ভেবে দেখলে, মানুষ বয়ানবন্দি প্রাণী। সে স্বয়ং অথবা তার হয়ে অন্যরা বয়ান তৈরি করে, এর ওপর ভিত্তি করে ঠিক-বেঠিকের মীমাংসায় পৌঁছায়। মানুষ যে-কারণে ঈশ্বরতুল্য নয়। আবার ঈগল অথবা শূকরও নয়। সে হচ্ছে এমন জীব, ধরায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে সকলের ওপর তাকে নির্ভর করতে হয়, কিন্তু তার ওপর কেউ নির্ভর করে না।
-
-
ওরিয়ানা ফাল্লাচির কাছে মুজিবকে মনে হইছিল ফ্যাসিস্ট। হওয়া স্বাভাবিক। উনার মানসগঠন ও সাক্ষাৎকার নেওয়ার ধরন কদাপি বিতর্কমুক্ত ছিল না। মুজিবের ব্যাপারে উনি যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তখন, যাদের সঙ্গে উনার সংযোগ ও আলাপ, এবং উনার উগ্র নারীবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিষয়ে বদ্ধমূল ধারণা... এসব বিবেচনায় নিলে মুজিব সম্পর্কে উনার পর্যবেক্ষণ তীক্ষ্ম হলেও এর কতটা সত্য আর কতটা সেকালের ক্লিবেইট এইটা নিয়া সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাইতেছে। মুজিব ক্যান উনার সামনে আমিই বাংলাদেশ বইলা জাঁক করছিলেন সেইটা ফাল্লাচির বোঝার কথা নয়।
-
মানুষের চেয়ে ভয়ংকর প্রাণী পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। নিজেকে মারতে গিয়ে অন্যকে অবলীলায় সাবাড় করে। এখন এই জায়গা থেকে যদি একাত্তরকে বিচার করি তাহলে এর ভয়াবহতা আমরা বুঝতে পারব। প্রথম কথা, সাত কোটি মানুষ টানা নয় মাস অনিশ্চিত আতংকে রাতদিন পার করেছেন। আকাশ থেকে যুদ্ধবিমান বোমা ফেলছে, মাটিতে দফায়-দফায় বন্দুকবাজি চলছে, প্রাণভয়ে লুকাতে গিয়ে অনেকে মারা পড়েছে তাৎক্ষণিক। নির্যাতন কক্ষে বন্দি করে মেরেছে শত-শত। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রেল-সেতু-সড়কের কিছু অক্ষত থাকেনি। সোজা কথায় সার্বক্ষণিক যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে প্রাণের মূল্য থাকে না। প্রাণ তখন স্রেফ গাণিতিক সংখ্যায় পরিণত হয়।
-
আমরাও জানতে পারতাম না সে-কাাহিনি, যদি না ততদিনে বিবাহিত ও দাম্পত্য জীবনে পুরোদস্তুর সুখী অমৃতা দেশভাগের টানে ভারত আসতে বাধ্য না হইতেন। তিনি ভারতে আসলেন। নাম কামাইলেন। বায়োগ্রাফির আদলে নিজের ইতিকথা লিখলেন। সাহির লুধিয়ানভি সেখানে স্বাভাবিক জায়গা জুড়ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি অমৃতার কাছে অন্য অর্থ বহন করত। সাহির যখন অমৃতার ঘরে বসে সিগ্রেট টানতেন, আচমকা বিদায় নিতেন,- অমৃতার মনে হইত রেশটা রয়ে গেছে। সাহির আছেন। ঘর জুড়ে বিরাজ করতেছে তাঁর সুগন্ধ।
-
সিরাজুল আলম খানদের মতো শত হাজার যুবা তখন ফিকশন থেকে রিয়েলিটিতে আছাড় খেয়ে পড়ছিলেন। গন্তব্যহীন অনিশ্চয়তা ছিল নতুন বাস্তবতা। খান আতা সেখান থেকে তাদেরকে ফিরতে বলছিলেন। উনার এই আহবানকে আমরা নিতে পারিনি। তার বদলে ট্যাগিং দিচ্ছি উনাকে...! খান আতা রাজাকার! রাজাকার যদি হয়েও থাকেন তাঁর প্রশ্নটি তো ভ্যালিড ছিল। আমরা সেটি শুনতে ইচ্ছুক নই বা ছিলাম না কখনো। শালপ্রাংশু মুজিব স্বয়ং অনেককিছু কানে তোলার অবস্থায় ছিলেন না। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তো প্রশ্নই উঠছে না। বিগত তেপ্পান্ন বছরে রিয়েলিটির মধ্যে নতুন রিয়েলিটি এভাবে জন্ম নিয়েছে।