আমাদের এই জীবনটা তখন হবে গাছের জীবন। অর্থ পয়দার ফুরসত গাছের নাই। সে কখনো জানতে চায় না কী কারণে ধরায় তারে আসতে হইতেছে বা কে পাঠাইছে ইত্যাদি। গাছ তার ফুল-ফল-শাখা-প্রশাখা আন্দোলিত করে একটাই উত্তর করে সদা,- ওসব জেনে কি লাভ! আমি আছি। আমারে তোরা পারলে কাজে লাগা। কদিন পরে মাটিতে মিশে যাবো। এই তো জীবন! কেন এখানে আসছি, কে আমারে পাঠাইছে এখানে... কোন দুঃখে এসব নিয়া ভাবতে যাবো আমি! এই-যে মিনিং ছাড়া মিনিংফুল বেঁচে থাকা, পরমাণু যুদ্ধ আমাদেরকে সেই স্বাদ উপহার দিলেও দিতে পারে।
-
-
ইবনে খালদুনের আসাবিয়া বা গোত্র-সম্প্রীতির বৃহত্তর ভার্সন হইতেছে জাতীয়তাবাদ। এখন সেইটা যে-ফ্রেমে আমরা দেখি না কেন। জাতির আত্মপরিচয় গড়তে এইটা লাগবে, কিন্তু এর মধ্যে সংকীর্ণ হইলে ক্ষতির শেষ নাই। হিন্দু জাতীয়তাবাদের কাউন্টার মুসলমান জাতীয়তাবাদ! হাস্যকর এই ফ্রেমিংটা এখন বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের চাওয়ায় পরিণত করছেন মজহার-এবাদ গং। হাওয়া ভীষণ অনুকূল। অ্যারাব স্প্রিং মিশরে সফল হয় নাই। উনারা মনে হইতেছে সফল করেই ছাড়বেন। ... অনেকে এর সাহিত্যিক রূপ দেখে টাসকি খাইতেছেন। আদতে এগুলা হলো পোস্ট কলোনিয়াল নাইটমেয়ার। একইসঙ্গে বিভিন্নস্তরে নিজেকে গোলাম ও শোষিত দেখার বিকার সইতে না পেরে মনে যে-ইগো পয়দা হয়, তার আউটবার্স্ট।
-
লেখক বলতে পারেন, আমার কিছু বলার আছে বলেই লিখি। বলার মানে তো অব্যক্ততাকে ব্যক্ত করা। যদি আমরা মনে করি লেখার কাজটা আসলে অব্যক্ততার বেদনা থেকে নিজেকে মুক্ত করার একটা প্রণালি, কিংবা আমরা যদি বলি—লেখকের নিঃসঙ্গতার মধ্যে লেখা একটা সঙ্গ, তবে কি শেষ কথা বলা হয়? নিশ্চয় না। লেখক লেখার মাধ্যমে অব্যক্ততাকে প্রকাশ করেন। এই প্রকাশটা হতে পারে নিজের সঙ্গে কিংবা পাঠকের সঙ্গে কথা বলা। লেখক কি তাঁর লেখার মাধ্যমে কথা বলতে পারেন না নিজের সঙ্গে, পাঠকের সঙ্গে? লেখা-পাঠে বোধ করি লেখকের মুখটা দেখা যায়। সবসময় দেখা না-গেলেও মাঝে মাঝে দেখা যায়।
-
LGBTQ-র ছাতার নিচে থাকা কুইয়ার হইতেছে এমন লোক যে কিনা নিজের যৌনঅস্তিত্বের ব্যাপারে ঘোরতর সন্দিহান। এখান থেকে একজন কুইয়ারের ঝামেলা শুরু হয়। উভকামী, নারী বা পুরুষ সমকামী অথবা হিজড়ার মতো দ্বৈত যৌনসত্তায় নিজের আত্মপরিচয় নিয়া সে পেরেশান হইতে থাকে। তার মনে তখন এমনসব ফ্যান্টাসি প্রকট হয়, বাস্তবতাকে ইগনোর যাইতে সেগুলাকে সে প্রয়োগ করে। সৌরভ রায় তাঁর রচনায় যেসব আর্টপিস সংযুক্ত করছেন, সেগুলোকে এখন যদি আমলে নেই তাহলে বিষয়টি আমরা ধরতে পারব। আমার ধারণা,- সামনে যে-যুগ আসতেছে সেখানে LGBTQ বইলা কোনো ছাতার অস্তিত্ব থাকবে না। পুরোটাকে কুইয়ার নামক ছাতার নিচে সমাজবিজ্ঞানীরা গোনায় ধরতে বাধ্য হবেন। উনাদের বর্গীকরণে অনেককিছু এখনো মিসিং।
-
জাতীয় সুখের পরিমাপ পাইতে জিগমে সিংগে ওয়াংচুক কী কারণে জিএনএইচ নিয়া আসেন তার কারণ বুঝতে দর্জির ছবিখানা বেশ উপাদেয়। জিএনএইচ হয়তো জিডিপি/ জিএনপির বিকল্প হইতে পারবে না কখনো। অর্থনৈতিক সক্ষমতা পরিমাপে প্রসঙ্গিক অনেককিছু তাকে কার্যকর ভাবার অন্তরায় সেখানে। জিএনএইচ কার্যকর হলে একটি দেশে সুখ উপচে পড়বে, ঘটনা এমনও নয়। এর ভিত্রে নিহিত ভাবনাখান হইতেছে দামি। অসম বণ্টন, নারকীয় বৈষম্য আর হাজারো মানসিক চাপে বিধ্বস্ত পৃথিবীর মানুষকে জাতীয় সুখ মাপার তরিকাটি সাদাসিধে জীবনের দিকে ফেরত যাওয়ার প্রয়োজন নিয়া ভাবতে শিখায়। ভুটান দেশের হাওয়া এই ভাবনায় গমনের কারণে এখনো নির্মল। আকাশ স্বচ্ছতোয়া নীল। কার না যাইতে মন চাইবে সেখানে!