সাম্প্রতিক

চ্যাটজিপিটি মামার ফ্যাসিস্ট বন্দনা

পুবেতে বন্দনা করলাম বাবা শি চিনফিং। 
এক দিকে উদয়রে ভানু চৌদিকে পসর।। 
দক্ষিণে বন্দনা গো করলাম মোদি ভগবান। 
যেখানে বাণিজ্যি করেন কত চান্দ সদাগর।। 
উত্তরে বন্দনা গো করলাম পুতিন মহারাজ। 
যেখানে পড়িয়া গো আছে হীরা জহরত্।। 
পশ্চিমে বন্দনা গো করলাম ট্রাম্প মহাশয়। 
উরদিশে বাড়ায় ছেলাম যত মমিন মুসলমান্।। 
সভা কইরা বইছেন যত সুধীজন। 
সভার চরণে আমি জানাই ছেলাম্।। 
চাইর কুনা পিরথিমি গো বাইন্ধা মন করলাম স্থির। 
ফ্যাসিস্ট গীত সকলেরে শুনাইবাম কিঞ্চিৎ।। 
. . . 
শুরু করিতেছি মহান আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময় ও অত্যন্ত দয়ালু। মৈমনসিংহ গীতিকার মহান পালাকারগণের নিকট ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক রাব্বুল আলামিনের নাম নিয়া ফ্যাসিস্ট বন্দনার পয়লা কিস্তি শুরু করিতেছি। দোষত্রুটি যদি কিছু ঘটে অধমের,- নিজগুণে ক্ষমিবেন, সকলের কাছে মোর এই মিনতি। 
. . . 
Sheikh Hasin: Fascist or Not Facist: An AI Generated Pic.

হাসিনা জামানায় রাইতদিন বঙ্গবন্ধু আর রাজাকার শব্দ দুইখান শ্রবণের ধাক্কায় কালা হইতে বাকি ছিল কেবল। উনারা হইতে বিদায় নেওয়ার পর ফ্যাসিস্ট শব্দের জোয়ানকি দেখতে পাইতেছি। যত্রতত্র, যখন যারে মন চায় পিঠে ফ্যাসিস্ট ছাপ্পা বসানোর জোয়ার আসছে দেশে। কবিবর মাসুদ খানের কবিতাপঙক্তির ন্যায় জীবন-যৌবনের সবটা গলিত মলের মতো বেমালুম ভেসে যাইতেছে! মওকা নাই জিগানোর,- ভাই, ফ্যাসিস্ট কী জিনিস? খায়, নাকি মাথায় দেয়? মলম-টলম নাকি-রে ভাই? দাদ-চুলকানি কি সারবে তাতে? ভায়াগ্রার কামে দিবে ভাই? ব্যবহার করলে কি খাড়াইবে? কিছু তো বুঝি না! বুঝাই কন দেখি,- ফ্যাসিস্ট কী জিনিস?

প্রশ্নগুলা যে তুলব সে-সাহস অধমের নাই। শেখ হাসিনার ব্যাপারে উলটাসিধা জিগাইলে পিঠে ফ্যাসিস্ট ছাপ্পা দিয়া দিতেছে। বামাল গ্রেপ্তারের কথায় আর না যাই আপাতত। গুগল মামাকে অবশ্য জিগান যায়। সেখানেও ঝামেলা। হাজার-বিজার লিংক দাখিল করবে সে। লিংকের কোনটায় গেলে ফ্যাসিস্ট বোঝা যাবে তার নাই ঠিকানা। দুইখান জিনিস জানতে আগ্রহী মন। ফ্যাসিস্ট বলতে কি বুঝাইতেছে তারা? আর, এই-যে মাতৃহীন এতিম আওয়ামী লীগ ও তাদের মাজননী শেখ হাসিনাকে উদান-মাদান ফ্যাসিস্ট বইলা হাঁক পাড়তেছে,- আচ্ছা, শেখের বেটি কি সত্যি ফ্যাসিস্ট?

হঠাৎ মনে হইল চ্যাটজিপিটিকে এই ব্যাপারে জিগান যাইতে পারে। নিরীহ স্বরে তারে জিগাই,- কও তো মামা, ফ্যাসিস্ট বস্তুখানা কী? আর এই-যে সবাই শেখ হাসিনারে ফ্যাসিস্ট বইলা ডাক পাড়ে, উনি কি সত্যি সেরকম কিছু? কয়েক সেকেন্ড পার না-হইতে মামায় উত্তর পেশ করলেন। আমারে দেখি বলতেছে,- নো, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তুমি ফ্যাসিস্ট বলতে পারো না। ফ্যাসিস্টের সংজ্ঞায় উনি পড়তেছে, তথাপি তাঁরে ফ্যাসিস্ট বইলা ডাকা যাবে না।

মর জ্বালা! এইটা আবার কেমন আনসার দিলো মামায়! শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট কিন্তু তারে ফ্যাসিস্ট বইলা ডাকা যাবে না;- মানেটা কী এর? আবার জিগাই,- কিছু তো বুঝলাম না মামা! শেখ হাসিনা যদি ফ্যাসিস্টের সংজ্ঞায় পড়ে তাইলে তাঁরে ফ্যাসিস্ট ডাকতে মানা করতেছেন ক্যান? স্ববিরোধী হয়ে যাইতেছে না ব্যাপারটা? মামায় বিস্তারিত আনসার দিলেন এই দফায়। সারসংক্ষেপ আমি যেভাবে বুঝে নিছি বাকিরা এর সঙ্গে সহমত ও দ্বিমত দুটাই হইতারেন। ফ্যাসিস্ট কী এবং কী-কারণে শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট না তার যুক্তি খাড়া করতে গিয়া মামায় আমারে বোঝায়,- তিনখানা লক্ষণ থাকলে একটা লোককে তুমি ফ্যাসিস্ট বলতে পারো…

Parade and Long March – Nazi Soldiers; Source – Google Image

প্রথম লক্ষণ, তার মধ্যে অতি ডান বা দক্ষিণপন্থায় গমনের ঝোঁক থাকতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ে যে-লোককে তুমি উগ্র ও রক্ষণশীল দেখবে, এখন এই লোকটারে সন্দেহের চোখে নিরিখ করতে থাকো। যেমন ধরো, ধর্ম পালন ও বিশ্বাসের মামলায় অন্য কারো মতামত কানে তুলতে রাজি না টাইপের লোক সচরাচর দক্ষিণপন্থী হয়ে থাকে। অথবা ধরো, একটা লোক জাত নিয়া খুব বড়াই করতেছে। লোকটার আচরণ দৃষ্টিকটু ও অশোভন হওয়ার মানে হইতেছে তার থেকে শত হস্ত দূরে থাকা সমীচীন। জাতিগর্বে অন্ধ হওয়ার কারণে অন্যকে প্রতিপক্ষ ভাবার খাসলত এই লোকের মজ্জাগত। জাতিগর্বে অটল থাকতে প্রতিপক্ষকে খতম করতেও সে পিছপা হবে না। যে-কোনো বিষয়ে অতি-উগ্র, অতি-রক্ষণশীল ও অতি-আক্রমণাত্মক লোকজনের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা মঙ্গল। এসব লোকের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বীজ নিশ্চিতভাবে সক্রিয় বইলা ধরে নিতে পারো।

দ্বিতীয় লক্ষণ, গায়ে পড়ে অন্যের উপ্রে মাতবরি ফলানো লোকজন এককথায় খতরনাক। তাদের ব্যাপারে সাবধান হও। লোকগুলাকে নিজের রাডারে রাখো। ফ্যাসিস্টের অন্যতম লক্ষণ কর্তৃত্ববাদ সেখানে সক্রিয়। এই টাইপের যত লোক ভবে আছে তাদের একটাই মিশন থাকে সেখানে,- অন্যের উপ্রে নিজের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা। পৃথিবীতে বিদ্যমান রাষ্ট্রগুলার সরকারপ্রধান মাত্রই কর্তৃত্বপরায়ণ। জনগণকে দেখভালের কথা তারা বলেন বটে, আখেরে কিন্তু তাদের ওপর কর্তাগিরির স্টিমরোলার চালাইতে থাকে উনারা। শেখ হাসিনার মধ্যে বদ খাসলতটি সক্রিয় ছিল। এই জায়গা হইতে তাঁকে যদি ডিক্টেটর বা স্বৈরাচার ডাকতে চাও,- আমি তোমারে নিষেধ করব না।

তৃতীয় লক্ষণ, কোনো আদমির মধ্যে যদি দেশ, জাতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি হইতে আরম্ভ করে আচার-বিশ্বাস ও অন্যদের সঙ্গে বিনিময়ে বাড়াবাড়ি বাগাড়ম্বর আর উগ্রতা প্রকট হয়, যদি দেখো এসবে ভর দিয়া নিজেকে আলাদা করার তালে আছে সে, এবং সকলকে পরিহাসের মাধ্যমে মনোবল চুরমার করা তার উদ্দেশ্য,- সেক্ষেত্রে খবর আছে! যদি টের পাও এই লোকের ভিত্রে সক্রিয় জাতীয়তাবাদী ইমান-আমল-আখলাক এতটাই উগ্র, ইচ্ছা করলে যে-কারো বারোটা সে বাজাইয়া দিতে পারে, দয়া করে বুইঝা লও,- এই লোক একশোভাগ ফ্যাসিস্ট।

চ্যাটজিপিটি যেভাবে আমায় নসিহত করলেন সেইটা এখন আমলে নিতে গিয়া মনে হইল মামা উইকিপিডিয়া থেকে টুকলি করতেছেন। করতেই পারে। যে-কোনো বিষয়ে মানুষ তারে আজকাল প্রশ্ন করে। মামার কাজ হইতেছে সেকেন্ডের মধ্যে ইন্টারনেট মহাসাগরে উক্ত বিষয়ে যত তথ্য আছে সেগুলা সর্ট করা, যাচাই-বাছাই শেষ হলে প্রশ্নের বাও বুঝে মর্জি মোতাবেক আনসার করে মামায়। কাজেই তার এই টুকলিবাজিতে দোষ ধরার কিছু নাই। আমি বরং কৃতার্থ এজন্য,- অধমের শ্রম ও সময় সেভ করতেছে উনি। যাই হোক ফ্যাসিস্টের লক্ষণ বাতলানোর পর জিপিটি মামা হাসিনায় আসলেন। আমারে বুঝাইলেন, শেখ হাসিনার মধ্যে ফ্যাসিস্টের লক্ষণ খুঁজে পাইলেও কী কারণে তাঁরে এখন ফ্যাসিস্ট বইলা পুকার যাইতে মামায় নাচার বোধ করতেছেন।

. . .

ফ্যাসিস্ট চিনাইতে মামায় আরেকধাপ আগে বাড়ছেন তখন। আমারে বোঝান,- হে নাদান প্রশ্নকর্তা, তুমি এইটা বুইঝা লও,- ফ্যাসিস্টের লক্ষণ আমলে নিলে শেখ হাসিনার স্বভাব-চরিত্রে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় লক্ষণের কিছু-না-কিছু পাওয়া যাবে। তাঁর বিরুদ্ধে বড়ো সমালোচনা হইতেছে,- বিরোধীমত যারা পোষণ করত বা যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল দেশে,- তো এই লোকগুলাকে স্পেস দিতে উনি কৃপণতা করছেন। শেখ হাসিনার সময় অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আগাইতে থাকে। বিশ্ব মানচিত্রে দ্রুতগতিতে অগ্রসর দেশগুলোর তালিকায় ভালো অবস্থান ছিল তার। মোট দেশজ উৎপাদন ট্রিলিয়নে পৌঁছানোর ধাপে পা রাখছিলেন হাসিনা। করোনা অতিমারির সময় মাথাপিছু আয় ভারতকে অতিক্রম করছিল। বিদেশ হইতে আসা বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, যদিও দুর্নীতিকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত রাখা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় নাই। দুর্নীতি আর বাজারে দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হাসিনা সরকারকে আগাগোড়া প্যারায় রাখছিল। ডিফেন্ড করার চেষ্টা করছে, কিন্তু জনগণ ভীষণ বিরক্ত ছিল। বিরোধীরা এই চান্সে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলাকে লুটপাট জায়েজ করার মতলব বইলা পচাইতে বাকি রাখে নাই।

বিশ্বসভায় সম্মানজনক অবস্থান নিতে থাকলেও বিরোধীমত দমন, একতরফা ভোটাভুটি, গুম-খুন ইত্যাদির মাধ্যমে মানবিক অধিকার হরণ, আর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের ইস্যুগুলা হাসিনা সরকারকে বারবার বিপাকে ফেলছে। সরকারের অর্জন যে-কারণে প্রশ্নাতীত হইতে পারে নাই। অন্যের উপ্রে খবরদারি, মাতবরি, জোর করে দাবায়া রাখার খাসলত এভাবে উনার মধ্যে তীব্রতা ধারণ করে। দোষণীয় তাতে সন্দেহ নাই, তবে এর জন্য উনাকে ফ্যাসিস্ট বা ফ্যাসিবাদের রানী বলাটা অতি সরলীকরণ বইলা মানতে হবে।

বাংলাদেশের জটিল রাজনৈতিক পটভূমিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় ফ্যাসিবাদী তিনটা লক্ষণ ঐতিহাসিকভাবে বিদ্যমান। রাজনৈতিক দল, প্রভাবসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, সুবিধালোভী এলিট বাদে আরো যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় সক্রিয়,- তারা কেউ লক্ষণগুলার ছোঁয়াচ হইতে কোনোকালেই মুক্ত ছিল না। ছোঁয়াচগুলা আবার সেই লেভেলে গভীর নয় যে-কারণে তুমি তাদেরকে ফ্যাসিস্ট ডাকতে পারো।

ফ্যাসিজম হইতেছে এমতো গভীরতা যেখানে ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী নিজ ভাবাদর্শ কায়েম করতে আরো গভীরে প্রবেশ যাইতে থাকে। এমন পর্যায়ে উপনীত হয়, যেখানে কেবল সে বা তারা ছাড়া বাকিদের অস্তিত্ব গৌণ ও নিশ্চিহ্ন হইতে থাকে। হাসিনা ওই পর্যায়ে যাওয়ার অবস্থায় কখনো ছিলেন না। ফ্যাসিস্টের সবগুলা লক্ষণ উনার মধ্যে কমবেশি থাকলেও গভীর বিবেচনায় তাঁরে ফ্যাসিস্ট বইলা অভিহিত করা আমার পক্ষে সম্ভব হইতেছে না।

. . .

চ্যাটজিপিটি মামার বয়ান শ্রবণের ধাক্কায় এই বোধ জাগিল চিতে,- ফ্যাসিস্ট লক্ষণ থাকলেই তারে ফ্যাসিস্ট না কহন যায়। নেটলাইনে আরো কিছু খুন্তি নাড়ানাড়ির পর আতকা খেয়াল হইল, কাম সারছে, ইংরেজিতে ফ্যাসিস্ট শব্দখানার পয়লা অক্ষর তো এফ (F) দিয়া শুরু। ইংরেজি ভাষায় খারাপ শব্দ ফাক/ ফাকারও এফ (F) দিয়া শুরুয়াত। তার মানে ফ্যাসিস্ট হইতে গেলে আপনাকে মারাত্মক পর্যায়ের ফাকার হইতে হবে। যে-ভাবাদর্শ বা ইডোলজিকে নিজের জন্য কারেক্ট বইলা বুঝে নিছেন, এখন ওইটা দিয়া মানুষকে সম্মোহিত ও বাকরুদ্ধ করে দিতে হবে। সেইসঙ্গে যারা এর বিরোধিতা করবে, এবং যারা আপনার ভাবাদর্শের শত্রু অথবা উপযোগী নয় বইলা মনে করবেন,- তাদেরকে মারাত্মক লেভেলে দুচনা দেওয়া ছাড়া ফ্যাসিস্টের জরুরি ধাপে আপনি কভু পা দিতে পারবেন না।

March Past of women Fascism in Italy – Mussolini era; Source – Google Image

পর্ন মুভিতে যত আকার-প্রকার দেখায় তার সবটা এস্তেমাল যদি করতে পারেন তাইলে ফ্যাসিজমের পৃথিবীতে আপনাকে পর্নতারকা নি সিন্স লেভেলের আদমি ভাবা যাইতে পারে। জনি সিন্স কিন্তু ভালোমানুষ। নানা গুণে গুণান্বিত। আমি এখানে প্রতীকী অর্থে তাঁর নামখানা ব্যবহার যাইতেছি। আশা করি এর জন্য কেউ মাইন্ড খাবেন না।

যাই হোক, পারফেক্ট ফাকার বিচরাইতে হিটলার আর মুসোলিনির চেহারা আপনা হইতে চোখে ভাসে। এই দুজনার কাছে বাকিরা নস্যি। যদিও রাশিয়ায় স্টালিন ভালো ফাকার ছিল। আম্রিকার সাজানো কালার রেভিনিউশনের ছকে সুকর্ণকে গদি হইতে বিড়াতিত করা সুহার্তোকে মারাত্মক লেভেলের ফ্যাসিস্ট গণ্য করা যাইতে পারে। ইন্দোনেশিয়ায় তখন কেবল রেজিম চেঞ্জ ঘটে নাই। পুরাটা ছিল নিখুঁত ছকে সাজানো ষড়যন্ত্র। বহুবর্ণিল জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ ইন্দোনেশিয়ায় সামাজিক ও অথনৈতিক সংহতি সুরক্ষিত করতে সুকর্ণ স্বয়ং প্যানকাসিলা ভাবাদর্শের আলোয় দেশকে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিছিলেন।

নানাবিধ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে বৈদেশিক ষড়যন্ত্রে জেরবার স্বাধীনতার স্থপতিকে গদিচ্যুত করার পরিবেশ উর্বর হইতে থাকে। সুহার্তো এই সুবাদে প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। প্যানকাসিলা নামক প্যরামিলিশিয়া বাহিনিকে সুকর্ণ রেজিমের বিরুদ্ধে সংহত করতে কামিয়াব হয় উনি। যারা পরে সুকর্ণপন্থী ও সংখ্যালঘু চীনা জনগোষ্ঠীকে ইসলাম ও দেশের অখণ্ডতার জন্য হুমকি বইলা চিহ্নিত করে কিলিং মিশন চালায়। পাঁচ লক্ষের উপ্রে মানুষকে তারা তখন কচুকাটা করছিল। এই গণহত্যার কোনো বিচার আজোবধি হয় নাই। উলটা কিলিংমিশনে নিয়োজিতরা বীর হিসেবে সেই দেশে আদৃত হইতেছেন। আরাম-আয়েশের কোনো কমতি নাই জীবনে।

বদরুদ্দীন উমর হাজার যুক্তি দিয়া বুঝাইলেও বিশ্ব জানে স্টালিন উনার নিজে মাপে বানানো কমিউনিজম নিশ্চিত করতে কত লোক অকাতরে কচুকাটা করছিলেন। দুনিয়া কাঁপানো নৈরাজ্যের মহান প্রণেতা মাও-সে-তুং কম যান নাই। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে চীনাগো উনি ভালো ফাক করছিল তখন। এর লাভের দিক হইতেছে তারপর থেকে চীনারা বেলাইনে হাঁটার সাহস ভুলেও করে না। তিয়ানানমেন স্কয়ারে একবার আম্রিকার মন্ত্রণায় চীনা তরুণরা জড়ো হইছিল। শেষপর্যন্ত টিকতে পারে নাই। তারা বুদ্ধিমান জাতি। শি চিনফিং সব বুঝেশুনে কর্তৃত্ববাদের এমন একখান সিস্টেম সেখানে চালু করছেন, আপাতদৃষ্টে যা চীনকে সুরক্ষিত রাখতেছে, এবং অন্যদিকে চীনাদের ভোগবাসনা পূরণে খামতি রাখে নাই। চীনা সিস্টেমকে আপাতত পারফেক্ট জনি সিন্স লেভেলের তারকা ভাবা যাইতেও পারে।

. . .

চ্যাটজিপিটি মামার সঙ্গে ফ্যাসিজম নিয়া আলাপের সুবাদে বুঝতে পারলাম,- ফ্যাসিজমের পৃথিবীতে সবটাই পরিকল্পিতভাবে সাজানো থাকে। সবটাই সেখানে নিয়ন্ত্রিত ও নির্ধারিত। সূক্ষ্মতার সহিত ফ্যাসিজমের ধারক-বাহকরা আমাদের মতো বলদা যারা আছি তাদেরকে দোচা দিতে থাকেন। চীনা জাতি যেমন সুন্দর-সান্দর উপায়ে নিজেরে ফাকড হইতে দিতেছেন প্রতিদিন।

মোদ্দা কথা, ফ্যাসিস্ট হইতেছেন এমন একখানা অনুপম চরিত্র যার সবটাই অতিমানবীয়। তার গুণ অতিমানবীয়, দোষগুলাও অতিমানবীয়। এমন একজন ফাকার, যে নিজ-ভাবাদর্শের আদলে একটা সিস্টেম জন্ম দিতে থাকে, এবং একসময় সিস্টেমটা তার হয়ে একটা জাতি, এমনকি বিশ্বজাতিকে ফাক করার শক্তি অর্জন করে বসে। বাপরে! ভাবতেই মাথা ঘোরায়!

উক্ত বিচারে যে-ফ্যাসিস্ট সে নিজে একসময় ওই সিস্টেমের জিম্মায় ফ্যাসিস্ট কাজ-কারবার চালাইতে থাকে। ইহুদি নিধনের মাস্টারমাইন্ড জল্লাদ আইখম্যানকে কাঠগড়ায় তোলার পর ইহুদিরা হাইডেগারসখি বিখ্যাত ভাবুক হান্না আরেন্টের দ্বারস্থ হইছিল। তাদের মনে এই আশা ছিল,- হান্না যদি ট্রায়ালে থাকেন এবং এসব নিয়া লেখেন দুকলম, আইখম্যানকে বাঁচানোর কোনো বান্দা ভবে থাকবে না। হান্না স্বয়ং জাতভাইদের সহযোগিতা করতে সম্মত ছিলেন। ওই নিয়তে কাজও শুরু করে উনি। কিন্তু ক্রমশ তাঁর মনে অন্য ভাবনা পয়দা হইতে থাকে। আইখম্যান কেস ডিল করতে গিয়া হান্না ব্যানালিটি অব ইভিল তত্ত্বে উপনীত হইলেন। ইহুদিরা তাতে প্রচণ্ড নিরাশ হয় এবং তাঁকে গাদ্দার বইলা অভিহিত করে। হান্নার বিরুদ্ধে ধিক্কার ওঠে সবখানে। ক্যাম্পাসে ক্লাস নিতেও সমস্যায় পড়ছিলেন তখন। মানসিক দুরবস্থায় আর না যাই।

The Banality of Evil: How Ordinary People Do Terrible Things? Source – Philosopheasy YTC

বিদূষী হান্না আরান্ট পরে ভার্সিটিতে এক লেকচারের আয়োজন করেন। এইটা বুঝাইতে,- ফ্যাসিজম এমন এক সারবস্তু, যার হাতে এর পয়দায়েশ ঘটুক, যখন একটা সিস্টেম সে তৈয়ার করে বসে তখন শত-শত আইখম্যান সেইটা এক্সিকিউট করতে বাধ্য হয়। সে হয়তো শয়তান, কিন্তু তুচ্ছ শয়তান। তারে শূলে চড়াইলে যা, না চড়াইলেও কথা সমান। শূলে চড়ানো দরকার ওই সিস্টেমকে যেইটা এখন ফ্যাসিজম হয়ে বিরাজ করতেছে।

ইতালিতে যেমন মুসোলিনির ফ্যাসিজম বুঝাইতে গিয়া পিয়ের পাওলো পাসোলিনি সালো অথবা একশো কুড়ি দিনের পায়ুসঙ্গম ছবিখানা বানাইছিলেন। স্নায়ু সুস্থির রেখে যদি পাসোলিনির ছবিখানা আপনি উপভোগ করতে পারেন তাইলে মানতে হবে,- আপনারে দিয়া হবে। আপনি ইচ্ছা করলে ফ্যাসিস্ট হইতে পারবেন।

আপাতত এটুকু; তবে পরিশেষ টানার আগে বইলা রাখতে চাই,- হাসিনা ম্যামকে মশকরার ছলে ফাশিস্ত ডাকা যাইতে পারে, যদিও লক্ষণ দেখে মনে হইতেছে বর্তমানে যারা দেশের মসনদে আছেন, উনারা অলরেডি ফ্যাসিজমের পথে আছেন। ইন্দোনেশিয়ার স্টাইলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট অভিযোগে দেশে যারা স্বাধীনতাকে জান বইলা মানেন, তাদেরকে একে-একে নিধন ও নিষ্ক্রিয় করাটাই উনাদের মিশন। এবং এখানে এর পুরোটাই গভীর ইডোলজির ভিতর দিয়া সক্রিয়। সেই ইডোলজিতে ইসলামি খেলাফত আছে, ভারত রাষ্ট্র ভেঙে বাংলাস্তান তৈরির ভাবনা আছে, আরো আছে সংখ্যালঘুকে দেশছাড়া করার মধ্য দিয়া কেবল মুসলমানশাসিত ভূখণ্ডের জন্মদান ইত্যাদি।

হাসিনাপার্টি একাত্তর নিয়া তুলকালাম করলেও মুজিববাদকে টেনেটুনে স্বৈরাচারী প্রবণতার অধিক কখনো নিয়া যাইতে পারে নাই। সেই মতলবও ছিল না। বর্তমানে যারা সরকার, তাদের পরিষ্কার একখান ভাবাদর্শ কলবে নিয়া সবটা ডিফাইন করতেছেন, এবং সেই অনুপাতে কিলিংমিশনে নামার মহড়াও চলতেছে জবর। আমরা গাছবলদারা বুঝে এবং না-বুঝে এই নব্যফ্যাসিস্টের হাতে বিচিত্র সেক্স পজিশনে ফাকড হইতেছি প্রতিদিন।
. . .

SALÒ, or the 120 Days of Sodom by Pier Paolo Pasolini Movie Clip; Source – Trailers Through Time YTC

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *