সাম্প্রতিক

ভারত-মার্কিন বোঝাপড়ায় বাংলাদেশ

Reading time 10 minute
5
(6)

ভারতীয় সংস্কৃতিতে নিবিড় লোকজনের ট্রাম্প প্রশাসনে প্রাধান্য বিস্তারের ঘটনাটি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেকশন জিতে মসনদে বসার আগে থেকে অনুমেয় ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা সামলানোর দায়িত্ব তুলসী গ্যাবার্ডকে দিয়ে রেখেছিলেন ট্রাম্প। আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল কেবল। সম্প্রতি সেই পালা চুকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আটারোটি নিরাপত্তা সংস্থার তদারকি ও সমন্বয় তুলসী বুঝে নিয়েছেন। এর পাশাপাশি এফবিআই পরিচালক হিসেবে ক্যাশ প্যাটেলও শপথ নিলেন। মার্কিন বিদেশনীতিকে ঢেলে সাজানোর ছকে আরো একজন ভারতীয় এস পল কাপুরকে চয়েজ লিস্টে রেখেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার ভূরাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

বাপ-বেটা জর্জ ও অ্যালেক্স সোরস প্রভাবিত ডেমোক্র্যাট শিবির ক্ষমতায় থাকাকালীন ডোনাল্ড লুকে দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বভার অর্পণ করে। মনপসন্দ পুতুল সরকার বসানোর কাজ এগিয়ে নিতে লু কিছু করতে বাকি রাখেননি। শেখ হাসিনার ষোল বছর মেয়াদী শাসনের শেষভাগে পরপর দুবার বাংলাদেশ সফর করেন এই ব্যক্তি, আর তাতেই বিদায়ঘণ্টা বাজে হাসিনার! সরকার ফেলে দিতে পটু ডোনাল্ড লুকে ইতোমধ্যে গুডবাই করে দিয়েছেন ট্রাম্প। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থ রক্ষা ও কৌশল বাস্তবায়নের কাজটি এইবেলা এস পল কাপুরকে দিয়ে করানো হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেভি ভান্সের স্ত্রী ঊষা ভান্স ওদিকে দ্য সেকেন্ড লেডি হিসেবে নানান ইস্যুতে নিশ্চয় ভূমিকা রাখতে ত্রুটি করবেন না। জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিবেদিত প্রতিষ্ঠান NIH-এর প্রধান হিসেবে আবার কলকাতার বাঙালি ডা. জয় ভট্টাচার্যকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক মিত্র, অংশীদার ও পরামর্শক বিবেক রামাস্বামীকে যেমন হোয়াইট হাউজে বসার আগেই সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কী হবে সেটি ঠিক করার ভার শ্রীরাম কৃষ্ণের ওপর চাপিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি।

Tulsi Gabbard made an immediate speech about minority atrocities that happened after Hasina’s outcast; Source – Jago Hindu YTC

সবমিলিয়ে পাঁচজনকে এ-পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এস পল কাপুর ছাড়াও নতুন মুখ সেখানে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। নিয়োগপ্রাপ্তরা আপাদশির মার্কিন নাগরিক হলেও জন্মসূত্রে ভারতীয় রক্ত ও ঐতিহ্য দেহে বহন করছেন। তুলসী গ্যাবার্ড কেবল একমাত্র ব্যতিক্রম সেখানে। তাঁর মা গীতার মর্মবাণীতে মুগ্ধ হয়ে খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে হিন্দু ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। বৈদিক ঐতিহ্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সেই সুবাদে তাঁর ঘনিষ্টতা তৈরি হয়। সন্তানদের সেভাবে বড়ো করেছেন এই মার্কিন রমণী। তুলসীও কাজেই ভারতীয় সংস্কৃতিকে নিজের মধ্যে ধারণ করেন। গীতাভক্ত টাফ লেডি বৈদিক দর্শন ও জীবনাচারকে প্রেরণা বলে মানেন। মার্কিন সরকারের হয়ে ইরাক-সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে টানা দশ বছর কাজ করেছেন তিনি। তাঁর ভিতরে গীতার মর্মবীজ নাকি ওইসময় তীব্র হয়। গীতা বেশ নিয়মিত পাঠ করেন তুলসী। মরমে সাম্প্রদায়িক না হলেও ভারতীয় বৈদিক দর্শনে তাঁর মুগ্ধতা ও পক্ষপাত বেশ গভীর।

নিরামিষে অভ্যস্ত তুলসী গ্যাবার্ড মূলত ডেমোক্র্যাট শিবিরের লোক ছিলেন। মার্কিন নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের বাজির ঘোড়া হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হচ্ছিল। তুলসীর ভাষ্য মোতাবেক, ডেমোক্র্যাটদের Ultra Secular মনোভাব আর খ্রিস্টান ইভাঞ্জেলিক বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাঁর একদম বনিবনা হচ্ছিল না। খাপ খাওয়াতে না পেরে কমলা হ্যারিসের আঁচল থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। স্মরণ রাখা আবশ্যক, ইসকনের সঙ্গে তুলসীর সম্পর্ক মধুর। কমলা সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু ভোট টানতে তাঁকে ব্যবহার করবেন ভাবছিলেন। বাজির ঘোড়া এখন রিপাবলিকে আসতে আগ্রহী দেখে ট্রাম্প বুঝে গেলেন তাঁকে কী করতে হবে। দক্ষিণপন্থী মোদীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বরাবর ভালো। সেখানে তুলসীকে পাওয়ায় হিন্দু ভোট একলা টানতে আর কোনো বাধা থাকেনি। তুলসীকে এই-যে এতোবড়ো দায়িত্ব ট্রাম্প অর্পণ করলেন তার পেছনে ইলেকশন জিতে আসার নানান মারপ্যাঁচ ছাড়াও যোগ্যতা ফ্যাক্টর হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ও দার্শনিক জর্ডান পিটারসেন তুলসীর মধ্যে বিরাট সম্ভাবনার বীজ দেখতে পাচ্ছেন। প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে পারেন এই নারী;—অভিমতটি কেবল পিটারসন রাখছেন এমন নয়, আরো অনেককে তা বলতে শোনা গেছে।

যাইহোক, দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভারতবর্ষকে দেহ এবং মননে বহন করলেও ঘটনা এরকম মোটেও নয় যে সমস্ত কিছু ফেলে তাঁরা কেবল ভারতের হয়ে কাজ করবেন। কারো দয়া বা করুণার পাত্র হিসেবে নয়, নিজ যোগ্যতায় বিশ্বের এক নাম্বার পরাশক্তি বলে বিদিত দেশটির শীর্ষ পদ এঁনারা অলঙ্কৃত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে তাঁরা কাজেই সর্বাগ্রে বিবেচনায় রেখে কাজ করে যাবেন। পাশাপাশি এটিও সত্য,—ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে নিবিড় হওয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক উষ্ণ ও অটুট রাখতে নিজের ভূমিকা নিভাতে পিছপা হবেন না।

Jordan Peterson – My Honest Opinion of Tulsi Gabbard; Source – Liberty Vault YTC

চীন, রাশিয়ার মতো বৃহৎ পরাশক্তি না হলেও বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারতের ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ট্রাম্প প্রশাসন তা আমলে নিতে বাধ্য। ডেমোক্র্যাটদের হয়ে কমলা হ্যারিস যদি ইলেকশনে জয়ী হতেন, ভারতের গুরুত্ব সেখানেও অটুট থাকত। সম্ভাবনা যেটি তীব্র হতো সেখানে সেটি হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মার্কিন অনুকূল সরকার বসানোর ছক সফল করতে নরেন্দ্র মোদীকে গদি থেকে নামানোর নীলনকশাটি ডেমোক্র্যাটরা পুনরায় সক্রিয় করতেন। বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো ছিল প্রাথমিক ধাপ। দ্য নেক্সট হিসেবে নরেন্দ্র মোদী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ছিলেন তালিকায়।

হাসিনাকে গদি থেকে বিতাড়নের মাধ্যমে ভারত ও চীনের ওপর ভূরাজনৈতিক চাপসহ নজরদারি তীব্র করার নকশা হাতে নিয়েছিলেন বাইডেন প্রশাসন। সেন্ট মার্টিন ও মিয়ানমার বরাবর অঞ্চল জুড়ে মার্কিন বায়ুসেনাদের ঘাঁটি আর পূর্ব তিমুরের আদলে খ্রিস্টান কিংডম গড়ে তোলা ছিল আদি লক্ষ্য। মার্কিনিদের এই নীতি নতুন কোনো ঘটনা নয়। সত্তর দশকের গোড়ায় বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবহরের ওপর নজরদারি আর সমুদ্র বাণিজ্যে আধিপত্য লাভের বাসনা পুরা করতে প্রেসিডেন্ট নিক্সন নতুন ফন্দি আঁটেন। তাঁর হয়ে সন্দ্বীপে নৌঘাঁটি স্থাপনের প্রস্তাব জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে তখন উত্থাপন করে মার্কিন প্রশাসন। সবটা গোপন থাকবে এই শর্তে ইয়াহিয়া প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন। শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে বাঁধে বিপত্তি। গোটা পূর্ব বাংলায় একচ্ছত্র হয়ে ওঠা মুজিবের চোখ ফাঁকি দিয়ে নৌঘাঁটি বসানো শক্ত কাজ। তাঁকে রাজি করাতে পাক-মার্কিন দূতিয়ালী চলে কিছুদিন। শেখ মুজিব সোজা নাকচ করেন সে-প্রস্তাব, এবং সেই সুবাদে নিক্সনের স্থায়ী শত্রুতে পরিণত হন তিনি।

Nixon Tapes – Women “tougher than men”; Source – rmm413c YTC

একাত্তরে ইন্দিরা গান্ধীর কূটনৈতিক কুশলতার কাছে নিক্সনকে হার স্বীকার করতে হয়েছিল। বিশ্বের বুকে নতুন একটি দেশ জন্ম নেওয়ার ক্ষণে জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে দূরালাপে প্রিয়দর্শনী ইন্দিরাকে অ্যা টাফ লেডি টু হ্যান্ডেল বলে প্রশংসা করেছিলেন নিক্সন। পঁচাত্তরে এসে তিনি অবশেষে সফল হলেন! মুজিব হত্যার খবরে মার্কিন ওভাল অফিসে খুশির হাওয়া বয়ে গিয়েছিল। যদিও মাত্র কয়েক বছরের মাথায় ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিক্সন খোদ গদি থেকে বিদায় নেন। ইতিহাস মাঝেমধ্যে একই ছকে পুনরাবৃত্তি ঘটায়! সর্বশেষ সাজানো নির্বাচনের প্রাক্কালে হাসিনার কাছে অনুরূপ প্রস্তাব আসে। হাসিনা প্রস্তাবটি নাকচ করেন। তাঁর পতন তাতেই নিশ্চিত হয় তখন।

টানা পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে শেখ হাসিনার জনসমর্থন হ্রাস পেয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। দেশবাসীর বড়ো একটি অংশ, বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজ বুঝে এবং না বুঝে সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ ছিলেন। সংক্ষোভের নেপথ্যে নিরেট সত্য যেমন ছিল, ফোলানো-ফাঁপানো মিথ্যা প্রচারণার ভূমিকাও ছিল বিস্তর। হাসিনা সরকার যার কোনোটাই আমলে নেওয়া বা ডিল করার অবস্থায় ছিল না। আরব বসন্তের মতো আরেকখানা সাজানো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে গণশত্রু প্রতিপন্ন করতে মার্কিন প্রশাসনকে তাই অধিক খাটতে হয়নি। হাসিনা বিরোধী শিবিরকে তারা ব্যবহার করেছে সেখানে। টাকা-পয়সা ঢেলেছে জায়গামতো।

