ইবনে খালদুনের আসাবিয়া বা গোত্র-সম্প্রীতির বৃহত্তর ভার্সন হইতেছে জাতীয়তাবাদ। এখন সেইটা যে-ফ্রেমে আমরা দেখি না কেন। জাতির আত্মপরিচয় গড়তে এইটা লাগবে, কিন্তু এর মধ্যে সংকীর্ণ হইলে ক্ষতির শেষ নাই। হিন্দু জাতীয়তাবাদের কাউন্টার মুসলমান জাতীয়তাবাদ! হাস্যকর এই ফ্রেমিংটা এখন বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের চাওয়ায় পরিণত করছেন মজহার-এবাদ গং। হাওয়া ভীষণ অনুকূল। অ্যারাব স্প্রিং মিশরে সফল হয় নাই। উনারা মনে হইতেছে সফল করেই ছাড়বেন। ... অনেকে এর সাহিত্যিক রূপ দেখে টাসকি খাইতেছেন। আদতে এগুলা হলো পোস্ট কলোনিয়াল নাইটমেয়ার। একইসঙ্গে বিভিন্নস্তরে নিজেকে গোলাম ও শোষিত দেখার বিকার সইতে না পেরে মনে যে-ইগো পয়দা হয়, তার আউটবার্স্ট।
-
-
হুমায়ূনকে যদি মুছে দিতে পারে, ধরে নিন, বাংলাদেশের অত্যন্ত শক্তিশালী একটি প্রতীককে তারা সফলভাবে ইরেজ করতে পারবে, এবং সেটি সম্ভব। সাহিত্যিক আবেদনের জায়গা থেকে হুমায়ূন আহমেদ যদি নিষ্প্রভ হতেন, আমার কোনো সমস্যা ছিল না। উনাকে রাজনীতির জায়গা থেকে নিষ্প্রভ করার মতলবটি আপত্তিজনক। আমাদের কবিলেখকের ওসব নিয়ে ভাবার টাইম নেই। উনারা হুজুগ আর গুজব নিয়ে ব্যস্ত। নিজের পাছার কাপড় যে নাই হয়ে যাচ্ছে, ল্যাংটাবাবা বানিয়ে দিচ্ছে,- সেদিকে হুঁশ নেই। বাংলাদেশের সাহিত্য নব্বই থেকে অবক্ষয় ও ধসের শিকার। উদ্ধারের অবস্থায় নেই। সব ওই পেদ্রো পারামোয় পড়া মৃত গ্রামে জীবিত প্রেত হয়ে ঘুরছেন।
-
হেগেলের মতো বরেণ্য দার্শনিক কালো মানুষদের এমন এক মানবসত্তা হিসেবে দেখছেন যারা নাকি আজো শৈশব (Kindernation) অতিক্রম করতে পারে নাই। এম্নিতে শান্ত-সুবোধ কিন্তু রেগে গেলে কালোরা স্রেফ জন্তুসুলভ। বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকায় যারা বসবাস করে তাদের ব্যক্তিত্ব অবিকশিত। ব্যক্তিত্ব কী বস্তু সেইটা নাকি তারা বোঝেই না! যা-কিছু মানবতাকে সুসংগতি দান করছে তার একটাও কালো মানুষদের মধ্যে নাই! কখনো ছিলও না! হেগেল এখন এই-যে সিঙ্গেল স্টোরি বানাইলেন, তার কারণ হইতেছে কালো মানুষের জগৎকে তিনি ইউরোপে কেন্দ্রীভূত মনন ও বয়ানের আতশকাচ হাতে নিয়া দেখতেছেন। যে-কারণে সকল দার্শনিক বোধি লোপ পাইতেছে তাৎক্ষণিক!
-
গণজাগরণ মঞ্চ হইতে ঘোষিত আন্দোলন জাহানারা ইমামকে পুনরায় ফেরত আনতে পারলেও শেখ মুজিবকে ফেরত আনতে পারে নাই। তিন মাসের আন্দোলন মুজিবকে ফ্রেমের বাইরে রেখে করতে হইছে উনাদের! মুজিবকে প্রতিষ্ঠিত ও সর্বজনীন করতে গণজাগরণ মঞ্চ স্বয়ং ব্যর্থ হয়। সেইসঙ্গে জামায়াত নিষিদ্ধ করার সুযোগ মিস করেন হাসিনা। উনি কেন এত বাপের নাম নিতেন, অতিরিক্ত করতেন, এসবের পেছনে কারণ নেই বলা যাবে না। যদিও দেশ চালাইতে গেলে অনেককিছু নতুন করে বিবেচনা করতে হয়। হাসিনার ওই মেজাজ ছিল না।
-
ইংরেজ আমলের পুরোটা জুড়ে একের-পর-এক কৃষক বিদ্রোহ, আদিবাসী বিদ্রোহ... এগুলোকে কী কারণে তুচ্ছ গণ্য করতে হবে তার ব্যাখ্যা কি রাইসু দিতে পারবেন?... মুসলমান ছাড়া কাউকে বোধহয় তাঁর চোখে পড়ে না। আহমদ ছফা আর ফরহাদ মজহার উনার মাথা খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খেয়েছেন তাতে সন্দেহ পোষণ না করলেও চলছে। উনাদের খোয়াব তো আমরা বুঝি কিছু। বাংলাদেশ কেবল মুসলমানদের ওয়ারিশান হবে, এবং সেই জায়গা থেকে যত ঘটনা সেগুলোকে বয়ানের মাধ্যমে নতুন করে বিনির্মাণ করতে হবে, এভাবে এমন এক মিথ দাঁড় করাতে হবে যেন ইতিহাসকে নতুন করে লেখা সম্ভব হয়;- এই মতলব বুকে নিয়ে ফেসবুকে গণমানুষের কর্তাসত্তা হওয়ার আলাপ নিয়ে হাজির হয়েছেন রাইসু।