বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপকে পর্যবেক্ষণে রাখে। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ক্যামেরা,—সবকিছু তার গতিবিধি অনুসরণ ও লিপিবদ্ধ রাখায় নিয়োজিত। মানুষ এখন ‘ডিজিটাল প্যানোপটিকন’ (digital panopticon)-এ বসবাস করে। নিজেও জানে না,—তাকে সেখানে কারা, কখন ও কীভাবে নজরে রাখছে। নজরদারির ভয় তাকে তাড়া করে বেড়ায়! ওই ভয় থেকে স্বেচ্ছায় তার আচরণ পালটে নিচ্ছে সে। নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখার অভ্যাস তার মধ্যে তীব্র হতে দেখছি আমরা। এই মানুষকে সুতরাং স্বেচ্ছা-শৃঙ্খলিত বলা যেতেই পারে।
-
-
আধুনিক পুঁজিবাদ এমনভাবে গঠিত, জীবনের ওপর মৃত্যুকে চাপিয়ে দিয়ে সে লাভ তুলে আনতে চায়। দশকের-পর-দশক ধরে এই-যে এতোসব যুদ্ধবিগ্রহ বিশ্ব দেখেছে, যার সিংহভাগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির মদদ ও ইন্ধনে সৃষ্ট, এর নেপথ্য কারণ শুভব্রতের বাক্যে ধরা পড়েছে। কথা একটাই সেখানে,—মুনাফাচক্রে যে-জীবন নিজের ভূমিকা নেভাতে পারবে না, তাকে ছেটে ফেলো।
-
কোনোকিছু যদি সম্পূর্ণ প্রকাশ হয়ে যায়,—তাকে নিয়ে মনে আকর্ষণ কাজ করে না। অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি যখন নিজেকে গোপন করে, আড়াল করে,—তার প্রতি আকাঙ্ক্ষা কাজ করে নীরব।... যে-সমাজে ভোগবাসনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত কল্পনার পরিসরটি সীমিত, যেখানে কল্পনাকে বর্ণনা করার মতো ঘুরপথ অবশিষ্ট থাকে না, সেটি আসলে পর্নোসমাজ। পুঁজিবাদ সমাজকে অধিক পরিমাণে এরকম পর্নোগ্রাফিতে বুঁদ থাকতে বাধ্য করছে। কারণ, সে সবকিছুকে পণ্যে রূপান্তরিত ও তাকে অতিরিক্ত দৃশ্যমান করে তুলতে আগ্রহী। যেখানে তার লক্ষ্য হচ্ছে,—প্রদর্শনমূল্যের সর্বাধিককরণ। পুঁজিবাদ যৌনতার অন্য কোনো ব্যবহার জানে না, এবং জানতেও চায় না।
-
বুয়িং-চুল হানের রচনাবলীর দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি, আজকের পৃথিবীতে সচল সামাজিক বাস্তবতাকে বুঝে নেওয়ার ঘটনায় তিনি কেন এত প্রাসঙ্গিক! বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা লক্ষ করি,—যেসব প্রশ্ন আমাদের মনেও জাগে অহরহ, যেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলি হরহামেশা,—তার সঙ্গে হানের ভাবুক চোখে দেখা ব্যাখ্যাগুলো কেমন আশ্চর্য মিলে যাচ্ছে!
-
সকল প্রকার সংকীর্ণতা ও কূপমুণ্ডুকতার বিরুদ্ধে শানিত তলোয়ার হিসেবে রবীন্দ্র সাহিত্য ও গানকে ব্যবহার করেছেন সন্জীদা খাতুন। তাঁর এই রাবীন্দ্রিকতা তাদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছে, যারা এরকম ভাবছেন,— মুসলমান হিসেবে একজন মানুষের বিদায়যাত্রা ইসলামি আচার মেনে সম্পন্ন হওয়া উচিত ছিল। কলেমা পড়ে শেষ নিঃশ্বাস তিনি ত্যাগ করতে পারতেন। সন্জীদা ওভাবে বিদায় নিতে ইচ্ছা করেননি। কেন করেননি সেটি বরং অগে অবধান করা প্রয়োজন।