সাহিত্যবাসর

ফানা

আহমেদ বেলাল-এর কবিতা সিরিজ : ফানা
Impressonist Artwaork by Maqbul Fida Husain; Source – Pinterest
ফানা-১ 

আমার শূন্য আসমানে কেউ নেই -
শুধু তোমার অনন্তের দিকে
উড়ে যাওয়ার দৃশ্য ছাড়া।
আহত, মুমূর্ষু, বিষণ্ন এই উড়াল -
সমাজ ভেঙে দিয়েছে যার ডানা...

তছনছ হয়ে যাওয়া সংসার বুকে নিয়ে
তবু তুমি উড়ো হে অসীমের পাখি -
আমার এক চোখে আর্শেআজিম অন্য চোখে ফানা...
. . .

ফানা - ৬

তুমি পছন্দ করো ফিসফিসিয়ে কথা বলা,
নীরব প্রার্থনার মতো শেষ রাতের ঘুম,
প্রতিদিন তোমার স্বপ্নের ভুবনে অচেনা কণ্ঠস্বর আসে -
জানালা খুলে দিলেই
ঘর যেন সুপ্ত জগতের আলোড়ন -
এটা কি তোমার অন্যগ্রহে দেখা সেই ভুবন?

স্বাভাবিক কথাবার্তা ভুলে গেছো তুমি
এই পৃথিবীতে থেকে গান গাও ভিন্ন কোনো গ্রহের
নদীর ঢেউয়ের মতো আসা-যাওয়া কেমন করে পারো?
জানি না মনে তোমার জেগে উঠছে কার মনোভূমি

সবকিছু ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ তুমি কার কাছে যাও?
কে বলে কথা এতো মধুর নরম সুরে?
প্রতিবেশী ঠিকই জানবে একদিন অন্যগ্রহের খবর -
এই পৃথিবীর রঙ দিয়ে সাজাও কেন ভিন্ন যাযাবর...
. . .
Mystery – An AI generated Pic; Source – @thirdlanespace.com
ফানা - ২৫ 

আমার আকাশ পুরোপুরি অন্ধকারে ডুবেছিল। হঠাৎ তুমি এলে আর উদ্ভাসিত হলো আমার একান্ত ব্রাহ্মাণ্ড।

আমার সাথে বলা তোমার এক একটা কথা জন্ম দিলো এক একটি নক্ষত্রের! আমি ঈশ্বরের মতো বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলাম। তুমি আয়নার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলে,- কে ওখানে? আমি ইশারা করলাম তোমার নিজের পূর্ণতার দিকে। তুমি একপলক তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলে চিরকালের জন্য - গভীর রহস্যময় প্রশ্নের উত্তর সবসময় মিলে না - যদি মিলে যায়, তো তারপর আর তেমন কোনো কথা থাকে না...

দশ হাজার বছর আগে যখন কোথাও কোনো মানবের অস্তিত্ব ছিলো না -
তখনও তুমি বাতাসের মতো বিরাজমান ছিলে সর্বত্র -
সাগরের গহীন জলেও তোমার নাম লেখা ছিলো : ‘ফানা’...
. . .
ফানা - ২৮ 

তুমি যেমন একদিন কবরের অন্ধকারে থাকবে তেমনি আমাকে অগ্রিম উপহার দাও অন্ধকার। আলো ফেলার নামে অনেকে ইচ্ছে করে বমি করে দিয়েছে আমার উপর। হাসনাহেনার জলে গোছল করাও - শেষ সূর্যাস্তের বেলায় বাবাকেও যেমন অনেকে করিয়েছিল গোছল অন্তিম বেলায়...

আমি অপেক্ষা করতে জানি না। আমার মাথায় অনন্ত কাল বলতে কিছু নেই। আমি সবসময়ই প্রস্তুত তোমার মুখোশ পড়া দেশপ্রেমিক ভাবটিকে গলাটিপে হত্যা করার জন্য। আমার হাতে সময় নেই - আমি অন্ধকারের মতো প্রস্তুত প্রবল জোছনায় তোমায় কবরে শুইয়ে দেওয়ার জন্য...
. . .
Rumi: Sufi Whirling; Source – Google Iamge
ফানা-৩৩ 

ফানা, অন্তরে অনন্ত অসুখ নিয়েও তুমি বেঁচে থাকবে… 

আমার খুব নিকটে বসে যারা আমায় একদিন প্রার্থনা করা শিখিয়েছিল - 
তারা জানতো না নরকজীবন প্রার্থনায় নিভে না। 

শৈশবের আলোছায়া ভুলে যাওয়া মানুষের প্রার্থনা আকাশ অতিক্রম করতে পারে না জেনেও 
বসে আছি পৃথিবীর সবচেয়ে 
পবিত্র দরোজার সামনে - 
জানতে চাই তোমায় নিয়ে কি আছে বিধাতার মনে… 

কেন বারবার তোমাকেই আঘাত করে সুখ পান তিনি? 

এইসব মুহূর্তে
কবিতা আরো নীরব চাওয়া-পাওয়ার এই তুমুল দুনিয়ায়…

এমন কোনো দরোজা নাই 
যেখানে তোমার মঙ্গল কামনায় 
আমার টোকা পড়েনি…

আশেপাশে
এমন কোনো মানুষ নাই 
যাকে আমার চেয়ে একটু বেশি পবিত্র ভেবে 
সাথে নিয়ে
তোমার এই দুর্বিষহ সময়ে 
একটু প্রার্থনায় নত যে হবো… 

তাই, একা একা যাই - 
আলো-অন্ধকারের উৎসের কাছে যাই 
প্রার্থনার সকল সময় শূন্য মনে হওয়ার পরও তোমার প্রশান্তির জন্য যাই... 
. . . 

ফানা-৩৮

সবকিছুই ফেলে দিয়েছি এই আত্মায় 
ডুবে থাকা নরকে। 
স্বপ্নে, দুঃস্বপ্নে দেখা রাঙা ভাবির হাত; 
মৃত্তিকার অনিশ্চিত ব্রহ্মাণ্ডে 
শিহরন জাগানো প্রথম বীর্যপাত; 
কালে অকালে চলে যাওয়া বন্ধুদের নিশ্চিত দীর্ঘশ্বাস, প্রতিবেশীদের জমানো সমস্ত আত্মবিশ্বাস - 
সবকিছু নিয়ে বসে আছে নরক এক - 
(অন্তরের অলিন্দে করে সে অনেক আলাপ)
কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারে না - না কোনো স্বর্গ অথবা প্রশান্তির পরম কোনো প্রলাপ... 
. . . 
তুমি আছো আন্দাজে, আনমনে,লোককথার নানান বয়ানে। কোরানে, পুরাণে, আউলিয়া ও সন্ন্যাসীদের গহীন অবচেতনে। তুমি আছো পুষ্পের ফুটে ওঠায় ও তার ছন্দে, ঘ্রাণে। মধ্য ও শেষ রাতের একাকী ইবাদতকারীদের অন্তরে...।  তবুও, তবুও পথের পাশে মুমূর্ষু, ক্ষুধার্ত অসহায় শিশুদের চিৎকারের মুখোমুখি হলে মনে হয় তুমি নাই... অবিনশ্বর, অনিশ্চিত এই দ্বিধা নিয়েও কেন যে তুমিহীন তুমিময় এই মহাকাশের দিকে নতুন বছরের শুরুতেই শুধু তোমার প্রতিই দৃষ্টি যেতে চায়! .... 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 3

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *