মানুষ আসলেই একখান দুই চাক্কার সাইকেল! তার মতো আজব প্রাণী পৃথিবীতে দুটি নাই। নিজেকে দিয়া সেইটা বেশ বুঝতে পারি। আজগুবি সব চিন্তা মগজে ফট করে জ্বলে-নিভে! কেন তারা জ্বলে আর হুট করে কী-কারণে নিভে যায়,- ভেবে না পাই কুল! থার্ড লেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেক্স গডেস মেরিলিন মনরোকে নিয়া কয়েক কিস্তির ধারাবাহিক আলাপের শেষ কিস্তি জমা করব ভাবছিলাম। সেখান থেকে নেটালাপ-এ তোলার বাসনা মনে ছিল। তো সেই কাজে হাত দিতে গিয়া দেখি মানবমস্তিষ্ক নিয়া মনে প্রশ্নের উদয় ঘটতেছে। মস্তিষ্কের সক্ষমতার খবর জানতে তিনি উদগ্রীব!
আহারে মস্তক! এই মস্তিষ্ক দিয়া মেরিলিন মনরো হলিউডে একসময় দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করছেন। কেবল দেহের সৌন্দর্য দিয়া নয়,- মস্তিষ্কের সক্ষমতা পুরোদস্তুর ব্যবহার করতে পারায় সাক্ষাৎ যৌনদেবী হইতে পারছিল উনি। যৌনদেবী হইছিলেন ভালো কথা, কিন্তু ছত্রিশ বছরের জীবনে না পাইছেন সাহারা, না তাঁর কপালে জুটছে কারো নিখাদ ভালোবাসা। আখেরে লাভ হয় নাই। রূপ ও বুদ্ধিমত্তা নামের দুই হারামজাদি একলগে বিট্রে করছিল কবি দিলওয়ারের ম্যাড এন্ড স্যাড জোডিয়্যাক্যাল গার্ল মেরিলিনকে। আফসোস!
এই মস্তিষ্ক দিয়া আবার মুমতাজ জেহান বেগম দেহলভি ওরফে মধুবালা আমাদের মতো গরিবদের মাহফিলে মেরিলিন মনরো বইলা সমাদৃত আজো। সায়েব-মেমরা মনরোর রূপের কদর করলেও সাম লাইক ইট হট–এর নায়িকাকে দারুণ একখান যৌনপুতুল বইলা সাব্যস্ত করছিল। নিজের পিঠ হইতে ট্যাগখানা তুলতে মনরো কম চেষ্টা করেন নাই। নিজেকে বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জ্বল প্রমাণ করতে গিয়া কঠিন সব বই পড়ছেন। আর্টলাভার হইতে কিছু বাকি রাখেননি। কীভাবে চিন্তা করতে হয় তার গোমর জানতে সদা তৎপর ছিলেন হলিউড ঈশ্বরী। সমাজের উচ্চস্তরের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা তো ছিলই। কিছুতে কিছু হয় না দেখে ঘুমের বড়ি গিলে মাত্র ছত্রিশ বছরে পা রাখা মস্তিষ্কের সব লাইট অফ করলেন নায়িকা। মেরিলিন মনরো সেই কবে মাটিতে মিশে গেছেন। কবর খুঁড়লে কঙ্কালটা পাওয়া যাইতে পারে। পুরোটা নয়, করোটি পাওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকবে সেখানে। ব্যাপার না। মাটি সেই করোটি গিলে নেবে অথবা জীবাশ্মে পরিণত করবে অচিরে। মেরিলিনকে কাজেই মিম হয়ে বেঁচে থাকতে হবে যৌনদেবী রূপে মানুষ তাঁর বন্দনা করবে ক্লান্তিহীন।
মানুষের গড় বুদ্ধিমত্তা বা IQ আদতে বিতর্কিত বিষয় হইলেও একটা মানুষ তার মস্তিষ্কের সক্ষমতায় কতখানি পটু, তার একখান হদিশ তাতে মিলে। এখন মেরিলিন মনরো ও আলবার্ট আইনস্টাইন যেসব কাজ রেখে গেছেন, এর সাপেক্ষে দুজনের গড় বুদ্ধিমত্তা প্রায় কাছাকাছি। চ্যাটজিপিটি জানাইতেছেন,- আইনস্টাইন ১৬০ থেকে ১৯০ আর মেরিলিন ১৭০-এর কাছাকাছি ছিলেন। দুজনের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন হওয়ার কারণে তুলনা হাস্যকর। তথাপি মেরিলিনের মধ্যে গভীরে গমনের ক্ষমতা ছিল। আইনস্টাইনকে প্রশ্নাতীতভাবে অতুলনীয় মানলেও চ্যাটজিপিটি মত রাখতেছেন,- She was well-read, a deep thinker, and often engaged in intellectual conversations with people like playwright Arthur Miller.
বোঝা যাইতেছে, মেরিলিন মনরো তাঁর মস্তিষ্ককে যেখানে ফোকাস করছেন সেইটা সাময়িক আবেদন তৈরি করলেও দূরবিস্তারী ছিল না। মানব সভত্যায় সৌন্দর্য ও যৌন-আবেদনের মারাত্মক কদর আছে, কিন্তু নিউটন বা আইনস্টাইন যেখানে ফোকাস করলেন, ওইটা হইতেছে সভ্যতার জিয়নকাঠি। ভালোমন্দ সকল দিক থেকে জিয়নকাঠি। উনাদের চিন্তা সভ্যতাকে নতুন পালাবদলের দিকে নিয়া গেল, যার সাপেক্ষে গড়ে উঠছে নতুন পৃথিবী। মেরিলিন মনরো এখন সেই পৃথিবীতে নজরকাড়া যৌনদেবী। আধুনিক যুগের ভেনাস। এর অধিক মূল্য উনি কখনো পাবে না।
হায়! সৌন্দর্য কতইনা ক্ষণসঞ্চারী! হায় কঙ্কাবতী মেরিলিন! বুদ্ধদেব বসু কী আপনাকে ইয়াদ করে লিখলেন এই মর্মান্তিক গভীর কবিতাচরণ :- নতুন ননীর মতো তনু তব? জানি, তার ভিত্তিমূলে রহিয়াছে কুৎসিত কঙ্কাল। না, উনি আপনাকে ভেবে লিখে নাই, জগতে সুন্দরের যত উপমা আছে, সেগুলার অবক্ষয় আমলে নিলে বুদ্ধদেব বসুর কবিতাচরণ তার সবটার জন্য প্রযোজ্য বটে। নির্মম এই সত্যে উপনতি হওয়ার পরে উনি আবার কোন কামে তিথিডোর, রাত ভরে বৃষ্টির মতো রিপু-রিরংসায় ভরা কাহিনি লিখতে গেল কে জানে! এখানে এসে আবার বৈপরীত্য জন্ম নিতেছে। আমরা বেশ বুঝতেছি,- রূপ ক্ষণসঞ্চারী হইতে পারে, কিন্তু তার আবেদন অনিঃশেষ।
সৌন্দর্যের স্বীকৃতি যদি আমলে নেই তাহলে মেরিলিন মনরোর তুলনায় মধুবালার ভাগ্য প্রসন্ন মানতে হবে। আমরা গরিব হইতে পারি কিন্তু আমাদের আনন্দ দিতে রূপের ঢালি নিয়া হাজির আফগান রক্ত দেহে বহন করতে থাকা মধুবালাকে কখনো নিছক যৌনপুতুল বইলা আমরা ভাবি নাই। তাঁর সৌন্দর্যকে ধ্রুপদি তাজমহল নামে রূপ-পূজারিরা বন্দিয়াছেন বরাবর। সমস্যা হইতেছে হিরো-ডিরেক্টর হইতে মরদকুল কমবেশি উনার প্রেমে আছাড় খাইতেন। মধুবালা কি সাড়া দিতেন তাতে? উনি কি প্রেমকাম নাহি মোর টাইপের লাড়কি ছিল? ইতিহাস তা বলে না জনাব। আমি প্রেমের উপ্রে পড়িনি, প্রেম আমার উপ্রে পড়ছে টাইপের ভাবনা মধুবালার মনে আসেনি। তাঁর ওপর প্রেম হামেশা পতিত হইত, উনিও ভিত্রে-ভিত্রে কারো-না-কারো জন্য ফিদা হইতেন বৈকি। ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমার ছিলেন অন্যতম। সত্যজিতের ভাষায় দিলীপ কুমার হইতেছেন নিখুঁত অভিনয়শিল্পী। মেথোডিকাল অ্যক্টিংয়ের বস। আজো যার মহিমা অটুট আছে। অমিতাভ হইতে শাহরুখ… সকলে একবাক্যে যাঁর প্রতি অনুরাগ জানান।
