কিছু বলার ভাষা নাই! ইংল্যান্ডে থেকেও বেচারা লুবনা ফারহান আজ বিপন্ন! জন্মসূত্রে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কিত ইউটিউবার ইংল্যান্ডের মুসলমান সম্প্রদায়ে বড়ো হয়েছেন। পেশাগত জীবনে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলেন অথবা এখনো আছেন মনে হয়। ছাদনাতলায় গমন করলেও সংসার বেশিদিন টেকেনি। সিঙ্গেল মাদার হয়ে থাকাটা নিজের জন্য স্বস্তির মেনে নিয়েছেন তিনি। মুসলমান পরিবারে বড়ো হওয়ার কারণে লুবনার জীবনধারা সহজ থাকেনি। বিচিত্র প্রতিকূলতা সামাল দিতে হয়েছিল। এর প্রভাবে হয়তো-বা ধর্মে বিশ্বাস হারিয়ে বসেন তিনি। ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেন লুবনা।
পেশাগত দায়িত্বের বাইরে ক্যানডিড উইথ লুবনা নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে বসার তাগিদ ওইসময় তাঁর মনে তীব্র হয়। ফ্যাশন ও রূপসজ্জা বিষয়ক রিলস-পডকাস্ট ছাড়াও বিচিত্র সামাজিক অবরোধের কুফল নিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে আলাপ, আর ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ শান্তি, সম্প্রতি ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন নেটিজেনের কাছে তুলে ধরা ছিল চ্যানেলটির মূল লক্ষ্য। সামাজিক সমস্যা নিয়ে চ্যানেলে বেশ নিয়মিত লাইভে হাজির থাকতেন লুবনা। তার মধ্যে পাকিস্তান বিষয়ক অতীতে করা মন্তব্য ও আলাপ তাঁকে বিপদে ফেলেছে বোঝা যায়।
লুবনার ভাষায় :—পাকিস্তানে তাঁর জন্ম হয়নি বা সেখানে কখনো থাকা হয়নি তাঁর, কিন্তু পরিবারসূত্রে দেশটিকে অনুভব করেন সবসময়। ভারত ও পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার দেহে বহন করছেন তিনি। রক্ত থেকে চাইলেও সেগুলো মুছে ফেলা সম্ভব নয়। সুতরাং উভয় দেশ নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার তাঁর রয়েছে বলেই ভেবে এসেছেন। পাকিস্তানে চলতে থাকা সমস্যা ও চাপানো অবরোধ নিয়ে লুবনার চ্যানেলে আমন্ত্রিত অতিথিরা বিভিন্ন সময় কথাবার্তায় অংশ নিয়েছেন। যুক্তি ও মাত্রাজ্ঞান বজায় রেখে সমস্যার শিকড়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন সকলে। উগ্র ইসলামপন্থীদের হুমকিতে দিশেহারা ইউটিউবার আরো জানাচ্ছেন,—তাঁদের এসব আলাপে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা কখনো স্থান পায়নি। কিছু লোক যদিও ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রচরাণাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তাঁকে ইসলাম ও পাকিস্তানের শত্রু বানাতে মরিয়া হয়েছে তারা।

সর্বশেষ লাইভে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলাপের আয়োজন করেন লুবনা। সেখানে সংঘটিত ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নিয়ে কথা বলছিলেন তাঁরা। ইহুদি-মুসলমান সমস্যায় ইতি টানার উপায় ও অন্তরায় নিয়ে লাইভে অংশ নেওয়া অতিথিরা মতামত দিচ্ছিলেন। এর লেজ ধরে মুসলমান দেশগুলোয় উগ্র ইসলামের বাড়বাড়ন্তের প্রসঙ্গটি আলাপে ঢুকে পড়ে। লুবনার লাইভে শরিক দর্শকের একাংশ তাৎক্ষণিক তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসরায়েল ও ভারতের হয়ে দালালিতে নেমেছেন বলে তাঁকে তারা গাল পাড়তে থাকে। বেহায়া নাস্তিক দাগিয়ে কটু মন্তব্য আর গালিগালাজের ঝড় শুরু হয়! গালির তো আসলে কোনো জবাব হয় না। লাইভস্ট্রিমে এরকম পরিস্থিতির শিকার আর সবার মতো লুবনাও মন্তব্যগুলো উপেক্ষা করেছিলেন।
লাইভ শেষ হওয়ার পর তাঁর জীবনে গজব নেমে আসে। ইংল্যান্ডে গেড়ে বসা পাকিস্তানি মুসলমান সমাজের কিছু লোকজন তাঁর শিশু সন্তানকে অপহরণ ও তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। লুবনার বাসার চারধারে টহল দিয়ে যায় তারা। তাঁকে কোতল করার হুমকি পুনরায় মনে করাতেও ভোলে না। লাগাতার হুমকি-ধামকি আর শাসানিতে ভীত-সন্ত্রস্ত দিশেহারা ইউটিউবার সম্ভবত এই চক্করে পড়ে চাকরি খুইয়ে বসেন। শিশু সন্তানের সুরক্ষার কথা ভেবে অবশেষে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হন তিনি!
ইউকে পুলিশ বিষয়টি দেখছেন বলে আশ্বস্ত করলেও, আশ্চর্যের বিষয় হলো লুবনাকে তারা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লাইভে না যাওয়ার নসিহত দিতে থাকেন! তাঁকে প্রোটেক্ট করার ভাবনা থেকে মনে হয় পরামর্শটি দিয়েছেন তখন। দিশেহারা লুবনা পুলিশি পরামর্শ মেনে দু-একটি ছাড়া চ্যানেল থেকে বাকি সকল কন্টেন্ট ইতোমধ্যে সরিয়ে ফেলেছেন। সর্বশেষ লাইভে তিনি ও অতিথিরা মিলে আসলে ইসলামকে কতটা-কী জখম করলেন, তার দাড়াদিশা পাওয়ার সুযোগ কাজেই বন্ধ রয়েছে আপাতত।
বোঝা গেল,—ইংল্যান্ডের মতো দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের বাড়বাড়ন্ত ভালোভাবেই ঘটছে। মতপ্রকাশের অধিকার সংরক্ষণ ও একে কেন্দ্র করে মুসলমান সম্প্রদায়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনায় তারা বিচলিত বটে! হুমকিদাতা পাকিস্তানিদের পাকড়াও না করে উলটো লুবনাকে চুপ থাকতে বলছেন। কথা সেখানে নয়। বাংলাদেশ হলে মেনে নেওয়া যেত, কিন্তু যুক্তরাজ্যের মতো উন্মুক্ত সমাজে বাস করে মতপ্রকাশের দায়ে মৃত্যু-পরোয়ানার হুমকি সইতে হচ্ছে!—বিষয়টি যে-কাউকে বিচলিত করতে বাধ্য!
লুবনা তাঁর সর্বশেষ লাইভে আই অ্যাম কুইট ঘোষণা দিয়ে কিছু কথা বলেছেন। এর থেকে ধরে নিতে অসুবিধে নেই,—তাঁর এই ইসলাম ধর্ম ত্যাগ, সিঙ্গেল মাদার রূপে পশ্চিমা ধাঁচের জীবন-যাপন, আর ফিলিস্তিন সম্যসায় ইহুদি-মুসলমানের বিবাদকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিষয়গুলো সেখানকার পাকিস্তানি মুসলমান সমাজের অনেকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু এর জন্য ইউরোপ-আমেরিকার কোনো দেশে বাস করা নাগরিককে লুবনার অবস্থায় কখনো পড়তে শুনিনি। ব্যক্তি-অধিকার সংরক্ষণে নেওয়া আইনি বিধান ও পুলিশি তৎপরতার কারণে অসহিষ্ণু লোকজনও গালিগালাজের অধিক আগানোর সাহস পায় না। লুবনার বেলায় ব্যতিক্রম দেখা গেল!
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে,—ইসলাম ধর্মকে সমালোচনার জন্য নয়, লুবনা ফারহানের এক্স মুসলিম পরিচয়টি সমস্যাে বাড়িয়ে তুলতে বড়ো ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানি অধ্যুষিত মুসলমান সমাজের উগ্রপন্থীরা তাঁকে আগে থেকে শত্রু ভেবে নিয়েছিল। তারওপর তিনি পুনরায় কোনো মরদকে কবুলও করেননি। শিশুসন্তান নিয়ে তাঁর একলা থাকাটা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। মওকা পাওয়া মাত্র তাই পেছনে লেগে পড়েছে। অর্থাৎ, সমাজে কে কীভাবে থাকবেন, কে কী বলবেন, তার চলাফেরা সেখানে কেমন হবে ইত্যাদি যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত কোনো দেশের নাকের ডগায় বসে এই লোকগুলো ঠিক করে দিচ্ছে!
ইংল্যান্ডের মুসলমান সমাজে বাকি যে-বৃহৎ অংশটি রইলেন, লুবনা ফারহানকে ভরসা ও সাহারা দিতে তাদের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। লুবনার ভাষায় যদিও এনারা সকলেই গুড পিপল। বড়ো ভালো লোক! বটেই তো,—সমাজে অসহিষ্ণু লোকজনের সংখ্যা বেশি থাকার কথা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিরীহ বা শান্তিপ্রিয় গোছের হয়ে থাকেন। লুবনার ঘটনায় শান্তিপ্রিয়দের নিষ্ক্রিয়তাকে যদিও ভালো কিছু বলা যাচ্ছে না। উলটো ধরে নিতে হচ্ছে,—তাঁকে কোতল করার হুমকিতে শান্তিপ্রিয়দের নীরব সম্মতি রয়েছে। কেউ যদি চান্সে পেয়ে মেয়েটিকে কোতল করতে পারে, শান্তিপ্রিয় মুসলমানরা খুব-যে অখুশী হবেন,—এমনটি ভাবার কারণ দেখছি না। তারা বরং মনে-মনে স্বস্তি পাবেন ভেবে,—শুকরিয়া খোদার,—ধরার বুক থেকে আরেকটি কাফেররকে আজ বিদায় করা গেছে!
ইংল্যান্ডের পাকিস্তানি মুসলমান সমাজে চরেফিরে খাওয়া লোকজনদের লুবনা ওই-যে গুড পিপল বলে অকাতরে সার্টিফিকেট দিলেন, একে এখন তাঁর বোকামি ধরে নিতে হচ্ছে। ভালো লোক হলে তারা তাকে সুরক্ষা ও অভয় দিতে পিছপ হতেন না। সুরক্ষা দিতে না পারুন, অন্ততপক্ষে প্রতিবাদ জানাতেন জোর গলায়। নিজ কমিউনিটির লোকজনকে তাঁর চিনতে এখনো বাকি আছে বোঝা যাচ্ছে।
লুবনার সঙ্গে মুসলমান সম্প্রদায়ের আচরণ ভালোভাবে নিরিখ করলে একে কোরানবিরোধী মানতে হয়! যেহেতু, কোরানের একাধিক আয়াতে দীন প্রতিষ্ঠায় বাড়াবাড়ি করতে পরিষ্কার মানা করা হয়েছে। ধর্মে যারা বিশ্বাস করেন না বা এর বিরোধিতা করছেন, তাদের ব্যাপারে ফয়সালার দায়িত্ব রসুলকে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আল্লাহ স্বয়ং নিজের এখতিয়ারে রেখেছেন।
কোরানে লিপিবদ্ধ এ-সমস্ত আয়াতের ব্যাপারে ইসলামিশাস্ত্রে পণ্ডিতদের ব্যাখ্যা মোটামুটি এক ধাঁচের। বড়ো কোনো মতান্তর (অন্তত আমার) চোখে পড়েনি। সুতরাং বেচারা লুবনার ওপর কিছু লোকের চড়াও হওয়ার ঘটনা খোদ কোরান হাতে নিলে অবৈধ গণ্য হয়। আত্মরক্ষার মামলা না থাকলে অন্যকে হত্যা করা কোরান অনুমোদন করছেন না। তাহলে?
এই প্রশ্নের উত্তর আবার কোরানের মধ্যেই নিহিত। সুরা তওবার পাঁচ নাম্বার আয়াত এখানে বৈপরীত্য জন্ম দিচ্ছে। এরকম আরো কিছু আয়াত রয়েছে, যেগুলোর শানে নজুল নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কের কথা আমরা জানি। তওবার পাঁচ নাম্বার আয়াত সেকালের ইহুদি গোত্রের সঙ্গে অনাকাঙিক্ষত বিবাদের পটভূমিকায় নাজিল হয়। চুক্তিভঙ্গ করার অপরাধে ইহুদি ও মুশরিকদের মুসলমানরা যেখানে পাবে সেখানে ঘেরাও করবে, এবং প্রয়োজনে হত্যার আদেশও আয়াতে রয়েছে। শত্রুকে ধরার জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে তারা ওঁত পেতে থাকবে, তবে ধরা পড়ার পর যদি মাফ চায়, সালাত ও জাকাত প্রদানে অঙ্গিকার করে, তাহলে ছেড়ে দিতে বাধা নেই। বিস্ফোরক আয়াতটির শানে নজুল নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও ব্যাখ্যার অভাব নেই কোনো!
মক্কায় মুসলমান নিপীড়নের ঘটনায় লিপ্ত লোকজনকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে আয়াতখানা নাজিল হয়েছিল বলে অনেক বিদ্বান মতামত দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে, একই সুরার প্রথম আয়াত পাঠ করলে পাঁচে কেন সহিংস ঘোষণা আসছে, তার দিশা পাওয়া যায়। যাইহোক, এসব নিয়ে বাদানুবাদ যেহেতু রয়েছে, আপাতত সেদিকপানে না যাওয়াই উত্তম। গুরুত্বপূর্ণ হলো একথা স্মরণ রাখা যে,—আয়াতটির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হাজার ব্যাখ্যা হাজির করলেও তাতে ফায়দা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এরকম একটি আয়াতের অপব্যবহার ও সমাজে তার বিপজ্জনক আভিঘাত রূঢ় বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে যার ধকল সয়েছেন অনেকে।
মুসলমানরা নিজেকে অন্যান্য ধর্ম ও পশ্চিমা বিশ্বে সক্রিয় ক্ষমতা-রাজনীতি প্রসূত ছল-চাতুরি ও ষড়যন্ত্রের শিকার গণ্য করে এসেছেন চিরকাল। তাদের এই ভাবনার পেছনে এরকম কিছু আয়াত ও ব্যাখ্যার যুগান্তকারী ভূমিকা রয়েছে। ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু কিংবা ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক অভিমান এর গোড়ায় জল ঢেলেছে বছরের-পর-বছর। পাশাপাশি,—বিশ্ব জুড়ে ছড়ানো মুসলমান তার নিজেকে ইসলামভীতির শিকার ভাবতেও পছন্দ করেন বেশ!
যাইহোক, মুসলমানকে নিয়ে চক্রান্ত ঠেকানো ও অন্যদের মনে গেড়ে বসা ভীতি দূর করতে স্বয়ং এই সম্প্রদায়ের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা কোন পথ বেছে নিয়েছিলেন বা এখনো নিচ্ছেন, সেটি কিন্তু আমরা পারতপক্ষে তলিয়ে দেখি না। সেদিকপানে তাকালে দেখা যাচ্ছে,—ইসলামি খেলাফত কায়েম, মুসলিম উন্মাহর ছাতায় সকল মুসলমানকে একীভূত করা, আর এই মিশনগুলো বাস্তব করতে জিহাদকে তারা উত্তম সাব্যস্ত করেছেন সেখানে! এমন নয় যে, গত বিশ-পঞ্চাশ বছর ধরে মুসলমান সম্প্রদায়ের মনোজগতে জিহাদ জন্ম নিয়েছে। শত-শত বছর ধরে রাজ্যহারা মুসলমান-মানসে নিজেকে ভিকটিম ভাবার প্রবণতা ও পালটা শোধ তুলতে জিহাদকে পরিপুষ্ট করার রাজনীতি চলে আসছে। এটি এখন ইসলামকে অসহিষ্ণু ও যুগের পক্ষে অচল হিসেবে সাব্যস্ত করছে প্রতিয়িনত।
সাতশো বছরের ধর্মযুদ্ধে তিনটি সেমেটিক ধর্মে বিশ্বাসী সম্প্রদায় একে অন্যকে বলি দিয়েছে। গির্জাশাসিত খ্রিস্টান পুরোহিত ও রাজন্যরা তখন ইহুদি ও মুসলমানকে শত্রু গণ্য করে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। জেরুজালেম দখল নেওয়া বড়ো ঘটনা ছিল সেখানে। মুসলমানরাও আবার খ্রিস্টানকে প্রতিপক্ষ গণ্য করে লড়াই করেছে লাগাতার। ওইসময় ইহুদি সম্প্রদায়কে তারা শত্রুর শত্রু আমার মিত্র নীতি মেনে সাহারা দিয়েছেন, কিন্তু তাতে করে ইব্রাহিমকে পিতা গণ্যকারী তিনটি ধর্মে সদ্ভাব স্থাপিত হয়নি। ফ্রেডরিখ নিটশে মোহাম্মদে বুজরুক গণ্য করলেও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের এই কৌশলকে সময়-উপযোগী বলে রায় দিয়েছিলেন তখন।
সময়ের বিবর্তনে খ্রিস্টান ধর্মকে ক্ষমতা-রাজনীতির কেন্দ্র থেকে সরে আসতে হয়েছে। সরে আসার কারণে তার শক্তি ও প্রভাব আগের মতো নেই। মধ্যযুগে এই ধর্মের যে-ভয়াল স্বরূপ খ্রিস্টানসহ অন্যদেরকে সইতে হয়েছিল, এখন ইসলামের মধ্যে তার অনেখানি দৃশ্যমান মনে হচ্ছে! নতুন যুগের কোনো নিটশে এখন কি করবেন? তিনি কি ইসলামকে অ্যাপ্রুভ করতে পারবেন? নাকি,অবশিষ্ট যারা আছেন, ইসলামকে প্রতিহত করার ঘটনায় তাদের মধ্যকার সমঝোতাকে সময়-উপযোগী বলে রায় দেবেন তাৎক্ষণিক!
বিশ্বাস প্রসূত আচার দিয়ে বিশ্বকে ডমিনেট করার বাসনা ইসলাম বাদ দিলে অন্য ধর্মবিশ্বাসে অতীত যুগের মতো তীব্র নেই আর। ধর্মীয় প্রথাচারকে সংস্কৃতির অঙ্গে পরিণত করেছে তারা। এর ফলে বিশ্বাসের তীব্রতা প্রবল নয় সেখানে। ধর্মীয় প্রথাচারকে ঘিরে আবর্তিত সংস্কৃতি ও উৎসবমুখরতা মূল হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষ কারো শরিক হতে বড়ো একটা বাধা নেই। ইসলাম রয়ে গেছে আগের জায়গায়। এর বড়ো কারণ হচ্ছে ধর্মটিকে সংস্কারের প্রস্তাব তোলার সুযোগ রাখা হয়নি। মুসলিম উম্মাহ বলতে মুসলমানরা এখনো এমন এক জনগোষ্ঠীকে বোঝেন, যেখানে সবাই ইসলাম কবুল করেছে। কোনো বিধর্মীর পক্ষে উম্মাহতলে আসার সুযোগ নেই। আসতে হলে কলেমা পড়ে তাকে ইসলামকে কবুল বলতে হবে আগে। এসব কারণে মুসলমানদের আচার-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত উৎসবে অন্য ধর্মের মানুষের শরিক হওয়া কঠিন। নিষেধের প্রাচীর বড়ো তীব্র-যে সেখানে!
মুসলমানমনে সুতরাং জিহাদ সক্রিয় থাকে সর্বক্ষণ। ফলাফল,—ধর্মটিকে আমরা ক্রমশ সন্ত্রাসবাদকে আলিঙ্গন করতে দেখছি। জিহাদ উৎপাদন করছে সন্ত্রাস, যাকে যৌক্তিক করতে তারা মরিয়া অবিরত। তো ইসলামভীতি ছড়ানোর জন্য যদি পশ্চিমা ক্ষমতা-রাজনীতির দায় থেকেও থাকে, সমগ্র মুসলমান সমাজ কী-কারণে এই সন্ত্রাসবাদকে মাইলেজ দিচ্ছেন,—যেটি কিনা প্রকারান্তরে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে প্রতিদিন? প্রশ্নটির উত্তর তালাশে আয়নার সম্মুখে কোনো মুসলমানকে দাঁড় করানো পাহার ঠেলার চেয়েও শক্ত কাজ বোধহয়!
জিহাদ হচ্ছে সকল প্রকার বিকার থেকে আত্মশুদ্ধির লড়াই;—সুফিপন্থী এই ব্যাখ্যা বা তার চর্চা মুসলমান-সমাজে হালে পানি পায়নি কোনোদিন। ইসলামকে নমনীয়, সহিষ্ণু ও পরিশিলীত রূপে বিশ্বে হাজির করার তাগিদ থেকে এ-পর্যন্ত যত ব্যাখ্যা জন্ম নিয়েছে, তার একটিও মুসলমান সমাজে অগ্রাধিকার পায়নি। ডমিনেট হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না! অ্যাজ অ্যা গুড মুসলিম হিসেবে যারা নিজেকে ভাবছেন,—দুশো কোটি মুসলমানের মধ্যে তারা সংখ্যায় এখনো নগণ্য। যার ফলে মুসলমান মানসে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার খোয়াব ভীষণ তীব্র দেখি আমরা।
সংগতকারণে কোরানের ভালো-ভালো আয়াতকে তারা আমল করে না। সুরা তওবার ওই মহা কন্ট্রোভার্সিয়াল আয়াতকে দিশা ধরে জিহাদে মগ্ন থাকতে চায়। বিশ্ব জুড়ে নিজের দুরবস্থার কারণ মিলাতে বসে ঘুরেফিরে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ততত্ত্বে মুসলমানদেরকে আমরা ঘুরপাক খেতে দেখি। যার মধ্যে সত্য ও সত্যের অপলাপ দুটোই আছে বিলক্ষণ। সারাক্ষণ নিজেকে ভিকটিম হিসেবে দেখার প্রবণতা একধরনের মানসিক বৈকল্য তাদের মনে তীব্র করেছে। এর ফলে যে-সংক্ষোভ পয়দা হচ্ছে অবিরত, তার চাপ সামলানো বেশ কঠিন। চাপ সামলাতে যেয়ে মুসলমানরা তওবার আয়াতে মর্মরিত টিট ফর ট্যাটকেই সুদীর্ঘ কাল থেকে সমস্যার একমাত্র সমাধান ভাবছেন! জিহাদের সুফিব্যাখ্যার চারিআনা দাম কাজেই তাদের অন্তরে বিরাজ করে না।
তারওপর আজ অনেকদিন হয়ে গেলো ইসলাম শতভাগ হাদিসশাস্ত্র দ্বারা শাসিত। এতটাই যে, কোরানকে ব্যাখ্যার নাম করে স্বয়ং তাকে ওভারটেক করছে বলে অনেকে মানছেন। কোরান যদি আসমানি কিতাব হয়ে থাকে, হাদিস সেখানে মানব বিরচিত রসুলগাঁথা। যার ঐতিহাসিক আবেদন ও যুগ-উপযোগীতা নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। এখন তাকে দিয়ে কোরানব্যাখ্যার চাবি খোঁজা এমন এক সমস্যার জন্ম দিয়েছে যার থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই বলে ধরে নিতে হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এই-যে বিশ্ব জুড়ে ইসলাম সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম রূপে বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত পিউ রিসার্চে নাম উঠিয়েছে, অন্য ধর্মের অনুসারীরা তাহলে একে কেন এত অপছন্দ করেন? কী কারণে ভীত হয়ে পড়েন তারা? পিউ রিসার্চ-এ গমন করলে তার উত্তর কিছুটা মিলবে অনায়াস। জরিপে কয়েকটি প্রবণতার দিকে একবার তাকাতে পারি আমরা। পিউ জানাচ্ছে :
মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মহার অধিক হওয়ার কারণে ইসলাম অনুসারী সংখ্যায় বাড়ছেন, এবং পঞ্চাশ সাল নাগাদ খ্রিস্টান ধর্মকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অমুসলমানদের মধ্য থেকে যে-পরিমাণ লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে, ইসলাম ধর্মে বেড়ে ওঠা সমপরিমাণ লোক ফি-বছর ধর্মটি ত্যাগ করছেন। লুবনা তাদের একজন। পিউ রিসার্চে গবেষণা অনুসারে মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে ইসলাম ত্যাগের হার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় অধিক হারে ঘটছে।
মুসলমানরা সামগ্রিকভাবে শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি থেকে শুরু করে মানব-উন্নয়নের সকল সূচকে অন্যদের থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন।
পিউ রিসার্চে প্রাপ্ত বাৎসরিক ফলাফলের সঙ্গে এই কারণটি আমরা যোগ করতে পারি :
ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোয় সংখ্যালঘু হিসেবে অনেকে নিগ্রহের শিকার হয়ে থাকেন। গায়ের রং নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্য ও আচরণ, সেইসঙ্গে স্থানীয় ও অভিবাসীর মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের জের ধরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেশগুলোয় হামেশা ঘটে। ডানঘেঁষা জাতীয়তাবাদের সাম্প্রতিক উত্থান সংখ্যালঘুর জন্য অনেকক্ষেত্রে বিপর্যয়ের কারণ হয়েও দাঁড়াচ্ছে। মাইনরিটি কমপ্লেক্স সুতরাং উন্নত দেশগুলোয় কমবেশি বিদ্যমান। এখন এর শিকার কেবল মুসলমানরা হচ্ছেন এমন নয়। হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্য সংখ্যলঘুরাও তার বাইরে নয়। সমস্যা মোকাবিলায় তাদের সঙ্গে যদিও মুসলমানের মানসিক ভাবনার তফাত আকাশ-পাতাল!
মুসলমানদের সমস্যা হলো এই ধরনের আচরণকে তারা সরাসরি ইমান ও ইসলামি জীবনাচারের ওপর আঘাত হিসেবে ধরে বসে থাকেন। শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের কেউ হয়তো কোনো মুসলমানকে ভীতিজনক বলে বুলিং বা উপহাস করেছে;—সে-বেচারা এই অপমানকে সরাসরি তার আত্মপরিচয়ে আঘাত হিসেবে গণ্য করে। ইসলামভীতির শিকার রূপে নিজেকে চিহ্নিত করে তখন। একে প্রতিরোধের মামলায় ইসলামকে হাতিয়ার করার ঝোঁক তার মনে তীব্র হয়। মুসলমানের মানসগঠনে জিহাদির জন্ম এভাবেই হয়ে চলেছে অবিরত।
আমেরিকার মতো সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি তার নিজস্ব মতলব হাসিলে এসব জিহাদ ও জঙ্গিদের নিপুণভাবে ব্যবহার করে। কাজ শেষ হলে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে ত্বরিত। মাঝখান দিয়ে মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোর মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে রাতারাতি। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আজকের বাংলাদেশ এভাবেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়রা নিয়তিকে মেনে নিচ্ছে।
পিউ রিসার্চের দাগানো প্রবণতা বলে দিচ্ছে ইসলাম কী-কারণে অদূর ভবিষ্যতে সমগ্র বিশ্বের জন্য বিড়ম্বনা ও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সংখ্যায় বিপুল মুসলমান জনগোষ্ঠীকে অশুভ রাজনীতি বাস্তবায়নের ঘুঁটি রূপে ব্যবহার করা অন্য যে-কোনো ধর্মবিশ্বাসী জনসংখ্যা চেয়ে সহজ। সুতরাং ইসলামের প্রসার যেমন সামনে বাড়বে, এর বিপরীতে তাকে কেন্দ্র করে ভীতি ও বিদ্বেষ বাড়তেই থাকবে সমানে।
বাংলাদেশেও এসব প্রবণতা আমরা হরহামেশা ঘটতে দেখছি। জুম্মাবারের নামাজ শেষে মোনাজাতের নিয়তে হুজুরগণ হাত তোলেন। মুসলমানের তরক্কি আর বাকিরা যেন ধ্বংস হয়,—এই দোয়াই করেন প্রতিদিন! আজকেও আমার ছেলেকে নিয়ে জুম্মা আদায় করতে গিয়ে শুনলাম,—হুজুর মুসলমান ছাড়া বাকি সবার মরণ কামনায় কী দারুণ উতলা হয়ে আছেন!
তাৎক্ষণিক মনে এলো কথাটি,—অন্য ধর্মের প্রার্থনা শ্রবণের অভিজ্ঞতা জীবনে হয়েছে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হাক, সবাই শান্তি লাভ করুক, জগতের কল্যাণ হোক ইত্যাদি শুনে এসেছি সবসময়। মুসলমানের নাম ধরে অভিস্পাত ও ধ্বংস কামনা করতে কখনো শুনিনি। ঘৃণার বীজ বালক থেকে সাবালক সকলে মসজিদে বসে সমানে গিলছেন, এর বিরুদ্ধে নেই প্রতিবাদ। না আছে প্রশ্ন!
