রবি ও আজাদের এই যৌথ বেঁচে থাকা ও ফিরে-ফিরে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা প্রমাণ করে,—বাংলার মাটিকে চিরতরে আফগানিস্তান বানানোর মিশন সহজ থাকছে না। মিশন সফল হতে সময় লাগবে;—এবং তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হওয়া বিচিত্র নয়। ভারতকে গজওয়াতুল হিন্দ বানানোর খোয়াবঘন বাসনার মতো বাংলাদেশকেও মুমিন মুসলমান করে তোলার ইমানি দিবাস্বপ্ন আখেরে দুঃস্বপ্নে মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
-
-
অন্ধ এই Growth Compulsion—এর উৎস কী? হান বলছেন,—প্রবৃদ্ধির এই অন্ধপ্রেরণা আসে গভীর Ontological ভয় থেকে। আর তা হলো মরণের ভয়। পুঁজিবাদে মানুষ ধ্বংস হতে চায় না। ক্ষয়প্রাপ্ত হতে চায় না। হারিয়ে যেতে চায় না। অস্তিত্বকে সে তাই সঞ্চয়, উন্নয়ন ও অর্জনের মতো ন্যারেটিভে অবিনাশী রাখতে মরিয়া হয়। Capital is accumulated as a defence against death, against absolute loss.—পুঁজির মধ্যে মানুষ নিরাপত্তা খোঁজে; সে খোঁজে অমরত্ব! এটি তাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করবে;—এই বিশ্বাসে অধীর দেখায় তাকে।
-
কোনো জাতিকে স্মৃতিহীন করার পয়লা কদম হচ্ছে স্মৃতি মুছে ফেলা। বইগুলো ধ্বংস করো, তার সংস্কৃতি ও ইতিহাস গুঁড়িয়ে দাও। তারপর নতুন কেউ নতুন বই লিখবে। নতুন সংস্কৃতি পয়দা করবে, নয়া ইতিহাস লিখবে। জাতি ভুলে যেতে বসবে সে কে ছিল বা অতীতে কী ছিল পরিচয়। ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামের অর্থই হচ্ছে বিস্মৃত হওয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
-
হাক্সলি ও অরওয়েল যে-দুটি পথ তাঁদের আখ্যানে তুলে ধরেছেন, দুটিই কিন্তু মারাত্মক! সমাজকে চিন্তাশূন্য স্থবির শৃঙ্খলায় বেঁধে বিমানবিক করতে ভয়ানক কার্যকর। উভয় সমাজে মানব প্রজাতি প্রকৃতপক্ষে একসময় নিজের ওপর সেন্সর আরোপ করে বসে ও অবোধ অভ্যাসের দাসে পরিণত হয়।
-
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপকে পর্যবেক্ষণে রাখে। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ক্যামেরা,—সবকিছু তার গতিবিধি অনুসরণ ও লিপিবদ্ধ রাখায় নিয়োজিত। মানুষ এখন ‘ডিজিটাল প্যানোপটিকন’ (digital panopticon)-এ বসবাস করে। নিজেও জানে না,—তাকে সেখানে কারা, কখন ও কীভাবে নজরে রাখছে। নজরদারির ভয় তাকে তাড়া করে বেড়ায়! ওই ভয় থেকে স্বেচ্ছায় তার আচরণ পালটে নিচ্ছে সে। নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখার অভ্যাস তার মধ্যে তীব্র হতে দেখছি আমরা। এই মানুষকে সুতরাং স্বেচ্ছা-শৃঙ্খলিত বলা যেতেই পারে।