. . .
শিকল পাগলার গানটি মর্মস্পর্শী। রিলস-টিকটকওয়ালাদের হাতে মজাক-পরিহাসে অতিমাত্রায় ব্যবহৃত হওয়ার কারণে গানের আদি আবেদন কম শ্রোতাই এখন ফিল করতে পারে। মজাক-পরিহাসের ব্যবহার গানের ন্যারেটিভে হয়তো পৃথক মাত্রা নিয়া আসছে, কিন্তু সুবিচার করতে পারছে কি? না, পারে নাই। গানটির মর্মবিধুর জীবনবেদ তাতে বরং অনেকখানি বিনষ্ট হইতেছে। শিকল পাগলা এখন কার কাছে নালিশ জানাবে? সাত আসমানের উপ্রে খোদার টাইম নাই তার নালিশে কান দেয়ার, মানুষ তো হিসাবেই আসে না!
শিকল পাগলা অন্ধ কোনো গায়েন না। সে দেখতে পায়। অন্ধ চোখে সব দেখে। আমরা যারা চোখে দেখতে পাই, তাদের চেয়ে তার দৃষ্টিশক্তি অনেক-অনেক ভালো। আমরা বরং আন্ধা! হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ;- গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিতে গানটি রাখছিলেন আমজাদ হোসেন। আমরা সেই চোখ থাকিতেও অন্ধ জীবের জীবন কাটাই। দেখতে পাই ঠিক আছে,- আসলে কি দেখি ঠিকঠাক? দেখার চোখ কি সত্যি আমাদেরকে দান করছেন খোদাতালা? দান যদি করেই থাকেন তাহলে ঘুটঘুটা আইন্ধার লাগে কেন সব?
শিকল পাগলা এই চক্কর হইতে মুক্ত। অন্ধ চোখে দিব্যি সব দেখতে আছে সে! চোখের কী ধার! যখন গান করে,- আমাদের সকল জারিজুরি মনে হয় ন্যাংটা করে দিতেছে। জন্মান্ধ এই চক্ষুষ্মানের আঁখিঠারকে ফাঁকি দিবার নাই উপায়।
আমাদের গ্রামবাংলায় আজো এরকম কত শিকল পাগলা একতারা-দোতরা আর বেহালা বাজিয়ে গান করতে আছেন, ভবিষ্যতেও হয়তো করবেন। লোকায়ত বাংলার অবিনশ্বর গানভাণ্ডারে শিকল পাগলারা যতদিন জীবিত,- অন্ধ চক্ষুষ্মানদের মরণ নাই।
. . .
. . .