আসাম অঞ্চলে হাতি শিকার ও পোষ মানানো নিখাদ পেশায় রূপ নিয়েছিল সেইসময়। কঠিন এই পেশায় জীবনমৃত্যুর দোলাচল ছিল তীব্র! ভূপেন হাজারিকা গানটির সে-ইতিহাস বর্ণনা করেছেন বৈকি। পেট চালানোর তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করতে তখন দ্বিধা করেনি মানুষ! মাহুত বন্ধু গানের বিবরণে অনিশ্চয়তার দোলাচলটি এর রচয়িতা প্রতাপ বরণ রায় চিরভাস্বর করে রেখেছেন। ভাওয়াইয়ার সুরজালে সময়কে যেন বন্দি করেছেন লোকায়ত সংস্কৃতির মহান জনকরা।
-
-
দেহকে ঘিরে রাহুল পুরকায়স্থর ফ্যান্টাসিঘন টানাপোড়েন, আর, তাকে ফিরে-ফিরে অনিকেত টের পেয়ে সমাধিফলক লিখে ওঠার চেষ্টায় দেশভাগের যন্ত্রণা মনে হচ্ছে বড়ো অবিচ্ছেদ্য ছিল! তাঁর বাংলাদেশী কবিবন্ধুরা রাহুলের হৃদযন্ত্রে কান পেতে কখনো শুনেছেন কি সেই রক্তক্ষরণ?
-
সিলেট অঞ্চলে বাউলা গান সিলসিলা কেন্দ্রিক নয়, বরং গ্রামীণ জনসমাজে সহজাত পন্থায় চর্চিত হওয়ার ঐতিহ্যে তা গরিয়ান। বাংলাদেশের যে-বিবর্তন এখন দেখছি আমরা, সেখানে এ-কথা ভেবে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে,—সিলেট অঞ্চলের আপামর শ্রেতাসাধারণ দীর্ঘকাল যেভাবে এই বাউল মহাজনদের গানকে স্বেচ্ছায় লালন ও ধারণ করেছেন, —সেটি আগামীতে কঠিন হতে চলেছে।
-
অনুকরণের এই-যে খেলা, এবং তার থেকে স্বরযন্ত্রের আদিভাগে যেসব ধ্বনিগত ব্যঞ্জনা মানুষ ধরার কসরত করে আসছে যুগের-পর-যুগ,—থ্রোট সিংগিং হচ্ছে এর প্রাথমিক ধাপ বা কাঁচামাল। স্বরযন্ত্রের পরবর্তী ধাপগুলোর মধ্য দিয়ে গমনের সময় যা সুষম আর মসৃণ হয়ে ওঠে। তৈরি হয় সুরেলা আবেশ ও গায়কি ইত্যাদি। সুতরাং একথা বলা যায়,—আন্তঃনাদ হচ্ছে মানবকণ্ঠে গীত সংগীতকলার অকৃত্রিম শিকড়। প্রকৃতিবক্ষ ও মানব-সভ্যতায় বিরচিত আওয়াজকে এর মধ্য দিয়ে কোনোপ্রকার ফিল্টারিং ছাড়া রেজোনেট বা প্রতিধ্বনিত করছে শিল্পী।
-
আল-মুতানাব্বির কবিসত্তায় পরিবর্তনশীল কবিতার গুণ ছিল বলে মানছেন অ্যাডোনিস। যেমন ছিল ইসলাম পূর্ব যুগের কবি আবু তাম্মাম ও আবু নুওয়াসের মধ্যে। তাঁরা কোন সময়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন,—অ্যাডোনিসের কাছে তা মুখ্য নয়। কবিতায় সঞ্চারিত গতিশীল আবর্তন হচ্ছে সেখানে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। কোনো যুগ-দশক-কালপর্ব নয়। ত্বহা হুসাইনের মতো অ্যাডোনিসও অকুণ্ঠ চিত্তে রায় দিচ্ছেন,—অন্ধকার যুগের কবিতারা ছিল প্রাণের সহজ প্রকাশ আর অকপট স্বীকারোক্তিতে গাঁথা ব্যক্তিসত্তার উন্মোচন। ইসলাম পরবর্তী কবিতারা ভান ও মেকিত্বে স্থবির জলাশয়।