দেখা-শোনা-পাঠ - পোস্ট শোকেস

ডাকু চেঙ্গিসের আন্তঃনাদ সংগীত

Reading time 6 minute
5
(50)

বাংলা পরিভাষায় থ্রোট সিংগিংকে (Throat Singing) ঠিক কী নামে ডাকা যায় তা মাথায় আসছে না। কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো করে যদি ভাবি, সেক্ষেত্রে আন্তঃকণ্ঠ অথবা আন্তঃনাদ সংগীত নামে হয়তো তাকে ডাকা যেতে পারে। প্রকৃতিবক্ষ থেকে উৎসারিত সংগীত ঘরানাটি হলো পৃথিবী জুড়ে গায়নশৈলীর বিচিত্র নমুনা ও নিরীক্ষা নির্ভর অজস্র কসরতের একটি।

ইংরেজিতে ওভারটোন (Overtone) বা আক্ষরিক বাংলায় অতিধ্বনি নামে তাকে অনেকে চিহ্নিত করে থাকেন। একটি গান কণ্ঠে তুলে নেওয়ার সময় গায়ক যদি কণ্ঠস্বরের স্বাভাবিক স্কেল বা মাত্রায় অনন্য ভিন্নতা নিয়ে আসেন, তখন তার এই গায়নশৈলীকে সচরাচর ওভারটোন হিসেবে সংগীত বিশেষজ্ঞ ও শ্রোতারা ধরে নেন। ওভারটোন এখানে গলার স্বাভাবিক স্কেল থেকে একদম খাদে অথবা নিচে নামতে পারে, আবার ওপরে চড়তেও পারে। এমন এক গায়নশৈলী, যেখানে গায়ক একাধিক নোট একস্কেলে অবলীলায় গাওয়ার হ্যাডম দেখাচ্ছেন।

কথাটি শুনে মনে হবে,— এ-আর নতুন কী! শাস্ত্রীয় তথা ধ্রুপদি সংগীতে স্বরসপ্তক নিয়ে খেলা করার ঘটনায় কি ওভারটোনের কমতি ঘটে কোনো? এরকম ধরে নেওয়ার মধ্যে ভুল বোঝার বিপদ রয়েছে। কথা সত্য,—শাস্ত্রীয় সংগীত, বিশেষ করে ভারতবর্ষে গীত রাগ-রাগিণীর রং-রূপ-রস শ্রোতার মনে ভাসিয়ে তুলতে ওস্তাদরা বিচিত্র পন্থায় গলা সাধেন। স্বরসপ্তকের যেসব তরঙ্গলহরি তাতে সৃষ্টি হয়,—এখন এর সঙ্গে থ্রোট সিংগিং ওরফে ওভারটোন সিংগিংয়কে মিলানো দুরস্ত নয়। এটি হলো এমন এক গায়েন-পদ্ধতি, গায়ক যেখানে তার স্বরযন্ত্রের অভ্যন্তর বা মূল অংশে স্থির থেকে গলা খেলিয়ে থাকেন। কাঁচা বাংলায় আমরা একে এভাবেও কল্পনা করতে পারি :

যেমন ধরুন, কেউ আপনার কণ্ঠ বা টুঁটি শক্ত করে দুহাত দিয়ে চেপে ধরেছে। চাপের ঠেলায় হাঁসফাঁস করছেন আপনি। মরিয়া হয়ে নিজেকে ছুটাতে চাইছেন। এরকম অবস্থায় গলা দিয়ে সম্ভাব্য যেসব আওয়াজ বের হতে পারে,—সেগুলো আশা করি সকলে অনুমান করতে পারছি। উদ্ভুট্টি এসব আওয়াজের কোনোটাই আপনার কণ্ঠস্বরের স্বাভাবিক স্কেল নয়। যেমন করে আপনি কথা বলে থাকেন সচরাচর, গানটান জানলে গলার কেরদানি দেখান বেশ, মুড বা সিচুয়েশন বুঝে কণ্ঠস্বরে বিচিত্র ওঠানামার খেলা দেখিয়ে লোকের মারহাবা কুড়ান দিব্যি,—এর কোনোটার সঙ্গে অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতিকে খাপ খাওয়ানো যাবে না। আন্তঃনাদ বা থ্রোট সিংগিং হচ্ছে খাপ খাওয়ানো যায় না এমন কিছু;—গলায় স্বর উৎপাদনের পন্থাকে যেখানে সুকৌশলে বদলে নিচ্ছেন গায়ক। বলাবাহুল্য, এখানে তার সবচেয়ে বড়ো সহায় হচ্ছে মা-প্রকৃতি।

Tuvan Throat Singing – Alash Ensemble; Source – Didge Project YTC

সংগীতের অভিধানে প্রচলিত একটি কথা চালু আছে,—সংগীত হচ্ছে নকলি বা চোরাইমাল। আমাদের দৈনন্দিন আলাপ থেকে সৃষ্ট ধ্বনিগুচ্ছ, শব্দ, বাক্য তথা উচ্চারণের কিছুই সাংগীতিক আবেদনের তোয়াক্কা করে না। এসব ধ্বনি-শব্দ-বাক্যকে স্বরসপ্তকের খাঁচায় ঢুকিয়ে যদি উচ্চারণ করি, সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র জুড়ে দেই, সেক্ষেত্রে পৃথক ব্যঞ্জনা ও মাধুর্য জন্ম নেয় তাৎক্ষণিক।

এই-যে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হলো, আমরা তখন বলি,—আহা! কী চমৎকার গাইছে দেখো লোকটা! মানে দাঁড়াল,—কণ্ঠ দিয়ে যেসব আওয়াজ গায়ক বের করছে, সেগুলো আর নিছক উচ্চারণরীতিতে আটকে নেই। সুরেলা ধ্বনিমাধুর্য তৈরি হওয়ার প্রভাবে সাধারণ আওয়াজে নিহিত আবেদন থেকে আমরা তাকে পৃথক করছি। সংগীতকলার এটি হচ্ছে ভিত্তি বা শিকড়।

এখন এই ধ্বনিমাধুর্য কিংবা সুরেলা আবেশের জড় প্রকৃতিবক্ষে ছড়ানো অজস্র উৎস থেকে মানুষ রপ্ত করেছিল একসময়। রপ্ত করার প্রক্রিয়া আজো বহমান। প্রকৃতিবক্ষে কত প্রকার শব্দ বা আওয়াজ রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা হাজির করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। চটজলদি যদি ভাবি, তাহলে একরাশ আওয়াজের খবর একনিঃশ্বাসে যে-কেউ বলে দিতে পারবেন। এই যেমন :

মুষলধারায় পড়তে থাকা বৃষ্টির শব্দ। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে ও পরে দমকা হওয়ার প্রভাবে তৈরি শব্দধ্বনি। মেঘে-মেঘে টক্কর থেকে সৃষ্ট বজ্রধ্বনি রয়েছে সেখানে। টিপটিপ থেকে মুষলধারায় ঝরতে থাকা বারিপাতের সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দগুঞ্জনের বাইরে কতরকমের জলগুঞ্জন আছে জগতে, তার নাাই লেখাজোঁকা!

উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া ঝর্নাজলের শব্দ যেমন কানে তরঙ্গ বহায়। আরো রয়েছে সাগরের উর্মিমালা থেকে সৃষ্ট গর্জন। পাখির কূজন ও কীটপতঙ্গের গুঞ্জন; আর শত হাজার জীবজন্তুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা আওয়াজের হিসাব রাখাটাই বিরাট ঝকমারি! ধীর থেকে দ্রুতলয়ে বইতে থাকা হাওয়ার প্রভাবে গাছের পাতারা যে-আওয়াজ করে, সেখানেও কতই-না রকমারি ঝঙ্কার আমাদের কর্ণকুহরে ঘাই দিয়ে যায় প্রতিদিন!

প্রকৃতিবক্ষে প্রতিনিয়ত জন্ম নিতে থাকা আওয়াজপুঞ্জকে আমরা ধারণ করছি প্রতিনিয়ত। সাহিত্যের একগুচ্ছ শাখা-প্রশাখায় সুপ্রাচীন কাল থেকে একাল অবধি ধরে রাখায় ঘটেনি বিরাম! তারকোভস্কি ও বেলা তার-এর মতো মহান প্রতিভা যেমন চলচ্চিত্রের ফিতায় অবিরাম ধারণ করেছেন প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎসারিত এসব শব্দগুঞ্জন। এবং, অবশ্যই সংগীতশাস্ত্রের প্রতিটি স্তম্ভে আমরা তা ধারণ করে চলেছি অবিরাম!

Mother Earth Sound – Gennady-Tkachenkо Papizh feat. Olox; Source – Gennady Tkachenkо-Papizh YTC

প্রকৃতিবক্ষে উৎপন্ন এসব আওয়াজকে মনুষ্যকণ্ঠে তুলে আনার কসরত থেকে মূলত স্বরসপ্তক ও রাগরাগিণী জন্ম নিতে পেরেছিল। মহাবিশ্ব জুড়ে ছড়ানো অবারিত শব্দ-সাম্রাজ্যকে কণ্ঠে ধারণের বাসনা বা খেয়াল থেকে সংগীতের জন্ম। মানব বিরচিত সভ্যতা আবার প্রাকৃতিক আওয়াজের রাজত্বে অবিরাম যোগ করে চলেছে নতুন শব্দ ও আওয়াজ। অসংখ্য যান্ত্রিক উপকরণ মানুষ এ-পর্যন্ত যুক্ত করেছে সেখানে। তারা আবার নানামাত্রার আওয়াজ তৈরির দায় মিটাচ্ছে। কথার কথা, বনের গভীরে কাঠুরে গাছের গায়ে কোপ বসানোর সময়কালে যে-আওয়াজ পয়দা হতে থাকে, সেটির ধ্বনিগত ব্যঞ্জনা মারাত্মক!

কাঠঠোকরা পাখি তার ধারালো ঠোঁট দিয়ে গাছের গায়ে গর্ত খোঁড়ে। প্রকৃতির এই মহান শিল্পীর ঠোঁট থেকে সৃষ্ট আওয়াজের সঙ্গে তুলনায় যাচ্ছি না, তবে বৃক্ষগাত্রে কুঠারের আঘাত থেকে সৃষ্ট আওয়াজ যথেষ্ট ব্যঞ্জনাঘন। গিন্নি রান্না চড়িয়েছেন চুলায়। তার থেকে রকমারি ধাতব আওয়াজ বেরিয়ে আসছে। ব্যস্ত সড়কে চলতে থাকা গাড়ির সারি পয়দা করে জান্তব গুঞ্জন। ছুটন্ত ট্রেনের ইঞ্জিন আর হুইসেল থেকে বেরিয়ে আসে আজব আওয়াজ! শুধু কী তাই, আমাদের হাসি-কান্না-চিৎকার অথবা ফিসফাস অবিরত জন্ম দিতে থাকে আজব ধ্বনিপুঞ্জ! এগুলোর রয়েছে বিচিত্র অর্থ ও সারার্থ। তালিকা এতটাই বিরাট,—কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে, তবু শেষ না হবে বিবরণ!

মানব-তৎপরতার কারণে সৃষ্ট এসব আওয়াজের সবটাই অবোধ্য ও একঘেয়ে, কিন্তু লয়তান পুরোটাই আমরা পাচ্ছি সেখানে। কণ্ঠে তোলার খেলায় তারা কানে জাগায় বিচিত্র আবেশ। এই আবেশ পরিসংহারে সংগীতে মোড় নেয়।

অনুকরণের এই-যে খেলা, এবং তার থেকে স্বরযন্ত্রের আদিভাগে যেসব ধ্বনিগত ব্যঞ্জনা মানুষ ধরার কসরত করে আসছে যুগের-পর-যুগ,—থ্রোট সিংগিং হচ্ছে এর প্রাথমিক ধাপ বা কাঁচামাল। স্বরযন্ত্রের পরবর্তী ধাপগুলোর মধ্য দিয়ে গমনের সময় যা সুষম আর মসৃণ হয়ে ওঠে। তৈরি হয় সুরেলা আবেশ ও গায়কি ইত্যাদি। সুতরাং একথা বলা যায়,—আন্তঃনাদ হচ্ছে মানবকণ্ঠে গীত সংগীতকলার অকৃত্রিম শিকড়। প্রকৃতিবক্ষ ও মানব-সভ্যতায় বিরচিত আওয়াজকে এর মধ্য দিয়ে কোনোপ্রকার ফিল্টারিং ছাড়া রেজোনেট বা প্রতিধ্বনিত করছে শিল্পী।

Joy Division song Love Will Tear Us Apart – Throat Singing by Albert Kuvezin; Source – neggbird YTC

কণ্ঠস্বর ও বিচিত্র সব বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে মানুষ অতি প্রাচীন কাল থেকে আজোবধি সেগুলো ধারণ করছে। আবার এক আওয়াজের সঙ্গে অন্য আওয়াজ জোড়ার কেরামতি বা ফিউশন থেকেও জন্ম নিচ্ছে নতুন আওয়াজ, নতুন গুঞ্জন, আর নিতনব আবেশ সৃষ্টিতে সক্ষম সুরেলা আবেশ। সংগীত, চলচ্চিত্র কিংবা গেমিংয়ে সাউন্ড ডিজাইনের গুরুত্ব যে-কারণে অশেষ।

তবে স্মরণ রাখা প্রয়োজন,—বিশ্বজুড়ে গানবাজনার বিচিত্র নমুনার মধ্যে আন্তঃনাদ নির্ভর গায়কিতে অটল থাকার নজির সর্বত্র উমদা ও সুলভ নয়। বিশেষ কিছু অঞ্চল বাদ দিলে কণ্ঠস্বরে সুর উৎপাদনের খেলা বা ধ্বনিগত মাধুর্য মোটের ওপর স্বরযন্ত্রের পরবর্তী ধাপ ব্যবহার করে সুষম ও সুরেলা হতে খাটনি দিয়েছে।

চেঙ্গিস খানের দেশ মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়ার তুভা, আর আলাস্কা ও উত্তর আমেরিকার কতিপয় অংশের বাসিন্দারা স্বরযন্ত্র ব্যবহার করে বিশেষ সাংগীতিক ব্যঞ্জনা তৈরির এই আদি ধাপ, অর্থাৎ থ্রোট সিংগিং ওরফে আন্তঃনাদ সংগীতে আজো অটল রয়েছেন। এর ফলে থ্রোট সিংগিংয়ের ধারক-বাহক ও সংরক্ষক রূপে অঞ্চলগুলো লাভ করেছে পৃথক মহিমা। কেবল তাই নয়, আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্ত কোনো মঙ্গোলিয়ান বা তুভানিবাসী গায়ক ও গায়কদল যুগ-উপযোগী গানকে এই আদলে দিব্যি গাইছেন হামেশা। এই যেমন, বৃটিশ পাঙ্ক ব্যান্ড জয় ডিভিশনের Love Will Tear Us Apart-কে এভাবে তুভান আন্তঃনাদ গায়ক দিব্যি গেয়েছেন, যেটি শুনে অবাক যায় মন!

Throat Singing – Wolf Totem by The HU Band, Mongolia; Source – The HU YTC

অন্যদিকে রকগানের বিচিত্র ঘরানার মধ্যে বিশিষ্ট হেভিমেটাল ও ডেথরক-এ থ্রোট সিংগিংকে অন্যতম গায়ন-কৌশল হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা নয় দুর্লভ। মঙ্গোলিয়ার গায়কদল দ্য হো (The Hu) বিরচিত দুটি গান (Wolf Totem ও Yuve Yuve Yu) প্রধানত হেভিমেটালের সঙ্গে থ্রোট সিংগিংয়ের যুগলবন্দি থেকে জন্ম নিয়েছে ও অদ্য দুনিয়া মাতাচ্ছে! Wolf Totem-এর সংগীত আয়োজন এদিক থেকে মারাত্মক। চেঙ্গিস খানের রক্তধারা গানের প্রতি পরতে যেন ছলকে উঠছে সেখানে।

বিখ্যাত অল্টারনেটিভ রক ব্যান্ড টুল-এর ভীষণরকম ভিন্নমাত্রিক ও দার্শনিক ব্যঞ্জনাঘন গানগুলোয় আমরা পাবো থ্রোট সিংগিংয়ের জায়গামাফিক প্রয়োগ ও ব্যবহার। বাংলা গানের ঐশ্বর্যময় ভাণ্ডারে এর প্রভাব ও প্রয়োগ হয়তো নিবিড়ভাবে নিরিখ করলে আবছায়া মিলবে। ভারতীয় প্রাদেশিক ভাষা পরিমণ্ডলে এই গায়ন-কৌশলের ব্যবহার বিষয়ে যদিও কোনো তথ্য আমার জানা নেই। নমুনা থাকলেও থাকতে পারে।

থ্রোট সিংগিং নিয়ে আগ্রহ অবশ্য লেড জেপেলিন পরিবেশিত কাশ্মীর গানটির অপূর্ব সংগীত আয়োজন শ্রবণের সুবাদে মনে প্রথম জেগেছিল। লেড জেপেলিন তাদের গানে কণ্ঠস্বরের স্কেলিং ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে যে-চূড়ান্ত ব্যতিক্রম ও অভিনবত্ব জন্ম দিয়েছিল একসময়, যেখানে প্রগ্রেসিভ ও হার্ড রক-এ দাঁড়িয়ে যেসব কাণ্ড তারা ঘটিয়েছে তখন,—থ্রোট সিংগিংয়ের কলাকৌশল সেখানে না-থাকলেও তাদের গানের নির্দিষ্ট অংশে এর ব্যবহার মনে হয় সম্ভব।

যাইহোক, মঙ্গোলিয়াকে বিশ্বে নতুনভাবে তুলে ধরতে অবদান রেখে চলা বাটজোরিগ ভানচিংয়ে থিতু হওয়া যাক এবার। বিশ্বত্রাস পরাক্রমশারী সম্রাট চেঙ্গিস খানকে নিবেদিত তাঁর একটি গান অন্তর্জালের কল্যাণে দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাটজোরিগ ভানচিংকে অনেকে সেই সুবাদে ভালোই চেনেন। চিংগিস খানি মাগতাল বা চেঙ্গিসের প্রশংসায় ভাস্বর এই গানে পাচ্ছি মঙ্গোলিয়ার ভূপ্রকৃতি থেকে আহরিত ও পরে মানব-কণ্ঠস্বরে জায়গা করে নেওয়া বিশিষ্ট গায়েনশৈলীর অপূর্বতা।

Chinggis khaanii Magtaal – Batzorig Vaanchig; Source – Batzorig Vaanchig YTC

বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পুরতে চেঙ্গিস তার দুর্ষর্ষ বাহিনি-সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছে;—জনপদের-পর-জনপদ লুটিয়ে পড়ছে তার ঘোড়ার ক্ষুরে উড়তে থাকা ধূলির দাপট সইতে না পেরে! আর পাহাড়চূড়ায় বসে তা নিরিখ করতে-করতে মঙ্গোলিয়ার পরাক্রম সমবেতকণ্ঠে গাইছে একদল শিল্পী। গানটি শুনে এরকম একটি কাল্পনিক দৃশ্য মনে ভর করে বেশ।

চেঙ্গিসসহ এর সবটা ইতিহাসের পাতায় কঙ্কাল হলেও গানের রেশ আজো সতেজ। রেশটি অদ্য ভর করেছে বাটজোরিগ ভানচিংয়ের কণ্ঠ ও বীণায়। সভ্যতাগর্বীর চোখে চেঙ্গিস খান যত নির্মম নির্দয় সভত্যা-হন্তারক ডাকু নামে বিদিত হোক-না-কেন, তাকে নিবেদিত গানটি জনবিরল মঙ্গোলিয়ার কোমলে-কঠোরে মেশানো অতিকায় নিসর্গের মতো কানে সুগম্ভীর শোনায়! চেঙ্গিস খানকে নিয়ে বিরচিত ভাসিলি ইয়ানের আখ্যানের চেয়েও সুগম্ভীর এই বিঘোষণ! মনে হচ্ছে, চেঙ্গিস তার দলবল নিয়ে তাঁবুর বাইরে বসে আদি অকৃত্রিম প্রকৃতিক্রোড়ে নিজের পরাক্রম ঘোষণা করছেন।

শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে গীত বানচিংয়ের আরেকখানা গান বড়োই দারুণ লাগে শুনতে। ঘোড়াকে নিয়ে প্রচলিত মঙ্গোলিয়ান ছড়াগান শিশুকন্যাটি গেয়েছে সুন্দর! আর, বাটজোরিগ ভানচিংয়ের আন্তঃনাদ সেখানে যুগিয়েছে ব্যাপক আবেদন। মোক্ষম কথাটি অবশ্য ইউটিউবে রিলিজ গানটির মন্তব্যবিভাগে জনৈক শ্রোতা গুছিয়ে বলে দিয়েছেন। সেটি উদ্ধৃত করে বিদায় নিচ্ছি আপাতত। শ্রোতা সেখানে বলেছেন : এই হলো প্রকৃত সংগীত। আমাদের সকলের ভিতরে এটি বহমান, কারণ আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতির সন্তান।
. . .

Mongolian Throat Singing With My Daughter; Source – Batzorig Vaanchig YTC

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 50

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *