আউলা-ঝাউলা হক মাওলায় পতিত দেশে সংবাদে বদলে দেয়ার প্রত্যয় নিয়া হাজির মতিকণ্ঠকে ভীষণ মিস করতেছি। হুলফোটানো রঙ্গ-পরিহাসে সরব অনলাইন দৈনিকটি দুইহাজার ষোল অবধি ভালোই সক্রিয় ছিল। তারপর থেকে আর কোনো আপডেট নাই। রাজনীতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনে সক্রিয় সেলেবদের নিয়া অনলাইন দৈনিকের সার্কাজম রস-পরিহাসে অভিনব ছিল বেশ। কবিলেখকরা যে-কাজটা করার কথা ছিল কিন্তু করতে পারেন নাই, মতিকণ্ঠ সেখানে হাত ঢুকাইছিল তখন।
গত পনেরো বছর সাহিত্যের ভাষা ও শিল্পকুশলতা কাজে লাগিয়ে সার্কাজমে গমনের সাহস কবিলেখক সমাজে প্রবল হইতে দেখি নাই। উনারা বিস্তর অংবংছং লিখতেছিলেন। তার মধ্যে না ছিল ধার,- না গভীরতা। বিগত ও চলমান সময়কে বিচিত্র মাত্রায় টের পাওয়ার উপায় বাংলাদেশের বিজ্ঞ কবিলেখক বিরচিত সাহিত্যে বড়ো আকারে পাইছি বইলা একিন হয় না। রাডারে ধরা পড়বে এরকম কিছু কি সত্যি তারা পয়দা করতে পারছেন গেণ পনেরা বছর? উনাদের সাহিত্যিক তৎপরতায় না ছিল রস, না মিলতেছে গায়ে জ্বালা ধরানো পরিহাসমাখা হুল,- না পাওয়া যাইতেছে গভীর কোনো সংবেদ। কী মিলতেছে সেকথা ভেবে টাসকি খাইতেছি এখন।
হাসনাপার্টির দিনকালে কবিলেখকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিজেকে নিয়া আত্মতুষ্টিতে ডুবে থাকছেন। হইতে পারে জেমস জয়েস হওয়ার সাধনায় লিপ্ত ছিলেন তারা। জাতি আরো একশো বছর পাঠ করলেও একটা লাইন বুঝবে না এরকম একখান ফিনেগানস ওয়েক বাজারে নামানোর খোয়াবে বিভোর ছিলেন তারা! জয়েসের সবচেয়ে নন্দিত-নিন্দিত আখ্যানের রচনাপদ্ধতি প্রহেলিকা নামান্তর বইলা পাঠকরা আওয়াজ দিচ্ছিলেন। খোদ টি. এস এলিয়টের মতো পাড় জয়েসভক্ত যার একটা লাইন ঠিকঠাক ধরতে পারেন নাই। ধরবেন কী করে, প্রথমত ড্রিম ও রিয়েলিটি সেখানে এমনভাবে একে অন্যের ভিত্রে প্রবেশ যাইতে থাকে,- পাঠক খেই হারায় তাৎক্ষণিক। তার উপ্রে ভাষা। প্রায় ষাট থেকে সত্তরটি ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ ও প্যারাফ্রেজ আখ্যানে পাঞ্চ করেন জেমস জয়েস। এখন এইটা বুঝবে কোন আব্বা?
আখ্যান বিরচনের প্রতিষ্ঠিত কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ জানাইতে জয়েস ওইসময় যে-কাণ্ড ঘটান সেইটা উনার মতো মানুষের সাজে। আমাদের এখানেও কমলকুমার মজুমদার সুহাসিনীর পমেটম আর অমিয়ভূষণ মজুমদার ফ্রাইডে আইল্যান্ড অথবা নরমাংস ভক্ষণ-এর মতো রচনা রেখে গেছেন। বড়ো লেখকরা নিজেকে ভাঙতে মাঝেমধ্যে জটিল-বন্ধুর পথে হাঁটেন। উনারাও হাঁটছেন। এখন সাধারণ পাঠকের জন্য তার সবটা দরকারি না। জয়েসের ডাবলিনার্স, প্রোট্রেট অব অ্যা ইয়াং আর্টিস্ট, সর্বোচ্চ ইউলিসিস পর্যন্ত যদি তারা যাইতে পারেন তাহলে এনাফ। বাংলাদেশের ওই পর্যায়ে যাইতে আমাদের এখনো ঢের বাকি। অবিশ্বাস্য জটিল আঙ্গিক তখন দরকার হয় যখন সমাজ এমন এক মাত্রায় পৌঁছায়, যার সঙ্গে লেখকের সংযোগ ঘটানো দুরূহ বোধ হইতে থাকে। আমাদের যেহেতু ওই পর্যায়ে এখনো উপনীত হইতে ঢের দেরি, কাজেই সার্কাজম হইতে আরো অনেককিছু পয়দা করার প্রয়োজনীয়তা আছে বটে!
তো সেই কাজে কবিলেখকরা কামিয়াব হইতে পারলেন না। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর জন্য অগত্যা মতিকণ্ঠ সম্বল ছিল। সাহিত্যিক ফর্ম হিসেবে লেখকরা ইচ্ছা করলে এর সংবাদ বদলে দেয়ার আঙ্গিক ও ভাষাভঙ্গি এস্তেমাল করতে পারতেন। ইচ্ছাকৃত ভুলভাল বানান আর নামবিকৃতির মধ্য দিয়া যেসব রস-পরিহাস তারা করছে তার সবটাই এখন প্রাসঙ্গিক মনে হইতেছে। ইউনূস বাবুনগরীকে নিয়া তাদের সার্কাজমের সবটাই এখন জলজ্যান্ত প্রাসঙ্গিক দেখতে পাইতেছি। তার মানে তাদের চেষ্টা বৃথা ছিল না তখন। মতিকণ্ঠ পরে কেন সংবাদ পরিবেশনা বন্ধ করলেন জানি না। এখন তো মনে হচ্ছে উনাদের এই সার্কাজমটা ভীষণ জরুরি আমাদের জন্য।
. . .
ড. ইউনূসকে নিয়া মতিকণ্ঠের সংবাদ বদলে দেওয়া সার্কাজম
১. ইসলামী মুল্যবধের সরকার গঠন করব: বাবুনগরী : নিজস্ব মতিবেদন : দৈনিক মতিকণ্ঠ
২. দরজা খুলছেন না বাবুনগরী : নিজস্ব মতিবেদন : দৈনিক মতিকণ্ঠ
৩. বড় গুণ্ডের জন্মদিনে বাবুনগরীর শুভেচ্ছা : নিজস্ব মতিবেদন : দৈনিক মতিকণ্ঠ