিরাট এই অঞ্চলটি তখন বিশ্বের এক নাম্বার ধনী ব্যক্তি বলে বিদিত হায়দ্রাবাদের নিজামের অধীনে ছিল। এখন স্বশাসিত হায়দ্রাবাদ ভারতের সঙ্গে একীভূত হবে অথবা আলাদা থাকবে সেটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।। নিজাম নির্দিষ্ট কিছু শর্তে ভারতের সঙ্গে একীভূত হতে মোটামুটি সম্মতি দিলেও হায়দ্রাবাদকে ভারত থেকে পৃথক করতে মরিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন নামক সংগঠনের নেতা কাসিম রিজভি বেঁকে বসেন। হায়দ্রাবাদের নিজামের অধীনে স্বাধীন দেশ করতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনি গড়ে তোলেন তিনি, যার নাম ছিল রাজাকার। হায়দ্রাবাদের নিজামকে তাতিয়ে তোলেন কাসিম রিজভি। ভারতীয় বামপন্থীদের নেতৃত্বে তখন তেলেঙ্গানা বিদ্রোহের আগুন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কাসিম রিজভিকে যেটি অনুপ্রাণিত করে ভীষণ।

Facts behind the word Razakar; Source – The Print YTC

যাইহোক, সর্দার বল্লভভাই পটেল বাধ্য হয়ে সমরশক্তির সাহায্য নেন। যুদ্ধে রাজাকার বাহিনি পরাস্ত হয় এবং কাসিম রিজভিকে কিছুদিন জেলে রাখার পর নেহেরু সরকার পাকিস্তানে পাড়ি জমাতে সম্মতি দান করেন। অপারেশন পোলো নামক এই লড়াইয়ের পরিণাম স্বরূপ প্রায় অর্ধলক্ষ মুমলমান মারা পড়েছিল তখন। হায়াদ্রাবাদ নিয়ে হিন্দু, মুসলমান দ্বন্দ্ব যে-কারণে আজো তামাদি হয়নি। মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় স্মরণকালের ভয়াবহ দাঙ্গা যার আপাত সর্বশেষ নজির হয়ে আছে।

স্মরণ রাখা ভালো, নেহেরুর ওপর ভার পড়েছিল কাশ্মীরের, যেটি তিনি ভালোভাবে সেটল করতে পারেননি। যে-কারণে পরে কাশ্মীর সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের যেটি বড়ো কারণ এখনো। মিজোরাম, মণিপুরের মতো স্টেটগুলোও এখান থেকে নিজের এথনিসিটি সুরক্ষার ভাবনায় পৃথক হওয়ার জিগির তোলে হামেশা। সম্প্রতি যেমন ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগেপরে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মণিপুরকে আমরা উত্তাল হতে দেখেছি। চীন তার চিরাচরিত স্বভাবে মণিপুর ও অরুণাচলের সীমান্তরেখা বরাবর সৈন্যসমাবেশ ঘটায়। কুকি চীনাদের মদদে কি মণিপুরকে উত্তাল করা হয়েছিল? জাতিসংঘের জনৈক প্রতিনিধি সম্প্রতি মণিপুর প্রসঙ্গে ভারত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এই অভিযোগ তুললেন। এর জবাবে ভারতের হয়ে নিযুক্ত প্রতিনিধি জাতিসংঘকে একহাত নিত দ্বিধা করেননি। এর থেকে আঁচ করা যেতে পারে,—সেভেন সিস্টার্সকে অশান্ত ও ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার পেছনে কেবল পাকিস্তান নয়, চীনও সক্রিয় পুরোদমে।

সাতবোনকে নিয়ে ভারতের উদ্বেগ তাই অনেক পুরোনো। এবং ভারতসীমানায় উগ্রপন্থীদের প্রবেশ ঘটাতে বাংলাদেশকে রুট হিসেবে পাকিস্তান ব্যবহার করছে;—এটি কেবল এস পল কাপুরের গবেষণালব্ধ দাবি নয়, গেল আট মাসে ঘটনাটি আসলেও ঘটেছে। হাসিনাকে গদিছাড়া করার পর এই-যে জেলবন্দি সকল জঙ্গিকে ছেড়ে দেওয়া হলো, সাড়ে চারশো থানা লুট হলো, এখন এই জঙ্গিরা কোথায় ওঁত পেতে আছে? তাদের একাংশ, মোদী সরকার ধারণা করছেন,—নামপরিচয় ভাঁড়িয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছে। যার পেছনে আবার মমতা ব্যানার্জিকে বিজেপিপন্থীরা দায়ী করে থাকেন।

পশ্চিবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের বেশ উল্লেখযোগ্য অংশে কাঁটাতারের প্রাচীর তুলতে মমতা বরাবর আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। কেন? এর পেছনে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান ভোটব্যাংক নিজের কুক্ষিগত রাখার মতলব কাজ করে তাঁর মনে। সেইসঙ্গে বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের ব্যাপারে মমতার মনোভাব কখনো ইতিবাচক দেখিনি আমরা। তিস্তার পানিচুক্তি যে-কারণে বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি মমতার আপত্তি উপেক্ষা করে কাঁটাতারের প্রাচীর তুলেছে। রংপুর সীমান্তে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়াও দিয়েছে ভারতসেনা। এর তাৎপর্য নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিশ্চুপ! বিদেশনীতি নিয়ে বকুনি দিতে ওস্তাদরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। যদিও অনেককে বলতে শুনি,—দেশে নাকি বাকস্বাধীনতার চূড়ান্ত ফ্রিডম বিরাজ করছে! এই হলো ফ্রিডমের নমুনা।

. . .

