
. . .

কার্ল মার্কস কি এখনো প্রাসঙ্গিক? প্রাসঙ্গিক থাকলে আমরা কি পরিষ্কার আছি তিনি কেন প্রাসঙ্গিক?
. . .

কার্ল মার্কসের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বাচ্চা উপদেষ্টা মাহফুজের মন্তব্যটি বেশ লেগেছিল। তার মতে, মানবধরায় যতদিন বৈষম্য বেঁচে থাকবে,—মার্কসের মরণ নাই। এখন ধরা যাক, কোনো একভাবে পৃথিবী থেকে সকল বৈষম্য উবে গেল! প্লেটো কিংবা থমাস মুর শুধু নয়, আরো শত মহাজনের দেখানো পথে শোষণ-পীড়ন গেল মুছে। মি. মার্কসের কী হবে তখন? কেউ কি ইয়াদ করবে তাঁকে?
প্রশ্নের উত্তরে এটুকু বলার যে,—আমার মনে হয় করবে। শোষণ-নিপীড়ন থেকে পয়দা হতে থাকা বৈষম্যরা গায়েব হলেও মানবসমাজে সদা সক্রিয় দ্বান্দ্বিকতা ওরফে ডায়ালেকটিক্সকে মানুষ এড়াতে পারবে না। নতুন ছকে তারা জন্ম নিতে থাকবে সেখানে। বান্দা হাজির বলে এই সুযোগে আওয়াজ দেবেন জনাব মার্কস। স্যারকে তাই কাট্টি মারা কঠিন!
প্লেটো-সক্রেটিস-অ্যারিস্টোটলকে আড়াই হাজার বছরেও পুরোপুরি নিকাশ করা সম্ভব হয়নি। দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স মানবজাতির ঘাড়ে মামদোভূত হয়ে দোল খাচ্ছেন দিব্যি! ভারতবর্ষ ও জার্মান দেশে জন্ম নেওয়া ভাববাদী দর্শনের পুরোহিতকুল বহাল তবিয়তে মানুষের মাথা চিবিয়ে খাচ্ছেন নিয়ত। শঙ্করাচার্য, মাধবাচার্য, রামানুজকে নিয়ে মানুষ এখনো আলাপ করে। কান্ট, স্পিনোজা, শোপেনহাওয়ার, হেগেল, আর চিন্তার ইতিহাসে ব্যতিক্রম নিটশে ও হাইডেগারকে বাদ দিলে কেন জানি শূন্য লাগে সব!
চার্লস ডারউইনের ধরা থেকে বিদায় নেওয়ার দেড়শো বছর অচিরে পূর্ণ হতে যাচ্ছে। গ্রহণ-প্রত্যাখ্যানে তাঁকে ফিরতে হচ্ছে বারবার। নিউটন ও আইনস্টাইনকে ‘আপনি থাকছেন স্যার’ বলা ছাড়া উপায় নেই মানব সন্তানের। নিউটন বড়ো আজিব লোক ছিলেন! মাত্র সাতাশ বছর বয়সের মধ্যে বিজ্ঞান ও গণিতে যুগান্তকারী বিস্ময় জন্ম দিয়ে রিটায়ার নিলেন। বাকিটা সময় যত কাজকারবারে নিয়োজিত ছিলেন বান্দা, তার সবটাই উদভুট্টি!
নিউটনকে দেখা গেল স্বীকৃত বিজ্ঞানের সঙ্গে একপ্রকার সম্পর্ক ত্যাগ করে ছদ্মবিজ্ঞানের জন্য সমালোচিত আলকেমির রহসময় গবেষণায় মেতে উঠেছেন। শেয়ার বাজারের অনিশ্চয়তাকে গণিতের হিসাবে নিখাদ নিশ্চিত করতে খাটছেন প্রাণপণ। মহাবিশ্বে ঈশ্বরের স্বর্গীয় অস্তিত্বের প্রমাণ মিলাতে বসে থিওলোজি ও ওকাল্ট সায়েন্স নিয়েও বান্দা মেতেছিলেন বিন্দাস। বিয়েশাদী করেন নাই যেহেতু, নিরস ছিলেন নারী ও রোমান্টিকতায়।
আরেক প্রতিভা-সাগর লাইবনিজের সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাদ দিলে নিউটনের বাকি ইহকাল কেউ গোনায় নেবে না। বড়োই বয়ে গেছে তাতে! ক্যালকুলাস ক্যামনে ভুলিবে কলেজ পড়ুয়া কচি বালক থেকে পক্কেকেশ মহাবিজ্ঞানী? জগতের হিসাব-কিতাব যে-ওতেই অক্ষয় করে গেছেন এই আজিব ইংরেজ!
বিজ্ঞানের এলাকা ছেড়ে প্রবেশ যাই সাহিত্যে। হোমার, ভার্জিল, দান্তে কিংবা মোদের বাল্মীকি-ব্যাসদেবরা তো মনে হচ্ছে পৃথিবীর আয়ু অবধি অজর-অমর-অক্ষয় থাকছেন! হোমার আর বাল্মীকি ও ব্যাসদেব নামধারী বান্দাদের নিয়ে অবশ্য বিবাদ রয়েছে ম্যালা! অতিকায় এসব সাহিত্য কোনো ব্যক্তির একার হাতে রচনা করা কীভাবে সম্ভব (!);—এই বিস্ময় মনে জাগে বৈকি। বান্দারা একা হাতে অথবা লেখকগোত্রের অংশ রূপে বংশ পরম্পরায় এসব রচিলেন… ইত্যাদি নিয়ে ক্যাচাল আজো তামাদি নয়। বহুত বুড্ডা হো গায়া হাম বলতে-বলতেও মি. শেকসপিয়রকে দেখছি গত পাঁচশো বছর ধরে মানবমঞ্চে অভিনীত হয়েই চলেছেন!
জুয়া খেলে ফতুর ফিওদর দস্তয়েভস্কি দেনা মেটাতে এক বছরে আটারোখানা বই বাজারে নামানোর চুক্তিতে সই করেছিলেন। বইগুলা বাজারে এসেছিল ঠিকঠাক। আজিব লোকটিকে অপ্রাসঙ্গিক করবে এই সাধ্য কার! দস্তয়েভস্কি ফিরে-ফিরে প্রাসঙ্গিক হতেই আছেন এখনো! আগামীতে যে-মানবসমাজ আসতে যাচ্ছে বলে আমরা নজর-আন্দাজ পাচ্ছি, সেখানে দস্তয়েভস্কি সম্ভবত আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হতে যাচ্ছেন।
রবি ঠাকুরের কথাই ধরি,—ছফুটি ঠাকুর তো দেখছি এখনো জিন্দা লাশ হয়ে মগজে ভর করেন যখন-তখন! স্মৃতি থেকে তাঁকে চিরতরে মুছে দিতে ছারপোকা-মানবদের কত আয়োজন! কত ছল, কত বাহানা, কতই-না সত্যমিথ্যায় সাজানো প্রোপাগান্ডা চলছে দিবারাত! সব ছাপিয়ে ঠাকুর এখনো সটান ঐরাবত!
রবি কবি নামের লোকটি এমন এক শ্বেতহস্তি, যাকে পেলেপুষে নিঃস্ব হতে সুখবোধ করেন এমন লোকের অভাব নেই বাংলায়! ‘অমর কাব্য তোমরা লিখিও/ বন্ধু যাহারা আছো সুখে’-র ঘোষণা দিয়ে নির্বাক হলেন যে চিরশিশু, ওই কাজী নজরুলকে কি অপ্রাসঙ্গিক করা গিয়েছে আজো? কাণ্ডারি হুঁশিয়ার বলে ক’দিন পরপর কাজীর ব্যাটা মাথা খাড়া করেন বেশ।
কত আর বলব! শত হাজার নাম নেওয়া যাবে নগদানগদি। সময়ের সঙ্গে এঁনারা টেসে না গিয়ে তোফা খাড়া আছেন ধরাধামে। কার্ল মার্কস এই জাম্বুবান-দলের অন্যতম। সুতরাং বান্দার মরহুম হওয়ার চান্স ক্ষীণ।
পৃথিবীতে কিছু লোক আছেন, যাঁরা কঠিন বই পড়তে ভালোবাসেন। তাতেই তাঁদের আনন্দ। জেমস জয়েসের ইউলিসিস কিংবা ফিনেগানস ওয়েক-এর প্রতিটি শব্দ ধরে অ্যাগেইন অ্যান্ড অ্যাগেইন পড়তেই থাকেন। বের করেন বিচিত্র মমার্থ। তাঁদের কল্যাণে জয়েসধাঁধা হায় শেষ নাহি হয়!
ইহুদি ধর্মের রাবাইরা উদ্ধারকর্তা মোজেস কবে আবার ধরায় দেখা দেবেন, তার দিনতারিখ বের করতে তোরাহর পৃষ্ঠা আজো উলটায়! আতশকাচ দিয়ে সংখ্যাতত্ত্বের জটিল ছক মিলাতে বসে তারা। মূসাকে এভাবে মানবমনে অমলিন রেখেছে রাবাইকুল।
জগৎজুড়ে ধর্ম যেহেতু এখনো অটুট, তার প্রবর্তকরা কাজেই বেঁচেবর্তে আছেন দিব্যি! হাদিসের শর্ত মেনে এরকম দিন আসতেও পারে,—মানুষ নবি-রসুল আর আল্লা-খোদার নামধাম বেমালুম ভুলে যাবে! ধরণী শরমে দুভাগ হয়ে এ-সকল নরাধমকে সংহারিবে সেদিন! খতরনাক সেই পরিস্থিতির মধ্যেই দু-একজনের দেখা মিলবে নির্ঘাত! দেখা যাবে, তাদের মাথা থেকে নবি ও খোদা হয়নি বিলীন। অজ্ঞাতনামা স্রষ্টাকে তারা রেখেছে স্মরণ! তখন আর কী! তাদের হাত ধরে নবি-রসুল-আল্লা পুনরায় ফিরবেন মানবধরায়!
মানবধরায় যেদিন কোনো ধর্ম থাকবে না, তখন ওই না থাকার অভাব পুরা করতে জন্ম নেবে নতুন কোনো ধর্ম। হতে পারে অবিশ্বাস হবে তার নাম! বিজ্ঞানের ঐশ্বরিক কামিয়াবির সুবাদে জন্ম নিতে থাকা নয়া অ্যাভাটার থেকে ডানা মেলবে নবীন সেই ধর্ম। সুতরাং জগতে যে-একবার দাগ রেখে গেছে ভালোভাবে,—সেই হারামির মরণ নেই। অভিশপ্ত শয়তানের মতো বাকিদের ঘাড়ে চড়ে সে নিজে নাচবে ও অন্যকে নাচাবে।
জরা, দুঃখ, মরণকে জগতের সারকথা বুঝে নিয়ে গৌতম বুদ্ধ আবার আসিব ফিরে-র অভিলাষে সিলগালা মারতে খেটেছেন বিস্তর। সহস্র ছাড়ায়ে বেচারাকে এখনো বেঁচে থাকতে বাধ্য করছে তাঁর ভক্তকুল। মরেও শান্তি নাই ভবে! কেউ না কেউ কবর থেকে টেনে বের করবে লাশ অথবা কঙ্কাল। ফিরব না বলে পার পাওয়ার জো নেই মানবধরায়!
জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে;—মধু কবির উক্তির প্রথমভাগ সত্য, দ্বিতীয় ভাগ মিথ্যা। নয়ন সমুখে মধু কবি নাই, কিন্তু তাঁর সৃষ্টির কারণে বেচারাকে অমরত্ব নাটিকায় প্রক্সি দিতে দেখছি অবিরাম! মধুর জন্য কী পেনইফুল এই ঘটনা!—অমরত্বের স্বাদ নিতে ইংরেজিতে ক্যাপটিভ লেডি লিখলেন জমিদার তনয়। তাতে কাজ হলো না দেখে কৃষ্ণ সায়েব ফিরলেন মাতৃভাষায়। রচিত হলো মেঘনাদবধ। তাতেই কম্মো সারা। সময়ের সঙ্গে কঠিন ও দুষ্পাঠ্য হয়ে ওঠা মেঘনাদকে গৌতম হালদার কেমন অবলীলায় গড়গড় করে মঞ্চে আওরায়, আর দর্শক সম্মোহিত হয় মধুব্যঞ্জনায়! মধু কবি দৈহিকভাবে মৃত হলেও গৌতম হালদার তাঁকে মরার সুখ দিতে একটুও রাজি নয়কো!
রবি ঠাকুর এখানে সেয়ানা টেটন। প্রক্সিটা বুঝতে পেরে বচন আওরেছেন আগেভাগে : মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। একধাপ আগে বেড়ে জানতে চেয়েছেন,—শতবর্ষ পরে কোন সে-বলদ তাঁর কবিতা পড়ছে কৌতূহলভরে! রবির সব যদি মুছে যায়, দেখা যাবে তখনো কেউ-না-কেউ তাঁর গানের কলি আওরাচ্ছে। যে-কারণে বলেই গেছিলেন,—কিছু টিকুক ছাই নাই টিকুক, গানগুলো থাকল,—তারাই আমায় বাঁচিয়ে রাখবে ধরায়। রবির অবশ্য আরো অনেককিছু টিকে থাকবে,—যতদিন মানবিক অম্লযান মানবহিয়ায় বেঁচে রবে অক্ষয়।
কার্ল মার্কস এই পটে দেড়গুণ বিড়ম্বনায় আছেন। সমাজকে বদলানোর মিশনে নেমেছিলেন হুজুর। বিস্তর পড়েছেন। তারচেয়ে বেশি ভেবেছেন। লিখেছেন তারো শতাধিক। এমন সব চিহ্ন বান্দা রেখে গেছেন এই নিঠুর-নিলাজ ধরায়,—মানুষ তাঁকে রেহাই দিতে কাজেই রাজি নয়। জাভেদ হুসেনের এক লেকচারে বোধহয় শুনেছিলাম,—মার্কসের রচনাবলী পঞ্চাশ খণ্ডে নতুন করে বের করেছে জার্মানি।
জার্মানি থেকে তাঁকে একপ্রকার বের করে দেওয়া হয়েছিল তখন। তরুণ মার্কস হয়ে গেলেন জন্মের উদ্বাস্তু। সেই জার্মানিতে তিনি এখন প্রাসঙ্গিক। যেমন প্রাসঙ্গিক পুঁজিবাদের মক্কা আম্রিকায়। বিশ্ব শোষণ ও আমাদের দুধের বাঁট দোহনের খেলায় অতিব সুদক্ষ আম্রিকা একমাত্র যে-নামকে আজো ভয়মিশ্রিত ঘৃণায় স্মরণ করে নিজের অজান্তে,—সে ওই বেচারা কার্ল মার্কস।
আম্রিকা জানে, লোকটার পক্ষে এখন আর কিছু করা সম্ভব নয়। জান তবু দ্রিম-দ্রিম কাঁপে একথা ভেবে :—হায়! এমন দিন কখনো যেন না আসে, যেদিন নিদ টুটবে আচমকা, আর জানালা দিয়ে দেখব কার্ল মার্কস নামে এক হারামির লেখা বই ক্যাপিটাল-এ দেশ ছেয়ে গেছে! বাস-ট্রেন কিংবা পার্কে মানুষ পড়ছে ক্যাপিটাল। যার প্রতি পৃষ্ঠা আমাকে ন্যাংটো করতে হারামিটা লিখেছিল একদিন।
মার্কস কাজেই এমন এক নাইটমেয়ার, ইচ্ছা না থাকলেও তাকে আমরা ঘুমঘোর দেখে ফেলি। দুঃস্বপ্ন হয়ে লোকটি বেঁচে থাকে ধরায়। আচমকা হানা দেয়। দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ে। আমরা তাকে দরোজা খুলে দিতে বাধ্য হই। এক ডেলিভারিম্যানকে তখন দেখি সেখানে। তার হাতে বাক্সে মোড়ানো বই। আমরা তা হাতে নেই। মোড়ক উপড়ে ফেলি। এবং দেখি,—লালরক্ত মেশানো বইয়ের মলাটে কুখ্যাত শব্দটি লেখা রয়েছে! শব্দটিকে ভুলে থাকার জন্যই তো প্রাণপণ খাটছি সবাই! এখন ডেলিভারি ম্যান বাধ্য করছে তাকে ইয়াদ করতে!

এবং তখন বইয়ের ভিতর থেকে কে-যেন গমগম স্বরে বলে ওঠে : ভয় পাবেন না। এটা ক্যাপিটাল! দেখতে ঢাউস হলেও বইটি আসলে ছোট্ট দিয়াশলাই শলাকা। পড়তে হবে না;—তাকে সাজিয়ে রেখে দিন। আর, যদি পড়েন, তাহলে আপনি সেই মানুষটি থাকবেন না, যা এতদিন ধরে ছিলেন! আপনাকে এখন থেকে তাড়া করবে ক্ষত ও জখম;—যদিও আপনি তা ইতোমধ্যে হয়ে আছেন! আপনার চোখ লাল আর দেহে অজস্র ক্ষত দেখতে পাচ্ছি। আমি এই ক্ষতের কারণগুলো ক্যাপিটাল-এর দিয়াশলাই শলাকায় আটকে দিয়েছি। আর কিছু করিনি বিশ্বাস করুন।
মার্কস তাই সকল যুগ-কালের জন্য বিপজ্জনক দিয়াশলাই শলাকা! মুখে যার উসখুস করছে বারুদ, আর বুকে জ্বলে উঠার দুরন্ত উচ্ছাস। লোকটিকে কাজেই এড়ানো কঠিন। জাভেদ হুসেনের তথ্য ধার করেই বলি নাহয়,—মার্কস ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে বসে কিতাব পড়তেন নিয়মিত। দাগিয়ে রাখতেন। অনেকসময় লাইব্রেরিয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে বইয়ের কোনো বাক্য বা অনুচ্ছেদের নিচে স্বহস্তে টীকা-টিপ্পনি যোগ করতেন। এরকম কত বইয়ে মার্কস তাঁর মন্তব্য জুড়েছেন, সেগুলো নিয়ে পিএইচডি থিসিসের নাই অভাব।
মার্কস মানবধরায় এমন এক উৎপাতের নাম যাকে সম্পূর্ণ গায়েব করা সম্ভব নয়। বৈষম্যের মাত্রাভেদ তাঁকে ইয়াদ করাবে। মানবসমাজে চলতে থাকা ঘটনাতোড়ে জন্ম নেবে দান্দ্বিকতা;—মার্কসকে তখনো পড়বে মনে। সুতরাং আপনার প্রশ্ন,—‘প্রাসঙ্গিক থাকলে আমরা কি পরিষ্কার আছি তিনি কেন প্রাসঙ্গিক?’—এটি আসলে মার্কসের বেলায় স্রেফ অর্থহীন।
মানববিদ্যার এমন এক এলাকা নিয়ে বান্দা কাজ করেছেন জীবনভোর, যেটি সময়ে রং পালটাবে, কিন্তু সেই রং থেকে দ্বান্দ্বিকতা মুছবে না কখনো। রংয়ের মধ্যে অভিশপ্ত প্রেতের মতো মিশে থাকবেন মার্কস। যেটি তিনি নিজে হয়তো চাননি। কারণ, সমাজতন্ত্রের সর্বোচ্চ যে-রূপের বিবরণ তাঁর রচনায় পাচ্ছি, সেটি আবার ওই বেহেশত থেকে বেশি দূরে নয়;—আর বেহেশত হচ্ছে একমাত্র এলাকা যেখানে নিষ্পাপ বলদের মতো জাবর কাটা ছাড়া কারো কিছু করার থাকে না! মার্কসসহ বাদবাকি জম্বিরা কেবল এরকম কোনো বেহেশতি জেওরে চিরতরে গায়েব হতেও পারেন।
. . .
. . .