আহমেদ বেলাল-এর কবিতা সিরিজ : ফানা

ফানা-৪০
যদি খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লেনিনের পরিচারিকা আকস্মিক পাথর দিয়ে আঘাত করত মাথায়?
যদি হিটলারকে কামড়ে দিতো বিষাক্ত কোনো বিচ্ছু? রবিঠাকুর মদ্যপ হতেন ঋত্বিক ও মানিকের মতো? কার্ল মার্কস ধাক্কা খেতেন কোনো আনমনা ট্রামের লগে?...
তবে আমরা মুখোমুখি হতাম কোনোদিন?
যদি সমন্বয়কের দল সরকারি টাকায় তাজমহল, পিরামিড আর কালো কালো জোব্বার পাহাড় বানানো শুরু করে দেয়?—
তো আমাদের স্বপ্নে দেখা মহাকাশে শেষ চুম্বন কি দেওয়া হবে?
আমরা ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছি ফানা... স্বর্গের আভায় নয়, বিচ্ছুদের বানানো অকল্পনীয় নর্দমায়...
. . .
ফানা-৪১
কষ্ট পেয়ে পেয়ে ম্লান সব আয়না!
মুখ দেখতে হলে যেতে হয় দূরের জলাশয়ে।
ভাঙা বহু পথ আলোকবর্ষ দূর থেকেও স্বপ্ন দেখায়...
হলুদ রংয়ের সূর্য দেখে ভয়ে কেঁপে ওঠে
সবুজ পাতার দেশ।
কোথাও যাবো না যাবো না করেও দূরে সরে যাচ্ছি বহু বন্ধন থেকে...
স্বচ্ছ জলের প্লাবন ছেড়ে...
অচেনা আহবানে পথচলা থামাইনি কখনো—
অথচ এখন মনে হয়
কারো জন্যই কোনো পথই নেই—
সূর্য রুদ্ধ দীর্ঘ সময়ের বালুতীরে...
গহীন রাতে
জাগতিক কোনো কারণ ছাড়াই কেন রিংটোন বাজে শুধু কবিদের সংসারে!
. . .

ফানা-৪৪
নীলিমায় মিশে যাচ্ছে
ইট বালু সিমেন্টের ঠিকানা।
শাদা টুপি
আর লাল মাফলারের ফেরিওয়ালারা জানেনা
তাকে কি আদৌ ধ্বংস করা যায়—
নাকি সে আবার হুঙ্কার দিয়ে জানান দেবে
কোথায় তাঁর অমরত্বের আস্তানা...
অট্টহাসির আড়ালে
ফিসফিসিয়ে কথা বলছে ইতিহাস।
স্তব্ধ, অশ্রুহীন চোখের মানুষ
আগুনে হাত রেখে দেখে নিতে চায়
রাত-বিরেতে
কে কোন কূটকৌশলের গান লিখে যায়...
বারবার আহত নিহত হও তুমি
এই মাটিরই
নিত্য কোনো ঘামে ভেজা শ্রমিকের মতো।
ভুলশুদ্ধ নিয়ে তুমি সাথীই ছিলে আমাদের
ফানার অনন্য অসম্পূর্ণ সব স্বপ্নের মতো...
. . .
ফানা-৪৫
পাহাড়ের ওপাশে রাত্রি এলে
সবকিছু দুঃস্বপ্নের ঘুম—
তবু তুমি থাকো বোকাসোকাদের সাথে
বন্যা পূর্বাভাসের অবিরাম বৃষ্টি হয়ে
বুকের আড়ালে ছন্দে ছন্দে বাজো
দূরগামী মানুষের সুর...
এই মৃত্তিকার কান্নার কোনো শেষ নেই
অসীম জগতের বিস্তারের মতো...
এখানে শয়তান ও সন্ন্যাসীর একই শাস্তি—
কঠিন লেলিহান পাথরের পথ ধরে
হেঁটে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই...
ঘর বেঁধেছি স্বর্গ নরকের শেষ প্রান্তরে
আহত ডানা ভালো জানে ফানা কেন নিশ্চুপ
কেন শুধু প্রথম আদমের সাথে ঈশ্বরের
কথোপকথন বাজে তার অন্তরে...
. . .

ফানা-৪৬
মনে হয়েছিলো বারুদ—
বালকের ইশারায়
ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি নিজেকে
নক্ষত্রদের পাড়ায়।
আয়নায়
একবার অন্তরের দিকে চেয়ে
'এক' বলতেই গৃহে প্রবেশ ঘটেছে
যতো অচেনা মুখের...
দুঃখ
একবারই ঘটে মনমহলে—
বারবার বারান্দায় যে আসে
তার কোনো নাম জানি না।
বাংলায় ভোরের নদী যে দেখেনি
সে জানবেনা—
কেন তার নাম রেখেছি ফানা...
. . .

ঘর বেঁধেছি স্বর্গ নরকের শেষ প্রান্তরে
আহত ডানা ভালো জানে ফানা কেন নিশ্চুপ
কেন শুধু প্রথম আদমের সাথে ঈশ্বরের
কথোপকথন বাজে তার অন্তরে...
. . .