
. . .

তোমার শঙ্খমালারা
হেলাল চৌধুরী
জীবনানন্দ
এখনও তোমার শঙ্খমালারা
নামে, পৃথিবীর গভীর অন্ধকার ভালোবেসে
তোমার হরিণেরা তাই জোছনায় শুয়ে থাকে
অরণ্যের গহিন অন্ধকারে;
শ্যামলীরা শুনো, যেয়ো না-কো জোছনায় আলোর মাঠে…
জীবনানন্দ, এখনও তোমার
চিতা বাঘেরা এখানে
রাতে নয়, ভোরের সূর্যে নেমে আসে প্রবল কামাতুর চোখে
হরিণেরা তাই জোছনায় শুয়ে থাকে
অরণ্যের গহিন অন্ধকারে;
শ্যামলীরা শুনো, যেয়ো না-কো জোছনায় আলোর মাঠে…
জীবনানন্দ, এখনও এখানে
তোমার বিদর্ভ নগর জাগে
মিশরের মানুষীটি হাঁটে মুক্তায় মদের গেলাসে
হরিণেরা তাই জোছনায় শুয়ে থাকে
অরণ্যের গহিন অন্ধকারে;
শ্যামলীরা শুনো, যেয়ো না-কো জোছনায় আলোর মাঠে…
. . .

কবিতাটিতে মনে হয়েছে কবি চেয়েছেন, জীবনানন্দের চিত্রকল্পের পুনরাবৃত্তি ও আধুনিক সময়ের সঙ্গে তার প্রাসঙ্গিকতা প্রতিষ্ঠা করতে। বোঝাতে চেয়েছেন, সময় পাল্টালেও জীবনানন্দের অরণ্য, হরিণ, শঙ্খমালা, শ্যামলী বা বিদর্ভ নগর—এসব প্রতীক এখনও বেঁচে আছে।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়,—জীবনানন্দের অন্ধকারপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম ও ভয়াল সৌন্দর্যের চিত্রকল্পকে কেন্দ্রে রেখে নিজস্ব কবিতার ভাষা গড়ে তুলতে চেয়েছেন কবি হেলাল চৌধুরী। বারবার ‘হরিণেরা তাই জোছনায় শুয়ে থাকে/ অরণ্যের গহিন অন্ধকারে;/ শ্যামলীরা শুনো, যেয়ো না-কো জোছনায় আলোর মাঠে…’ এই পুনরাবৃত্তি কবিতার ভেতরে একধরনের মন্ত্রমুগ্ধ পরিবেশ তৈরি করেছে, যা জীবনানন্দীয় ঘোরগ্রস্ততাকে মনে করায়।
চিত্রকল্পগুলো অনেকাংশে জীবনানন্দ থেকে ধার করা, তাই মৌলিকতা বা নতুনত্ব কম চোখে পড়েছে। আমার মনে হয়েছে, যেন জীবনানন্দের শব্দভাণ্ডারই একটু ভিন্ন বিন্যাসে সাজানো হয়েছে। হতে পারে এটা ফিউশন, যেহেতু শক্তি বলেছেন,—কবিতা সবসময়ই ‘অভিজ্ঞতা ও কল্পনার সংমিশ্রণ।’ পড়তে মন্দ লাগছে না।
জাস্ট আমার পাঠ-অনুভূতি শেয়ার করলাম। কবির কাছে আগেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি।
. . .

সুরঞ্জনার মাঠে এখনও মজিদেরা হাঁটে
হেলাল চৌধুরী
এখনও মজিদেরা হাঁটে
দিবালোকে নগর থেকে নগরে
হাঁটে হায়েনা দলে দলে শিশ্নের দাপটে — এখানে
বিদর্ভ-পুরুষেরা যদি তাড়া করে অনামিকা তোমারে
তুমি তবে, ছুঁড়ে দিয়ো হায়েনামুখে জমিলার থুতু
এখনই হটাও! পৃথিবীর নীল-অন্ধকার — রহিমার ভীতু…
কোথায় সুভাষ, কোথায় চিত্তরঞ্জন দাশ
কোথায় বলো সুকান্ত তোমার রানার নতুন খবর আনার
জীবনানন্দের সবুজ ঘাসের দেশ সুরঞ্জনার মাঠে
কুকুর, শৃগাল আর হায়েনাদের উৎখাতে… এখানে
বিদর্ভ-যুবকেরা যদি তাড়া করে অনামিকা তোমারে
তুমি তবে, ছুঁড়ে দিয়ো হায়েনামুখে জমিলার থুতু
এখনই হটাও! পৃথিবীর নীল-অন্ধকার – রহিমার ভীতু…
কোথায় তুমি আজ ঝাঁকড়া চুল, নজরুল
দেখো, এখানে বিজাতি নয় স্বজাতি মারে স্বজাতিরে
কাকেরা খায় তার স্বজনের মাংস
রবির আলো ঢেকে দিতে চায় বিম্বিসার-অশোকের মেঘ
নজরুল, তুমি নেমে এসো আবারও জীবনানন্দের মাঠে
এখানে হায়েনা-পুরুষ হাঁটে এখনও দিবালোকে দাপটে
বিদর্ভনাগরেরা যদি তাড়া করে অনামিকা তোমারে
তুমি তবে, ছুঁড়ে দিয়ো হায়েনামুখে জমিলার থুতু
এখনই হটাও! পৃথিবীর নীল-অন্ধকার — রহিমার ভীতু…

মৌলিক বলে আসলেও কিছু হয় হাসান? ধ্রুপদি সাহিত্য ও লোকসাহিত্য হয়তো তার প্রাচীনত্বের কারণে মৌলিক। অ্যাট লিস্ট, তাদেরকে দিয়ে আমাদের সূত্রপাত। শিক্ষিতজনের সাহিত্য-শিল্প ইত্যাদিরা মৌলিকতার পরিপন্থী। একে আমরা অ্যান্ডলেস ক্রিয়েশন বলতে পারি। পূর্বসূরীদের রেখে যাওয়া সৃষ্টিকে যেখানে আমরা ক্রমাগত নতুন করে আবিষ্কার ও পুনরায় সৃজন করতে থাকি। তার মধ্যে যেসব স্পেস রয়ে গেল ভেবে নিচ্ছি,—সেখান থেকে নতুন ভাষা ও আঙ্গিক তৈরি হয়। রোলাঁ বার্থের ডেথ অব দ্য অথর-এ নির্দেশিত শর্ত মেনে হয়তো নয়, তবে কাছাকাছি কিছু সৃজন করে চলেছি সকলে মিলে। হেলাল ভাইয়ের রচনাও তাই।
আজকে তিনি দুটি কবিতা পরপর থার্ড লেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়েছেন। কবিতা দুটি পড়ে মনে হলো, অ্যান্ডলেস ক্রিয়েশনের ভাগ নিতে পূর্বসূরী কবিদের কবিতায় সক্রিয় ভাষা ও চরিত্রকে বিষয় করছেন হেলাল ভাই। আমার কাছে এটি সম্পূর্ণ বৈধ। কারণ, এখানে তিনি, কথার কথা,—জীবনানন্দ দাশকে নিছক কপি-পেস্ট করছেন না। তাঁর ভাষাপ্রণালীর অনেকখানি ইচ্ছে করে নিচ্ছেন;—এবং তা জেনেশুনে। একে প্রয়োগ করে সময়-প্রাসঙ্গিক নতুন অর্থ তৈরির ভাবনা হয়তো তাঁর মনে কাজ করছে!
জীবনানন্দ দাশের টেক্সটের একটি যৌথ মালিকানা কিন্তু এভাবে তৈরি হচ্ছে এখানে! তাঁরা দুজন একই শেয়ারিং ক্লাউডে বিরাজ করছেন এখন। অনুভবটি মনে আসত না, যদি দেখা যেত,—জীবনানন্দ দাশের রেখে যাওয়া বিশ্বে নিজের বিশ্বটি তিনি সংযুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা তখন একে নকল বা প্রভাবদুষ্ট বলে দিতাম সরাসরি। ঝুঁকিটি হেলাল ভাই উতরে গেছেন মোটামুটি। বিশেষ করে সুরঞ্জনার মাঠে এখনও মজিদেরা হাঁটে কবিতা,—সেখানে গীতিধর্মী চরণ পাচ্ছি; এবং বিদর্ভে নগরে অনামিকার সঙ্গে লালসালুর মজিদের জাকোস্টাপজিশন বা পরস্পর বিপরীতকে এক বরাবর দাঁড় করানোর ফলে সেটি আর জীবনানন্দীয় থাকছে না।
তোমার শঙ্খমালারা কবিতায় জীবনানন্দ প্রবলভাবে হাজির;—তাঁর ভাষাসমেত! সো হোয়াট! সুরঞ্জনা ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি-র মতো জীবনানন্দ সৃষ্ট চরিত্র শ্যামলীকে ধাম করে টেনে বলতেই পারি,—শ্যামলীরা শুনো, যেয়ো নাকো জোছনায় আলোর মাঠে…। তবে হ্যাঁ, এটি মনে হয়েছে, জীবনানন্দ দাশের কবিতায় সক্রিয় চরিত্র ও তাঁর ব্যবহৃত শব্দ/পঙক্তিকে তিনি কবিতায় সরাসরি না ঢুকিয়ে পরোক্ষভাবেও সেটি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁর নিজের ভাষা ও ভাবনা আরো বেশি গাঢ় পরিসর খুঁজে পাবে। তোমার শঙ্খমালারা কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে তা অবশ্য পাচ্ছি, তবে আগে-পরের দুটি স্তবকও এভাবে করা যেত।
টি এস এলিয়ট যেমন ওয়েস্ট ল্যান্ড-এ কাণ্ডটি করে গেছেন সেইসময়। পোড়োজমিতে দান্তের ডিভাইন কমেডি, বাইবেল ও গীতার রেফারেন্সকে তিনি করেছেন ব্যবহার। আবার, বোদলেয়ারের ফরাসি পঙক্তি ধা করে বসিয়ে দিয়েছেন উইদাউট অ্যানি রেফারেন্স, কোটেশন মার্ক অর ইটালিক্স। পড়তে গিয়ে এক গবেষক ছাড়া কারো মনে থাকে না,—ইহা বোদলেয়ার মহাশয়ের চরণ। গ্রিক, ইংরেজ,আইরিশ মিথসহ বিচিত্র রেফারেন্সে পোড়োজমি বোঝাই হয়ে আছে। দার্শনিক মনোভূমির ওপর দাঁড়িয়ে এলিয়ট তাঁর নিজস্ব ভাষাশৈলীর মুন্সিয়ানা কাজে লাগিয়েছেন। এমনসব ইমেজ তৈরি করেছেন সেখানে,—সবমিলিয়ে ওয়েস্ট ল্যান্ড হয়ে উঠেছে টাইমলেস এপিক।
পোড়োজমির খসড়া টি এস এলিয়ট নিজ হাতে পড়তে দিয়েছিলেন এজরা পাউন্ডকে। পাউন্ড নাকি মূল পাণ্ডুলিপির প্রচুর জায়গা কাটছাট করেন তখন। মূল খসড়াটি কাজেই অটুট থাকেনি। এখন তা আমলে নিলে বোঝা যেত,—এলিয়ট আরো কত-কী মাস্টারি করেছিলেন;—ইমেজকে শক্তিশালী করতে এজরা পাউন্ড হয়তো সেগুলো নির্মম হাতে বাদ দিয়েছেন তখন।
এটিও এক ধরনের বিনির্মাণ। হেলাল ভাই এরকম কিছু একটা করে উঠতে জীবনানন্দকে বেছে নিয়েছেন মনে হচ্ছে। মন্দ নয় এই প্রয়াস। তবে, সতর্কতা ও নিজস্ব পরিসর বাড়ানো জরুরি। সেইসঙ্গে, জীবনানন্দ দাশের তৈরি ভাষাপ্রণালী ও মিথ যদি তিনি ভেঙে দিতে পারেন, এবং সেটি তাঁকে ব্যবহার করেই,—সেক্ষেত্রে তা নতুন ফিল দেবে পাঠককে।
. . .
বিশেষ দ্রষ্টব্য :
একটি ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, বাংলা কবিতা, বিশেষ করে নব্বই দশকের দিনকাল থেকে ক্রমশ ক্যারেক্টার শূন্য হয়ে পড়ছে! রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, ত্রিশের কবিগণ, পঞ্চাশ থেকে আশির দশকে দেখা দেওয়া কবিকুল বিরচিত কবিতায় বিচিত্র নামধারী নারী ও পুরুষ চরিত্রক আমরা কবিতায় বিখ্যাত হয়ে উঠতে দেখেছি। কথার কথা, সুনীলের নীরা বা এরকম অনেক আছে। আজকাল এই চরিত্রনির্মাণ বিশেষ চোখে পড়ে না!
এসব চরিত্র হয়তো গল্প-উপন্যাসে জায়গা নেওয়ার কথা ছিল, কবিতায় তারা আলাদা বিশেষত্ব জন্ম দিয়েছে। ছোট-ছোট কাহিনিসূত্র ধরে কবিরা তাদেরকে রিপিট করেছেন। অনেকে আবার এক-দুবার করেছেন হয়তো, যেমন শক্তির অবনী কিংবা শামসুর রাহমানের বাচ্চু বা ভাস্কর চক্রবর্তীর সুপর্ণা…কিন্তু তাতেই কেল্লাফতে ঘটেছিল। এখনকার বাংলা কবিতার দেহখানা তার কবিদের মতোই ক্যারেক্টার শূন্য! এটি প্রমাণ করে, তাদের সঙ্গে জীবনসংসার ও জীবনবেদের সংযোগ পুরোপুরি কেটে গেছে!
. . .

প্রথমত, কবিতা ২টি আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছে। বিশেষ করে প্রথম কবিতাটি। আমি কয়েকবার পাঠের পর মনে হলো দ্বিতীয়টি আরো উত্তীর্ণ হতে পারত, এটা আমার মূর্খতাও হতে পারে। এজন্য আমি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে টেনে এনেছি।
দ্বিতীয়ত, আপনার পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত,—মৌলিকতা আসলে একপ্রকার চলমান ধারাবাহিকতা, যেখানে পূর্বসূরীর ভাষা, ভাবনা ও চরিত্রকে নতুন প্রেক্ষাপটে পুনরায় আবিষ্কার করা হয়। হেলাল ভাইয়ের প্রয়াস সেই ধারার অংশ, যেখানে জীবনানন্দের সৃষ্টিশীল ভুবনকে তিনি কপি নয়, বরং সক্রিয় সংলাপে এনেছেন। এটা একধরনের শেয়ারড ক্লাউড, যেখানে অতীত ও বর্তমান মিলেমিশে নতুন অর্থ তৈরি করছে। তবে, জরুরি মনে হয়েছে, সরাসরি রেফারেন্সের বদলে যদি পরোক্ষ প্রয়োগ ও ভাঙন ঘটে, তাহলে কবির নিজস্ব ভাষা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
এলিয়টের ওয়েস্ট ল্যান্ড-এ যেমন বহু রেফারেন্স সত্ত্বেও স্বতন্ত্র শৈলী জন্ম নিয়েছে, সেরকম দৃষ্টান্ত বাংলা কবিতায় দরকার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চরিত্রের অনুপস্থিতি। নব্বই পরবর্তী কবিতা ধীরে ধীরে চরিত্রশূন্য হয়ে পড়েছে, যা প্রমাণ করে জীবন-ঘনিষ্ঠতার টান কমে গেছে। অথচ সুনীলের নীরা, শক্তির অবনী বা জীবনানন্দের শ্যামলীরা কবিতায় এক অমোঘ উপস্থিতি তৈরি করেছিল। নতুন কবিতায় সেই চরিত্রায়নের অভাবই সবচেয়ে বড়ো শূন্যতা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমি অবশ্যই বলিনি কপি-পেস্ট, আমি চরিত্রের কথাই বলেছি। হেলাল ভাই আশা করি আমার বক্তেব্যের জায়গাটা বুঝতে পারবেন।
. . .

হেলাল ভাই বুঝতে পারবেন বলেই মনে করি হাসান। কারণ, মূল কথাগুলো পরিষ্কারভাবে সেখানে এসেছে। আর, এর সঙ্গে তাঁর দ্বিমত পোষণের কারণ দেখছি না। এসব আলাপ তাঁকে বরং ভাবতে সাহায্য করবে অধিক।
. . .

জেগে আছি একা
জেগে আছি আপন ভাবন ঘরে…
দুজনের বাহাস ভালো লাগছে। অনুপ্রেরণা জাগাচ্ছে। আমি এক গণ্যমান্য জঘন্য কবিকে নিয়েও আপনারা ভাবছেন। এ বড়ো প্রাপ্তির কথা। ধন্যবাদ দুজনকেই।
. . .

আপনি কবিতাগুলো একে-একে গ্রুপে দিতে থাকেন হেলাল ভাই। পরে সাইটেও তোলা যাবে। এক ধরনের পাঠ-প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে তখন। আর, গীতিধর্মিতা যেহেতু থাকছে, পরে গানের দিকে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। সিলেটে ভালো মিউজিশিয়ানের আকাল যদিও সমস্যা! শহরটি ক্রমশ মরুভূমি হতে চলেছে!
. . .

আমি এখানে আসলেই মৌলিকতার চিন্তা করিনি এবং করবও না। আমি শুধু জীবনানন্দের ব্যবহৃত শব্দ দিয়েই, তারই আলোকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁরই ব্যবহৃত অন্ধকার শব্দ ব্যবহার করে একটা নতুন ডাইমেনশনে তৈরি করতে চাচ্ছি।
. . .

আপনার লেখা আমাদেরকে ভাবাচ্ছে। আমি নগণ্য পাঠক হিসেবে জঘন্যতম মতামত দিচ্ছি। তবে আমি মনে করি, পাঠককে ভাবানোই কবির স্বার্থকতা। যেহেতু, কবিতা সাদা কাগজের মতো, পাঠক সেখানে তার ইচ্ছেমতো দাগ কেটে যাবে। আপনার পরবর্তী কবিতার আশায় রইলাম।
. . .


ফাইন, হেলাল ভাই। এটিও নিরীক্ষার একটি ধরন হতে পারে। দেরিদা তো বলেই গেছেন, টেক্সট সবসময় অসম্পূর্ণ, ও নতুন অর্থ উদঘাটনের অপেক্ষায় থাকে। জীবনানন্দ দাশের টেক্সটে প্রচুর এম্পটি স্পেস রয়েছে, যেমন ধরেন, তাঁর সুবিনয় মুস্তফি চরিত্রটি। প্রচণ্ড পরিহাসপ্রবণ হতাশায় একে কবিতায় ভাষা দিয়েছেন কবি। কারুবাসনায় নিঃস্ব কবির ভিতরে চরিত্রটি জন্ম নিচ্ছে, যেখানে সময় তাঁর জন্য কিছু রাখেনি। এখন, কবিতার পাঞ্চলাইনে দেখুন জীবনানন্দ ঝেড়ে দিচ্ছেন সরাসরি :
বৈকুণ্ঠ ও নরকের থেকে তা’রা দুই জনে কতোখানি দূর
ভুলে গিয়ে আধে আলো অন্ধকারে হেঁচকা মাটির পৃথিবীতে
আরো কিছুদিন বেঁচে কিছুটা আমেজ পেয়ে নিতে
কিছুটা সুবিধা ক’রে দিতে যেত—মাটির দরের মতো রেটে;
কনট্রাডিকশনকে ইচ্ছে করলে আপনি ব্যবহার করতে পারছেন আজকেও! ‘মাটির দরের মতো রেটে’ শুনলে আমার একসময় উপশহরে ঝুড়ি-কোদাল হাতে সারবেঁধে বসে থাকা মাটি-কামলাদের কথা মনে পড়ত। এখনো তারা বসে কিনা জানি না। জানি না, দরদাম করে তাদের কাজে নিতে লোকজন সেখানে এখন যায় কি-না!
মাটির দরকে আপনি আপনার নিরীক্ষায় কীভাবে জাস্টিফাই করে তুলছেন, নতুন মিনিং তৈরি করছেন, তার ওপরে ডাইমেনশন ও ব্যাপ্তি নির্ভর করবে। জীবনানন্দ দাশের পঙক্তিকে আপনি কেমন করে সাজাচ্ছেন, এবং সেখানে আপনার ভাবনাকে তারা যদি রিপ্রেজেন্ট করে ঠিকঠাক, তাহলে এটি দেরিদীয় শূন্যস্থানকে নতুন করে পূরণ করবে। অন্যথায় আবার সমস্যা দেখা দিতেও পারে। আশা করি বোঝাতে পেরেছি।
. . .
. . .



