
স্থির ও পরিবর্তনশীল কবিতা
(আল-মুতানাব্বি ও অ্যাডোনিস)
. . .
পাঠস্মৃতি যদি প্রতারক না হয়, তাহলে আবু আত-তাইয়িব আল-মুতানাব্বির সঙ্গে পরিচয় ঘটে রেনল্ড এ. নিকোলসনের বাংলায় ভাষান্তরিত আরব জাতির কবিতার ইতিহাস (A Literary History of the Arabs) পাঠ করতে বসে। আরব অঞ্চলে ইসলাম পূর্ব ও পরবর্তী কবিগণকে নিয়ে তথসমৃদ্ধ আলোকপাত করেছিলেন নিকোলসন। কবিতার হারাম-হালাল নিয়ে হাদিসশাস্ত্রে সংকলিত পরস্পবিরোধী হাদিসের ঘোরপ্যাঁচের মধ্যেও কিন্দা গোত্রের যুবরাজ ইমরুল কায়েস, আল-নাবিগা, লাবিদ, আল আশাহর মতো কবিগণ বাংলা ভাষায় ভালোই পঠিত বলে জানা ছিল তখন। আল-মুতানাব্বি নিশ্চয় দেশের আরবিজানা লোকজনের কাছে পরিচিত ও পঠিত ছিলেন, কিন্তু আমার কাছে থেকেছেন অজ্ঞাত।
আরবি কবিতা বলতে মোটা দাগে ইসলাম পূর্ব ও ইসলাম পরবর্তী বুঝতাম তখন। আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগ বলে বিদিত কালপর্বে মুয়াল্লাকা বা ঝুলন্ত কবিতার বাইরে নানান ছাদের কবিতাচর্চার তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা নিকোলসন করেছিলেন। ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা (১ম ও ২য় খণ্ড) যেমন মাগরিব অঞ্চল জুড়ে ছড়ানো কবিগণের কবিতায় গোত্র-সম্প্রীতি ও বিবাদ বিষয়ক দিকটির ওপর আলো ফেলেছিল চমৎকার!
গোত্রশাসিত আরববিশ্বে আসাবিয়াহ বা গোত্র-সম্প্রীতির অপরিহার্য বাস্তবতা ও উত্থান-পতনের কার্যকারণ ইবনে খালদুনের রচনায় উঠে এসেছিল। মুকাদ্দিমা এমন একখানা গ্রন্থ, যার প্রাসঙ্গিকতা আজকের যুগ-বাস্তবতায় ম্লান হয়নি একটুও। আল-মুতানাব্বির নাম তাঁকে নিতে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। সে যাইহোক, সিরিয়ার কবি আলী আহমদ সাঈদ ইসবার ওরফে অ্যাডোনিস-এর বহুল প্রচারিত একখানা সাক্ষাৎকার শ্রবণের সময় মুতানাব্বির নাম কানে খট করে পুনরায় আঘাত হেনেছিল।
আধুনিক আরবি কবিতায় কাহলিল জিবরান, আহমদ শাওকি, মাহমুদ দারবিশ, নিজার কাব্বানির মতো অগ্রগণ্য কবিদের সঙ্গে বাংলাভাষী কবিতা-পাঠকরা ভালোই পরিচিত। দুই বাংলার কবিলেখকরা এঁনাদের কবিসত্তার বৈশিষ্ট্য ও কবিতাবই বাংলায় ভাষান্তর করেছেন একাধিক। জিবরান ও দারবিশের নাম তো বালেগ হওয়ার দিন থেকে কানে আসছে অবিরত। অ্যাডোনিসের নামখানাও পরে যোগ হয়েছিল সেখানে। সিরিয়ার কবি ঢাকায় আয়োজিত লিট ফেস্টে যোগ দিতে বাংলাদেশেও এসেছিলেন একবার। আরবি কবিতায় অ্যাডোনিসকে একটি নতুন যুগারম্ভের সূত্রকার হিসেবে অনেকে বিবেচনা করে থাকেন। কবিতা বিষয়ক আলাপচারিতা, আর নিজের জীবনজার্নি লিখতে বসে অ্যাডোনিস বলেছিলেন,—কবি হওয়ার জন্যই ধরায় তিনি জন্ম নিয়েছেন।
বর্তমানে নব্বই ঊর্ধ্ব কবি সিরিয়ার দরিদ্র এক কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন। এমন এক গ্রামে তাঁর জন্ম হয়, যেখানে শহর তখনো প্রবেশ করেনি। স্কুল-কলেজের কোনো বালাই ছিল না। রেডিওর মতো একটি বস্তু পৃথিবীতে রয়েছে,—খবরটি অ্যাডোনিসের মতোই গাঁয়ের লোকজনের কাছে ছিল অজানা! সিরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান একবার সেই গ্রামে পা রাখেন। অ্যাডোনিস তখন নাবালক। মুখে-মুখে কবিতা আওরান দিব্যি। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন,—তাঁকে যেমন করে হোক দেশের হর্তাকর্তার নজরে পড়তে হবে। দেশের ভাগ্যবিধাতাকে শুনাবেন নিজের রচিত কবিতা। আজব হলেও কাণ্ডটি তিনি ঘটিয়ে ছেড়েছিলেন তখন।
সভামঞ্চে দেশপ্রধানের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রচিত একখানা কবিতা আবৃত্তি করেন বালক কবি। সিরিয়ার ভাগ্যবিধাতার তা ভালো লেগেছিল শুনে। বালককে পরে ডেকে নিয়ে পিঠ চাপড়ে বাহবা দিলেন। জানতে চাইলেন,—তাঁর কাছে কিছু চাওয়ার থাকলে বালক সেটি বলতে পারে। অ্যাডোনিস সরাসরি বলে দিলেন,—তাঁর ইচ্ছে তিনি স্কুলে পড়বেন, এবং সেখান থেকে আরো সামনে বাড়াবেন কদম। রাষ্ট্রপতি সেদিন বালকের আর্জি কবুল করেছিলেন।
সিরিয়ার অজপাড়াগাঁ থেকে এই-যে বৃহৎ পরিসরে তাঁর যাত্রা ঘটে গেল, এর প্রভাবে অ্যাডোনিস পরে ক্রমশ হয়ে উঠেন পাক্কা মডার্নিস্ট ও সেকুলার। স্বাভাবিক! বিংশ শতকে শুরু হওয়া ও পরবর্তী কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা আধুনিকতাবাদের বিকাশ ইউরোপ-আমেরিকায় ঘটলেও, তার তরঙ্গ বিশ্ব জুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাদের এখানে ত্রিশের দশকে বুদ্ধদেব বসুদের দেখা পাচ্ছি তখন। বাংলা কবিতা ততদিনে রবিযুগ অতিক্রম করে নতুন স্রোতে সাবলীল অবগাহন করতে লেগেছে।
বাংলা কবিতার কথাই যদি ধরি,—বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক ও পরবর্তী সুদীর্ঘ কালপর্বে দুটি প্রবণতা প্রধানত আমরা দেখতে পেয়েছি। একটি বুদ্ধদেব বসুরা ওইসময় সৃজন করেছিলেন। অন্যটি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের জোয়ার আর উপনিবেশ-উত্তর পরিস্থিতির কারণে জন্ম নিয়েছিল, যেখানে আবার দেশভাগকে কেন্দ্র করে কবিতার ডিকশনে বিচিত্র সব মাত্রা যোগ হয়েছে অনবরত। কবিরা বুদ্ধদেব বসুদের সৃষ্ট প্রভাব-বলয়ে বসে যেমন লিখেছেন লাগাতার, ইসলামি নবজাগরণের খোয়াব বুকে নিয়েও কবিতা রচনা করেছেন। মধ্যিখানে আবার কাস্তে-হাতুড়ির ঐকতান রেখেছিল প্রভাব। আরব বিশ্বও এরকম আধুনিকতা ও স্থানিকতার টানাপোড়েনে জেরবার ছিল।
মিশরের প্রখ্যাত লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. ত্বহা হুসাইনকে আমরা এ-প্রসঙ্গে স্মরণ করতে পারি। চিন্তায় ও মননে আধুনিক এই লেখক জন্মগত ত্রুটির কারণে প্রায় অন্ধ ছিলেন। দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা অবশ্য তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পড়িয়েছেন নামকরা সব বিদ্যালয়ে। আইয়ামে জাহিলিয়াত নিয়ে নিবিড় গবেষণা কেবল নয়, কবিতা ও কথাসাহিত্যে তাঁর অবদান যুগান্তকারী। ইসলামপূর্ব মিশরীয় সভ্যতার ওপর ছিল অগাধ দখল।
ইসলাম পরবর্তী সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলাম কর্তৃক দাগানো প্যাগান সংস্কৃতির সংঘাতকে ত্বহা হুসাইন সন্ধিক্ষণ হিসেবে দেখেছেন নিজের রচনায়। এর প্রভাবে স্থানিক আরব জলবায়ুতে বিকশিত জাতিগত স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বতঃস্ফূর্ততা পুরোপুরি বিপন্ন হয় বলে তিনি মনে করতেন। ত্বহা হুসাইনের সাহিত্য ও গবেষণা মিশরে তাঁকে প্রচণ্ড বিতর্কিত করে তোলে। জীবনের ওপর হুমকি এড়াতে ফ্রান্সে নির্বাসন নিতে বাধ্য হয়েছিলেন পনেরো বার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত এই লেখক।
ত্বহা হুসাইনের ইসলাম পূর্ব সময়ের কবিতা বিষয়ক বইটি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বের হয়। এটি ছিল আধুনিকতাবাদী সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ভাবধারারও জন্মদশক। টি. এস এলিয়টের পোড়োজমি ও জয়েসের ইউলিসিস এই দশকে প্রকাশ পায়। ত্বহা হুসাইন উক্ত সময়টানে বিকশিত হচ্ছিলেন বিধায় আরব বিশ্বের পীড়িত দশায় ছিলেন গভীর সংক্ষুব্ধ। আরব জলবায়ুতে ইসলামের অবদান ও প্রভাব অকুণ্ঠে স্বীকার গেলেও স্থানিক সংস্কৃতির ওপর ইসলাম আরোপিত জাতীয়তাবাদের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সোচ্চারি থেকেছেন আজীবন।
তাঁর মতে, মিশরসহ আরববিশ্বে এর ফলে মেকি সাহিত্যের উত্থান ত্বরিত হচ্ছে, এবং এর থেকে বেরুতে হলে আধুনিক জগতের সঙ্গে সংযোগ ও ইসলামকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়োাজন রয়েছে। ত্বহা হুসেইনের প্রভাব বলাবাহুল্য পরবর্তী আরব বিশ্বের কবিগণের ওপর গভীর ছিল। অনলাইন মুখপত্র গানপার-এ ইসলামবীক্ষণ বিষয়ক ধারাবাহিক রচনায় আরবি সাহিত্যের ডিন হিসেবে সম্মানিত প্রাগ্রসর চেতনার মানুষটিকে নিয়ে সবিস্তারে লিখেছিও। আগ্রহীরা চাইলে সেখানে গমন করতে পারেন।
সিরিয়ার সমাজতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী দলের (SSNP) কাণ্ডারি লেখক ও চিন্তাবিদ আনতুন সাদেহর নাম, অন্তত অ্যাডোনিসের কথা উঠলে,—নিতেই হবে। আনতুন সাদেহ এখানে ত্বহা হুসাইনের চেয়ে এককাঠি সরেস ছিলেন। বামপন্থী মতাদর্শে দীক্ষিত হলেও পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে সৃষ্ট বিষয়বস্তুর গভীরতর সূক্ষ্ম আবেদন নিয়ে তাঁর ফ্যাসিনেশন ছিল প্রবল। আধুনিক আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এর পীড়াদায়ক ঘাটতি নিয়ে ছিলেন জবর উন্নাসিক।
মিশরের গানের পাখি উম্মে কুলসুমকে নিয়ে থার্ড লেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কিছুদিন আগে বিস্তারিত লিখেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, উক্ত আলাপে আনতুন সাদেহ ও অ্যাডোনিসের প্রসঙ্গ টানা উচিত ছিল। উম্মে কুলসুমের কণ্ঠ নিঃসৃত সংগীতলহরে আরববিশ্ব মুগ্ধ-সম্মোহিত হলেও সাদেহ ও প্রথম দিকে অ্যাডোনিসকে তা ইম্প্রেসড করতে পারেনি।
সাদেহর মূল আপত্তি ছিল উম্মে কুলসুমের গানের প্রকৃতি নিয়ে। তাঁর মতে, বিথোভেনের সংগীত শ্রোতাকে কেবল সুরের মূর্ছনায় নয়, গভীর দার্শনিক সংরাগের সূক্ষ্মতায় বিলীন হতে বাধ্য করে। উম্মে কুলসুমের ধ্রুপদিছন্দে গাঁথা সংগীতের ব্যঞ্জনা ও বাদনপ্রণালীর মধ্যে তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। বিথোভেনর সুরজালের বিস্তার ও দার্শনিক গভীরতা কুলসুমে এসে পথ হারায়। গানের কোকিল এল-সেত ওরফে দ্য লেডির কণ্ঠ সেখানে আরব সংস্কৃতির প্রাচীন কবিতা রচনার রীতিকে সার্থকভাবে অনুরণিত করছে, কিন্তু যুগ-প্রাসঙ্গিক নতুনত্ব ও নবীকরণ যেটুকু পাচ্ছে শ্রোতা, তা কোনোভাবেই ব্যঞ্জনাগর্ভ নয়। সাদেহর এই ছিল মত!
ছাত্রজীবনে আনতুন সাদেহর লেখাপত্তর ও বুদ্ধিজীবীতায় প্রভাবিত অ্যাডোনিসও উম্মে কুলসুমের ব্যাপারে প্রায় অনুরূপ ধারণা পোষণ করতেন। যদিও অরববিশ্বে প্রবাদপ্রতিম মহিমা আর ভালোবাসায় সিক্ত শিল্পীর গান ভালোভাবে কান পেতে শুনেছেন তিনি অনেক পরে। কুলসুমের আরবি উচ্চারণ ও শব্দপ্রয়োগ নিয়ে সেইসময় মৃদু আপত্তি ছিল কবির মনে। সময়ের সঙ্গে অ্যাডোনিস অবশ্য মত পালটেছেন। উম্মে কুলসুম তাঁর কণ্ঠে আরব জলবায়ুর হাজার বছর ধরে পরিপুষ্ট স্বকীয়তাকে যেভাবে ধারণ করেছেন,—এর প্রশংসা মন খুলেই করেছেন কবি।
ত্বহা হুসাইন, সাদেহ কিংবা অ্যাডোনিস নিজস্ব স্থানিকতাকে তীব্র আবেগে আলিঙ্গন করলেও, একে নিয়ে এতটা ক্রিটিক্যাল ছিলেন কী কারণে? উত্তর খুব-যে কঠিন এমন নয়। মিশর, সিরিয়া, লেবানন, তিউনিসিয়ার নাগরিক সমাজের একাংশ আমাদের এখানকার মতোই পাশ্চাত্যে বিকশিত নতুনতর সূক্ষ্মতাকে নিজস্ব দেশকালের নিরিখে ব্যবহার করতে মরিয়া ছিলেন। এমনকি এডওয়ার্ড সাঈদের প্রাচ্যবাদ আরব অঞ্চলে উত্তর-আধুনিক সমালোচনা রীতির বিস্তার ঘটালেও ত্বহা, সাদেহ, অ্যাডোনিস আরববিশ্বে ইসলামি বিশ্বাস ও প্রভাবকে উপনিবেশীকরণের মতোই ক্ষতিকর হয়েছে বলে গণ্য করেছেন সমানে।
সাহিত্যিক নিরীক্ষার যে-উৎকর্ষ ইসলাম পূর্ব আরব বিশ্বের কবিতায় ছিল সহজ স্বতঃস্ফূর্ত, সেটি পরে বিধিনিষেধের বেড়জালে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। সোজা কথায়, সাহিত্য কিংবা কবিতার জন্য জরুরি সূক্ষ্মতা ও রচনারীতির নিরীক্ষা সীমিত হয়ে পড়ায় আরব ভূমণ্ডলের কবিতা যেন এখন স্থবির জলাশয়;—এরকম একটি ভাবনা ত্বহা, সাদেহ ও অ্যাডোনিসে সক্রিয় থেকেছে আগাগোড়া। এই জায়গা থেকে অ্যাডোনিসের উত্থান পরিলক্ষিত হতে থাকে। কবিতা ও গদ্যে আরব জলবায়ুর প্রভাবকে নতুন আঙ্গিক ও রচনাশৈলীর মধ্য দিয়ে তিনি ব্যবহার ও প্রয়োগ করতে থাকেন। কেন এরকম করছেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তিনটি খণ্ডে বিরচিত স্থির ও পরিবর্তনশীল (Al-Thabit wal-Mutahawwil) কিতাবে দিতে কোনো কার্পণ্য করেননি কবি।
আরবিভাষী সাহিত্য পরিমণ্ডলে কবি অ্যাডোনিসের স্থির ও পরিবর্তনশীল (The Static and the Dynamic) কিতাবখানা বহুল পঠিত হলেও এর কোনো ইংরেজি ভাষান্তরের খবর আমার জানা নেই। অনলাইনে খোঁজ করে পাইনি। সুতরাং স্থির ও পরিবর্তনশীল কবিতার ব্যাপারে উইকি ও ব্রিটানিকায় সংকলিত তথ্যের পাশাপাশি নানানজনের সঙ্গে কবির কথালাপ হচ্ছে একমাত্র ভরসা। সবগুলো সূত্র একত্র করলে জানা যাচ্ছে, স্থির ও পরিবর্তনশীল কিতাবে আরব বিশ্বের কবিতাকে কবি অ্যাডোনিস দুটি মৌল প্রবণতায় ভাগ করেছেন। কবিতার প্রচলিত যুগ অথবা দশক বিভাজন সেখানে তাঁর কাছে গুরুত্ব পায়নি।
অ্যাডোনিসের মতে কবিতাকে দুটি ধারায় ভাগ করা যেতে পারে। একটি ধারায় সময় ও স্থানিকতা মোটের ওপর অপরিবর্তনীয়। ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত ও প্রায় অপরিবর্তনীয় ছকের ভিতরে বসে আরব কবিরা নিরন্তর কবিতা লিখে গেছেন। প্রাচীন ও ধ্রুপদি যুগের কবির সঙ্গে আজকের কোনো কবিকে সেখানে পৃথক করা যে-কারণে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কথার কথা, কহলিল জিবরানের রচনা যে-ভাবুকতার সৌন্দর্যকে ধারণ করে, কাব্য-প্রকৃতির দিক থেকে তা চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। যুগ-যুগ ধরে এর ওপর দাঁড়িয়ে কবিতার সৌন্দর্য ও গভীরতার সৌধ বিরচন সম্ভব। এটিও একধরনের রচনা-পদ্ধতি বটে। আবেগ ও অনুভূতির প্রকাশ যেখানে বিচিত্র সৌন্দর্যের জন্ম দিয়ে থাকে। শৈল্পিক উৎকর্ষের কমতি ঘটে তা কিন্তু নয়।
অন্যদিকে এর বিপরীত ধারায় কবিতা সবসময় দ্রোহি ও নিরীক্ষাপ্রবণ হয়ে উঠতে চায়। কাঠামোয় স্থির থাকার ব্যাপারে তার আচরণ সেখানে অনিশ্চিত। নিজেকে ঝুঁকির মুখে নিক্ষেপের ঘটনায় থাকে অবিচল। মানবীয় আবেগ ও নিজস্ব স্থানকালের সঙ্গে কবির বোঝাপড়া সংক্ষুব্ধ, জটিল, ও অনেকসময় স্ববিরোধী হয়ে ওঠে। অ্যাডোনিসের ব্যাখ্যা অনুসারে এই ধারার কবিতা গতিশীল ও ব্যক্তি অহংয়ের বিস্ফোরণ ঘটানোর ব্যাপারে দ্বিধাহীন।
অ্যাডোনিসের ঢাউস কিতাবখানা যেহেতু ভাষান্তরজনিত সমস্যার কারণে এখনো পাঠ করার সুযোগ জোটেনি,—এর বেশি আগানো হয়তো সমীচীন হচ্ছে না। বাচালতা ও উলটা বুঝলি রামের সম্ভাবনা থাকছে সেখানে, তবে আজকের এই প্রারম্ভিকা টানার মূল কারণ কিন্তু ইসলাম পরবর্তী যুগের কবি আল-মুতানাব্বি। অ্যাডোনিস যাঁকে পরিবর্তনশীল কবির গ্রোত্রে ফেলে কুর্নিশ ঠুকেছেন।
আল-মুতানাব্বি কেবল কবিতা রচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন এমন নয়, তাঁর মধ্যে ছিল ব্যক্তিসত্তা ও কবিসত্তা নিয়ে স্বকীয় এক অহংয়ের টানাপোড়েন। ছিলেন,—একইসঙ্গে দ্রোহী, বেপরোয়া, আর তীব্র অনুভূতিশীল। মুতানাব্বিকে যে-কারণে ইমরুল কায়েসের পর আরেকটি নতুন যুগারম্ভের প্রতীক রূপে পাঠ করেছেন অ্যাডোনিস। এই কবি আরব বিশ্বে প্রচলিত কবিতা রচনার পদ্ধতিতে নিয়ে আসেন অস্থির নতুন হাওয়া। ছন্দে ধ্রুপদি, কিন্তু রূপক ও সংকেতে ছিলেন নবীন। ইমরুল কায়েসের মতো আল-মুতানাব্বিও ব্যক্তিসত্তার বিঘোষণায় থেকেছেন দ্বিধাহীন। গোত্র সংস্কৃতিকে তুলে আনার ক্ষেত্রে সাহসী ও নিঃসঙ্কোচ। বিদ্রুপ-পরিহাসে থেকেছেন শানিত; এবং আবেগের তীব্রতায় জ্বলন্ত অগ্নিশিখা।
ইমরুল কায়েস যে-প্রোজ্জল দ্যুতি মুয়াল্লাকায় রেখে গেলেন, এবং ইসলামের আবির্ভাব ও প্রসারের চাপে যেটি পরে ক্রমশ স্তিমিত হতে থাকে,—দশম শতকে মুতানাব্বির হাতে এর পুনর্জন্ম ঘটেছিল। মাইকেল মধুসূদনের মতো মুতানাব্বিও ব্যক্তিসত্তার গহিন তোলপাড় করে বেরিয়ে আসা সত্তার জয় ঘোষণা করেছেন। ইচ্ছে করলে একে বীররসে আকুল ভাবতে পারি আমরা। মুতানাব্বির কবিতা যদিও বীররসকে মাথায় নিয়ে নয় রচিত। কবিকে বরং আত্ম-অহংয়ের সাবলীল জয়রথ ঘোষণায় সক্রিয় দেখছি আমরা। মুতানাব্বি যেখানে অক্লেশে বলে দিচ্ছেন :
আমার কাসিদা অন্ধও অনুভব করে
আর বধির টের পায় এর শব্দকম্পন
যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে কোনো রাজা
অ্যাডোনিস এখানে দাঁড়িয়ে মুতানাব্বিকে ঋণ করছেন নিঃসঙ্কোচ :
এই তো আমি; আমি সেই ভয়ঙ্কর সংক্ষোভ সময়ের
এই আমার ধারাভাষ্য : মিনারের ওপরে দেখো চাঁদ
মদ্দা ঘোড়াগুলোকে পথ দেখাচ্ছে।
মুতানাব্বি ও অ্যাডোনিসের এই বিঘোষণায় ওয়াল্ট হুইটম্যানের আমিত্বের জয়রথ অনুরণিত ভাবতে পারেন কেউ। হুইটম্যানের কবিতাকে ছাপিয়ে উচ্চলয়ে বিঘোষিত নজরুলের বিদ্রোহী চকিত মনে উঁকি দিতে পারে। তবে আমার তাৎক্ষণিক ইয়াদ হচ্ছে খোন্দকার আশরাফ হোসেনের বিখ্যাত পঙক্তিচরণ :
পৃথিবীর সর্বশেষ কবি আমি, অহংকার আমার কবিতা।
অ্যাডোনিসের কবিতাটি আবার এদিক থেকে অভিনব! রূপক ব্যবহার কবি ছাড়িয়ে গেছেন কবিতার সীমানা। তাঁকে কী-কারণে আরববিশ্বে প্রবল অশনি ভাবা হয়, তার চকিত নমুনা এখানে ধরা পড়ছে। যাইহোক, পুনরায় ফেরত যাই অ্যাডোনিসের স্থির ও পরিবর্তনশীল-এ ভাগ করে নেওয়া কবিতার বিভাজন মানচিত্রে। কবি সেখানে দুয়ের পার্থক্য বোঝাতে মন্তব্য ঠুকছেন :
স্থির কবিতা রচনার তরিকায় নাকল (Naql)-এর বিজয় চড়া। আকল-এর (aql) ব্যবহার বড়োই সংকীর্ণ।
সেই চিরাচরিত অ্যাডোনিস। ইসলামের প্রভাবকে যিনি আরবি কবিতার সহজাত ব্যঞ্জনার মরণক্ষণ বলে ফিরে-ফিরে চিহ্নিত করেছেন। এখানে নাকল বলতে তিনি বোঝান কোরান প্রভাবিত এমন এক রচনারীতি, যেখানে সৌন্দর্যের বিস্তার ঘটলেও আকল তথা বুদ্ধিদীপ্ত রূপক ও সংকেতে তা নয় গভীর। এ-যেন কেবল একটি ঐতিহ্যের প্রতিধ্বনি। যেখানে সংবেদন আছে, কিন্তু তা মৃত। মমিকরা তুতেনখামেন।
পক্ষান্তরে পরিবর্তনশীল কবিতা তাঁর কাছে অজ্ঞাতের বাইরে গমনের চাবি। এ-কবিতা ঐতিহ্যকে নিতে পারে, এবং নিয়ে থাকেও আকসার,—কিন্তু এর প্রতি সে নয় দায়বদ্ধ। একে ভেঙে নতুন কোনো সৌধ গড়ে তোলা তার উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। পরিবর্তনশীল কবিতায় থাকে আত্মজিজ্ঞাসা; থাকে আবেগের অকপট বিঘোষণ; এবং নিজেকে সে কেবল যুক্তিহীন আবেগের বিস্ফার ভাবে না;—তার মধ্যে মিশে থাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্যুতি।

আল-মুতানাব্বির কবিসত্তায় পরিবর্তনশীল কবিতার গুণ ছিল বলে মানছেন অ্যাডোনিস। যেমন ছিল ইসলাম পূর্ব যুগের কবি আবু তাম্মাম ও আবু নুওয়াসের মধ্যে। তাঁরা কোন সময়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন,—অ্যাডোনিসের কাছে তা মুখ্য নয়। কবিতায় সঞ্চারিত গতিশীল আবর্তন হচ্ছে সেখানে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। কোনো যুগ-দশক-কালপর্ব নয়। ত্বহা হুসাইনের মতো অ্যাডোনিসও অকুণ্ঠ চিত্তে রায় দিচ্ছেন,—অন্ধকার যুগের কবিতারা ছিল প্রাণের সহজ প্রকাশ আর অকপট স্বীকারোক্তিতে গাঁথা ব্যক্তিসত্তার উন্মোচন। ইসলাম পরবর্তী কবিতারা ভান ও মেকিত্বে স্থবির জলাশয়।
আল-মুতানাব্বির গুরুত্ব এখানে-যে, স্বার্থপর সত্তার বিঘোষণে ইসলাম পূর্ব সময়ের মতোই তিনি ছিলেন অকপট। তাঁর মধ্যে সক্রিয় অকৃত্রিম আবেগকে বেঁধেছেন কবিতায়। এটি তাঁকে গতিশীল ও চির আধুনিক করে তুলেছে অবলীলায়। অ্যাডোনিসের ভাষায়,—মুতানাব্বি আরব সংস্কৃতিকে অনুকরণসর্বস্ব ভাবেননি কখনো! আরব অঞ্চল জুড়ে ছড়ানো জলবাায়ুকে দেখেছেন সদা পরিবর্তনশীল জীবনবোধের আলোকধারায়। জীবনিশক্তির অফুরান উচ্ছলতার মধ্যে তিনি হাওদায় আসীন। ইমরুল কায়েসের মতো যেন-বা দেখছেন মরুর বুকে ধূলিঝড় শুরু হতে যাচ্ছে, আর রূপসী উনাইজা কোমরে ঘূর্ণি তোলে দ্রুত নেমে যাচ্ছে বালির পাহাড় বেয়ে নিচে। যেন এক মরীচিকা, যাকে পান করার পিয়াসে লবেজান ছিলেন কিন্দার যুবরাজ। অ্যডোনিস কাজেই মুতানাব্বিকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন শংসাবাক্যে। লিখছেন :
He carves his distinct poetic modernity out of a critical engagement with the past… attributes it to his guide and alter ego, the great al‑Mutanabbi.
মুতানাব্বির জীবনকাহিনি পাঠ করলে অ্যাডোনিসের কথার সারসত্য ভালোই টের পায় পাঠক। আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে জন্ম কবির। ইরাকের কুফা নগরে এমন এক পরিবারে জন্মেছিলেন, যাদের বংশ পরিচয় নয় সম্ভ্রান্ত। মুতানাব্বির ওপর এর প্রভাব ছিল গভীর। নিজের বংশ পরিচয় সহজে দিতে চাইতেন না। কেউ জানতে চাইলে সপাট বলে দিতেন :—আমি অমুক গোত্রের যুবরাজ হতে চলেছি, আর কবিতা লিখেই সেটি করব বাছা।
এই মুতানাব্বি জেল খাটলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ,—নিজেকে তিনি প্রতিনবি দাবি করেছেন। অভিযোগ অবশ্য মিথ্যা ছিল না। কেন প্রতিনবি? তাঁর ব্যাখ্যায় মুতানাব্বি জানাচ্ছেন,—মোহাম্মদের নবিত্বে মহান উপাদানের কমতি না থাকলেও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি সেখানে ছিল। তিনি এখন এর সংশোধক রূপে ধরায় হাজির হয়েছেন। তাঁর কবিতার মধ্যে দীপ্ত নবিত্বের নতুন উন্মোচন।
এই মুতানাব্বি এমন পঙক্তি রচনায় পারদর্শী, যেটি কিনা কোনো গোত্রের সম্ভ্রম ও মর্যাদাকে নিমিষে ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারে। তাঁর মৃত্যুও ঘটল ওই গোত্রদ্বদ্বের জের ধরে। মুতানাব্বির কানে এলো, অমুক গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তাঁর কবিতা রচনার ক্ষমতাকে উপহাস করেছে। মুতানাব্বির অহংয়ে আঘাত হানে এই অপমান। গোত্রের সঙ্গে কলহ যুদ্ধে গড়ায় শেষমেষ। কবি খুইয়ে বসেন সাধের মানবজীবন!—যার পরিণাম নিয়ে কতই-না আক্ষেপভরা শের রচনা করেছেন এতদিন!
তিনিই আবার রাজার স্তুতিতে অকুণ্ঠ। কিন্তু সেখানে অগোচরে মিশে থাকে রাজন্যকুলকে নিয়ে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত পরিহাস। রাজা কোনোভাবে তাঁর থেকে নয় পেল্লায় বৃহৎ;—কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে মুতানাব্বির ভুল পড়ে না কখনো। রাজনরা অবশ্য এটি ভুলে থাকে হরদম।
দিওয়ানুল মুতানাব্বি কিতাবে ধরা আছে কবির চাণক্যসুলভ সব প্রবচন। কবিতার ছন্দে মানবচরিত্রের উন্মোচন ঘটেছে সেখানে। আছে মানজীবনের গতি ও পরিণাম নিয়ে মনোবিধুর আকুতি ও হাহাকার। বাংলায় এর ভাষান্তর সুলভ হলেও টীকা-টিপ্পনির বাড়াবাড়ি আর আড়ষ্ট ভাষান্তরের কারণে প্রায় অপাঠ্য। আমি হয়রান হয়ে আগাতে পারিনি বিশেষ। উত্তম হচ্ছে কোরানের কাব্যিক ভাষান্তরে অতুল এ জে আরবেরির (A.J. Arberry) অনুবাদখানা পাঠ যাওয়া। সেখানে টীকা-টিপ্পনি থাকলেও আর্বারির ভাষান্তর স্বাদু ও উপভোগ্য।
মুতানাব্বির একগুচ্ছ কবিতা পাঠক অনায়াস পড়তে পারেন পোয়েট্রি হান্টার-এ। তার থেকে একটি এখানে ভাষান্তরে সংযুক্ত করছি। কবিদের মধ্যে কেউ তাঁকে ভাষান্তর করলে মিলতে পারে ব্যঞ্জনাগর্ভ আস্বাদ। বিশেষ করে সেই কবি যদি আরবি ভাষায় হয়ে থাকেন স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল। হাতফেরতা ইংরেজিতে, আমার ধারণা, অনেককিছু খোয়া যায়।
যাইহোক, অ্যাডোনিসে ফিরি এবার। স্থির ও পরিবর্তনশীল-এ কবিতাকে ভাগ করে নেওয়া কবি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিতর্কিত হলেও আরবি ভাষা তো বটেই, বিশ্ব-কবিতায় তাঁর গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা অমলিন। নোবেল-এর বেল যদিও মাথায় এখনো পড়েনি, তবে নাম উঠেছে বহুবার। এরকম এক কবি তাঁর রক্তের সোদর কবি আল-মুতানাব্বিকে পূজা নয় বরং সহজাত উত্তরাধিকার হিসেবে প্রেরণা মেনেছেন। যেখানে দুজনেই সমান্তরাল রেখায় দাঁড়িয়ে বিশ্বাস করেন ও ঘোষণা দিতে থাকেন সাবলীল :—ভাষা কখনো কেবল কথার ফুলঝুরি নয়। ভাষা হচ্ছে বিপ্লব, এবং তা বেঁচে থাকে ও আয়ু যোগায় কবিকে।
. . .

দিন যখন অন্ধকার
আবু আত-তাইয়িব আল-মুতানাব্বি
ভাষান্তর : স্বকৃত (ভুলত্রুটি মার্জনীয়)
. . .
দেখার আগেই দিবসকে
তুমি ধরে নিয়েছো অন্ধকার;
একটি বিশেষণ সত্য নয়, যতক্ষণ না
চক্ষু ও কর্ণের ঘটে বিবাদভঞ্জন।
মানুষ অকারণে ভিড় জমায় না-জেনে কারণ,
তোমার প্রতিবিম্ব যেমন আমার কাছে অস্তিত্বহীন,
কেবল শব্দ, লুত থেকে তারা ভেসে আসে,
আমার চোখ যেখানে সাক্ষী মিথ্যা প্রমাণের।
রুমি, তোমার উত্থান কামনা করি হে রাজা,
তোমার ক্ষমায় দীপ্ত দিন, বয়ে আনে বিজয়,
সাম্রাজ্য ছাপিয়ে যে এখনো উন্নতশির।
তরবারির কোপ থেকে তারা বেঁচে গিয়েছিল—
আর লুত তখন ঠায় তাকিয়ে, দেখছিল—
মানুষের বদলে তুমি হাতে নিয়েছো তলোয়ার
অনেক অনেক মস্তক, জমায়েত আর ক্ষমতাকে
জিতে নিতে।
তোমার উদারতা ভোরের বৃষ্টি—
তোমার দেওয়া দান, এমনকি বৃষ্টিও তা উপভোগ করে ।
সূর্য তোমার থেকে খুঁজে নেয় আলো,
যেমন চাঁদকে সে বিলায় কিরণ।
. . .
. . .




One comment on “স্থির ও পরিবর্তনশীল কবিতা”