সংগীতের সেই পুরোনো সমালোচনা, যেখানে আবেগ প্রকাশে দেহের ব্যবহারকে কটাক্ষ করা হয়, একে সমর্থন দিতে হ্যান্সলিক ও গার্নি এই মতবাদ নিয়ে আসলেন,- সংগীতে দৈহিক আবেগের ব্যবহার তার মান ক্ষুণ্ন করে। এক্ষেত্রে তাঁদের দুজনের ওপর কান্টের প্রভাব লক্ষণীয়। কান্টের মতে সংগীতের দৈহিক প্রকাশ একধরনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যেটি সংগীতের শুদ্ধ ও সর্বজনীন আবেদনের পরিপন্থী। ... জনপ্রিয় সংগীত প্রধানত দৈহিক, অনিয়ন্ত্রিত আবেগের প্রকাশ,- তাদের জন্য হ্যান্সলিক ও গার্নির মতবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, ক্লাসিক্যাল বা শাস্ত্রীয় সংগীতের বিমূর্ত কাঠামোকে উপলব্ধি করতে প্রয়োজন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। দেহ কেবল সুর শুনে, কিন্তু জ্ঞান সুরে নিমগ্ন হয়।
-
-
সমষ্টি এবং স্বত্ববিহীন রচনাপ্রক্রিয়াই কেবল মহাভারতের মতো আকরগ্রন্থ প্রসবের শক্তি রাখে। আমরা যে-যুগ বাস করি সেখানে এটা কোনোভাবে সম্ভব নয়। এমনকি অনেকজন মিলেও যদি এরকম কিছু লিখতে নামেন, দশকের-পর-দশ ধরে লেখনক্রিয়া জারি থাকে, একটা প্রসঙ্গের লেজ ধরে শত প্রসঙ্গ যুক্তও হয়, তথাপি মহাভারত সম্ভব নয়। যে-কালপর্বকে ধারণ করতে এই মহাগ্রন্থ বিরচিত, এবং সেখানে যেসব উপাদান সক্রিয়, তার মধ্যে ছিল মহাকাব্যিক ধ্রুপদি বিস্তারের সূত্র। অদ্য এর কমতি পড়ায় ওয়ার এন্ড পিস পর্যায়ের কিছু সৃষ্টি হইতে পারে, রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড, ওডিসি অথবা আরব্য রজনীর মতো সাহিত্য নাহি সম্ভব।
-
স্পাই থ্রিলার মাসুদ রানার ইন্ট্রোটা অদ্ভুত! এরকম একখান ইন্ট্রো দিয়ে স্পাই থ্রিলার শুরুর ভাবনা কাজী আনোয়ার হোসেনের মাথায় কীভাবে এসেছিল জানি না। সিরিজের প্রথম বই ধ্বংস পাহাড় বাজারে ছাড়ার সময় এই-যে ইন্ট্রো তিনি জুড়ে দিলেন,- রোমাঞ্চ ঘরানার সাহিত্যে ঘটনাটি ব্যতিক্রম। প্রশ্ন হলো, মাসুদ রানা সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে গুরুতর সব মিশন কাঁধে ঘুরে বেড়ানো রানার পরিচয় তুলে ধরতে এরকম কটি ইন্ট্রো কেন জুড়ে দিচ্ছেন তিনি কেনই-বা প্রায় সাড়ে চারশো বইয়ে ইন্ট্রোটা অবিকল রেখে দিলেন পরে?
-
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে কর্মসংস্থানে বৈষম্য দেখা দেবে;- ইউভাল নোয়া হারারি অনেকদিন ধরে কথাটি বলে আসছেন। যেসব রাষ্ট্র সচেতন হবে না, বিকল্প কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে গড়িমসি করবে,- তাদের জন্য জুতার বাড়ি অপেক্ষা করছে। অ্যাভাটাারের সাহায্যে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠের কাজ অনেকে সারছেন এখন। অচিরে অডিও-ভিডিও পডকাস্ট থেকে আরম্ভ করে পর্ন সাইটে বায়বীয় যৌনমিলনের সবটা তাকে দিয়ে সারতে দেখব আমরা। কোডিং মুছে দিলে যার কোনো অস্তিত্ব নাই, এরকম বায়বীয় একটি বস্তু আমাদের মনোজগতে সত্তা হিসেবে ধীরে-ধীরে গুরুত্ব পেতে থাকবে। হারারি হয়তো এসব ভেবেটেবে ডিজিটাল এজ-এ অজৈবসত্তার বিপ্লব নিয়ে অনেক বছর ধরে বলে আসছেন।
-
মনে করি ভুল হচ্ছে; আসলে যা হচ্ছে তা আমার কর্ম ছিল, যে-ব্যবহার আমার সাথে হচ্ছে তা আমি আরেকজনের সাথে করে এসেছি; অথচ মনে করছি ভুল হচ্ছে অঙ্ক? না, প্রকৃতির অঙ্ক ভুল হয় না। যা যা আমি হারিয়েছি, সব আমি ফিরে পেয়েছি শতগুণ বেশি করে; তবু সবাইরে জানান দেই—সূর্য দেখি না অনেক দিন। ... আজ ফেসবুকে দেখলাম বাচ্চারা একজন দেশপ্রধানের প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ করছে; দেখে শরীর যেন রক্তশূন্য মনে হচ্ছে, সারাটা শরীর কান্নায় ভেঙে পড়ছে, কারণ প্রকৃতির হিসাব এখন সামান্য কিছু বুঝি। আজকের এই দৃশ্য একজনের পাওনা বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি, আর বাচ্চারা তাদের হিসেব তুলে রাখছে হালখাতায়।