ফরহাদ মজহার যেমন ইসলাম সম্পর্কিত ভাবনাকে পাঠ করতে গিয়ে মৌলিক করে তোলেন, তিনি তখন বিবেচনা করেন না চিন্তাপদ্ধতি কখনো দানব হয়ে উঠতে পারে। আমরা দেখেছি সেই দানবকে রুখতে গিয়ে তাকে আবার মাঠে নামতে হয়েছে। সলিমুল্লাহ খানের অসংখ্য বক্তব্য আছে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক, তিনি সেটি গ্লোরিফাই করেন, প্রতিষ্ঠা দিতে গিয়ে তর্ক করেন। এই যে বুদ্ধিজীবীতার বিশৃঙ্গলা, ফলত এইসব প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দিনে দিনে মাদ্রাসায় পরিণত হয়। নানাবিধ ন্যারোটিভ জন্ম নেয়। কোনটি প্রগতি আর কোনটা পশ্চাদপদ তা আর ঠাহর করা যায় না।
-
-
গল্পটি ভেবেচিন্তে লেখা হইছে। যে-বাচ্চাটি তার সৈনিক মায়ের সঙ্গে ভিডিওকলে আলাপ করে তার কাছে আম্রিকার পজিটিভ ইমেজ এখানে মায়ের মাধ্যমে ইনোসেন্ট বয়ানে প্রেজেন্ট করা হইতেছে। কী… আম্রিকার কাজ হইতেছে যেখানে অশান্তি ও হানাহানি সেখানে শান্তির দূত হয়ে গমন করা। এইটা গেল ন্যারেটিভের একটা দিক। অন্যদিকে যেইটা গল্পে হাইড করা হইতেছে, সেইটা হলো শান্তি স্থাপনের মিশনে যারা যাইতেছে, বাচ্চটার মায়ের কথাই ধরি, সে কিন্তু মারা যাইতেও পারে। এখন যদি মারা যায়, আম্রিকার মতো দেশ তারে বীরের মর্যাদা দিবে ঠিক, কিন্তু সে তো জানে কী কারণে তারে যাইতে হচ্ছে সেখানে।
-
মানবগ্রহ আগামীতে যেদিকপানে ধাবিত হইতেছে সেখানে যন্ত্রমানব ও বনিআদমে ব্যবধান ক্রমশ ক্ষীণ হইতে থাকবে। যন্ত্রমানবের নিজ পন্থায় বনিআদমের মতো অনুভূতিশীল প্রাণী রূপে বিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়া গবেষণা অনেকদূর আগাইছে। অন্যদিকে যন্ত্রমানব ও বনিআদমে কীভাবে ইন্টারচেঞ্জ ঘটানো পসিবল… ইত্যাদি নিয়াও দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক চিন্তার আদানপ্রদান উন্নত বিশ্বে থেমে নাই। তো সব মিলিয়ে এক হইতে দেড় দশকের মধ্যে ট্রান্সহিউম্যান বড়ো আকারে পাবলিক ডিসকোর্সে ঝড় তুলবে।... প্রযুক্তির নয়া তরঙ্গ ও তাকে ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক বাস্তবতায় মোল্লা আর বিলা ইউনূস নিয়া সৃষ্ট ক্যাচালে লিপ্ত বাঙালি বেশিদিন জারি থাকতে পারবেন না। উন্নত বিশ্বে দেখা দেওয়া তরঙ্গে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা নজদিক হবে তখন।
-
ক্যাথলিকরা যেমন ভাবে,- তাদের শিশুকে ক্যাথলিক বিশ্বাসে দীক্ষিত করায় তারা সত্যের নিকটবর্তী হয়েছে। সেই তারাই আবার ভাবে,- পৃথিবীতে আরো যত শিশু রয়েছে, যারা ইসলাম অথবা নাস্তিক বা অন্য মতাদর্শের অধীন,- তারা মিথ্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। আপনি যে-ধর্মে বিশ্বাস করুন-না-কেন, আপনাকে ভাবতে হচ্ছে,- অন্য মতাদর্শে বিশ্বাসী বিরাট সংখ্যক মানুষ মিথ্যার অনুসারী। এবং আপনি যখন আপনার বিশ্বাসকে মতাদর্শ বহন করছে এরকম পণ্য হিসেবে দেখেন, তখন এই স্বীকৃতি আপনাকে সত্য হিসেবে আমলে নেওয়ার ঘটনায় বাকিদের আস্থা হ্রাস পাওয়ার কারণ হয়ে ওঠে।
-
আমাদের এই আপাত সচেতন চেতনাজীবীদের চেতনানাশক অবস্থায় দিনাতিপাত করার বড়ো কারণ,- আমরা সকলে কমবেশি ভূমিহীন শিক্ষিত প্রজন্ম রূপে বিকশিত হইতেছি। আমাদেরে সঙ্গে মাটির যোগ নাই। খরা ও বৃষ্টির যোগ নাই। বৃক্ষের যোগ নাই। পাখাপাখালি ও ধানখেতের সংযোগ নাই। খনার যোগ নাই। কমল চক্রবর্তীর মতো অতিকায় অরণ্যে পরিণত মানুষটার সঙ্গে যোগ থাকার অবকাশ নাই। যার ফলে আমাদের মনের মাটিতে কখনো বৃষ্টি পড়ে না। এই মন মরুভূমি। খরায় ফাটা মাটি।