আসুন ভাবি

প্রযুক্তিক স্বচ্ছতায় আমাদের ভবিতব্য

Reading time 6 minute

থার্ড লেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রকাশিত ও পরে থার্ড লেন স্পেস-এ সংযোজিত, সাইট-অবদায়ক মোস্তাফিজুর রহমান জাভেদ রচিত দগ্ধ সমাজে বুয়িং-চুল হান বিষয়ক রচনায় পাঠ-সংযোগ

Byung-Chul Han; Image Source – I Practise Philosophy as Art – ArtReview

দগ্ধ সমাজে বুয়িং-চুল হান শিরোনামে প্রকাশিত ধারাবাহিক আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান জাভেদ এ-পর্যন্ত যেটুকু আলাপ করেছেন, তার থেকে এই ধারণা আশা করি অসংগত নয়,—মানবজাতির নৈতিকমানের নিম্নগতি নিয়ে জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের মতো তিনিও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। প্রযুুক্তিক উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে স্বচ্ছতার সমাজচূড়ায় আরোহনের আওয়াজকে যখন বিশ্ব জুড়ে জোরালো করে তোলা হয়েছে, বুয়িং-চুল হানকে আমরা সেখানে বিপরীত বাঁকে মোড় নিতে দেখছি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় নিটোল সমাজ গড়ে তোলার এই বাসনাকে মতলবি বলে রায় দিচ্ছেন হান। প্রযুক্তিক স্বচ্ছতা নামক আতিশয্যের মধ্যে মানুষের গভীর গোপন ব্যক্তিগত পৃথিবীর বিলোপ ও একে সাহারা মান্য করে গড়ে ওঠা সংবেদনশীল অনুভূতির পতন দেখতে পাচ্ছেন এই ভাবুক।

সংবেদী প্রজাতি হিসেবে মানুষের জীবনে আলোকায়ন বা রেনেসাঁসের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ইমানুয়েল কান্ট আলাপ তুলেছিলেন। মিশেল ফুকো আবার কান্টের এই আলোকায়ন নির্ভর মানব প্রগতিতে দেখতে পেয়েছিলেন গভীর সব খাদ ও চোরাগুপ্তা ফাঁদের বাহার। আলোকায়ন মানে হচ্ছে বর্বরতা থেকে প্রগতির দিকে মানুষের যাত্রা। তা হতে পারে, কিন্তু যাত্রাটি কেমন করে মানুষকে ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলার ক্রীতদাস করে তুলেছে, তার বিস্তারিত বয়ান ফুকো রেখে গেছেন।

বুয়িং-চুল হান প্রকৃত অর্থে ফুকো বর্ণিত শৃঙ্খলাকে পুনরায় প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন। প্রযুক্তির ওপর মানব প্রজাতির অত্যধিক নির্ভরতা তাকে কীভাবে Digital Swarm বা ঝাঁকের কৈ করে তুলছে, এর একটি পরিষ্কার ব্যাখ্যা যে-কারণে আমরা তাঁর থেকে পাচ্ছি। জিম্মি ও শৃঙ্খলিত এই ঝাঁকের কৈয়ের ভবিষ্যৎকে সুতরাং সুখকর ভাবা তাঁর কাছে যুক্তিসংগত মনে হয়নি। হানের ভাবনাকে এদিক থেকে ইমানুয়েল কান্ট বর্ণিত আলোকায়নের ফুকো নির্মিত অ্যান্টিথিসিসের সিনথেসিস বা দার্শনিক সংশ্লেষণ কি বলা যায়? বলা মনে হচ্ছে সম্ভব। অন্যদের অবশ্য ভিন্নমত থাকতেও পারে সেখানে।

সে যাকগে, বুয়িং-চুল হানের ভাবনা অনুসরণ করতে নেমে মোস্তাফিজুর রহমান জাভেদ এ-পর্যন্ত যে-আলাপ তুলেছেন সেটি আবার অ্যালডাস হাক্সলি ও জর্জ অরওয়েল-এর নাম নিতে আমাদেরকে মজবুর করে তোলে। প্রযুক্তি-শৃঙ্খলে বন্দি মানব-সমাজের আশু পরিণামকে হান তুলে ধরেছেন, কিন্তু এই প্রশ্নটি সম্ভবত তাঁর আলাপে উহ্য থেকে যাচ্ছে যে,—মানুষকে শৃঙ্খলিত ক্রীতদাসে পরিণত করার ক্ষেত্রে কে বা কারা গণ্য ভূমিকা রেখে চলেছে সবসময়? মানব-সমাজ কি আলোকায়ন ও প্রগতির স্বতঃস্ফূর্ত ধারাবাহিকতায় স্বেচ্ছায় নিজেকে বন্দি করেছে সেখানে অথবা তাকে ফন্দি-ফিকিরের মধ্য দিয়ে বন্দি হতে বাধ্য করেছে কেউ?

প্রশ্ন উঠবে,—কে বা কারা পটভূমি তৈরি করে দিচ্ছে? রাষ্ট্র? বৈশ্বিক পুঁজিবাদ? নাকি,—রাষ্ট্র ও পুঁজিবাদকে নতুন মেরুকরণে যেতে বাধ্য করতে জানে, এরকম কোনো নেপথ্যে সক্রিয় গোষ্ঠী বা আরো স্পষ্ট করে বললে অলিগার্কি? প্রশ্নগুলোর উত্তর বুয়িং-চুল হান কীভাবে দিয়েছেন সেটি জানার আগ্রহ থাকছে। জাভেদ নিশ্চয় তাঁর হান-অন্বেষণের পরবর্তী ধাপে আমাদের সে-কৌতূহল মিটাবেন।

Aldous Huxley on the power of TECHNOLOGY! – BBC Interview 1961; Source – BBC Archive YTC

হাক্সলির ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড ও অরওয়েলের 1984 কিন্তু অনেক আগে এদিকটায় আলো ফেলেছিল। বছরের-পর-বছর ধরে দুটি রচনাকে কল্পআখ্যান হিসেবে আমরা পাঠ করে এসেছি। বিমানবিক বা ডিস্টোপিয়ান সমাজের ছবি সেখানে তুলে ধরেছিলেন সময়ের দুই মেধাবী লেখক। আন্তর্জালে আখ্যান দুটির সারবস্তু ও তুলনামূলক প্রভেদ নিয়ে ঝাঁকে-ঝাঁকে আলাপ চোখে পড়বে। তার মধ্যে মি. ব্রেন-এর ইউটিউব চ্যানেলে সংরক্ষিত আলাপটি বিশেষ গুরুত্ব রাখে বলে মনে হয়েছে। হাক্সলি ও অরওয়েলের রচনারীতির মুন্সিয়ানা ও তুলামূলক প্রভেদের জায়গাটি তিনি ভালো ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যাখ্যাটি বলাবাহুল্য উপভোগ্য ও সময়-প্রাসঙ্গিক।

প্রায় পঁচিশ মিনিটের আলাপে হাক্সলি ও অরওয়েল চিত্রিত বিমানবিক মানব-সমাজে কর্তৃত্ববাদের স্বরূপ মি. ব্রেনের আলাপে উঠে এসেছিল। সেইসঙ্গে চয়েজ বা বেছে নেওয়ার প্রশ্নকে দুটি আখ্যান কীভাবে ডিল করছে, এবং সেখানে হাক্সলি ও অরওয়েলের মধ্যে বিরাজিত প্রভেদের জায়গাটি বুঝে উঠতে সাহায্য করে এই আলাপ। কথা আর না-বাড়িয়ে আলাপে উঠে আসা নির্যাসকথা সংক্ষেপে তুলে ধরছি এখানে :

  • ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড ও 1984-র নিয়ামক উপাদান হচ্ছে প্রযুক্তি। হাক্সলি ও অরওয়েল দুজনেই দেখিয়েছেন কারা এর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণকে একচ্ছত্র করে। দুটি আখ্যানের এটি হচ্ছে মিলনমোহনা।
  • প্রযুক্তিকে যখন সংখ্যালঘু কিন্তু শক্তিশালীরা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে, তখন এর ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বাধিকার বিলুপ্ত হয়। অবলুপ্তি এদিক থেকে ইউটোপিয়ার পতনকে অনিবার্য করে। সাম্য, স্বাধিকার, ন্যায্যতা বিষয়ক গালভরা যত আলাপ অথবা বয়ান তৈরির পরিসরটি তখন আর বেঁচে থাকে না।
  • প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে বিধায় সমাজের ওপর কর্তৃত্ববাদ চেপে বসে। ক্ষমতা এখানে কুক্ষিগত এবং গণের চাওয়া উপেক্ষিত। সুতরাং মোটাদাগে মানব-সমাজ মানবিক হওয়ার পরিবর্তে বিমানবিক বা তার ওপর যা চাপানো হচ্ছে, সেটি মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার দিকে ধাবিত হতে থাকে। অনুভূতিশূন্য এক বিমানবিক বিশ্বের সম্মুখীন হয় সে।
What If We Are Living In A Huxleyian World? – Amelia Marlowe; Source – TEDx Talks YTC

অ্যাডলাস হাক্সলি এখানে এসে সমাজকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার যে-ছবিটি আঁকছেন, সেটি কিন্তু জর্জ অরওয়েল থেকে পৃথক। ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড-এ সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য যে-সমাজ গড়ে তোলা হয়, সেখানে জবরদস্তির কোনো স্থান ও অনিবার্যতা থাকে না। মানুষের ওপর ভয়, আতঙ্ক, নিষেধাজ্ঞার সন্ত্রাস কায়েম করতে সচরাচর যেসব কৌশল অবলম্বন করা হয়, এসবের কোনো অস্তিত্ব হাক্সলির কলমে চিত্রিত বিমানবিক সমাজে পাওয়ার নয়।

ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড-এ গড়ে তোলা সমাজে যারা বসবাস করছে, তারা বরং খুশিমনে পূর্ব-নির্ধারিত কর্তৃত্ববাদকে মেনে নেয়। কারণ, তাদের মধ্যে এই চেতনার জন্ম দেওয়া হয়েছে,—একমাত্র স্বেচ্ছাবন্দিত্ব সকল প্রকার বিপদ-আপদ ও অনিশ্চয়তার হাত থেকে তাদেরকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। উদ্বেগহীন জীবন কাটাতে সমস্যায় পড়তে হবে না। প্রয়োজনগুলো সেখানে মসৃণভাবে নির্ধারিত। দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া কীভাবে মিটবে তার ব্যবস্থা আগে থেকে এই সমাজের নিয়ন্ত্রকরা করে রেখেছেন।

হাক্সলির আখ্যানে সোমা নামক মাদক হলো এমন এক প্রযুক্তি-উপকরণ যার অধীনে নিজেকে সে নিরাপদ গণ্য করে। তার জৈব-প্রবৃত্তি শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তীতায় সুখী বোধ করে। বুয়িং-চুল হান যে-স্বচ্ছতার বিপদ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত, হাক্সলির আখ্যানে উঠে আসা সমাজে সেই স্বচ্ছতা হচ্ছে মাদক। সংখ্যাগরিষ্ঠকে নিয়মবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল প্রাণীতে যেটি রূপান্তরিত করতে সক্ষম। এরকম এক সামাজিক পরিসরে আমরা কিন্তু ইতোমধ্যে বসবাস করতে শুরু করেছি। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সমাজগঠন ও জীবনধারা এদিক থেকে হাক্সলির সোমা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত-নির্ধারিত বলা চলে!

জর্জ অরওয়েলের আখ্যানে নিয়ন্ত্রণ কায়েমে ব্যবহৃত হয় ভয় ও আরোপণ নামক চিরন্তন দুই মারণাস্ত্র। তথ্যকে সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বলা ভালো, তথ্য কীভাবে গরিষ্ঠের কাছে যাবে তার ছক নির্ধারিত ও পরিকল্পিত। নির্ধারণ নিশ্চিত করতে ভয় হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার। একে উৎপাদন করতে গিয়ে যেসব রসদের দরকার পড়ছে, তার সবটাই আখ্যানে জায়গা দিয়েছেন অরওয়েল। ফ্যাসিস্ট বলতে আমরা এখন যেটি বুঝি, অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠকে কোনো ভাবাদর্শে সম্মোহিত করা, এবং যারা তা মানতে চাইবে না, তাদেরকে সামাজিক সংহতির জন্য ক্ষতিকর ও সমাজদ্রোহী রূপে উপস্থাপনের ছবি 1984-র বয়ানকে প্রাণবন্ত ও সময়-প্রাসঙ্গিক রেখেছে আজো।

Big Brother is Watching You – George Orwell – 1984; Source – Voice of Dhaka YTC

একটি সার্বক্ষণিক সর্তক পাহারা ও নজরদারির মধ্য দিয়ে উপযুক্তকে বেছে নেওয়া ও প্রতিপক্ষকে নিকেশ করার লক্ষ্যে সক্রিয় ব্যবস্থাকে জর্জ অরওয়েল বড়ো ভাই সব দেখছেন অভিধায় দাগিয়ে বর্ণনা করেছিলেন। ফিয়ার ও টেরর এরকম একখানা সমাজ বিনির্মাণের অপরিহার্য অঙ্গ। পৃথিবী জুড়ে যার মঞ্চায়ন অতীতে ঘটেছে; এবং এখনো ঘটেই চলেছে! এই সমাজ-পরিসরে মানুষ ক্রমশ জড়বুদ্ধিতে পরিণত হয় ও পরিশিষ্টে পৌঁছে বশ্যতাকে অভ্যাস হিসেব তারা মেনে নেয় সেখানে।  

  • হাক্সলি ও অরওয়েল যে-দুটি পথ তাঁদের আখ্যানে তুলে ধরেছেন, দুটিই কিন্তু মারাত্মক! সমাজকে চিন্তাশূন্য স্থবির শৃঙ্খলায় বেঁধে বিমানবিক করতে ভয়ানক কার্যকর। উভয় সমাজে মানব প্রজাতি প্রকৃতপক্ষে একসময় নিজের ওপর সেন্সর আরোপ করে বসে ও অবোধ অভ্যাসের দাসে পরিণত হয়।

এখন এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? মি. ব্রেন এখানে চেক প্রজাতন্ত্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিখ্যাত লেখক ভাস্লাভ হাভেলকে স্মরণ করেছেন। মনঃসংযোগের ক্রমবর্ধমান অসুবিধা নামক বিখ্যাত নাটিকার রচয়িতার সঙ্গে বাঙালি পাঠক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুবাদে অনেক আগে থেকে পরিচিত। হাভেল তাঁর রচনায় বিমানবিক সমাজের বিপদ ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে বিস্তর আভাস দিয়ে গেছেন। তার মধ্যে প্যারালাল স্ট্রাকচার বা সমানুপাতিক কাঠামো-র ধারণাটি বেশ আলোচিত ছিল একসময়।

হাভেলের মতে, কর্তৃত্ববাদের মাধ্যমে যে-নিয়ন্ত্রণ সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে, তাকে প্রতিহত করতে হলে সমান্তরাল কিন্তু সর্বজনীনন কাঠামোর প্রয়োজন পড়ছে। যেসব প্রাতিষ্ঠানিক বলয় ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদ অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে,—সমানুপাতিক বিকল্প প্রাতিষ্ঠানিকতা ছাড়া তাকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। স্বাধীন চিন্তা, মুক্ত মতামত ও বিকল্প শিক্ষাপদ্ধতি গঠনের সড়ক খুঁজতে নামা ছাড়া বাঁচার উপায় নেই কারো। রাজনৈতিক পন্থায় এরকম সদা বিনির্মাণযোগ্য বিকল্পটি মানব প্রজাতির জন্য এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

হাভেল এক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার ওপর জোর দিয়েছেন বেশি। কর্তৃৃত্ববাদ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যে-গণমাধ্যম তৈরি করে, তার বিপরীতে স্বাধীন গণমাধ্যম গড়ে তোলার কাজে নামতে হবে সবার আগে। বাস্তবে আমরা সেটি দেখছি এখন। সিটিজেন জার্নালিজমকে কেন্দ্র করে মুক্ত গণমাধ্যম অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে এর সংখ্যা অপ্রতুল ও মান যাচ্ছেতাই হলেও, পশ্চিমাবিশ্বে মুক্ত সাংবাদিকতার পরিসর কিন্তু ক্রমেই বড়ো হতে চলেছে।

Vaclav Havel – Freedom Collection; Source – George W. Bush Presidential Center YTC

হাভেল আরো যোগ করছেন তাঁর প্রস্তাবনায়। তাঁর মতে,—প্রযুক্তিকে যে-লোক বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিলে ব্যবহার করতে ও সেখান থেকে মুনাফা একলা সাবাড় করতে চাইবে, তার এই আগ্রাসনকে রোখার জন্য হলেও বিকল্প কমিউন গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের ওপর মুনাফার হক সমবণ্টনের নীতি অনুসরণ করবে;—কমিউনের এটি হবে চালিকাশক্তি।

হাভেলের প্রস্তাবনা গতানুগতিক মনে হতে পারে, তবে এটি চিরন্তন সত্য,—সোমা অথবা ফিয়ার… যে-পথ ধরে সমাজে কর্তৃত্ববাদ জেঁকে বসুক,—তাকে রোখার জন্য সংখ্যালঘু একটি অংশ কিন্তু সেখানে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারাই কিন্তু দাঁড়িয়ে যায়। রাজনৈতিক প্রতিরোধের পরিসর কতখানি তৈরি করতে পারল, তার ওপর যদিও তাদের সাফল্য নির্ভর করে। সুতরাং বুয়িং-চুল হান আপাতভাবে যে-নৈরাশ্যের ছবি তুলে ধরছেন সেটি মিথ্যে নয়, তবে ছবিখানা পালটানোর বীজ আবার নৈরাশ্যের মধ্যে নীরবে বাড়তে থাকে।

মানুষের পক্ষে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত জীব রূপে বসবাস করা সম্ভব নয়। আদম ও হাওয়া মূলত হাক্সলি চিত্রিত পরিবেশে বিচরণ করছিল একদা। অবোধ, সরলর ও স্বেচ্ছাবন্দি ক্রীতদাস রূপে স্বর্গোদ্যানে তাদের আহার-বিহার কিন্তু মন্দ ছিল না। নিয়মভঙ্গের কারণে তারা পরে কষ্টের জীবনে পতিত হয়। মানব প্রবৃত্তির এই চিরন্তন বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করা যে-কারণে সহজ নয়। সুতরাং তার পতন তাকে বোধোদয়ের দিকে নিয়ে যেতেও পারে।
. . .

How We Chose Our Own Dystopia? Huxley vs. Orwell; Source – Mr. Brain YTC

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 40

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *