অনুকাব্য ও অন্যান্য — সুমন বনিকের কবিতা

অনুকাব্য-১
বিদ্বেষ ছড়াতে-ছড়াতে
শেষতক নদীর বুকে ছুরি চালালে!
জানো-না,
জল কাটলে দু’ভাগ হয় না
. . .
অনুকাব্য-২
আমের আঁটিতে লেখা থাকে
জীবনের বৃত্তান্ত।
সায়াহ্নে এসে
আম আর খোসা
দুই-ই খোয়ালে।
পাঠ হল-না নদী ও নারী!
. . .
অনুকাব্য-৩
মৃত্তিকা-ই শুধু জানে তার গর্ভধারণ ক্ষমতা।
আকাশটা যাটিতে
নামতে দাও,
তারপর, হাত বাড়াও।
তুমি দেখছি—
মাকালফল
বাইরে ডগমগ—ভেতরে ছাই!
. . .
অনুকাব্য-৪
শুনলে-না,
যদিও কথাগুলো
ডিস্টিল ওয়াটারের মতো টেস্টলেস,
তথাপি
নিরাময়যোগ্য!
. . .

জ্যোতিহীন চোখে
যখন কাফনপরানো শবদেহটি
শোকভেজা উঠোনে রাখা হলো;
বিষাদের মেঘ বুকে নিয়ে
উৎসুক মানুষগুলো ধীর-পায়ে এগিয়ে এলো।
চোখের কোটরে এক সমুদ্র নোনাজল
বুকে হাহুতাশের লু-হাওয়া, আর
মর্মভেদী বিলাপের মেঘ উড়ে উড়ে
মিলিয়ে গেল বেদনার নীল আকাশে।
ভালোবাসার কুসুমমাখা স্তুতি; বাতাসে
ছড়িয়ে পড়ল দিগবিদিক।
কতিপয় দুর্নামছড়ানো মাছি
ভন-ভন করতে লাগলো চারপাশে।
মমতাজড়ানো কুয়াশা ক্রমশ কেটে যেতে-যেতে
কারও-কারও মুখে ঠাট্টা-হাসির সূর্য উঁকিঝুঁকি দেয়,
শোকে আহত নদীতে ভাটির টান পড়ে
কেমন-করে জেগে উঠে উৎসবের কালনাগ যত!
শুধু, জ্যোতিহীন মৃতচোখে শবদেহটি—
অপলক তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে
আকাশের দিকে
. . .
ফেরিওয়ালা
আয়না বেচতে এসে দেখি
এ শহরের সবাই অন্ধ,
চোখে দেখে-না!
অথচ কী আশ্চর্য
সবার-ই চোখ আছে,
সেই চোখ—শকুনের চোখ!
চোখের কোটরে
মন্বন্তরের হাহাকার,
লোভাতুর আগুনের হল্কা।
এখানে ঘুঘুকাল;
উগারে ওঠার আগেই
ধান খেয়ে যায় ঘুঘু।
ভবেরবাজারে আয়নার বেচাকেনা নেই;
কারণ, অন্ধরা আয়নায় মুখ রাখে-না।
. . .

সিলেট শহরে কবি সুমন বনিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শহরকে ঘিরেই আবর্তিত তাঁর যাপন। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা। বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। কবিতা লিখছেন গত তিন দশক ধরে। ছোটকাগজ অগ্নিশিখা সম্পাদনা করে চলেছেন দীর্ঘদিন। প্রকাশিত কবিতাবই জ্বলছি জলের তলে, প্রেমযোগ, অবেলায় ডোরবেল। কবিতার পাশাপাশি ছড়া ও শিশুসাহিত্যে ভূমিকা রাখছেন নিয়মিত। শিশুদের জন্য প্রকাশিত কবিতাবই রাতের গায়ে জোনাক জ্বলে।
. . .

. . .
. . .