কীভাবে ঢেলেছে তার সবটাই এখন বিশ্ব জানে। USAID-এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে মার্কিন বরাদ্দ ও তার পেছনকার মতলব মাইক বেঞ্জ, ইলন মাস্ক ও পরিশেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজমুখে ফাঁস করেছেন। ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে মার্কিন অনুকূল সরকার নিশ্চিত করতে USAID-এর মাধ্যমে ২৯ মিলিয়ন ডলার কেবল বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছিল বাইডেন প্রশাসন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমি শক্তিশালী ও রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা বৃদ্ধির (SPL) গালভারা বুলির আড়ালে ঢালতে থাকা বিপুল অঙ্কের টাকা কোন মতলবে ব্যয় করা হচ্ছিল তার সবটাই বিগত সাত মাসে ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে উঠছে।

মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের চিন্তাধারা ও মতলব ভিন্ন। সোরস-বাইডেন গং প্রযোজিত ডিপ স্টেট পলিসিতে কাজেই পরিবর্তন আনছেন তিনি। সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজের প্রভাব ও বাণিজ্য আধিপত্য ধরে রাখার পুরোনো কৌশল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দ নয়। তিনি হলেন নিখাদ ব্যবসাদার। বিদেশনীতি সেই ছক ধরে সাজাবেন বোঝা যায়। নির্বাচনে রিপাবলিকানদের একচেটে বিজয় নীতি পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে মনে হচ্ছে। গতবার ট্রাম্পের অনেক সিদ্ধান্ত সিনেট থেকে আদালত… কোথাও-না-কোথাও এসে আটকে গেছে;—সম্ভাবনাটি এবার ক্ষীণ।

নতুন পটভূমিকে সুতরাং আমলে নিয়ে ভারত আগাচ্ছে এখন। প্যারিসে এআই সামিট শেষে নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ সারতে ওয়াশিংটন উড়াল দিয়েছিলেন ওসব মাথায় রেখে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসার আগে তুলসী-মোদী লম্বা সময় বৈঠক সারলেন। গণমাধ্যমে যদিও বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে খবরাখবর অধিক আসেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত তার নিজস্ব আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কীভাবে তুলে ধরেছে বা এখানে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা ও কৌশলের কোনোকিছু আগাম অনুমানের সুযোগ তাই থাকছে না। এমনকি ট্রাম্প-মোদী বৈঠকেও এসব নিয়ে আলোচনার বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনে দুজনেই এড়িয়ে গেছেন।

Donald Trump details how US Funding was distributed worldwide through the Biden Administration as a part of deep state policy. At 40 minutes of the hour-long speech, he talks about 29 million in funding in Bangladesh.; Source – LiveNOW from FOX YTC

ট্রাম্প এই-যে মোদীকে বাংলাদেশ দেখভালের দায়িত্বটি দিয়ে দিলেন, এখন এর তাৎপর্য কী হতে পারে? বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় তার বিদেশনীতি সাজানোর ব্যাপারে ভারতকে মিত্র গণ্য করছে। ভারতের চোখ দিয়ে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে যাচাই করে নিতে চাইছে আপাতত। তার মানে আবার এই নয়,—ভারত যেমন বলবে তারা সেভাবে আগাবে। মোদী সরকারকে মিত্র গণ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র তার নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ছক কষবে সেটি স্বাভাবিক।

এই অঞ্চলে চীন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড়ো মাথাব্যথা। বাণিজ্যিক দিক থেকে যেমন মাথাব্যথা, উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবেও চীনের ওপর সতর্ক নজরদারি তার ক্ষেত্রে জরুরি। ভারতকে সেখানে তারা ব্যবহার করবে মনে হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক ধারায় ট্রাম্প প্রশাসন ছেদ পড়তে দেবে না, এর বিপরীতে ভারতকে দিয়ে পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় নিজের বিদেশনীতির অনেকখানি বাস্তবায়নও তারা করাতে চাইবে। সুতরাং এই জায়গা থেকে মেদি-জয়শঙ্করকে হিসাব-নিকাশ করে আগাতে হচ্ছে। তাঁরা এমন কিছু করবেন বলে মনে হচ্ছে না যা ভারতের স্বার্থকে প্রশ্নবিদ্ধ বা বিপন্ন করতে পারে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক টানাপোড়েনকে হিসাবের বাইরে রাখলে দেখা যাচ্ছে মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান অথবা শ্রীলংকার সঙ্গে ভারতের আচরণে গুণগত পরিবর্তন ঘটছে বেশ দ্রুত। দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দাদাগরি ফলানোর পরিবর্তে স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলাকে আপাত লক্ষ্যবস্তু করেছে মোদী সরকার। আঞ্চলিক সাম্রাজ্যবাদের এটি হয়তো নতুন ছক, তবে আপাতভাবে তা ভারতকে ভালো মাইলেজ দেবে তাতে সন্দেহ না রাখাই সমীচীন। জয়শঙ্কর গত কয়েক বছর ধরে এই লক্ষ্যে তৎপর ছিলেন, যার সুফল ভারত পাচ্ছে ইদানীং। পাকিস্তানের নাকের ডগায় বসে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে বলিষ্ট করেছেন তারা।

পাক-আফগান সম্পর্কে অতীত উষ্ণতা এখন আর নেই। বহু পুরাতন সীমান্ত জটিলতাকে ঘিরে দুই দেশের শত্রুতা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটি তো সত্য, দেশভাগের পর থেকে আফগানিস্তানের আওতাভুক্ত কতিপয় অঞ্চলে পাকিস্তান একপ্রকার গায়ের জোরে আধিপত্য কায়েম করে বসে আছে। স্বাধীন দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ ও দখলদারিত্ব কতটা যৌক্তিক? প্রশ্নটি বরাবর জীবিত ছিল। অতীতে এ-নিয়ে দেনদরবারে গেলেও আফগানরা সুবিধা করতে পারেনি। সময় এখন অতীতে পড়ে নেই। মিলিটারি ও মোল্লার যৌথচাপে বিধ্বস্ত পাকিস্তানের কাছে তালেবানরা এই সুযোগে নিজের হিস্যা দাবি করে বসেছে। আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের কয়েক দফায় সামরিক হামলা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো ভঙ্গুর করতে ভূমিকা রাখছে। এই সুযোগে ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের কুটুম্বিতা নতুন মাত্রায় উপনীত হতে যাচ্ছে। বিষয়টি খেয়াল করা প্রয়োজন।

মধ্যপ্রাচ্যের মতো আফগানিস্তানের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য আর বিনিয়োগ এগিয়ে নিতে মোদী সরকার এখন দারুণ তৎপর। তালেবানভূমিতে ভারত সরকারের বিনিয়োগ গেল কয়েক বছরে চোখে পড়ার মতো ঘটনায় মোড় নিয়েছে। ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে পাকিস্তানকে চাপে রাখার কূটনীতি যেমন সেখানে কাজ করছে, এর পাশাপাশি আফগান ও পাকিদের মধ্যে চলমান বিরোধ থেকে ফায়দা তুলছে ভারত। ইরান ও আফগাস্তিনানের সঙ্গে মোদী সরকারের সম্পর্ক উষ্ণ এবং সমঝোতামূলক। এটি আবার অন্যদিক থেকে মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য অধিপত্য বিস্তারে ভারতকে বোনাস দিচ্ছে অনেকখানি। আফগানিস্তানে অবকাঠামো নির্মাণসহ শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য করিডোর গড়ে তুলতে পাঁচ শতাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভারত। তিন বিলিয়নের কাছাকাছি বিনিয়োগ করে বসে আছে তারা। পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের প্রতি খোদ আফগানদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে যা ভূমিকা রাখছে।

এই ফ্রেমে দুটি দেশকে এই মুহূর্তে আমরা একলা দেখতে পাচ্ছি, আর সেটি হলো পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ভারতের জন্য তারা মাথাব্যথা, এবং তাদের জন্যও ভারত মস্ত পেইন। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ-পাকিস্তান জোট কি ভারতের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতাকে বড়ো হুমকির মুখে ফেলতে সক্ষম? দেশ দুটি কি এরকম শক্তি ধরে এখন? অর্থনৈতিক সক্ষমতা, সামরিক শক্তি, বৈদেশিক কূটনীত ছাড়াও যেসব সূচক একটি দেশের অবস্থানকে বিশ্বে তুলে ধরছে, সেগুলো যদি এক-এক করে হাতে নেওয়া যায়,—বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সেখানে ভারত থেকে যোজন-যোজন পিছিনে ছিল সবসময়। সময়ের সঙ্গে ব্যবধান একটুও কমেনি। এমতাবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যে বিগ ব্রাদার হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে তার ছবি অনেকটাই পরিষ্কার।

সেইসঙ্গে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর দাদাগিরি ফলানোর পরিবর্তে বিনিয়োগ ও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে ভারত সম্প্রতি অধিক প্রাধান্য দিচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়া কী বলছে-না-বলছে তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। যেটি যায় আসে সেটি হলো মোদী প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবকে বুঝে নেওয়া। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কি সেই এলেম রাখে? ভারতের সঙ্গে কূটনীতিতে আমরা কখনো সাবলীল ছিলাম না। শেখ হাসিনার শাসনামলে চীন ও ভারতের সঙ্গে বিদেশনীতি মূলত হাসিনা একা সামলেছেন। জনাব মোমেন বা হাছান মাহমুদকে সেখানে স্রেফ অপদার্থ ও অপেশাদার মনে হতো। বর্তমানে যিনি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তাঁর অবস্থাও অনুরূপ মানতে হচ্ছে।

ভদ্রলোকের দেহের ভাষা দেখলেই বোঝা যায় জয়শঙ্করের মতো ঝানু কূটনীতিকের পকেটে ঠাসা চাণক্যনীতিকে ডিল করা দূরের ব্যাপার,—কূটনীতির প্রাথমিক শর্ত আই কন্ট্যাক্টে গমন করার সাহস বেচারার নেই! স্বাধীনতার এতগুলো বছর পার করেছে বাংলাদেশ, কিন্তু বিদেশনীতি এখনো ভয়াবহ মাত্রায় নাজুক, ব্যক্তিত্বহীন ও পশ্চাদপদ! উগ্রপন্থায় ভর দিয়ে নিজের বৈধতা নিশ্চিত করতে নামা ইউনূস সরকারকে যে-কারণে অবিরত ভারত বিরোধী কার্ড খেলে যেতে হচ্ছে। ভারতের তাতে বড়ো কোনো ক্ষতি হচ্ছে এমন নয়, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে বরং বাংলাদেশ নিজের অবস্থান দ্রুত হারাচ্ছে।

এখান থেকে নিজের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে ইস্যু করে ভারত তার গুঁটি সাজাবে মনে হচ্ছে। দেশ যদি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়, যার সম্ভাবনা রয়েছে, সেক্ষেত্রে জাতিসংঘ ও আমেরিকার মধ্যস্থতায় বাংলাদেশে তারা শান্তিবাহিনি প্রবেশ করাতেও পারে। আওয়ামী লীগকে হয়তো সেখানে ব্যবহার করবে মোদী সরকার। নরেন্দ্র মোদী যদিও প্রেসমিটে বলেছেন,—প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশে তারা শাস্তি, স্থিতি, প্রবৃদ্ধি ও নির্বাচিত সরকারের অধীনে পরিচালিত গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে আগ্রহী। মার্কিনী ভাষায় এখানে কথা বলছেন মোদী। যার লক্ষ্য এটি বোঝানো,—বাংলাদেশে এখন এর কিছু বিরাজ করে না। মোদীর কথাকে পাত্তা না দিয়ে শাহবাজ শরীফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতকে শায়েস্তা করার ভাবনা যদি ইউনূস ভেবে থাকেন, সেটি বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনা রাখে ষোলআনা। বিরাট ভুলের ফাঁদে পড়তে হবে তাঁকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আপতত এমন এক বোঝাপড়ায় উপনীত, বড়ো আকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিবাদ না ঘটলে এই যৌথশক্তির সঙ্গে ইউনূস-শাহবাজ গং কুলিয়ে উঠতে পারবেন না। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ভারত পাবে শতভাগ। চীনও পরিস্থিতি বিবেচনায় রা কাড়বে না। কথাগুলো আরো এ-কারণে বলা, রেজিম চেঞ্জার হিসেবে খ্যাত ডোনাল্ড লুকে বিদায় দিয়ে ট্রাম্প এস পল কাপুরের ঘাড়ে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ইস্যু ডিল করার দায়িত্ব দিতে যাচ্ছেন। রিপাবলিক সিনেটরদের তাঁর ব্যাপারে আস্থা এখনো ইতিবাচক।

S Paul Kapur; Source – nps.edu

কে এই এস পল কাপুর? যথারীতি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্যক্তি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণা আছে তাঁর। দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রনীতি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের নিরিখে রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন পল। যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন বা এখনো পড়ান। পল কাপুরের লেখা দুটি বই Dangerous Deterrent: Nuclear Weapons Proliferation and Conflict in South Asia এবং India, Pakistan, and the Bomb: Debating Nuclear Stability in South Asia মাগনা পাওয়ার উপায় অবশ্য নেই। তবে সুমিত গাঙ্গুলির সঙ্গে মিলে লেখা দ্বিতীয় বইটির ব্যাপারে ভারতীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন পাঠে এই ধারণা করা যায়,—পরমাণু অস্ত্রকে হুমকি হিসেবে প্রদশর্নের যে-রাজনীতি, সেখানে এর দায়ভার তিনি পাকিস্তানের ঘাড়ে অধিক চাপিয়েছেন। নেট ঘেঁটে অবশেষে উক্ত বইয়ের একটি পরিচ্ছেদ পাওয়া গেল। Ten Years of Instability in a Nuclear South Asia নামক অধ্যায়ে পল বলতে চাইছেন…

পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেনি, উলটো বছরের-পর-বছর ধরে অস্থিতিশীলতা ও টেনশন জিইয়ে রাখছে। ভারতের তুলনায় পাকিস্তান একে নিয়ে অধিক মাত্রায় রাজনীতি করে এসেছে সবসময়। কাশ্মীরকে সামনে এনে পাকিস্তান এটি দেখানোয় তৎপর ছিল,—আঞ্চলিক সুরক্ষায় পারমাণবিক অস্ত্র হচ্ছে তাদের জন্য ঢালস্বরপ। অন্যথায় ভারতকে চাপে রাখা সম্ভব নয়। পাকিস্তানের এই ন্যারেটিভ খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নানানসময় প্রভাবিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি ভারতবিরোধী অবস্থানে নিজেকে নানানময় সক্রিয় রাখতে বাধ্য হয়েছে। একে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান কারগিল সমস্যাকে তীব্র করে। পরিণামে দুটি দেশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বলাবাহুল্য, ভারতের সঙ্গে মোট তিন দফা লড়াইয়ে নামলেও পাকিস্তান সুবিধে করতে পারেনি। তিনবারই মাথা নিচু করে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতকে আগ্রাসী রাষ্ট্রের ভূমিকায় দেখানোর পাকিস্তানী কৌশল ভারতকে বরং তার আঞ্চলিক নিরাপত্তার ব্যাপারে অধিক রক্ষণশীল করে তুলছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ক্ষেত্রবিশেষ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারত তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক বিনিয়োগ বজায় রেখেছে সবসময়। পল কাপুরের মতে এটি এমন এক সমস্যা যার কিনারা সহসা হওয়ার নয়। তিনি লিখছেন :

কাশ্মীর শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত জনৈক জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কূটনীতিক মনে করেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতখানি বদলেছে তার আন্দাজ পাওয়া কঠিন।’... ‘কাশ্মীরকে মাথায় নিলে এ-সংক্রান্ত প্রমাণ এখনো মিশ্র প্রকৃতির মনে হবে। সীমান্ত পেরিয়ে (জঙ্গি) অনুপ্রবেশের প্রতিবেদনগুলো আশাব্যঞ্জক নয়।’ এদিকে, জঙ্গিরা তাদের ভৌগোলিক লক্ষ্য পরিবর্তন করেছে, ‘পাকিস্তানি সংস্থাগুলোর মদদে তারা এখন বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। এর অর্থ হলো, কৌশলে পরিবর্তন আসলেও মনোভাব একই রয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাজ চেঙ্গাপ্পা বলেন, ‘আমরা এখন আর তাৎক্ষণিক যুদ্ধের পরিস্থিতিতে নেই, তবে অবস্থা এখনো গুরুতর।’ [দ্রষ্টব্য : Ten Years of Instability in a Nuclear South Asia] 
Regime Meltdown – New Powers and the Arms Control Failure – S. Paul Kapur; Source – Observer Research Foundation

পল কাপুরের কথার সঙ্গে গেল সাত মাসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাখামাখি এবং সেই সুবাদে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন ও চাপ বোধ করার মিল পাচ্ছি আমরা। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ভারতের জন্য এমন এক সমস্যা, যাকে সে না পারছে গিলে ফেলতে, না সম্ভব তাকে উগড়ে দেওয়া। দেশটিকে সেটল করা স্বয়ং ভারতের জন্য বড়ো মাথাব্যথা। এর কারণ যতটা না বাংলাদেশ, তার অধিক ভারতকে অস্থিতিশীল করতে যুদ্ধবাজ পাকিস্তানের কৌশলে পরিবর্তন। জঙ্গি অনুপ্রবেশের রুট হিসেবে বাংলাদেশকে তারা ব্যবহার করছে। খালেদা থেকে হাসিনা দফায়-দফায় কাজটি তারা করেছে, যদিও মাত্রায় কমবেশি ঘটেছে তখন। গত সাত মাসে প্রবণতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এস পল কাপুর যেহেতু এসব নিয়ে কাজ করেছেন, তুলসী-কাপুর ও মোদী-জয়শঙ্কর-দোভাল মিলে বাংলাদেশ টেরিটোরি জুড়ে জঙ্গিদের অনুপ্রেবশ ও ইসলামি উগ্রপন্থা নির্মূলে কী কৌশল নেওয়া যায়, সেটি মনে হচ্ছে প্রধান হবে সামনে।

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। কী ভেবে জেনারেল ওয়াকার সবাইকে সাবধান হতে বললেন সেটি মনে হচ্ছে হানিমুনে থাকা বিপ্লবী ও রাজনৈতিক দলগুলোর আমলে নেওয়া উচিত, অন্যথায় কপালে খারাবির সম্ভাবনা ঠেকানো যাবে না।
. . .

Army Chief Speech; Source – ATN Bangla News

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 6

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *