পপ তারকা ডুয়া লিপার সঙ্গে নাইজেরিয়ান লেখক চিমামান্দা এনগোজি আদিচির সাহিত্যালাপ বেশ উপভোগ্য লাগল শুনে। এই সময়ের পপ সেনসেশন হিসেব ডুয়া লিপাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। করোনা অতিমারির সময় সম্ভবত প্রথম তাঁর গান শুনেছিলাম। ততদিনে তিনি তারকা হয়ে উঠেছেন। শাকিরার মতো ডুয়া লিপাও গানটান লেখেন। পপ গানে দর্শক-শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখতে যা-কিছু আবশ্যক ভাবা হয়, তার কোনোটায় ঘাটতি নেই পিতৃসূত্রে আলবেনিয় ও মাতৃসূত্রে ইংরেজ এই শিল্পীর।
এসবের বাইরে ডুয়া লিপার আরেকটি পরিচয় জানতে পেরে চমৎকৃত হয়েছি বেশ! তাঁকে ভালোরকম বইখোর বলা যেতে পারে। বই পড়তে ভালোবাসেন। স্কুল পড়ুয়া বয়স থেকে গানের পাশাপাশি বইপাঠে নিয়মিত এই শিল্পী। শুনে মনে হতে পারে,—এ আর নতুন কী! কত তারকাই তো ছিলেন এরকম। এখনো আছেন অনেকে। এমনটি যারা ভাবছেন, তাদেরকে সেক্ষেত্রে বুকার প্রাইজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ডুয়া লিপার সংযোগটি বুঝতে হবে। ইউটিউবে সক্রিয় ডুয়া লিপার সার্ভিস নাইন্টিফাইভ-এ (Service95) ঘুরান দিয়ে আসতে হবে আগে। এছাড়া ঠিক বোঝা যাবে না কেন দ্য গার্ডিয়ান-এর মতো পত্রিকা তাঁর বুক ক্লাবে লেখকদের সঙ্গে সাহিত্যিক আলাপ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের তাড়া বোধ করে।
লেখকদের সঙ্গে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আলাপ জমানোর ঘটনায় ডুয়া লিপার তরিকা ভিন্ন। সম্প্রতি পড়ে শেষ করেছেন এরকম সব বই থেকে মাসে একটি করে বই তিনি আলাপ জমাতে বেছে নেন। বইয়ের লেখককে চ্যানেলে আমন্ত্রণ জানান। বইপাঠের অনুভূতি জানানোর ছলে লেখকের অন্দরমহলে টোকা দিতে থাকেন শিল্পী। দর্শক-শ্রোতার কাছে বইয়ের লেখক ও তার সদর-অন্দর তাতে অনেকটা খোলাসা হয় তখন।
এই যেমন, পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক হারনান দিয়াজের উপন্যাস ট্রাস্ট (Trust) পাঠের পর তাঁর মনে হলো Service95-এ বইটি নিয়ে আলাপ করা যায়। আলাপের ফাঁকে দিয়াজকে তিনি প্রশ্ন করে বসলেন,—আপনার উপন্যাসের একটি চরিত্রের মধ্যে অমুক অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ছায়া টের পেলাম যেন! আমি যে-সাংবাদিকের কথা বলছি সে তখন জন ডি রকফেলারের হয়ে কাজ করেছিল। তার থেকে পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে স্ট্যান্ডার্ড অয়েল ট্রাস্ট কোম্পানিকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন রকফেলার।
ডুয়া লিপার মুখে সাংবাদিকের নাম শুনে পিলে চমকে ওঠেছিল হারনান দিয়াজের! রকফেলারের হয়ে তথ্যপাচারে লিপ্ত এই লোকটির ব্যাপারে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। ট্রাস্ট লেখার আগে-পরে কাউকে তার নাম মেনশন করতে শোনেননি কখনো! ডুয়া লিপার অনুসন্ধানী-মন এখন তাঁকে খবরের পেছনের খবরটি জানাচ্ছে! এরকম অনুসন্ধিৎসু পাঠক পেলে লেখকরা আসলেও আলোকিত বোধ করেন।
অথবা ধরা যাক, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত পোলিশ লেখক ওলগা তোকারচুককে তাঁর বই নিয়ে আলাপের মতলবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ডুয়া লিপা। নোবেলজয়ী লেখকের থেকে একটু-একটু করে জেনে নিচ্ছিলেন তাঁর লেখক হয়ে ওঠার ইতিহাস ও লেখার প্রকৌশল। ইংরেজ কবি উইলিয়াম ব্ল্যাকের ব্যাপারে মুগ্ধতার কথা ডুয়া লিপাকে শোনাচ্ছিলেন লেখক। বলছিলেন,—কমিউনিস্ট জামানার পোল্যান্ডে বিপ্লবী কণ্ঠস্বর হিসেবে ব্ল্যাককে তাঁরা আপন করে নিয়েছিলেন। কমিউনিজম সেইসময় পোল্যান্ড জুড়ে যে-নজরদারি ও দমন-পীড়নের পরিবেশ তৈরি করে,—একে প্রতিহত করার ভাষা তিনি ব্ল্যাকের রচনায় খুঁজে পেয়েছেন তখন। ঊনবিংশ শতকের লেখক হলে কী হবে, উইলিয়াম ব্ল্যাকের ভাষাবয়নের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানবিরোধী পরিসর সক্রিয় থেকেছে পুরোমাত্রায়। ব্ল্যাককে যদিও এই জায়গা থেকে পাঠের ভাবনায় কাউকে যেতে দেখা যায় না বড়ো একটা! তোকারচুকের লেখক জীবনকে যারপরনাই ব্ল্যাক ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছেন তখন।
ডুয়া লিপার জন্য তোকারচুককে বোঝার এটি ছিল মোক্ষম পাঞ্চলাইন। ইংল্যান্ডে বড়ো হলেও পারিবারিক সূত্রে আলবেনিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ নিবিড়। এবং লিপা জানেন আলবেনিয়াও একসময় কমিউনিস্ট ব্লকে ছিল। তাঁর পরিবারকে শরণার্থী হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তখন। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারের মধ্যে নিহিত আন্তঃসম্পর্ক কীভাবে দমনতোড়ে জখম হয় সেটি তাঁর ভালো জানা আছে। তোকারচুককে কাজেই ডুয়া লিপা বলে বসলেন,— তার মানে আপনি বোঝাতে চাইছেন, কমিউনিস্ট শাসিত পোল্যান্ডে উইলিয়াম ব্ল্যাককে আমরা একটি দীর্ঘ বিচ্যুতি হিসেব পাঠ করতে পারি। দমন-পীড়ন আর কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে যে- বিচ্যুতিকে আপনি হাতিয়ার করেছিলেন তখন। ভিন্ন দুটি সময় ও ভাষার লেখক এভাবে আন্তঃসম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে থাকেন, যেখানে ভাষা স্বয়ং এর অংশ হয়ে ওঠে। পাঠক মননগভীর হলেই কেবল এই সংবেদ ধরতে পারবে, আর ডুয়া লিপার অনুসন্ধিৎসু বহিপাঠে গুণটি দারুণ সুলভ!
চিমামান্দা এনগেজি আদিচির ইয়েলো সান পাঠের অনুভূতি নিয়ে আলাপেও পপ তারকাকে আমরা ভাষা নিয়ে মন্তব্য করতে দেখি। আখ্যানটির বিষয়বস্তু, স্থানিকতা, চরিত্রগুলোর স্বকীয়তা বিষয়ে আলাপ স্বাভাবিক ছিল। লিপা সেটি করেছেনও। আদিচি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন চমৎকার। আলাপের অন্তিমে এসে ডুয়া লিপা বলছেন,—তাঁর কাছে উপন্যাসটির সবচেয়ে চমৎকার দিক ছিল ইংরেজি ও নাইজেরিয়ার ইবো গোত্রে প্রচলিত ভাষার মধ্যে চরিত্রগুলোর যাতায়াত। দুটি ভাষার মধ্যে এই গমনাগমন আন্তঃসংঘাত তৈরির পরিবর্তে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তুলছে সেখানে, এবং পড়তেও দারুণ তা! তাঁর নিজের এরকম হয়, যখন কিনা ইংরেজি ও আলবেনিয় ভাষার মধ্যে তিনি যাতায়াত করতে থাকেন।
আদিচি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন,—তোমার কি মনে হয় না দুটি ভাষায় যাতায়াত একই মানুষকে দুটি পৃথক মানুষ করে তোলে? লিপার সম্মতিসূচক উত্তর তাঁর সংবেদনশীল গভীরতা টের পেতে শ্রোতাকে সাহায্য করে। আদিচির অভিব্যক্তি থেকে বেশ বোঝা গেল, বইয়ের এসব ছোটো-ছোটো বিষয়গুলো ডুয়া লিপা যেভাবে আলাপের সুতো ছাড়তে তুলে আনছিলেন,—সেটি তিনি উপেভোগ করছেন। লেখকরা এরকম পাঠকের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্মানিত বোধ করেন বটে!
বইখোর ডুয়া লিপাকে নিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের করা প্রতিবেদনে লেখক ব্ল্যাক লেফরের উল্লেখ আমরা পাই। পঠিত বই নিয়ে পপ কুইনের কথালাপের ধরন তাঁর মন ছুঁয়ে গেছে বোঝা যায়। ডুয়া লিপাকে সময়ের অন্যতম উপভোগ্য আলাপি আখ্যা দিতে লেফরে তাই দ্বিধা রাখেননি। এর বড়ো কারণ হলো,—পঠিত বই থেকে ছোট-ছোট বিষয় তুলে এনে আলাপে তিনি আস্তে করে ঢুকিয়ে দেন। এর মাহাত্ম্য প্রথম-প্রথম শ্রোতা টের পায় না। কথালাপে পুনরায় কান পাতলে বুঝতে পারে,—ডুয়া লিপা নামক বইপড়ুয়া মেয়েটি বেশ সংবেদনশীল একজন মানুষ। শুধু তাই নয়,—বইয়ের ভিতরে সংগোপন লেখকের মনোজগৎ উপলব্ধির ক্ষেত্রেও সে যথেষ্ট সজাগ আর বিবেচক।
ডুয়া লিপার আলাপগুলো দেখার পরে মনে হলো লেফরে ভুল কিছু বলেননি। শুরুর দিকের পডকাস্টে তাঁকে আড়ষ্ট দেখালেও সময়ের সঙ্গে তা কাটিয়ে উঠেছেন। লেখকের সঙ্গে বড়ো একটা তর্কে জড়িয়ে পড়েন না এই পড়ুয়া। তির্যক প্রশ্নে লেখককে বিব্রত করে আলাপ জমিয়ে তোলা তাঁর ধাত নয়। অতিথিদের সঙ্গে আলাপে তাঁকে যে-কারণে উচ্চকণ্ঠ মনে হয়নি। বইয়ে পড়া পছন্দের জায়গাগুলো কেবল লেখককে ধরিয়ে দিতে থাকেন। এর লেজ ধরে লেখক তার মনের কথাগুলো অকপটে বলতে থাকেন। পাঠক হিসেবে লিপাকে যেখানে আমরা সচরাচর বাগাড়া দিতে দেখি না। নিজে চালিয়াতিতে না গিয়ে লেখককে এই-যে মন খুলে কথা বলতে দিচ্ছেন ডুয়া লিপা,—এ-কারণে তাঁর আলাপ বিরক্তির উদ্রেক ঘটায় না কানে।
বই নিয়ে আড্ডা ও কথালাপের ক্ষেত্রে একে ব্যতিক্রম মানতে হচ্ছে। আমার যৎসামান্য অভিজ্ঞতায় ডুয়া লিপাকে দেখলাম,—অতিথিকে ডেকে এনে তার ওপর চড়াও হওয়া অথবা জবরদস্ত পাঠক রূপে নিজেকে জাহির করার বাতিক যাঁর মধ্যে নেই। না আছে এরকম আরো বহু বইপড়ুয়া সেলেবের মতো লোক দেখানো ন্যাকামি বা বাড়তি আবেগ। লেখকের ওপর চড়াও হওয়ার পরিবর্তে তাঁর এই সুস্থির আলাপ তাই শুনতে ভালো লাগে। তাঁর বই পাঠের ধরন ও অনুভূতিকে মেকি মনে হয়নি আমার কাছে। ফাঁকি বা চালিয়াতি সেখানে অনুপস্থিত। পোড়ার এই যুগে এরকম পাঠক আসলেও দুর্লভ! লেখকরা হয়তো এ-কারণে তাঁর সঙ্গে কথা বলে আরাম পান। একটি কমফোর্ট জোন ডুয়া লিপার Service 95 তাঁদের জন্য তৈরিই রাখে।
ডুয়া লিপার গানেও বইপাঠের নীরব প্রভাব এখন দেখতে পাচ্ছি মনে হলো। ফিউচার নস্টালজিয়া গানে তাঁকে গাইতে শুনেছি : I know you ain’t used to a female alpha. উগ্র পুরুষবাদীরা তো বরাবর আলফা মেল বলে সাড়ম্বরে নিজেকে জাহির করে আসছে। পৌরুষ সেখানে প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা। নারীর ওপর সম্মোহন বিস্তারের হাতিয়ার বলে একে গণ্য করেন ম্যালা বেটাছেলে। এই পুরুষ ভালোবাসা বলতে বুঝে এমন এক কর্তৃত্ব, যার ভিতরে অজেয় এক সম্মোহকশক্তি পোরা আছে। এতটাই সম্মোহক এটি,—নারীর দেহমনের ওপর নিজের অধিকার ফলানোকে সহজাত ও প্রাকৃতিক ভাবে আলফা পুরুষ।
গানের পাঞ্চলাইনে ডুয়া লিপা আলফা মেলদেরকে লক্ষ করে পালটা সওয়াল জুড়ছেন। জানতে চাইছেন, আলফা মেল-এর কেমন লাগবে, তিনি যদি নিজেকে এখন আলফা ফিমেল হিসেবে জাহির করতে থাকেন? সৃষ্টি তো নারী ও পুরুষের যৌথ খামার। সেখানে আলফার প্রাগৈতিহাসিক গুহাকালে ফেরত যাওয়া কি আসলেও প্রয়োজন? আদিচির নারীবাদী বয়ানের প্রভাবকে শিল্পী এখানে গানে ধরছেন বটে!
বলা আবশ্যক, ডুয়া লিপার পাঠ্য তালিকায় নানারকম বইপত্তর থাকলেও মিলান কুন্দেরাও সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর নিজের ভাষায়,—কুন্দেরার লেখায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও তার সমাপ্তির অস্ত্বিত্বিক উদ্ভাস। স্মৃতি ও বিস্মৃতির মধ্যে আমরা যেখানে ফিরেফিরে নিজের কাছে অচেনা হতে থাকি। বিষয়টি টের পেতে ডুয়া লিপার লাভ অ্যাগেইন কিংবা উই আর গড গান দুটি শোনা যেতে পারে।
একইভাবে খালেদ হোসেনের উপন্যাস A Thousand Splendid Suns পাঠের প্রভাব ডুয়া লিপার গানে নীরব ও শক্তিশালী প্রভাব রেখে যায়। গানের কথায় আখ্যানের এক চরিত্র লায়লার ঢুকে পড়াটা সুতরাং কাকতালীয় নয়। খালেদের আখ্যানে চিত্রিত আফগান নারী লায়লা এখানে নারীবাদের বয়ান তৈরিতে তাঁকে সাহায্য করে। তালেবান যুগের আফগানিস্তানের পাশাপাশি তালেবান পূর্ব দেশটির কনট্রাস্ট মূলত খালেদ তাঁর আখ্যানে তুলে ধরেছেন। ডুয়া লিপার ভাষায়,—প্রতিকূল স্রোত ঠেলে নারীর সাহসী হয়ে ওঠার বয়ান খালেদের আখ্যানকে শক্তি যুগিয়েছে।
আমরা যে-আফগানিস্তানকে চিনিজানি, খালেদের বয়ান তাকে ধারণ করলেও তালেবানি আফগানিস্তানের আড়ালে বিলীন অন্য এক আফগানিস্তান সেখানে উঁকি দিয়ে যায়। খালেদের ভাষায়,—রুশ-মার্কিন আধিপত্যের কবলে পড়ে যাওয়ার আগে আফগানরা কেমন ছিল তার আভাস এটি তুলে ধরছে। এই আফগানিস্তানকে তিনি ছেলেবেলায় দেখেছেনও। প্রতিকূল জলবায়ু আর কঠোর জীবন সংগ্রামের মধ্যে ছিল সৌন্দর্য ও অমার্জিত রুক্ষতার দ্বন্দ্ব, কিন্তু মানবত্মা সেখানে অবরুদ্ধ থাকেনি।
কথা সত্য, সুইজারল্যান্ডে সত্তর দশকে এসে নারী তার ভোটাধিকার লাভ করেছিল। যেখানে এর ত্রিশ বছর আগে আফগান মেয়েরা ভোটের অধিকার পায়। মেরিল স্ট্রিপ যেমন সেকথা জানিয়ে আফগান নারীদের জন্য নিজের বিষাদ জ্ঞাপন করেছিলেন। ডুয়া লিপার সঙ্গে আলাপে খালেদ যাকে আফগানিস্তানের মধ্যে বহমান বিউটি ও ব্রুটালিটির দ্বন্দ্ব আখ্যা দিচ্ছেন, তার মধ্যেই নিহিত ছিল তালেবান উত্থানের বীজ। বাংলাদেশকে যেমন অদ্য আমরা ওই পথে গমন করতে দেখছি! যাইহোক, ডুয়া লিপার গানে এরকম সব দ্বৈতভাস বিরল নয় মনে হচ্ছে।
প্রচণ্ড ব্যস্ত এই শিল্পীকে দুনিয়া জুড়ে কনসার্ট করে বেড়াতে হয়। আছে খ্যাতির বিড়ম্বনা ও চাপ। তার মধ্যে বই বোধকরি তাঁকে সুস্থির রাখে। বুকার পুরস্কারের মঞ্চে বক্তিমা দিতে ওঠে তাঁর জীবনে বইয়ের ভূমিকা খোলাসা করেছেন শিল্পী।

এমন এক যুগে আমরা আছি, যেখানে সেলিব্রিটিরা ব্রান্ডিং ধরে রাখতে বইকে সামনে নিয়ে আসছেন। ভক্ত-অনুরাগীর মনে নিজেকে জীবিত ও প্রাসঙ্গিক রাখতে এছাড়া উপায়ও নেই। অপরাহ উইনফ্রের মতো সেলেব ঝাঁকে-ঝাঁকে পাওয়া যাবে, বই ও লেখককে নিয়ে তাঁরা আলাপে বসেন, এবং সেখানে তাঁদের কথাবার্তা মেকি মনে হতে থাকে দ্রুত। ডুয়া লিপা সেরকম নয় বলেই মনে হলো। সেলেবদের বুক ক্লাব, অস্বীকার করা যাবে না, তথাপি একটি পণ্যমূল্য ও বাজার তৈরির ভাবনা মাথায় রেখে জন্ম নিয়েছে। এটি একজন সেলিব্রিটিকে বাকিদের চোখের সামনে রাখছে সবসময়। ডুয়া লিপার বুক ক্লাবটিও ব্রান্ডিংয়ের প্রয়োজন মেটাচ্ছে সেখানে, তবে বাকি সেলেবদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এর চরিত্র।
এই পপ কুইনের বই নিয়ে আলাপে ফুটে বের হয় একজন সংবেদী পাঠকের মুখচ্ছবি। বেরিয়ে আসে সেইসব ছোট-ছোট কোমল অনুভূতিগুচ্ছ, যেগুলো লেখককে পাঠকের সঙ্গে কথালাপে আগ্রহী করে তোলে। এরকম পাঠকেরে সঙ্গে বসে দুদণ্ড আলাপে কারো তাই আপত্তি থাকে না। বইপাঠক ডুয়া লিপা স্নিগ্ধ ও কোমল। গভীর ও মানবিক। সুতরাং তাঁর পাঠচক্রে উঠে আসা বইমূল্যায়নকে উষ্ণতায় মোড়ানো হ্যাপি লিসেনিং ডাকতে আমি অন্তত দ্বিধার কারণ দেখি না।
. . .
. . .