মানব বিরচিত কোনো পন্থা শতভাগ ত্রুটিমুক্ত হইতে পারে না। ত্রুটিমুক্ত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। প্লেটো-অ্যারিস্টোটল কবে এসব ব্যাখ্যা করে গেছেন! ধর্মসমস্যার মামলা থেকে রেহাই পেতে যেসব রাষ্ট্র সেকুলার রূপ ধারণ করলেন, সেখানেও একচ্ছত্রবাদের সমস্যা কমবেশি মিলে বৈকি। রাষ্ট্র সেকুলার থাকবে, মানুষ নাও থাকতে পারে;- সেকুলারিজেমর এইটা হইছে মূল প্রতিপাদ্য। এখন ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথাচার পালনে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ থাকার মানে কিন্তু এই না লোকজন সেখানে ধর্মকর্ম করতে পারবে না। আলবৎ পারবে। রাষ্ট্র, অ্যাজ অ্যা টুল কেবল নিরপেক্ষ ভূমিকায় নিজ দায়িত্ব পালন করবে। মানুষের ধর্ম পালনের অধিকারকে প্রোটেকশন দিতে ত্রুটি করবে না। অন্যদিকে এইটা নিয়া ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা কেউ করলে সেইটা প্রতিহত করবে।
সিম্পল বিষয়খান মানবগ্রহে সক্রিয় সেকুলার যত রাষ্ট্র আছে তারা কেউ শতভাগ কায়েম করতে পারে নাই। ব্যক্তি ও সামাজিক অধিকার রক্ষায় তৎপর ইউরোপ পারে নাই। গণতান্ত্রিক সংহতির উদাহরণ আমেরিকায় বিষয়টি নিয়া নানা ঝামেলা এখনো বিদ্যমান। পৃথিবীর বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত তো শুরু থেকে ডাব্বা মারতেছেন এখানে। এসব কারণে সেকুলারিজম নিয়া প্রশ্ন ও সন্দেহের অবসান ঘটতেছে না। ক্রিটিক থাকতেছে বিস্তর। এখানে যেমন ফরহাদ মজহারসহ অনেকে ক্রিটিক করতেছেন। উন্নত দেশেও এই ব্যাপারে ভিন্নমত দেখা যায়।
একচ্ছত্রবাদ যে-আকারে সমাজে সক্রিয় থাকুক, তার কারণে সৃষ্ট অতি-উগ্রবাদের রিভার্স ইফেক্ট কিন্তু সমাজে ঘটবেই। দুইহাজার এক ঈসায়ী সনে আল কায়েদার বোমা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে জোড়া দালান ধসে পড়ছিল। মার্কিন দেশে থাকা মুসলমান জনগোষ্ঠী এর ফলে দিগদারিতে পড়েন। মুসলমান পরিচয়টি ততদিনে মার্কিন সমাজে অস্বস্তি ও ভয়ের কারণ বইলা গণ্য হইতেছিল। মার্কিন গণতন্ত্রে কার্যকর সেকুলার ভাবনা আর ওপেন সোসাইটির জিগির অস্বস্তি দূর করতে কাজে আসে নাই। শাহরুখ খানের মতো সেলিব্রেটি আমেরিকার কোনো এক বিমানবন্দরে জেরা ও হেনস্থার শিকার হইছিলেন সেইসময়। শাহরুখের কারণে ভারতকে সারা দুনিয়া চিনেজানে ও ভালোবাসে। ভারতের অন্যতম সাংস্কৃতিক দূত হওয়া সত্ত্বেও ইসলামভয়ে জবুথবু মার্কিন শাহরুখকে হেনস্থা করতে কিছু বাকি রাখে নাই।
শাহরুখ খানের কথা বাদ দেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্রে বর্ণবাদ কি খতম হইছে? হয় নাই। শ্বেতাঙ্গ-কৃষাঙ্গ বিবাদের পটভূমি আজো সক্রিয় সেখানে। দেশটার সাংস্কৃতিক বনেদে কৃষ্ণাঙ্গদের অবদান বলে শেষ করার নয়। নাচাগানা, পোশাক, বাহারি চুলের কাটিং, স্পোর্টস… একটা জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কৃষাঙ্গরা প্রভাববিস্তারী অবদান রাখে নাই। তবু তাদের অনেকে নিজ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণির জীবন কাটায়। বস্তিতে থাকে। পুলিশের সঙ্গে লড়াই করে। ছিনতাই ও মাদক চোলাচালানে জড়িত থাকতে তাদেরকে মজবুর করা হয়। বৈষম্য রহিত করতে সোচ্চার মার্টিন লুথার কিং, ম্যালকম এক্সদের জীবন দিতে হইছে এর জন্য। সুরাহা কিন্তু হয়নি পুরাপুরি।
কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষ মার্কিনসমাজের মজ্জাগত সমস্যার একটা। বেশি দূরে যাওয়া লাগবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দফা শাসনামলে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাঁটুর চিপায় জর্জ ফ্লয়েডের দমবন্ধ কাতরানি বিশ্ব দেখছে। মামা আই কান’ট ব্রেদ কারো কানে পৌঁছাইতে বাকি থাকে নাই। পানি লাগবে পানি-র মুগ্ধ, একটু পানি খাওয়ান-এর আওয়ামী মাসুদ, আর মামা আই কান’ট ব্রেদ-এর ফ্লয়েড… তারা আদতে অভিন্ন। কোনো-না-কোনো উগ্রবাদের হাতে জীবন বলিদানে তাদেরকে বাধ্য করছে সমাজ। উগ্রবাদ যেখানে অতিমাত্রায় ব্যাপক হইতে থাকে, সেখানে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাই ব্যাপক হয়। রিভার্স ইফেক্ট ক্রমশ অনিবার্য হইতে থাকে।
. . .
জোড়া দালান ধসের পর মার্কিন দেশে ঘটনাটি ঘটতে দেখছি আমরা। মুসলমান পরিচয়ে অস্তিত্বরক্ষার কঠিন মানসিক চাপ থেকে বাহির হইতে আইরিশ পরিবার হইতে আগত খ্রিস্টান ও পরে ইসলাম ধর্মে বয়েত নেওয়া মাইকেল মোহাম্মদ নাইট আচমকা পাঙ্ক ঘরানায় ইসলামি রকগানের জন্ম দিয়া বসছিলেন। কৃষাঙ্গদের মানবিক অধিকার আদায়ের অন্যতম যোদ্ধা ম্যালকম এক্সের লড়াই ও বলিদানের ঘটনা তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করছিল।ম্যালকম এক্সরা তখন যে-ইসলামে বিশ্বাস করতেন তার ব্যাপারে গবেষণায় নামেন মাইকেল। নিউ ইয়র্কের হার্লেম কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক তৎপরতা, যেখান থেকে জগৎ কাঁপানো রক-পপ-Rap গায়ক আর ঝাঁকের কৈ মিউজিশিয়ানরা উঠে আসছে সবসময়,- মাইকেলকে এখন সেই হার্লেম পেয়ে বসে। পাঙ্ক ঘরানায় সক্রিয় স্পিরিটকে ইসলামি আদলে কাজে লাগানোর ভাবনা আসে মাথায়। গড়ে তোলেন ইসলামি পাঙ্ক ব্যান্ড। কল্পকাহিনির আদলে রচনা করেন কাল্পনিক আখ্যান দ্য তাকওয়াকোরস (The Taqwacores)। উক্ত কাহিনিকে উপজীব্য করে পরে ছবিও তৈরি হয়।
রকগানের সবচেয়ে ড্রাস্টিক পন্থা বইলা বিদিত পাঙ্ককে হাতিয়ার করে তাকওয়াকোরস মূলত আমেরিকাকে এই ম্যাসেজ দিতে থাকে : দেখো, তুমি আমাকে সুরক্ষা দিতে পারতেছো না; পরন্তু ইসলামভীতির বয়ান তৈরি করে আমার জীবন নরক করে তুলতেছো। ইসলামি উগ্রবাদির বিরুদ্ধেও একইভাবে বার্তা দিতে থাকে তারা : ভাইরে, তোদের কারণে আজ আমরা বিপন্ন। এমন এক ইসলাম তোরা হাজির করতে উতলা যেইটা সন্ত্রাস পয়দা করা ছাড়া কোনো পারপাস সার্ভ করে না। সো ফাক ইওর ইসলাম।
আল্লাহ বিরাট আর উন্মুক্ত, আমার দীন তার তুলনায় ছোট। এইটা ভাবছি বইলা কাফির বলবা আমারে? আল্লাহু আকবর। তোমার চোদনা ইসলামেরে জন্য এইটা কি যথেষ্ট না? ইমাম হোসেন তো বলেই গেছেন, ‘যে-লোকের কোনো ধর্ম নাই, তারে অন্তত ইহকালে তার মতো মুক্ত থাকতে দাও। ’
নভেলের তাকওয়াকোরসরা আসলে কী করত? পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা এক পোলা এদের সঙ্গে ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়। তার ধর্মভীরু ইসলাম-আচ্ছন্ন মনের বনেদ আজব কিছিমের এসব পোলাপানের পাল্লায় পড়ে চুরমার হইতে থাকে। কুফরিতে লিপ্ত পোলাপানগুলাকে সে মেনে নিতে পারে না আবার তাদের কাজ-কারবার ও চিন্তার ধরন তারে চুম্বকের মতো টানে। দোটানায় খাবি খাইতে থাকা অবস্থায় সে ক্রমশ বুঝতে পারে,- ইসলামকে নয় বরং বৃহৎ আকারে স্রষ্টাকে নিজের ভিত্রে ধারণ করতে পোলাপানগুলা গানবাজনা করে। ইসলামি আচার, এই যেমন নামাজ, আজান, কোরান পাঠ…এগুলা তাদের কাছে স্রষ্টাকে ধারণের অনুষঙ্গ;- তার বেশি নয়।
তাকওয়াকোরসরা যেসব কাণ্ড করে তার কোনোটাই ইসলামের গণ্ডিতে আঁটে না। শরিয়তের তোয়াক্কা না করে তারা গিটারে আজান দেয়। ওজুর ধার ধারে না। নামাজ পড়ে নিজ মোতাবেক। মসজিদে আচমকা ঢুকে ভয়ানক বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে হল্লা পাকায়। সোজা কথায়, টোটাল অ্যানার্কি তৈরির মাধ্যমে শরিয়তের খাঁচায় বন্দি ও নিষ্পেষিত ইসলামকে বিদ্রুপ করাটা তাগো মিশন। ইসলামি জীবনবোধ ও সংস্কৃতির ভিত্রে বসবাস করলেও সেখান থেকে তারা নিজের মতো করে এক্সিট নিতে থাকে। মাইকেলের আখ্যান, কাহিন, ভাষাশৈলীর প্রসাদগুণে দারুণ বটে। বেস্ট সেলার হইছিল ওইসময়।
পাঙ্ক হইতেছে সেই জিনিস যে নিজেকে সকল শৃঙ্খল থেকে স্বাধীন ছাড়া অন্যকিছু ভাবে না। রকগানের কফিনে পেরেক ঠুকতে এই মুভমেন্ট আশির দশকে ব্যাপক ছিল। পাঙ্করা দুভাবে উঠে আসত। একটা ভাগ সমাজের নিচুতলার খেটে খাওয়া পোলাপান, যাদের হাত ধরে পরে Rap গান আমেরিকায় প্রতিবাদে ভাষা হিসেবে ব্যাপকতা লাভ করে একসময়। গ্রেট ব্রিটেনে যেমন সেক্স পিস্তল, জয় ডিভিশন-র ইয়ান কার্টিসের মতো পাঙ্করক ঘরানার গায়ক ইংরেজ সংস্কৃতির ভিত্তি ধরে টান দিছিল তখন। সব্বাই কমবেশি সাইকেডেলিক, মাদকাসক্ত ও রাষ্ট্রবিরোধী কারবারে লিপ্ত ছিল। সেক্স পিস্তলের বিখ্যাত পরিবেশনা God Save The Queen ব্রিটেনে আজো নিষিদ্ধ। গানখানার সুতীব্র পরিহাসকে এখনো ভয়ের চোখে দেখে রাষ্ট্র! নিষিদ্ধ গানটারে যদিও ইশতেহারের মতো শুনতেছে মানুষ।
সমাজের নিচতলা থেকে উঠে আসা পাঙ্করা আবার গ্যাংস্টা Rap-কে বিকশিত হইতে অবদান রাখে। গ্যাংস্টা-Rap হয়ে যা বিচিত্র উপায়ে বিশ্ব জুড়ে আজো বিবর্তিত। আরেকভাগ সমাজের মধ্য বা উঁচু তলা হইতে পাঙ্কে শরিক হয়। যাই হোক, বর্ণবাদের বিপক্ষে লড়তে থাকা আমেরিকান কৃষাঙ্গরা ইসলামের নিজানুগ সংস্করণ তৈরি করে পঞ্চাশ-ষাটের দশকে। এর নাম ছিল দ্য ফাইভ পার্সেন্টার্স ইসলাম। মাইকেলের এই নামে একখান কিতাব আছে। ম্যালকম এক্স কিংবা মোহাম্মদ আলীরা কোন পাতাল হইতে ইসলামকে হাতিয়ার করে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকায় অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ষাট-সত্তর দশকে সরব ছিলেন, কিতাবটি সে-ইতিহাস তালাশ করছিল।
মাইকেল মুহাম্মদ নাইট এখন ফাইভ পার্সেন্টার্স ইসলামের স্পিরিট নিয়া আসলেন ইসলামি পাঙ্ক রক গানে। যার দুইটা উদ্দেশ্য ছিল। এক. আমেরিকারে জানাইয়া দেওয়া,- ইসলামভীতি তৈরি করা খারাপ হইতেছে। দুই. লাদেন টাইপ মোল্লাগো ম্যাসেজ দেওয়া,- তোমাদের কারণে আজ এই অবস্থা। সো ফাক ইওর ফাকিং ইসলাম। তাকওয়াকোরস-এর ফিলোসফি তরুণ প্রজন্মের মার্কিন মুসমলমানদের মনে ঝড় তুলছিল তাৎক্ষণিক। আত্মরক্ষার সাংস্কৃতিক হাতিয়ার হিসেবে এইটারে অনেকে তখন ব্যবহার করছেন। পরে অবশ্য স্তিমিত হইতে থাকে সময়টানে।
তাকওয়াকোরস-এর মূল দর্শন হইতেছে আল্লাহ বা স্রষ্টাকে ব্যাখ্যা নির্ভর শরিয়তি বয়ানের ঘোরপ্যাঁচ থেকে টেনে বাহির করা। পাঙ্ক জাহাঙ্গীর, নভেলের মেইন ক্যারেক্টার জুমার খুতবায় যেসব কথা আওরায় সেগুলার মধ্যে দর্শনটা ধরা পড়তেছে। জাহাঙ্গীর জুমার নামাজ আদায়ে সমবেত ব্যান্ড মেম্বারদের উদ্দেশে পরিষ্কার বার্তাটা দিতে থাকে …
ইসলাম হইতেছে আত্মসমর্পণ। আত্মসমর্পণ মানে কি এই,- টয়লেটের মাঝখানে তুমি বোখারি খুইলা দেখবা রসুল কীভাবে পাছা ধুইতেন? হইতে পারে, কিন্তু আমার কাছে আত্মসমর্পণ মানে বাইরের তারাকাখচিত আকাশ, তারাগুলারে সেখানে কেউ গুলির মতো ছুড়তেছে। তুমি ভাবতে পারো, বেহশতের দরজায় ঢোকার মতলবে জিনরা বুঝি কাজগুলা করে। পেছন ফিরে তাকাইয়া দেখো মিয়া, ভীত হও, সত্যি সত্যি ভীত হও, কিন্তু সেইটা জাহান্নাম বা এই টাইপের কিছুর জন্য না;- ভীত হও একথা ভেবে,- তোমার ধারণার বাইরে কেউ অতিকায় মহাবিশ্বটারে নিয়ন্ত্রণ করতেছে। তারে বোঝার চেষ্টা করো, লড়াই করো তার সঙ্গে। তখন দেখবা তোমার ভয় কেটে গেছে, কারণ কেউ একজন তোমারে এমনভাবে ভালোবাসে যা তুমি উপলব্ধি করতে অক্ষম।
আল্লাহ বিরাট আর উন্মুক্ত, আমার দীন তার তুলনায় ছোট। এইটা ভাবছি বইলা কাফির বলবা আমারে? আল্লাহু আকবর। তোমার চোদনা ইসলামেরে জন্য এইটা কি যথেষ্ট না? ইমাম হোসেন তো বলেই গেছেন, ‘যে-লোকের কোনো ধর্ম নাই, তারে অন্তত ইহকালে তার মতো মুক্ত থাকতে দাও। ’
এইটা হইতেছে একচ্ছত্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রাস্তা। দেশভেদে যার স্বরূপ ভিন্ন হইতে পারে। জোড়া দালান ধসের জের ধরে মাইকেল মুহাম্মদ নাইটরা মার্কিন সমাজে অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে রাষ্ট্র ও উগ্রবাদ উভয়ের বিরুদ্ধে লড়তে পাঙ্ককে হাতিয়ার করছিলেন সাময়িক। সেখানে এইটা ছিল তাদের পলিটিক্স। তাকওয়াকোরস-এর সঙ্গে মিলে পাকিস্তানী পাঙ্ক ব্যান্ড কমিনাজ একই পলিটিক্স করতেছে অন্যভাবে, অন্য আঙ্গিকে। লাল ব্যান্ড যেমন পাঙ্ক না, কিন্তু মোল্লাতন্ত্রের সঙ্গে তাদের পঙ্গা দীর্ঘদিনের।
একচ্ছত্রবাদের বিরুদ্ধে আকস্মিক উদগীরণ এভাবে সমাজে তৈরি হইতে থাকে। আমেরিকায় ওইসময় ঘটনাটি ঘটছিল। পাকিস্তানে এখনো ঘটতেছে। বাংলাদেশে যদি উগ্রবাদ অতিরিক্তি মাথাচাড়া দিতে থাকে, সেইটা যে-আকারে দেখা দিক সমাজে, আমাদের মিয়া ও খাতুনদের এই জোর নাই যে বেশিদিন চাপ নিতে পারে। মোদের রেহানা মরিয়ম নূর বাঁধন ম্যামরা পয়লা চাপেই ধসে পড়বে। অচিরে পাঙ্ক টাইপের রিভার্স কিছু ঘটতে দেখবে বাংলাদেশ। নিউটনের থার্ড ল ইজ ইনঅ্যাভিটেবল। মনে রাইখো,- প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। আমরা তো পড়ছি ইস্কুলে। নাকি?
. . .
সংযুক্তি : থার্ড লেন হোয়াটসঅ্যাপ নেটালাপ-এ পাঠমন্তব্য ও সংযোাজন
একচ্ছত্রবাদ, আধিপত্যবাদ কিংবা উগ্র ধর্মীয়বাদের বিরুদ্ধে মাইকেল মুহাম্মদ নাইট, পাঙ্ক ব্যান্ড তাকওয়াকোর ব্যন্ডের লড়াই এক হিসেবে স্বাধীনতা বোধের লড়াই। যারা আসলে কোনো বাঁধনে জড়াতে রাজি না। নাইন ইলেভেনের প্রেক্ষিতে পাশ্চাত্যে মুসলিম কমিউনিটির বিপর্যয় তাদের মধ্যে এই বোধটা জাগ্রত করেছিল যে,- উগ্র ধর্মীয় তৎপরতা এই বিপর্যয়ের জন্য সমান দায়ী। তাদের প্রতিবাদ ভিন্ন আঙ্গিকের পাঙ্ক মিউজিকে মোড় নিয়েছিল। পাকিস্তানে যেমন কামিনাজ ব্যান্ড। উগ্রতা ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে, সামাজিক অভিঘাত ও প্রতিবাদের জায়গা থেকে এই স্বাধীনতা ঘোষণার মাহাত্ম্যকে কোনোভাবে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। – মোস্তাফিজুর রহমান জাভেদ
. . .
একচ্ছত্রবাদের বিরুদ্ধে দেশকাল ভেদে লড়াইয়ের রাজনীতি ভিন্নরকম জাভেদ। প্যালেস্টাইনে পপুলার হিপহপ ব্যান্ড DAM অনেকদিন ধরে শান্তি, গণতন্ত্র ও নারী অধিকারকে অ্যাড্রেস করে গান তৈরি করছে। তাদের মূল লক্ষ্য ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতা করার পাশাপাশি মৈত্রীর উৎস খোঁজা। তেল আবিবে কনসার্টও করেছে একসময়। এখনকার পরিস্থিতি বলতে পারছি না। অনেকদিন হয় DAM-এর গানটান শুনি না।
আবার ধরেন, যুক্তরাজ্যে এথনিক হিপহপ Fundamental-এর লড়াইয়ের পটভূমি ও রাজনীতি অন্যরকম। তারা বেসিক্যালি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বাদনপ্রণালী এবং গানবাজনার ফিউশন নিয়ে কাজ করত। নয়ের দশকের মাঝমাঝি থেকে ব্রেডফোর্ডে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরে যুক্তরাজ্য জুড়েও বেশ পরিচিত পায়। ব্যান্ডের নাম সচরাচর Fun da mental… এভাবে ভেঙে লেখে। তাদের পক্ষ থেকে এটি হয়তো বার্তা যে, মিউজিক একইসঙ্গে সত্তার মৌল ভিত্তি, এবং মজাক ও পাগলামি।
পাকিস্তানি মিউজিশিয়ানরা গোড়া থেকে এই ব্যান্ডে ভীষণ সক্রিয়। নুসরাত ফতেহ আলী খানের কাওয়ালির সঙ্গে হিপহপের ভিয়েন মিশিয়ে তৈরি যা শয়তান তাদের অন্যতম পপুলার সং। ব্যান্ডটির লক্ষ্য হচ্ছে গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকা যেভাবে ইসলামভীতির বাতাবরণ তৈরি করে তাদেরকে একঘরে করতে চাইছে, সেটি ভেঙে দেওয়া। কোরানের আয়াতকে তারা গানে পাঞ্চ করে। নিজের জাতিসত্তা ও মুসলমান পরিচয়কে রক্ষাকবচ রূপে তুলে ধরে গানে কথায়। বন্দুকের মতো ছুড়তে পরোয়া করে না। অভিবাসীদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের আচরণকে ক্রিটিক করে গান বানায়। আবার মাদার আফ্রিকার কম্পোজিশনে ধরিত্রীর সংস্থিতি তুলে ধরে, যা কানে প্রশান্তি বহায়। তো সব মিলিয়ে ভীষণ পলিটিক্যাল, এবং ক্ষেত্রবিশেষ উদ্দেশ্যমূলক। পরবাসে নিজের সত্তা ও অস্তিত্বকে জ্ঞাপন করতে এটাই তাদের রাজনীতি ছিল। ব্যান্ডটি ইদানীং মনে হচ্ছে নিষ্ক্রিয়।
. . .