আসুন ভাবি

যন্ত্রমানব, বনিআদম ও মোল্লাগো দম

. . .
আম্রিকার বিদেশনীতিকে পেছন থেকে যাঁরা প্রভাবিত করেন তাঁদের মধ্যে ডিপ স্টেট নিয়া সক্রিয় জর্জ সোরস অন্যতম। যদিও উনার চিরশত্রু বইলা বিদিত ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক জুটি ইলেকশনে বাজিমাত করায় কমলা হ্যারিসকে সামনে রেখে পেছন থেকে গুঁটি চালানোর খোয়াবে মগ্ন জর্জ সোরস বা উনার ইয়াং পোলা অ্যালেক্স আপাতত ব্যাকফুটে চলে গেছেন।

মার্কিন ডিপ স্টেট নীতি বাস্তবায়নে ট্রাম্পের হিসাব ভিন্ন গতিক হওয়ার ফলে জর্জ সোরস নিয়া যে-তুলকালাম ভারতের গোদি মিডিয়ায় কয়েক মাস আগেও নিয়মিত ঘটনা ছিল, সেইটা এখন হিমঘরে চলে গেছে। শেখ হাসিনার পতন ও সোরস-প্ররোচনায় সেন্ট মার্টিনে আম্রিকার এয়ার বেস বানাইতে চাওয়ার খায়েশ নিয়া ভারতীয় মিডিয়া কাজেই এখন নীরব। বয়সের কারণে এমনিতেও বিজ্ঞানভাবিক দার্শনিক কার্ল পপারের একনিষ্ঠ ভক্ত জর্জ সোরস উনার বিশ্ব-অধিপতী হওয়ার ম্যাগলোম্যানিক খোয়াব ছেলে অ্যালেক্সের কান্ধে অর্পণ করে রিটায়ার নিছিলেন।

বিগত শতাব্দীর তৃতীয় দশকের গোড়ায় মানবধরায় তশরিফ আনছিলেন সোরস। সেই হিসাবে উনার বয়স এখন নব্বই ডিগ্রির উপ্রে আছে। বয়স এমন একখান ঘটনা যার কাছে অতিমানবকেও হার মানতে হয়। এক্স গুগল টেকজায়ান্ট রে কার্জউইল যতই মৃত্যুঞ্জয়ী বনিআদমের স্বপক্ষে ওকালতি করেন না কেন, উনার অথবা আমাদের জীবদ্দশায় সেই দিন দেখার সম্ভাবনা শূন্য।

The Last 6 Decades of AI, and What Comes Next – Ray Kurzweil Source: TED YouTube Channel

The Singularity Is Near কিতাব লিখে কার্জউইল রীতমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বপক্ষে বিস্তর ওকালতি করছিলেন কিতাবে। মোল্লা আর বিলা ইউনূস নিয়া কাইজ্জা-ফ্যাসাদে লিপ্ত বাঙালির নোলা এখনতরি ট্রান্সজেন্ডার হজম করতে পারতেছে না, কার্জউইল সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপ্রে ভর করে ট্রান্সহিউম্যান বিশ্বে বনিআদমের পদার্পণ নজদিক বইলা কিতাবে হাঁক পাড়ছিলেন।

বিচিত্র রোগব্যাধি ও বয়সভাবে জীর্ণ হওয়ার হাত থেকে নিস্তার যদি পাইতে হয় তাহলে খোদা নতুবা প্রাকৃতিক বিধানের ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট ও বিবর্তিত বনিআদমের হার্ডওয়্যার সিস্টেমটি ক্রমশ বদলানোর প্রস্তাবনা ছিল কিতাবের গণ্য বিষয়। সোজা কথায়, যেসব হার্ডওয়্যার আমরা এখন রোবট তৈরিতে ব্যবহার করতেছি, মানবদেহে বিবর্তিত মস্তিষ্ক ও জটিল স্নায়বিক ব্যবস্থাপনাকে এরকম উপাদানগুলার সাহায্যে যদি নতুনভাবে প্রোগ্রামিং করা যায়, সেক্ষেত্রে মানুষ সুস্থ সবল দেহে দীর্ঘদিন ধরায় বিচরণ করতে পারবে।

গ্যোটের ফাউস্ট যেমন নলমানব তৈরিতে নিমগ্ন হইছিল, কার্জউইল অদ্য সেই পথের পথিক। বনিআদমের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নির্মিত যন্ত্রমানবের ব্যবধান হ্রাস করার স্বপক্ষে কিতাবে বিস্তর যুক্তি প্রদান করছিলেন। পাগলাটে মনে হইতে পারে, তবে কার্জউইলের কিতাব সুখপাঠ্য।

মানবগ্রহ আগামীতে যেদিকপানে ধাবিত হইতেছে সেখানে যন্ত্রমানব ও বনিআদমে ব্যবধান ক্রমশ ক্ষীণ হইতে থাকবে। যন্ত্রমানবের নিজ পন্থায় বনিআদমের মতো অনুভূতিশীল প্রাণী রূপে বিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়া গবেষণা অনেকদূর আগাইছে। অন্যদিকে যন্ত্রমানব ও বনিআদমে কীভাবে ইন্টারচেঞ্জ ঘটানো পসিবল… ইত্যাদি নিয়াও দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক চিন্তার আদানপ্রদান উন্নত বিশ্বে থেমে নাই। তো সব মিলিয়ে এক হইতে দেড় দশকের মধ্যে ট্রান্সহিউম্যান বড়ো আকারে পাবলিক ডিসকোর্সে ঝড় তুলবে।

I’m Your Man by Maria Schrader Source – Bleecker Street

কল্পবিজ্ঞান নির্ভর সাহিত্য ও ছায়াছবিতে ইতোমধ্যে এইটা জোরেশোরে চর্চিত হইতেছে। বনিআদম ও অনুভূতিসম্পন্ন যন্ত্রমানবের পিরিত নিয়া মুভির অভাব নাই। প্রযুক্তির নয়া তরঙ্গ ও তাকে ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক বাস্তবতায় মোল্লা আর বিলা ইউনূস নিয়া সৃষ্ট ক্যাচালে লিপ্ত বাঙালি বেশিদিন জারি থাকতে পারবেন না। উন্নত বিশ্বে দেখা দেওয়া তরঙ্গে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা নজদিক হবে তখন।

. . .

নতুন তরঙ্গের ধাক্কায় ব্যাপক ক্যাওসের সম্মুখীন হবে বিশ্ব। যার আভাস করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার পূর্বাহ্নে ইউভাল নোয়াহ হারারি উনার কিতাব ও নানা আলাপে অবিরত দিয়া আসতেছেন। মানে দাঁড়াইতেছে, যন্ত্রমানব ও বনিআদমের পারস্পরিক বিনিময়ের মধ্য দিয়া আগামী বিশ্ব নতুন এক সুরত নিয়া হাজির হবে। অন্যদিকে এতদিনকার ঔপনিবেশিক ছক ভিন্ন স্তরে উন্নীত হইতে থাকবে। বদলাইতে থাকবে মানুষের দেহ ও মনের জগৎ। তার মধ্যে মোল্লাবাহিনী কোন দিকে কাইত হইবেন সেইটা ভেবে বিড়ম্বিত বোধ করতেছি। উনাদের জন্য আপাতত একরাশ শুভেচ্ছা আর সমবেদনা।

ফুটনোট : রেজিম চেঞ্জার জর্জ সোরস ও উনার পুত্র এ্যালেক্স সোরসের ব্যাপারে অবহিত হওয়ার পর থেকে মনে হইতেছে ক্যাওস বা বিশৃঙ্খলা খারাপ কিছু না। ক্যাওস নিয়া বিজ্ঞান ও দর্শনে দারুণ সব থিয়োরি আছে। বাস্তবেও আমরা ক্যাওস হইতে সৃষ্ট। বিগ ব্যাংয়ের সময় সমুদয় কণা… না, থিয়োরি মোতাবেক কণা বলা সঠিক হবে না… ধরে নেন সমুদয় শক্তি একীভূত হওয়ার কারণে যে-তীব্র চাপ বা বিগ ক্রাঞ্চ তৈরি হইছিল, তাপবিদ্যার সূত্র মোতাবেক সেইটা উদগীর্ণ হওয়ার ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্ব মনোরম ও বৈচিত্র্যপূর্ণ হইতে পারছে। মনোরম এই মহাবিশ্ব আবার শতেক বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়া সুশৃঙ্খলভাবে সংগঠিত ও সম্প্রসারিত হইতেছে অবিরত। যেখানে আমাদের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়া সকল অনুমান নিশ্চয়তা আর অনিশ্চয়তার দোটানায় রহসময়। ওইটা যেন-বা নজরুলের গানের উপমা : খেলিছো এ-বিশ্ব লয়ে/ বিরাট শিশু আনমনে।

থার্ড লেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নেটলাপে কবি ফজলুররহমান বাবুল একখান রিলস শেয়ার দিছিলেন। যেখানে যুবরাজ তারেক রহমানের কর্মীদের আমরা কামড়া-কামড়িতে লিপ্ত দেখতেছি, আমি বলি এইটা নিয়া হতাশ হওয়ার কারণ নাই। দেশের সর্বত্র নানারকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হইতেছে, আমাদের স্নায়ুর উপ্রে চাপ বাড়তেছে… এগুলা আখেরে ভালোর জন্যই ঘটেতেছে। বিশৃঙ্খলা চরম মাত্রায় পৌঁছানোর পর নতুন ছবি আমরা পাইতে থাকব। উত্তেজনা তিরোহিত হবে এবং শুরু হবে পুনর্গঠন। সেখান থেকে হয়তো আবার নতুন বিশৃঙ্খলার দিকে যাইতে থাকব আমরা। এইটা খোদা বলেন অথবা প্রকৃতি… উনাদের নিয়ম।

Jallikattu by Lijo Jose Pellissery Source AD-WISE MEDIA ACTION MOVIEPLEX YouTube Channel

তো যাই হোক, চলেন, আমরা এখন বিশৃঙ্খল হইতে দেই সবকিছু। যুবরাজ তারেক ও মোল্লারা মিলে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকুক। এখন এসব হওয়া জরুরি। আর তার ফাঁকে তামিল ও মালায়ালম সিনেমার ওয়ান অব দ্য বেস্ট ডিরেক্টর লিজো হোসে পেলিসারির মাস্টারপিস জাল্লিকাট্টু ছবিখানা দেখি আরেকবার আরামসে। সিনেমার পর্দায় ক্যাওস বা বিশৃঙ্খলাকে ফুটিয়ে তোলার ঘটনায় পেলিসারিকে নমস্য মানেন অনেকে। ক্যাওস মাস্টার বইলা ডাকেন। আমাদের এখানে তো সিনেমা বানাইতে গিয়া ছিঃনেমা তৈয়ার করে বসি আমরা। তামিল-মালায়ালমরা বানায় সিনেমা, যার মধ্যে জীবন ও অদিমতা দবদব করে খালি।

মিস না করে দেখাটা সওয়াবের কাম হবে। হিন্দিতে ডাব থাকায় মালায়ালম ভাষার ফ্লেভার আমরা পাবো না, কিন্তু পোষায়া যাবে। এই ছবির প্লটের কাছাকাছি একখান গল্প বাংলায় বোধহয় আছে। পটভূমি ভিন্ন সেখানে। দুই ষাঁড়ের লড়াইকে কেন্দ্র করে হাসান আজিুজল হক গল্পটা লিখছিলেন। জাল্লিকাট্টু ভিন্নদিকে আগাইছে। একটা খ্যাপাটে বন্য ষাঁড়কে কবজা করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর বিড়ম্বনা, উন্মাদনা, আর পরিশেষে প্রাগৈতিহাসিক শিকারি জীবে রূপান্তরিত হওয়ার ভেরি মিনিংফুল স্টোরি আমরা ছবিতে দেখতে পাবো।

সিনেমাটোগ্রাফি নিয়া আর নাই বললাম। সেইটা টের পাওয়া যায় ছবির অন্তঃভাগে এসে। দেরি না করে দেখতে পারেন হাতে যদি থাকে খানিক অবসর। আর যন্ত্রমানব নিয়া তো চলচ্চিত্রের অভাব নাই। তার মধ্যে নিজ পছন্দের একখানা ছবির ট্রেইলার উপ্রে শেয়ার দিছি। আগ্রহীরা নেটে সার্চ দিয়া চোরাই পথ বা টোরেন্ট দিয়া ফুল মুভি দেইখা নিতে পারেন। আরাম পাইবেন এইটা গ্যারান্টেড।

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *