বন এক জিনিস আর একটি অরণ্য... পুরোপুরি আলাদা ব্যাপার। সময় যত অতিক্রান্ত হয়েছে, কমল আর কমল থাকেননি। বৃক্ষ থেকে অরণ্যে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর দেহে কান্টের সমুদয় নোমেনারা ছিল ক্রিয়াশীল। তারা তরঙ্গিত সেখানে। মানুষ কমল চোখ বুজেছেন, কিন্তু বৃক্ষনাথ কমল এখনো জীবিত। শুনতে পাই, ভালোপাহাড়ের চূড়ায় অরণ্যকমলে পরিণত আমাদের কবি উপনিষদের শান্তিবাণী জপ করছেন...
-
-
সংক্ষুব্ধ বাংলাদেশ টু নামক কিমাকার সময়ে এরূপ স্বচ্ছতার সঙ্গে, কাণ্ডজ্ঞানে জারি থেকে জানা কথাগুলো পুনরায় স্মরণ করতে বলা লোকজন সংখ্যায় কমতে-কমতে নেই হওয়ার পথে আছেন। জানি না, আশি-ঊর্ধ্ব বয়সে সফিউদ্দিন আহমদ এসব কতটা কী ভাবতে সক্ষম! তবে তাঁর মতো লোক, যাঁদেরকে আমরা একসময় ভক্তি অথবা ভীষণ ক্লিশে ভেবে পাত্তা দিতে নারাজ থেকেছি,— তাঁরা মনে হচ্ছে কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ও মানবিক ছিলেন!
-
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কাজেই আমাদের জন্য বিরাট সমস্যা! এই-যে তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ, হ্যানত্যান,—সেখানে লোকটির কথাসাহিত্যে নতুনত্ব তৈরির চেষ্টা আমরা বড়ো একটা আমলে নিতে চাই না! ভাব দেখে মনে হয়,—নব্বই থেকে শুরু হওয়া সাহিত্যের মচ্ছব কস্মিনকালেও তাঁর সৃজনশীল লেখক হয়ে ওঠার ধারাবাহিকতাকে আমলে নেবে না অতটা!
-
প্রাচ্যে এই গুরুবাদী পন্থা মানুষকে ক্রমে যুক্তিবিরহিত মিথপূজারী করে তুলেছে। জাগতিক সংকটকে যে-কারণে সুফি ও মাজারপন্থীরা এখন আর মোকাবিলার শক্তি রাখেন না। সময় যত যাবে, তাদের এই জীবনধারা তাদেরকে মেরুদণ্ডহীন সরীসৃপে রূপান্তরের সম্ভাবনা তৈরি করবে। সুফিকেও জীবনবাদী হতে হয়। তার মধ্যে সৃষ্ট ইশকের লহর যদি সমাজকে প্রভাবিত করতে না পারে, ভালোবাসার প্রয়োজনকে অমোঘ করে তোলার শক্তি না ধরে, প্রেমের প্রচারে শহিদ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে অগ্রসর হতে না পারেন, অন্যায়ে জড়োসড়ো থাকেন, ভক্তিরস ও কাওয়ালে নিরাময় খোঁজেন কেবল... এগুলো তাকে প্রকারান্তরে পলায়নবাদী করে তোলে।
-
সৃষ্টি এখানে কেবল তাঁর অনন্যনির্ভর গুণের বিচ্ছুরণ। আলাদা করে এক-একটি গুণের সাহায্যে স্রষ্টাকে দায়বদ্ধ চিহ্নিত করা স্বয়ং তাঁর একত্বের বরখেলাফ। মানব জগতে ভালোমন্দ যা কিছু ঘটছে, এর সঙ্গে তাঁকে জড়িত করা যুক্তিসংগত নয়। তিনি হলেন আবশ্যিক অনন্যতা;—যেখান থেকে সৃষ্টির সূচনা ও বিস্তার ঘটছে। এই শর্তের বাইরে তাঁর কোনো ভূমিকা নেই।