মানুষ মূলত শিবিরের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে নিবেদিত
. . .
বাংলাদেশে এজমালি রাজনীতির বদ খাসলত মাটিতে কবর দেওয়ার বাসনা সঙ্গী করে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির গতকাল জাতির সম্মুখে হাজির হইলেন। নিষিদ্ধ সংগঠনের তকমা ছুড়ে ফেলে অবশেষে প্রকাশ্যে আসলেন তারা। এর জন্য শিবিরের সাথী ভাইদের জুলাই বিপ্লবের খুনরাঙা শুভেচ্ছা। হাসিনা আপা গত পনেরো বছর তাদেরকে প্রতিহত করতে কম চেষ্টা করে নাই। প্রতিহত করার নামে যদিও বিলাই-ইঁদুর খেলাটাই সার হইছে কেবল। জামায়াত-শিবিরের মজলুম ভাইবোনরা সেখানে জেরি ছিলেন আর হাসিনা আপা টম। ওয়াল্ট ডিজনির কুশলী বয়ানে জেরির সহিত টম কখনো পেরে ওঠে না। মাথামোটা টমকে চিকনবুদ্ধি জেরি সুন্দরভাবে সময় বুইঝা সাইজ করে। হাসিনা আপার জামায়ত-শিবির পলিটিক্স ওইরকম ছিল। জেরিকে আপা দৌড়ের উপ্রে রাখছিলেন। অবলা জেরির এতে বিস্তর দিগদারি হইলেও পরিস্থিতির সঙ্গে মানাইয়া নিতে সে দেরি করে নাই। বেশ বদল করে আপার বিরাট দলটার অলিগলিতে ছুপা রুস্তমের মতো বিচরণ করছে। কেউ চিনতে পারে নাই। বুইঝাও বুঝতে পারে নাই। ধরেও ধরতে পারে নাই। নিজেকে এভাবে আপার আঁচলের তলায় হাইড রাখার শিল্প সফলভাবে কাজে লাগানোর জন্য হইলেও শিবিরের সাথী ভাইয়েরা বিপ্লবী বাহবা পাওয়ার দাবি রাখেন।
বিপ্লবের এইটা হইতেছে বড়ো শিক্ষা। শত্রুর দুর্গে স্যাবোটাজ ঘটানোর জন্য পরিস্থিতি বুঝে স্পাইয়ের ভূমিকা নিতে হয়। শত্রু যেন টের না পায় সেইভাবে প্লট কষতে হয়। হাসিনা আপার অন্দরমহলে জামায়াত-শিবিরের বিপ্লবী সাথীরা বেশ বদল করে ঢুকতে পারছিল বইলা জুলাই বিপ্লব সফল হইতে পারছে। আপা ও তার বাপের প্রতি নিখাদ ভালোবাসার কারণে দলে যারা বিলাই-কুকরের মতো দিনাতিপাত করছে এতদিন, তৃণমূলের ওইসব নাদান-নালায়েক আওয়ামীরা কিন্তু কাহিনি বুঝতে ভুল করে নাই। দলে লীগবেশে প্রচুর ছাগু ঢুকতেছে সেইটা তারা ঠিকই ধরতে পারছিল। ছাত্রলীগ, যুবলীগ যেসব আকাম করতেছে তার সঙ্গে জেনুইন লীগের পোলাপান জড়িত, নাকি ছাগুরা লীগের বেশে আকামগুলা ঘটাইতেছে, এখন সেইটা যাচাই করার জন্য আপার কাউয়া সেনাগো কাতর আর্জি জানাইতে বাকি রাখে নাই তারা। রোলেক্স ব্রান্ডের ঘড়ি, কালা সানগ্লাস ও মাফলার শোভিত কাউয়া কাদেরে আচ্ছন্ন হাসিনা আপা সেগুলা কানে তোলেন নাই। ফলাফল তো এখন ঝকঝকা রইদের মতো পরিষ্কার দেখা যাইতেছে! আপা ও কাউয়া গং কি এর দায় নিবেন না?
. . .
যাই হোক, শিবিরের প্রকাশ্যে আসা ও হাসিনপতনের নকশায় একচ্ছত্র স্বত্ব দাবির ঘটনায় উনাদের কনফিডেন্ট প্রকাশ পাইতেছে। সামহাউ উনারা এখন এই ব্যাপারে শিওর হইতে পারছেন,- ক্ষমতার মসনদ বেশি দূরে নাই। আজ-নয়-কাল উনারা সেখানে বসতে যাইতেছেন। সুতরাং গর্তে গা ঢাকা দিয়া থাকার সময় ফুরাইছে। হাসিনা পতনের নেপথ্যে যতগুলা কর্মসূচী নেওয়া হইছিল তার সিংহভাগ তারা পেছনে বসে কন্ট্রোল করছিলেন। মহাভারতের শকুনি মামার মতো মন্ত্রণা দিতে কোনো খামতি রাখেন নাই। কিছু কর্মসূচী আবার বিপ্লব কায়েমে আজ পর্যন্ত ব্যর্থ ও এতিম ব্রেনওয়াশড বামগুলারে দিয়া করাইছেন তারা। বাদবাকিটা বিএনপি, হিযবুত, হেফাজতরা মিলেঝুলে করছিল, যেখানে আবার উনাদের অবদান থাকা আশ্চর্যের কিছু না।
জুলাই আন্দোলনের মুখ্য এজেন্ডাগুলার মধ্যে রাজাকার জিকিরকে লেজিটিমেসি দেওয়ার এজেন্ডাকে সবচেয়ে সিগনিফিকেন্ট বইলা ধরা যাইতে পারে। একাত্তরের পর হইতে যে-ছাপ্পা উনাদের পিঠে অকাট্য ছিল, এখন সেইটা মুছে দেওয়ার উপলক্ষ তারা পাইতেছেন। কালক্রমে বিহারি কমিউনিটি হইতে উঠে আসা বুদ্ধিজীবী ফাহাম আবদুস সালামের মতো একাত্তর সনের মরণপণ জনযুদ্ধকে বিগ স্ক্যাম ও চব্বিশকে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা বইলা আবাল জাতির মগজে পুশ করতে অসুবিধা হবে না।
ব্যাপার না, উনাদের সেবা দিতে তৎপর ব্রাত্য রাইসু তো বলেই ফেলছেন,- ফ্যাক্ট কোনো বিষয় না, ন্যারেটিভ বা বয়ান হইতেছে আসল। আপনি কীভাবে ন্যারেটিভ তৈয়ার করতেছেন তার উপ্রে ইতিহাস আপনারে গোনায় ধরবে। সুতরাং জামায়াত-শিবিরের সাথী ভাইবোনদের নিজেরে প্রকাশ্যে অনার ভাবনা জরুরি ও সময়-উপযোগী মানতে হবে। বিএনপিসহ বাদবাকি যারা এই ন্যারেটিভে খারিজ হইতে পারেন এবং আজ-নয়-কাল খারিজ হইবেন বইলা আমরা ধরতে পারি,- উনারা এখন কীভাবে খারজি হওয়াটার চাপ মোকাবিলা করতেছেন তার উপ্রে শিবিরি সাথী ভাই ও বেহনোগো সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল নাকি ভুল তার আন্দাজ জাতি পাবেন।
সুদীর্ঘ সময় ছাত্রলীগের হেলমেটের ভিত্রে ঘাপটি মেরে থাকার চাপ শিবিরি সাথী ভাইদের উপ্রে ভালোই আসর করছে বোঝা যায়। প্রকাশ্যে আসার আনন্দটা যে-কারণে তীব্র বইলা পরিলক্ষিত হইতেছে অদ্য। শিবিরসাথী আরকানুল্লাহ হারুনী তো মনের আনন্দ চেপে রাখতে না-পেরে ফেসবুকে একখান পোস্ট বর্ষণ করছেন তাৎক্ষণিক। ছদ্মবেশে উনারা কত বড়ো টমবয় ছিলেন, সেইটা অবলীলায় বইলা দিছে উনি। সাথীভাই আরকানুল্লাহ হারুনীর বক্তব্য আমরা বোধহয় পাঠ যাইতে পারি। ভাইটি সেখানে লিখছেন …
. . .
শুনুন! দয়া করে একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন… ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের রাজনৈতিক শাখার আত্নপ্রকাশ হয়েছে মাত্র। বেশি না, মাত্র একটি শাখার একজন শিবির সভাপতি দেইখা আপনাদের কইলজা শুকায়ে যাচ্ছে দেখছি। আর সেক্রেটারি, সাংগাঠনিক সম্পাদক এবং হল সভাপতিদের দেখলে কি করবেন ভাই?
যদি শিবিরের ছাত্রলীগ শাখা আত্নপ্রকাশ করে সেদিন হার্টফেইল করবেন। আর যদি শিবিরের ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মাজলিস শাখা সামনে আসে, সেদিন নিশ্চিত আপনারা মারাই যাবেন ভাই। মাথায় রাখবেন, আপনি নিজেও যে আন্দোলন করেছেন মূলত শিবিরের এজেন্ডায় বাস্তবায়ন করেছেন। আপনি নিজেও কখন শিবির হয়ে গেছেন জানেন না।
এই আন্দোলনে পারস্পরিক আন্দোলন যারা করেছে কিন্তু পরস্পরে কেউ জানেন যে সে শিবির, তার পাশের জন শিবির। চারিদিকে শুধু শিবির আর শিবির। আপনিও শিবির, আমিও শিবির। মানুষ মূলত শিবির। আর, শিবিরের গোয়েন্দা শাখা দেখলে তো আপনারা দলবল নিয়ে আত্নহত্যা করবেন। অপেক্ষা করেন। অনেক কিছুই দেখবেন। আর বলবেন, ক্ষমা কর হে মাবুদ, সকল প্রশংসা কেবল তোমারই প্রাপ্য..🌷
মানুষ মূলতই শিবির।।❤❤ আলহামদুলিল্লাহ, সবই মহান আল্লাহর পরিকল্পনা। মহান আল্লাহ এ-কাফেলাকে কবুল করে নিক, আমিন।
@Arkanullah Harooni FB Post.@
. . .
সাথীভাই আরকানুল্লাহ হারুনীর এমতো একখানা জবরদস্ত ডিক্লারেশনের পর কিছু আর বলার থাকে না। পুনশ্চে তথাপি এই কথাগুলান যোগ করে যাই…
হাসিনা গংদের দায়ী করে গণহত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পন্ন হবে বোঝা যাইতেছে। ভুয়া আয়নাঘর তৈরির কাজ চলতেছে শুনতে পাই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কবরস্থান হইতে লাশ চুরি যাইতেছে। কেন যাইতেছে সেইটা এইবেলা বুইঝা লন। দেশপ্রধান হিসেবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা মারা গেছেন উনাদের মুত্যুর দায় অবশ্যই হাসিনা আপাকে নিতে হবে। দেশপ্রধান হওয়ার কারণে ইচ্ছা করলেও আপা সেইটা এড়াইতে পারবে না। তবে সকল আলামত ও অনুষঙ্গ আমলে নিয়া যদি জুলাই গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত হইত (যার চারি আনা সম্ভাবনা নাই), তাহলে দেখা যাইত হাসিনা আপা ও তার পেটোয়া পুলিশ বাহিনি আসলে বেশি লোক মারে নাই।
সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু নিয়া তো সাখাওয়াত সায়েব শুরুতেই প্রশ্ন তুলছিলেন। উনাকে তড়িঘড়ি সরানো হইছিল তখন। সাখাওয়াত সায়েব ঘটনাটা বুঝতে চাইছিলেন মাত্র। পুলিশের হাতে এহেন খতরনাক স্নাইপার কীভাবে আসে? প্রশ্নটা মনে জাগ্রত হইছিল তাঁর। আগ্নেয়াস্ত্রটি তো তাদের ব্যবহার করার কথা না! বিক্ষোভ দমনে গুলি আর রাবার বুলেট যথেষ্ট ছিল। তবে কি অন্যরা পুলিশের হয়ে কাজটা করছে? সন্দেহ প্রকাশের কারণে উনি টিকতে পারে নাই। দ্রুত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে সরানো হয় তাঁকে। সঠিক তদন্ত হইলে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যাইত মনে হয়। যে-কারণে হাসিনা বেশ কনফিডেন্ট নিয়া ওইসময় জাতিসংঘকে আসতে আহবান করছিলেন। যদিও লোকজন সেগুলাকে নাটক বইলা উড়াইয়া দিতে দেরি করে নাই।
পুলিশের হতবিহ্বল দশা হইতে বোঝা যায় এই টাইপের মাস কিলিং ক্যামনে ঘটল, কারা ঘটাইছে ইত্যাদি তারা এখনো বুঝে উঠতে পারে নাই। জামায়ত-হিযবুতসহ ভাড়াটে খুনিরা এইসব মার্ডারের পেছনের ছিল। কেন ছিল সেইটা গত দেড় মাসের ঘটনাপ্রবাহ থেকে অনেকটা পরিষ্কার। বাংলার আবাল জনগণকে যদিও সেগুলা আমলে নিতে ঘোর অনিচ্ছুক বইলা মনে হইতেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী অরাজকতা ও মার্ডার নিয়া প্রশ্ন তোলার কারণে ষড়যন্ত্রে তত্ত্বে বিশ্বাসী বইলা গালি দিতারেন, দেন সমস্যা নাই, তবে কারা কীভাবে এগুলা ঘটাইছে সেইটা বোঝার জন্য দিমাগের বাত্তি জ্বালাইতে হবে পেয়ারে ভাই ও বেহনো। ভাদ্র মাসের জ্বলাজ্বলা রইদের মতো সব তখন ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
ক্লিয়ার হয়ে যাবে কী-কারণে সাথীভাই আরকানুল্লাহ হারুনী সব এমন সফা বলে দিতেছে। উনি বুঝে গেছে, বাংলাদেশে শিবিরিযুগ পুনরায় চালু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। হাসিনার কারণে শিবির সাময়িক জেরির ভূমিকা নিভাইতে টমের ডেরায় ঢুকছিল। এখন টম হওয়ার সময় হইছে তার। মানুষ মূলত শিবির;- এই কথাটা রাখঢাক করে বলার প্রয়োজন আর জীবিত নাই। প্রকাশ্যে বলার মওকা অবশেষে তারা হাসিল করতে পারছেন। খোশ আমদেদ হে শিবিরি ভাই ও বেহনো। ইঞ্চি-ইঞ্চি মাটির এই বাংলায় আপনাদেরকে স্বাগতম। আল্লাহ আপনাদের তরক্কি হাসিল করার তৌফিক দান করুন। শাব্বা খায়ের…!
. . .
. . .