Waker-Uz-Zaman recent speech on Bangladesh Crisis; Source – Ekhon TV YTC

বাংলাদেশের সীমানা ও সার্বভৌমত্ব অটুট থাকুক, এটি আমাদের একমাত্র চাওয়া। আমাদের বিদেশনীতির মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটুক, কোনো ব্লকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে কৌশলী হয়ে উঠুক এই নীতি;ছোট্ট দেশটির জন্য এটুকু যথেষ্ট। কিন্তু পরিস্থিতি সেরকম কি? শেখ হাসিনার ওপর অতিমাত্রায় ভারত নির্ভরতার অভিযোগ ছিল। ইউনূস কার ওপর নির্ভর করছেন সে এক খোদা জানে! কমলা হ্যারিস ইলেকশনে ডাব্বা মেরে তাঁকে বড়ো বিপাকে ফেলে দিয়েছেন। মার্কিন সরকার আর জর্জ সোরসের পোষা খেলনাটি বোধহয় নিজের গন্তব্য ঠার করতে পারছেন না কিছু। অগতির গতি হিসেবে চীন সফরে যাচ্ছেন শুনলাম। সেটি আবার পাকিস্তানের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে হয়তো যাচ্ছেন তিনি।

চীনকে বাণিজ্যিক মিত্রতার অধিক ছাড়পত্র বাংলাদেশের জন্য খতরনাক হতে বাধ্য। ইনফ্যাক্ট, কারো কোলে আমাদের বসা উচিত হবে না। এসব কার্যকারণে ভারত যদি হাসিনা ও তার দলকে বংলাদেশে পুনর্বাসিত করার ছক কষে থাকে, যাকে আমরা গুজব ধরে নিচ্ছি আপাতত,—আখেরে সেটি ঘটলে অবাক হওয়ার কারণ থাকবে না। দেশটি তাতে করে গৃহযুদ্ধের দিকে যাবে, এবং সেখানে তার ভবিষ্যৎ পরিণতি সুখকর নয়। সিরিয়া হবে কিনা তার আন্দাজ এই মুহূর্তে করা মুশকিল, তবে জাতিসংঘের হয়ে শান্তিরক্ষী বাহিনি দেশে নামলেও নামতে পারে। ভুয়া বিপ্লবকে জাস্টিফাই করতে নেমে বাইরের দেশগুলোকে এখানে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ ইউনূস নিজে করে দিচ্ছেন।

আর হ্যাঁ, ভারতের সঙ্গে কূটনীতির খেলায় পরাভূত ও পুরোদস্তুর ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের বোধহয় বোধোদয় ঘটবে না জীবনে। ভারতকে বিপন্ন করার খেলায় বাংলাদেশকে সে ব্যবহার করছে, আর ওদিকে বেলুচিস্তান হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র হচ্ছে দিনদিন। পাকিস্তান থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে সদা ইচ্ছুক বেলুচদের ওপর দীর্ঘ অবিচার, শোষণ, হত্যা, গুমখুন নতুন ঘটনা নয়। যেমন নয়, বেলুচদের স্বাধীন দেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। সম্প্রতি মাহরং বেলুচর মধ্যে তারা সেই সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে। তাঁর পিতাকে পাকিরা বেলুচদের হয়ে লড়াই করার জন্য হত্যা করে। যখন-তখন হত্যা ও গুমখুন বেলুচিস্তানে নৈমত্তিক ঘটনা। মাহরং বেলুচ কাজেই পিতার ভূমিকায় নিজেকে সক্রিয় করেছেন। পেশায় চিকিৎসক এই তরুণী এখন বেলচুদের নয়নমণি।

পশ্চিমা প্রভুরাও চাইছে বেলুচিস্তান মুক্ত হোক পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে। টাইম ম্যাগাজিনের একশো প্রভাবশলী নারীর তালিকায় মাহরং বেলুচের স্থান পাওয়া, এবং সম্প্রতি দুইহাজার পঁচিশ সনের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকায় নাম ঘোষণার মধ্যে রাজনীতি সক্রিয় রয়েছে। নোবেলের জন্য মনোনীত হওয়ার ঘোষণাটি ইতোমধ্যে মাহরং বেলুচকে বিশ্বব্যাপী প্রভাববিস্তারী মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তার সঙ্গে বেলচুদের মনে এই আশার সঞ্চার ঘটেছে,—বেলুচিস্তানকে তার পূর্বতন রূপ বা প্রিন্সলি স্টেট হওয়ার পথে তিনি নিয়ে যেতে পারবেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেলুচরা সেইসময় সমর্থন জানিয়েছিল। হাসিনাপতনের পর বেলুচিস্তানে দুর্বার ছাত্র আন্দোলন দেখেছে বিশ্ব। অনেকে বলছেন বটে,—বেলুচিস্তানে বড়ো ঝড় আসতে যাচ্ছে সামনে। দেশের পতাকা তৈরি। সংবিধান প্রণয়নের কাজ চলছে। মেহরাং গোটা বেলুচদের কাছে এখন শেখ মুজিবের ভূমিকায় অবতীর্ণ। মনে হচ্ছে না,—পাকিস্তান এই বিরাট ভূখণ্ড বেশিদিন নিজের করে রাখতে পারবে।
. . .

Who is Mehrang Baloch?; Source – Asad Toor Uncensored YTC

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 9

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *