খেলা হইতেছে জীবনের এমন এক চড়াই-উৎরাই যেখানে বুঝেশুনে পা ফেলতে হয়। সঠিক কদম ফেলতে না পারলে কেই-না-কেউ পিটিয়ে ছাতু করে দেবে। সবচেয়ে মূল্যবান কথাখান অবশ্য আলবেয়ার কামু বলে গেছিলেন : বল কখনো তোমার চাওয়া পূরণ করতে সঠিক জায়গায় আসবে না। সুতরাং এখান থেকে তারে হাতের মুঠোয় বন্দি করার কসরতে মানুষ নেমে পড়ে। নেমে পড়ার সুবাদে অস্তিত্বের সংকট তার জীবনে আরো মর্মান্তিক হইতে থাকে।
ঈশ্বর নিজেই জুয়াড়ি। এমন এক ছক তিনি সাজাইছেন, আমরা সেখানে দাবার বড়ে হয়ে এক ঘর হইতে অন্য ঘরে মুভ করি। এক ঘর আগাই তো পিছাই দুই ঘর। সেকালের ববি ফিশার বা কাসপারভ অথবা একালের কোনো কার্লসেনের চালাবাজিতে চেকমেট যেন না হইতে হয় তার ধান্ধায় আগাই আর পিছাই। ব্যাক এন্ড ফোর্থকে যে-কারণে জীবনের উপমা ভাবা ছাড়া উপায় নাই। ঈশ্বর ও ইবলিশ আমাদেরকে নিয়ে চালবাজিতে মত্ত আছেন। বার্গম্যানের সেভেন্থ সিল ছবিতে যেমন যমদূতের সঙ্গে দাবা খেলায় বসে মানুষ। মত্যুটারে জয় করার খায়েশে দাবার গুঁটি সাজায়। মরণতুল্য এই খেলার নাম হইতেছে জীবন।
এদুয়ার্দো গালিয়ানো বুঝি সেরকম একখান ঘটনার আভাস দিতে তাঁর সকার ইন সান এন্ড শ্যাডোয় আলবেয়ার কামুর কাহিনি পেশ করছিলেন। নিচে তার স্বহস্তে সম্পাদিত তর্জমা দিতেছি, আর সেটি এজন্য যে,- বল কখনো ঠিক জায়গা আসবে না জেনেই আমরা খেলি। লাইফ ইজ অ্যা গেম। আর আমরা ওই গেমটা একাগ্র উত্তেজনায় যখন খেলি, তখন মনে থাকে না গেম খেলতেছি। যেখানে আমরা মাঝেমধ্যে জিতি, তবে হারি অবিরত। এখন যেমন গোহারা হারতেছি!
. . .
সনটা ১৯৩০, আলবেয়ার কামু ওই সময় সন্ত পিটারের হয়ে আলজেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের গোলবার পাহারায় নিয়োজিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে উনি গোলকিপারি করে। গোলকিপিংয়ের সুবিধা হইতেছে জুতোর সুকতলা দ্রুত ছিড়ে যাওয়ার হাত হইতে রক্ষা পায়। গরিব ঘরের ছেলে কামুর পক্ষে মাঠে বিলাসিতা দেখানোর সুযোগ ছিল না। রোজ রাত্তিরে তাঁর দাদিমা জুতোর সুকতলা ছিড়ছে কিনা সেটা পরীক্ষা করতেন আর ছেড়া পাইলে কাম সারা,- বেদম পিটুনি খাইত হতো কামুকে।
গোলবার পাহারা দেওয়ার বছরগুলায় অনেককিছু শিখছিলেন কামু। যেমন উনি বলছেন,- আমি শিখলাম,- তোমার মনের খায়েশ পুরা করতে বল কখনো ঠিক জায়গায় হাতে আসবে না। জীবনে এই জিনিসটা আমারে অনেক হেল্প করছে। বড়ো শহরগুলায় থাকার সময় করছে, যেখানে লোকজন যা চায় বা দাবি করে সেটা পায় না।
নিজেকে খোদা নাহয় ফালতু কিছু সাব্যস্ত না করেও কীভাবে জেতা যায় এই জিনিসটা ফুটবল থেকে শিখছিলেন কামু। দক্ষতা সহজে আসে না, আর মানবাত্মার অনেক রহস্যে কীভাবে ঢুকতে হয় তার বিদ্যাও রপ্ত করছিল উনি;- বিপজ্জনক সব অভিযানের মধ্য দিয়া যে-গোলকধাঁধাকে পরে পাতায় পাতায় তালাশ করছেন।
. . .
. . .