দিলীপ কুমার কী ছিলেন তার সাহিত্যিক আভাস আমরা বিক্রম শেঠের সুপাত্র বা অ্যা সুইটেবল বয়-এ খানিক পাইছি একসময়। সিনেমায় এখন যেমন হোমেজ সিন থাকে, পুরানা কোনো সিনেমার দৃশ্য, সংলাপ বা গানকে নতুন করে ফেরত অনার মধ্য দিয়া পরিচালক সময়টাকে রিকল করেন, মিমকে নতুন করে সৃষ্টি করেন পুনরায়,- বিক্রম শেঠ তাঁর ঢাউস নভেলে দিলীপ কুমারকে সেই ছক মেনে ইয়াদ করছিলেন। সেখানে অবশ্য দিলীপ ও মধুবালার সংগোপন রোমান্সকে হোমেজের মতলব তাঁর ছিল না। দিলীপ সেখানে নিছক অনুষঙ্গ;- প্রসঙ্গ নহে।
মধুবালার বাপ আতাউল্লাহ খান মাঝখানে পড়ে বাগড়া না দিলে হয়তো দুজনের গোপন পরিণয় বিবাহে রূপ নিতেও পারত। বাপের কাছে মধুবালা ছিলেন টাকা বানানোর মেশিন। মেয়েকে সুরক্ষিত রাখার নামে মুঠোবন্দি রাখত উনি। পরিবারকে নিদারুণ টানতে থাকা মেয়ের মনের দিকে নজর দেওয়ার টাইম ছিল না ওভার-প্রটেক্টিভ পিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ আতাউল্লার। বহুত খারাপ কাম করছিলেন মিয়া সাহেব। পৃথিবী বিচিত্র। বান্দরকে কম্পিউটার কিবোর্ডের সামনে বসিয়ে আন্ধাধুন্ধা কিবোর্ড চাপানোর জের হইতে সৃষ্ট মাঙ্কি থিয়োরামকে ফালতু বলি কী করে! অসীম সময় ধরে কিবোর্ডের বাটনগুলা টিপতে থাকলেও বান্দরের পক্ষে শেকসপিয়ারের রচনা নামানো সম্ভব না বইলা যতই রসিকতা করি, বাস্তবে এই মানবগ্রহ সত্যিই ফিনিট। মানবজীবনকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত যেসব নকশা পয়দা হইতে থাকে তার মধ্যে কিছু নকশা অবিকল ফেরত আসে। তাই যদি না হবে তাহলে একালে ব্রিটনি স্পিয়ার্সের জীবনে মধুবালা ফেরত আসেন ক্যামনে?
নব্বই দশকে এই ইংরেজ সুন্দরী পপগানে ভালো ঝড় তুলছিলেন। ব্রিটনির গানগুলা আমাদের বিনোদিত করতে ত্রুটি করে নাই। সঙ্গে ছিল অ্যাপিলিং বিউটি। অনেকদিন হয় তার কোনো খবর নাই! ভাবছিলাম,- গানটান বোধহয় ছেড়ে দিছে। মারা যাওয়া বিচিত্র না। হইতে পারে মার্কেট হারিয়ে ধসে গেছে বেচারি! কিছুদিন আগে জানলাম, ব্রিটনি স্পিয়ার্সকে তার বাপ মুঠোবন্দি রাখছিল এতদিন।
মধুবালার চেয়েও পরাধীন ছিলেন ব্রিটনি। মেয়ের টাকাপয়সা ও সম্পত্তি নিয়া তছরুপ তো আছেই, পুরুষলোকের ফাঁদ হইতে মেয়েকে সুরক্ষিত রাখার বাহানায় এ-যুগের আতাউল্লাহ ব্রিটনির বাপ তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার সবটাই নিয়ন্ত্রণ করতেন! ইউরোপ-আম্রিকার মতো দেশে ঘটনাটি ভাবাই যায় না, কিন্তু ব্রিটনির জীবনে সেটি ঘটছে। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলিং কারে কয় এই অভিজ্ঞতা নিয়া নব্বইয়ের ব্রিটনি যবে প্রকাশ্যে আসলেন, মনে হইল এক বিধ্বস্ত কোরা কাগজ দেখতেছে বিশ্ব!
স্কুলড্রেস গায়ে চাপিয়ে বেবি ওয়ান মোর টাইম নাম্বার দিয়া ঝড় তোলা ব্রিটনি স্পিয়ার্স নাকি এতদিন পাজলড ছিল। বাপ তারে এমন এক বিভ্রান্তির মধ্যে রাখত সারাখন, নিজের জীবন-যৌবন সব জলে গেছে বেচারির। এই-যে ব্রিটনির মতো দারুণ দেখতে মাইয়া এমন একখান বাপের খপ্পর থেকে বের হতে দিরং করল, এবং বিষয়টি আদালতে গড়ানো সত্ত্বেও তারে আমরা কনফিউজড দেখতে পাইছি,- এখন গায়িকার মগজে আসলে কী চলতেছে ভেবে টাসকি যাইতে হয়।
মহা উগ্র কোনো নারীবাদী হয়তো ব্রিটনির সমস্যাকে ধা করে ব্যাটাছেলে বাপটার খবিসি বইলা দেগে দিবেন। সত্যি কি তাই? ব্রিটেনের মতো দেশে জন্ম নিয়া ব্রিটনি স্পিয়ার্স নাকি পুরুষতন্ত্রের শিকার! ফাউ আলাপ বিশ্বাস করা শক্ত। হ্যাঁ, সে যৌনফাঁদের প্রলোভনে পড়তে পারে। পুরুষরা অনিচ্ছুক দেহমিলনের জন্য টিজ করতে পারে। বিশ্ব জুড়ে মি টু ঝড় তো বিনোদন দুনিয়া থেকে প্রথম উঠছিল। প্রেমে প্রতারতি হওয়াটা মেনে নিতেছি। মেরিলিন থেকে শাকিরা… লম্বা তালিকা আছে সেখানে। ব্রিটনির বেলায় সেসব ঘটলেও সেগুলাকে সে গোনায় নিতেছে না। আমার ধারণা, হুটহাট প্রেম ও প্রতারণা তাঁর জীবনে আসছে এবং বিদায় নিছে দ্রুত। বাপ এই সুবাদে মেয়ের মধ্যে ভয় পয়দা করার তরিকা বেছে নিয়েছিল।
সেলুকস! বড়ো বিচিত্র পৃথিবী। তারচেয়ে বিচিত্র মানুষের মন থুক্কু মগজ। তো এই দিশায় পড়ে চ্যাটজিপিটিকে তলব করলাম। অতো ঘাঁটার টাইম নাই, জলদি বাতাও দিমাগ ক্যায়া হোতি হ্যায়। তার ব্যাপারে ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টস কিছু পাইলে জানাও ঝটপট। চ্যাটজিপিটি সেকেন্ডে হাজির করলেন দিমাগনামা। সেটি এখন পেশ যাই বরং :
মানবমস্তিষ্কের ওজন তিন পাউন্ড বা ওই দেড় কেজির মতো। দেহের মোট ওজনের দুই শতাংশ সে ক্যারি করতেছে। মোটেই সিগনিফিকেন্ট কিছু না, তথাপি দেড় কেজি ওজনের প্যাঁচানো কয়েলের কী সাংঘাতিক শক্তি বাপ! দুনিয়াটারে ভেজে খাইতেছে!
৮৬ বিলিয়ন নিউরনস বা স্নায়ুকোষ ও তার শাখাপ্রশাখা দিয়া সে গঠিত। নিউরাল নেটওয়ার্ক বা স্নায়ুকোষের মধ্যে অসংখ্য সর্পিল কানেকশন রহিয়াছে। রাস্তায় ইন্টারেনট সরবরাহকারী তারের অগুন্তি প্যাঁচ দেখলে আমার মাথা ঘোরায়। মাঝেমধ্যে ভাবি, ইন্টারনেট কোস্পানির লোকগুলা এসব তার ক্যামনে খুঁজে বের করে! সমস্যা হইলে মেরামতও করতে দেখি ঝটপট! কীভাবে কী করে আল্লাহ মালুম! মস্তিষ্কের জটিল নেটওয়ার্কের বিচারে যদিও এসব মামুলি।
মানবমস্তিষ্কের নিজেকে সক্রিয় রাখতে প্রচুর অ্যানার্জি বা শক্তি খর্চা করতে হয়। দেহের মোট অ্যানার্জি বা শক্তির কুড়ি শতাংশ সে একলা ব্যবহার করে। চ্যাটজিপটি অবশ্য এখানে এই তথ্য যোগ করতে ভুলে গেছেন,- সময় যত যাইতেছে অ্যানার্জি ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইতেছে।
অ্যানার্জি ব্যবহারের এই প্রবৃদ্ধি ও তার পরিণতি নিয়া বিখ্যাত পরিবেশবিদ অনুজীববিজ্ঞানী গ্যারেট হার্ডিন ট্রাজেডি অব দ্য কমনস নামে দারুন একখানা রচনা মার্কিন কংগ্রেসে পাঠ করছিলেন। মস্তিষ্কে শক্তি সরবরাহের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মানবদেহের সঙ্গে তার ভারসাম্য হ্রাস পাওয়ার আশু বিপদ তুলে ধরছিলেন গ্যারেট। তাঁর মতে মস্তিষ্ককে এভাবে অবিরত শক্তি সরবরাহ করতে থাকা মানুষ কেবল নিজের নয়, সমগ্র ইকোভারসাম্যে বারোটা বাজাইতে কিছু বাকি রাখে নাই। সে-আলাপ অন্যদিনের জন্য তোলা থাক আপাতত।
. . .
. . .
Gümüşpala su kaçak tespiti Su kaçağı tespiti, maliyetli sigorta taleplerini önleyebilir. http://newzzo.com/author/kacak/