নতুন শ্রমবিন্যাস কাজেই সামনে অনিবার্য বলে মত ঠুকছেন তাঁরা। ম্যানাসের মধ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে হালনাগাদ করতে সক্ষম প্রযুক্তি, অর্থাৎ সেল্ফ অটোমেশনের নয়া দিগন্তে পা রাখবে বিশ্ব। মানব প্রজাতির জন্য যেটি প্রতিদ্বন্দ্বীতায় পূর্ণ এক বিশ্বের ছবি তুলে ধরছে। যন্ত্রে সচেতন মন সৃষ্টির যে-নিদান মার্ভিন মিনস্কি তাঁর The Society of Mind বইয়ে দিয়েছিলেন, আগামী বিশ্ব কি তাহলে সেদিকে পা বাড়াচ্ছে? প্রশ্নটি উঠতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে।
-
-
বুয়িং-চুল হানের রচনাবলীর দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি, আজকের পৃথিবীতে সচল সামাজিক বাস্তবতাকে বুঝে নেওয়ার ঘটনায় তিনি কেন এত প্রাসঙ্গিক! বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা লক্ষ করি,—যেসব প্রশ্ন আমাদের মনেও জাগে অহরহ, যেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলি হরহামেশা,—তার সঙ্গে হানের ভাবুক চোখে দেখা ব্যাখ্যাগুলো কেমন আশ্চর্য মিলে যাচ্ছে!
-
নিজের লেখা কবিতায় এক বন্ধুর কথা স্মরণ করছেন কবি। তার নাম ছিল শত্রুজিৎ। কার এখন ঠেকা পড়েছে তাকে শত্রুজিৎ নামে ডাকার! শত্রুজিৎ না ডেকে সবাই তাকে সংক্ষেপে শত্রু নামে ডাকা শুরু করেছিল। কাউকে বোঝানোর উপায় থাকল না,—শত্রুকে জয় করার বাসনায় বাপমা তার নাম শত্রুজিৎ রেখেছিল। আদিনাম বেচারা নিজেও ভুলে গেল বেমালুম। জীবন হচ্ছে এরকম তামাশার নাম। তাকে জয় করতে নেমে উলটো নিজেই শত্রু বনে যেতে হয়! সহজসরল প্রবচনঘন আবেশ মিশিয়ে জীবন নামের তামাশাকে নিরন্তর লিখে গেছেন তারাপদ রায়। সহজ কথা যায় না লেখা সহজে;—রবি ঠাকুরের কথাকে তিনি মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। গভীর কথাকে সহজ করে লিখেছেন আজীবন।
-
তাহলে কী করণীয়? আমাদের হয়তো দরকার ‘নির্বাচিত অস্বচ্ছতা’! একটি জায়গা, একটি সংস্কৃতি, যেখানে ভুল করা যায়, যেখানে অন্তরকে অন্তর থাকতে দেওয়া হয়, যেখানে প্রকাশ নয় বরং উপলব্ধি মুখ্য। মানুষ যেন আবার শিখতে পারে,—কীভাবে না-দেখানোর মধ্যে সৌন্দর্য সংগোপন থাকে; কীভাবে না-বলা কথারা গভীর হতে থাকে অবিরত! অপর্ণা তার ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে আকাশে চাঁদ উঠেছে। প্রযুক্তিক স্বচ্ছতার মরুভূমিতে তার কাছে একফালি ছায়ায় দাঁড়ানো খুব জরুরি বোধ হচ্ছে এখন, কিন্তু এরকম ছায়া কি আছে এখনো তার মতো হাজারো অপর্ণার জন্য?
-
কথায় আছে, আগে পেট, তারপরে চেট। এখন পেটে ক্ষুধা রেখে প্রেম ও সেক্স কোনোটাই কাজ করবে না। অভাব যখন আসে, ভালোবাসা জানালা দিয়া পালায়;—প্রবচনটি মানুষ নিজের জীবন-অভিজ্ঞতা থেকে আবিষ্কার করেছে বৈকি। তবে এটি মানতে হবে,—পেটের খিদের মতো মানুষের মধ্যে প্রেমের বাসনা ও যৌনচাহিদা নিতান্ত মৌলিক। এমনকি অভাবের মধ্যেও যৌনরিপু মানুষকে ত্যক্ত করে মারে।