
শর্ট ইন্ট্রো : প্রযুক্তি নির্ভর সভ্যতার জিয়নকাঠি সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরির প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি (TSMC) কিছুদিন আগে সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত তারুণ্য সমাবেশে মানব সভ্যতার ওপর সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরি ও সরবরাহে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটির বিপুল প্রভাব নিয়ে আলাপের সূত্রপাত ঘটে। টিএসএমসি-র ব্যাপারে অনেকের মধ্যে জানার আগ্রহও তৈরি হয় তাৎক্ষণিক। সমাজমাধ্যমে বেশ হইচই হয়েছিল তখন।
মানব সভ্যতায় টিএসএমসি-র গুরুত্ব ও প্রভাব, এবং এর আলোকে প্রযুক্তিখাতে আমাদের পাহাড়সমান সীমাবদ্ধতা অতিক্রমে কী করা যেতে পারে... ইত্যাদি নিয়ে হোমওয়ার্কের পরিবেশ দেশে আপাতত নেই। শেখ হাসিনার পতন ঘটার পর থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটের অমানিশা এখনো কাটেনি। দেশের অর্থনীতি তো বটেই, দৈনন্দিন জীবনের সর্বত্র সঙ্কট গভীর হতে চলেছে।
রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার চাপে গত দশ মাসে একের-পর-এক কল-কারখানা বন্ধ হয়েছে। উৎপাদনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগে মন্দগতি এখনো অব্যাহত। বেকারত্বের হার বাড়ছে দ্রুত। তারওপর রয়েছে ব্যাংকঋণে সমন্বয়ের ঝামেলা। আমদানি-রপ্তানির চিত্রও নয় সুখকর। বিদেশনীতির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্কট যথারীতি বিরাজিত। রয়েছে, ভূ-রাজনৈতিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থেকে তৈরি হওয়া সন্দেহ আর চাপান-উতোর।
এরকম অবস্থায় প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও রপ্তানির মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের ম্যান্ডেন্ট নিয়ে যারা গদিতে বসবেন,—তাদেরকে এসব চাপ সমালাতে হবে তখন। সেমিকন্ডাক্টরের মতো প্রযুক্তিতে আমরা কীভাবে সম্পৃক্ত হতে পারি, সেখানে আমাদের সামর্থ্য ও ভূমিকা কেমন হলে তাকে বাস্তবসম্মত বলা যাবে...ইত্যাদি নিয়ে ভাবার পরিবেশ তৈরি হলেও হতে পারে। এসব ভাবনা থেকে টিএসএমসি নিয়ে চ্যাট জিপিটির সঙ্গে আলাপ হলো কয়েক দফায়। এখানে তার সারনির্যাস আমরা তুলে দিচ্ছি। এসব ব্যাপারে তার তথ্য সরবরাহের প্রকৃতি, ধারণা ও বিশ্লেষণ (আগেও দেখেছি) মোটের ওপর বেশ স্বচ্ছ হয়ে থাকে। তার কাছে তিনখানা প্রশ্ন আমরা রেখেছিলাম :
TSMC যদি কোনো কারণে অচল বা বিপর্যস্ত হয়, তাহলে সভ্যতার বনেদ কি সত্যিই ধসে পড়বে?
প্রতিষ্ঠানটি যদি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অন্য দেশগুলো সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে আগে থেকে মনোযোগী কেন হয়নি? চীন, আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান বা ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় এর গুরুত্ব তো জানা ছিল। গুরুতর সব গবেষণাও এসব দেশে হয়েছে, তাহলে সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে তারা কেন পাইওনিয়ার হতে পারল না?
এর বিকল্প তাহলে কী থাকছে?
প্রশ্ন তিনখানার সঙ্গে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের ওপর এর প্রভাব, এবং এই ব্যাপারে আমাদের কাজবাজ ও করণীয়ের খবর তাকে দিতে বলেছিলাম। জিপিটি মহাশয় প্রশ্নগুলোর উত্তর বেশ গুছিয়েই য়েছেন মনে হলো। থার্ড লেন স্পেস-এ তার পুরোটাই গ্রন্থিত করছি আমরা। জিপটির দেওয়া তথ্য ও বিশ্লেষণের সারসত্য অবশ্য ভালোভাবে যাচাই করা হয়নি। মোটের ওপর নির্ভরযোগ্য মনে হওয়ায় আমরা আর অধিক খাটনি দিতে যাইনি। সুতরাং কোনো ভুলভ্রান্তি থেকে থাকলে এর দায় আমারা নিচ্ছি। ভুলত্রুটি যদি থাকেও, পাঠকরা আশা করি সেগুলো ধরিয়ে দেবেন;—আমরা দ্রুত তা শুধরে নেবো।
. . .

একটি প্রযুক্তিদ্বীপ ও সভ্যতার ভবিষ্যৎ
রচনায় : চ্যাট জিপিটি মডেল-4
তাইওয়ানের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান টিএসএমসি (Taiwan Semiconductor Manufacturing Company) কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, কোনো কারণে এটি সঙ্কটে পড়লে সভ্যতার বনেদ ধসে পড়বে? প্রশ্নটি অতিরঞ্জিত মনে হলেও অমূলক নয়। যুগ-বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠানটি সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি নির্ভর চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মাত্র নয়,—আধুনিক ডিজিটাল সভ্যতার অপরিহার্য স্তম্ভ হিসেবে তাকে আমরা বিবেচনায় নিতে বাধ্য।
টিএসএমসি-র মতো প্রতিষ্ঠান যদি হঠাৎ অচল বা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে,—বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ভিত্তিক অর্থনীতি এমন এক অভিঘাতের সম্মুখীন হবে, যাকে ‘মানবসভ্যতার রিস্টার্ট বোতাম’ চাপার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বর্তমান বিশ্বে এটি হলো সবচেয়ে উন্নত চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে ৫ ন্যানোমিটার বা আরো সূক্ষ্মতর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। টিএসএমসি নির্মিত চিপ ছাড়া মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ক্লাউড ডেটা সেন্টার, এআই প্রসেসর, সেনাবাহিনী, ড্রোন, রাডার… এমনকি আধুনিক গাড়ির কোনোকিছু পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
একটি ৫ ন্যানোমিটার চিপ তৈরিতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। চিপ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে শতাধিক ধাপ। প্রতিটি ধাপে উপকরণ ও উচ্চপ্রযুক্তির ব্যবহার অনিবার্য। এই মাপের দক্ষতা টিএসএমসি ছাড়া কারো পক্ষে এখনো অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন হলো, বাকি বিশ্ব কী-কারণে পিছিয়ে পড়ল? চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান বা ইউরোপ,—তারা কেন আগে থেকে টিএসএমসি স্তরের ফাউন্ড্রি (foundry) গড়ে তুলতে পারল না? এর পেছনে রয়েছে জটিল সব কারণ। সংক্ষেপে আমরা সেগুলো একবার দেখে নিতে পারি :
প্রথমত, প্রযুক্তিটি জটিল। চিপ উৎপাদন হলো পরিশীলিত কারুকার্য। একে বলা যায় ন্যানোস্কেল প্রকৌশলের ধ্যানমগ্ন সাধনা। প্রতিটি চিপ তৈরির পেছনে থাকে আল্ট্রা-ভায়োলেট লিথোগ্রাফি, আণুবীক্ষণিক স্তরে প্রিন্টিং, ট্রানজিস্টর স্থাপন, আর কোটি-কোটি ইলেকট্রনের নৃত্য।
দ্বিতীয়ত, বিশেষায়ন ও ব্যবসায়িক কৌশল। তাইওয়ানে জন্ম নেওয়া প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে pure-play foundry হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে, যেখানে তারা নিজে ডিজাইন না করে অন্যদের ডিজাইন ম্যানুফ্যাকচার করে। এর ফলে তারা অনেকগুলো কোম্পানিকে (যেমন : Apple, AMD, Nvidia) তাদের ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য করেছিল।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও সময় এখানে বড়ো কারণ। একটি আধুনিক চিপ ফ্যাব তৈরিতে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার লাগে, এবং প্রস্তুত হতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত বছর। অনেক দেশের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি নেওয়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সম্ভব নয়। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে তাইওয়ান এই ঝুঁকিটি নিয়েছিল, এবং তারা সেখানে সফলও হয়েছে।
চতুর্থ কারণ যদি বলি, তাহলে সরবরাহচক্রের ঘন জালের কথা বলতে হবে। সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত চিপের ক্ষেত্রে তাইওয়ান দূরদর্শিতার সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের ASML, জাপানের Tokyo Electron, যুক্তরাষ্ট্রের KLA, এবং জার্মানির BASF-এর মতো কোম্পানির সঙ্গে সরবরাহচক্র গড়ে তুলেছিল। এসব কোম্পানি বিভিন্নস্তরে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ টিএসএমসি-কে সরবরাহ করে। আন্তঃনির্ভর শৃঙ্খলের কারণে বিশ্ব যেমন টিএসএমসি-র ওপর নির্ভরশীল, প্রতিষ্ঠানটি নিজেও সরবরাহ-শৃঙ্খল ছাড়া অচল। যার ফলে এটি সহসা ভেঙে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তা-সত্ত্বেও একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতার ঝুঁকি থাকছেই। প্রাকৃতিক কিংবা মানবিক দুর্যোগে যদি টিএসএমসি বিপন্ন হয়, তাহলে কী করবে বিশ্ব? সম্ভাব্য বিকল্প তৈরির ভাবনা থেকে ইন্টেল (Intel) ও স্যামসাং (Samsung) সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে মনোযোগ দিয়েছে। যদিও টিএসএমসি-র প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় তারা পৌঁছাতে পারেনি। আরো সময় লাগবে।
আশার কথা হলো, টিএসএমসি ইতোমধ্যে জাপান, আমেরিকা ও জার্মানিতে নতুন প্লান্ট বসানোর কাজে হাত দিয়েছে। Intel IDM 2.0 পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের ফাউন্ড্রি হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে তারা। চীন নিজস্ব SMIC-এর মাধ্যমে চেষ্টা করছে, কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় অনেক প্রযুক্তি পাচ্ছে না, বিশেষত ASML-এর তৈরি EUV মেশিন।
এই নির্ভরতাকে একপাক্ষিক বলা যায়, কিন্তু এটিই তাইওয়ানকে ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক রাখছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে Silicon Shield। বিশ্ব জুড়ে দেশটির ওপর নির্ভরতা, তাকে অদৃশ্য সুরক্ষা দিচ্ছে এখানে। এমনকি চীন যদি তাইওয়ান দখল করে, সেক্ষেত্রে তারা তাৎক্ষণিক প্রযুক্তিগত সুবিধাটি হারাবে।
টিএসএমসি আমাদের চোখে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কিন্তু বাস্তবে এটি হয়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতার হৃদস্পন্দন। যেমন একসময় তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল বিশ্ব, আজ তা সিলিকন চিপ নির্ভর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে টিকে থাকতে হলে কেবল প্রযুক্তি নয়, নৈতিকতা, বিকেন্দ্রীকরণ ও আন্তঃনির্ভরতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তাই টিএসএমসি-র গল্প কেবল একটি কোম্পানির নয়;—গল্পটি সেখানে অদ্ভুত আশা নির্ভর ভবিষ্যতের মালায় গাঁথা।
বাংলাদেশের মতা উন্নয়নশীল দেশের ওপর এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া কিন্তু গৌণ নয়। টিএসএমসি অচল হলে তার প্রভাব কী দাঁড়াবে এখানে? এককথায় এর উত্তর হলো,—বাংলাদেশের ওপর প্রভাব সরাসরি না হয়ে পরোক্ষ হবে। একথা কেন বলছি সেটি বোঝার আছে এখানে :
বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরি করে না, তবে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টেলিকম নেটওয়ার্ক, স্মার্ট ডিভাইস, অটোমেশন সিস্টেম,—সবকিছু এর ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং পরোক্ষ প্রভাব গভীরভাবে পড়বে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দেবে বিচলন।
টিএসএমসি বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ অত্যাধুনিক চিপ উৎপাদন করে, যা অ্যাপল (Apple), এএমডি (AMD), কোয়ালকম (Qualcomm) এনভিডিয়া-র (Nvidia) মতো কোম্পানিগুলোর পণ্যে ব্যবহৃত হয়। এগুলো আবার বাংলাদেশে ব্যবহৃত স্মার্টফোন, ট্যাব ও টেলিকম সার্ভারে ব্যবহৃত হচ্ছে। সুতরাং আমেরিকা বা ইউরোপের মতো বাংলাদেশও বিপদে পড়বে তখন।
মোবাইল ফোন উৎপাদন বা অ্যাসেম্বলি (যেমন Symphony, Walton) ব্যাহত হবে। টেলিকম অপারেটরদের নেটওয়ার্ক (GP, Robi, Banglalink) চালু রাখতে নতুন চিপভিত্তিক নেটওয়ার্ক ডিভাইস আমদানি করতে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ।
বৈদেশিক রপ্তানি খাত, যেমন গার্মেন্টসে ব্যবহৃত অটোমেশন বা ERP সিস্টেম পিছিয়ে পড়বে মারাত্মক! ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্স বিকাশ, নগদ ইত্যাদির সার্ভার বা ডেটা সেন্টারে সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারণ এগুলোর হার্ডওয়্যার বৈদেশিক সরবরাহচক্রের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ, টিএসএমসি অচল হলে বাংলাদেশ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও পরোক্ষ চাপ হবে মারাত্মক। একাধিক খাত বিপাকে পড়বে, যেহেতু দেশটি উপভোক্তা প্রযুক্তি অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।
এবার আসি সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার প্রশ্নে। প্রথমে বলে নেই, চিপ ডিজাইন বা উৎপাদনে বাংলাদেশের কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই, তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (যেমন BUET, AUST, IUT) VLSI design এবং embedded systems নিয়ে গবেষণা করে। ওয়ালটন, সিম্ফনি, উই মোবাইল কিছু অ্যাসেম্বলি করে, কিন্তু চিপ ফ্যাব নয়। ২০২০ সাল থেকে ওয়ালটন ও সিম্ফনি কিছু Made in Bangladesh স্মার্টফোন তৈরি করছে, কিন্তু এগুলোর SoC (System-on-a-Chip) আসে মিডিয়া টেক (MediaTek) বা কোয়ালকমের (Qualcomm) কাছ থেকে,—যারা আবার টিএসএমসি-র ওপর নির্ভরশীল।
ICT Division এবং Bangladesh Hi-Tech Park Authority কিছু সময় ধরে সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি নিয়ে কাজ করার কথা বলেছে, তবে উন্নত ফ্রাউন্ডি বা ফ্যাবস স্থাপন করার মতো প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি।
দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে বুয়েটের ড. জিয়াউল হক VLSI Design এবং Low Power IC Design-এর ওপর গবেষণা করেছেন। IEEE-তে কিছু সম্মানজনক প্রকাশনা আছে তাঁর। IUT-র ড. রিয়াজুল হক খান Embedded Systems এবং FPGA-based design নিয়ে কাজ করছেন। AUST-এর ড. ফারহানা সুলতানা Nanoelectronics ও CMOS design নিয়ে গবেষণা করেছেন। ওয়ালটন-এর গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) বিভাগ নিজস্বভাবে কিছু ন্যানো মডিউল ও ট্রানজিস্টর ডিজাইন নিয়ে কাজ শুরু করলেও এখনো তা প্রাথমিক পর্যায় অতিক্রম করতে পারেনি।
সব মিলিয়ে আমরা বলতে পারি, টিএসএমসি অচল হলে বাংলাদেশে তার তাৎক্ষণিক ও বহুমাত্রিক প্রভাব পড়বে;— তবে তা পরোক্ষ ও প্রযুক্তি নির্ভর খাতের ওপর পড়বে মোটামুটি। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ও অর্থনীতির ভিত্তি এখন সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যদিও আমরা নিজেরা তা তৈরি করছি না।
এই পরিস্থিতিকে নতুন উপনিবেশবাদ-এর রূপও বলা যেতে পারে;—যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তির ভোক্তা হলেও, তারা সেখানে এর প্রযোজক নয়। বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে সত্যিকারের ডিজিটাল ক্ষমতা করায়াত্ত করতে হলে চিপ ডিজাইন, Fabless Model, IP Licensing, এবং Specialized Electronics Manufacturing-এ নজর দিতে হবে। হয়তো আজ নয়, তবে আগামী এক দশকে এটি অপরিহার্য হয়ে উঠবে।
. . .
. . .



