আমাদের কাছে আকরাম খান বিশিষ্ট মূলত দেশ-এর কোরিওগ্রাফির জন্য। প্রায় সাত-আট বছর আগে এই পরিবেশনায় আমরা এমন এক শিল্পীকে দেখি,—যিনি বাংলাদেশের সংক্ষুব্ধ যাতনা ও লড়াইয়ের মধ্যে মিশিয়ে দিচ্ছেন শিকড়ের প্রতি দরদ ও টান। অনেকদিন পর দেশ দেখতে বসে মনে হলো, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হাতে দেশকে স্বেচ্ছায় তুলে দিতে থাকা আমাদের মতো মেরুদণ্ডহীন হতভাগাদের জন্য আকরাম খানের এই পরিবেশনা এখন আরো বেশি প্রাসঙ্গিক।
-
-
সিলেটে অগ্নিশিখা ও মনোজ-র মতো কাগজের প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি। সমকালীন পরিস্থিতির নিরিখেও সাহিত্যিক তৎপরতায় বৈচিত্র্যমুখী হওয়াতে নেই ক্ষতি। সেইসঙ্গে ধারাবাহিকতাও গড়ে ওঠা দরকার। ছাপাসংখ্যার পাশাপাশি তারা যদি অনলাইনে সক্রিয় হতে পারেন, সেক্ষেত্রে ছোটকাগজের সম্প্রসারণে নতুন মাত্রা যোগ হবে। সময়-উপযোগী হয়ে উঠবে অধিক। আমরা পুরাতনদের পাশাপাশি বেশি করে নবীন লেখকদের পড়তে চাই।
-
এসব কার্যকারণে সিলেট অঞ্চল সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে ফকিরে পরিণত হয়েছে। লোকসমাজের পাশাপাশি শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনস্ক শাহরিক সমাজ এই অঞ্চলে একদিন গড়ে উঠেছিল। কালের ধারায় সেখানে ছেদ পড়েছে। ইংরেজ ও পাকিস্তান আমলে বিকশিত শিক্ষিতশ্রেণিতে যারা ছিলেন, আজকে ওই মান ও উচ্চতার বিদগ্ধ মানুষ তন্ন-তন্ন করে খুঁজলেও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আয়ুব শাহীর আমলে রানী এলিজাবেথের উপহার ভাউচার সিলেটকে ক্রমশ বদলে দিলো।
-
মহসেন নামজু এখানে এসে ব্যতিক্রম হয়ে উঠছেন। কোরানের আয়াতকে গান-আঙ্গিকে পরিবেশন করতে যেয়ে সাউন্ড ডিজাইন ও বাদনকে যথেষ্ট ড্রামাটিক করে তুলেছেন নামজু। এহেন বাদনপ্রণালীকে মন্দ বলা যাবে না। তবে, আজব লেগেছে কণ্ঠের ব্যবহার! একাধিক আয়াতে নামজু তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কণ্ঠ উচ্চনাদে তুলেছেন;—ভৌতিক আবহ মনে জাগানোর জন্য পরক্ষণে নিচু ও খসখসে স্তরে নামিয়েও এনেছেন। এর ফলে কোরান তেলওয়াতে শ্রুত সূরা আদ দোহা বা আশ শামসের একঘেয়ে কিন্তু সুরেলা আবেশ আর বজায় থাকেনি। উলটো সার্কাস্টিক ফিলকে তা তীব্র করেছে! কেন? সে-কথাই ভাবছি, কিন্তু সুরাহা মিলছে না!
-
ময়ুখ চৌধুরীর কবিতায় সৃষ্টি, স্থিতি, বিলয় ও পুনরায় আর্বিভাবের জটিলতা কি তাহলে তাঁকে দিয়ে প্রতীকী দৃশ্যব্যঞ্জনা তৈরি করায়? হতেও পারে। কবি জানেন তা ভালো। আমি-পাঠকের কাছে তাঁর কবিতা এভাবেই পাঠযোগ্য ঠেকছে। তাঁকে রোমান্টিক ও ব্যক্তিবাদী ইত্যাদি শিরোনামে দাগানোর প্রবণতা অনলাইন ঘাঁটতে গিয়ে কিছুটা পেলাম বটে! ওসব ঢেরা-পেটানো অভিধায় কবিকে হয়তো দাগানো যায়, কিন্তু আমি-পাঠকের তাতে পোষাচ্ছে না বড়ো।