মানে দাঁড়াল, আমরা যারা এখনো শতভাগ অবিশ্বাসী হতে পারিনি অথবা ধর্ম ত্যাগ করিনি, বরং একটি পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে একে ধারণ করি,—তারাও আসলে গুড মুসলিম নই। আমাদের মধ্যে নিজেদের অক্ষমতা নিয়ে আত্মসমালোচনা নেই। না আছে বিকার। যার ফলে আমরা সকলে কমবেশি ইভিল বা ইবলিশের দোসর।
ইবলিশের দোসর প্রসঙ্গে কোরানের আয়াতনিচয় (সুরা ইব্রাহিম ১৪:২২) ইয়াদ হচ্ছে। মুসলমানদের অতি পছন্দের ইসলামিক স্কলার ইয়াসির কাদি এই আয়াতাংশের শানে নজুলকে শয়তানের খুতবা হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। রোজ কিয়ামতের পর দলে-দলে জাহান্নামে গমনের জন্য রেডি মুসলমানরা তাদেরকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য শয়তানকে অভিসম্পাত দিতে থাকবে। আর তাকে তখন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবেন খোদা। শয়তান সেখানে কোরানের আয়াতনিচয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবে :
আমি তো ভাই খোদার সবচেয়ে বড়ো প্রেমিক। তার প্রতি আমার ইমানে ঘাটতি নেই। না তাঁকে আমি অস্বীকার করেছি কখনো। আমার কেবল এই আপত্তি ছিল,—তোমাদেরকে তিনি সৃষ্টি ও মহিমা দান করে ভুল করছেন। কারণ, তোমরা এর যোগ্য নও। আমার কথাই কি এখন সত্য প্রমাণিত হয়নি?
আল্লাহ তোমাদেরকে বিবেক, বুদ্ধি তথা আকল দিয়েছেন। তোমাদের ভাবনা ও কর্মে সরাসরি হস্তক্ষেপ যেন করতে না হয় সেজন্য নবি-রসুল মারফত দিকনির্দেশনাও দিয়ে রেখেছেন। তোমরা সেগুলো বোঝার চেষ্টা কখনো করোনি। উলটো আমার ডাকে সাড়া দিয়ে গোমরাহিকে আপন করেছো। এর জন্য এখন আমাকে দায়ী করে লাভ নেই। আমি যেখানে যাচ্ছি, তোমরা সেখানে আমাকে অনুসরণ করতে বাধ্য।

শয়তানের খুতবা প্রসঙ্গে ইয়াসির কাদির ব্যাখ্যা তুলে ধরছে, কী হেন কারণে মুসলমান সম্প্রদায় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে অবুঝ ও ভ্রান্ত সম্প্রদায়। আর কেনইবা লুবনা নামে এক সামান্য ইউটিউবারের জান কবচ করতে তারা এতটা মরিয়া হয়েছেন। যে-সম্প্রদায় নিজের আকল ব্যবহারে অক্ষম,—তাদের ধ্বংস আসলে দুনিয়াতে সুনিশ্চিত হতে থাকবে। শত লুবনাকে হত্যা করেও দিন শেষে তাদের পতন নিশ্চিত হবে আগেভাগে।
অন্যের অকল্যাণ কামনায় ঘৃণা পয়দা হয়, কিন্তু বড়ো কোনো তরক্কি হাসিল হয় না। জ্ঞানমানশানে সমৃদ্ধ হয়ে আত্মরক্ষাও সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। মুসলমান সম্প্রদায় সিম্পল ইকুয়েশন মিলানোয় ব্যর্থ হওয়ার কারণে তাদের ভবিতব্য সুখকর হওয়ার কারণ দেখছি না। লুবানাদেরকে কাঁদানো ও আতঙ্কে নীল করে তোলা ছাড়া সত্যিকার অর্জন ঝুলিতে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়কে অন্য কারো লানত বলার প্রয়োজন পড়ছে না। এভাবে চলতে থাকলে শত-শত লুবনার চোখের জল তাদের ওপর লানত হিসেবে বর্ষিত হতে থাকবে প্রতিদিন। তারা-যে কারো সঙ্গে পেরে উঠছেন না, তার আসল কারণ কিন্তু এখানে নিহিত। দুনিয়া চলে আকল দিয়ে;—মাথায় গু-ভরতি আবেগ দিয়ে নয়।
. . .