সুবোধকে মনে আছে? হাসিনা আমলে সম্ভবত ঢাকার দেয়ালগুলায় তার আবির্ভাব ঘটে। দিনক্ষণ স্মরণ নাই। কে বা কারা তারে ঢাকা শহরের দেয়াল জুড়ে আঁকছিল তার কিছু ইয়াদ হইতেছে না। সুবোধ তুই পালিয়ে যা, সময় এখন পক্ষে না…;- শহরের নানা স্থানে এই টাইপের দেয়াললিখন পাবলিকের নজর কাড়ছিল তখন। সমাজমাধ্যমে কবি-লেখকরা হইচই করছিলেন কিছুদিন। কে এই সুবোধ, কে তারে পালাইয়া যাইতে কইতেছে… এসব নিয়া গবেষণা ব্যাপক ছিল কিছুদিন। একদল কইতে থাকেন, বুঝলাম না ব্যাপারটা! বেটা হিন্দুর ছাওরে পালাইতে কয় ক্যান! দেশটা কি এমন যে তারে পালাইতে হবে? আরেকদল কইতে থাকলেন, তার রক্তে ইন্ডিয়া, তাই পালাইতে চায়। আরো একদল সোজা ঝেড়ে কাশেন, ধুস, ওসব কিছু না। সাজানো নাটক। হাসিনার ইস্যু দিয়া ইস্যু ঢাকার খেল। বাদ দেও। যুক্তিটা মোক্ষম মনে হইতে থাকে আমাদের। সুবোধকে আমরা ভুইলা যাইতে থাকি।
হাসিনা সরকারের একটা কাণ্ড লিক হয়, ওইটা ঢাকতে নতুন কাণ্ড তারা ঘটাইতে থাকে। একটা ইস্যু নিয়া গোলযোগ হইতে-না-হইতে নতুন ইস্যু নিয়া আসে। ইস্যুর ঠেলায় সুবোধকে কারো ইয়াদ থাকে না। তার মধ্যে জন কবিরের ইন্দালো তারে নিয়া আস্ত একখান গান বাঁধে। গানের সুবাদে হুটহাট ইয়াদ হয় ঢাকার দেয়ালে কালো কালির পোঁচে ছবি হয়ে থাকা সুবোধকে। অল্টারনেটিভ রকগানে যে-শক্তি থাকে সেইটা দিয়া জন কবির তারে রিকল করায়। ঘরে ফিরতে কয়। জন কবিরের সাথে আমরা কণ্ঠ মিলাই খানিক : ‘রাত জেগে যারা ছিল ভোরের অপেক্ষায়/ সিলিং-এ ওদের শরীরে সূর্যের দাগ/ পালিয়ে কেউ কি বাঁচে?/ পড়ে থাকবে সময়ের এ্যাশট্রে/ ঘুরে দাঁড়াও সুবোধ তুমি/ হেলে পড়া মানবিক দেয়ালে।’
ইন্দালোর গানে কিছু ইন্টারেস্টিং প্যারাফ্রেজ আমাদের মন কাড়ে। আমরা দেখি সুবোধ পালানোর পথ খুঁজতেছে। অস্ত্র হাতে যারা তারে তাড়া করছিল তাদের নামপরিচয় গানে মুলতবি রাখে গায়ক। সুবোধকে খালি পালাইতে মানা করে। মানবিক দেয়াল প্যারাফ্রেজটা ইন্টারেস্টিং মনে হইতে থাকে আমাদের। ওইটা হেলে পড়তেছে, তার সঙ্গে হেলে পড়তেছে সুবোধ। দেয়ালে পিঠ ঠেকা যারে কয় আর কী! গায়ক ওই অবস্থায় তারে রিকল করে। সুবোধের জার্নি বা এস্কেপিংটারে দৃশ্যমান করতে আকুল হয়। ওরে বোকা, পালিয়ে বাঁচা যায় না, ঘুরে দাঁড়াইতে হবে;- পজিটিভ ফিলিংস সুবোধকে জন কবির দিতে চাইতেছে নাকি দিবার নাম করে নিজেরেই দিতেছে… এইটা আমাদের ভাবায়। যাই হোক, ইংরেজি ব্যান্ড টুল-এর আদলে বাংলা আন্ডারগ্রাউন্ড রকগানে বিচিত্র এলিমেন্টস পয়দার কারিগর ইন্দালোর জন কবির সুবোধকে গানে জীবিত রাখে। মাঝেমধ্যে তারে ইয়াদ না করে উপায় থাকে না।
স্মরণ-বিস্মরণের ঘোরপ্যাঁচে দিনগুলা যখন ম্যাড়মেড়ে মনে হইতেছে তখন হাসিনাপতনের ডঙ্কা বাইজা ওঠে। ঢাকা শহর গ্রাফিতিতে সয়লাব হয়। সয়লাব হইতে থাকে দেশ। দেয়ালগুলায় খালি প্রতিরোধের শ্লোগান! সবটাই শোভন না। হাসিনা ও তার দোসরদের তাক করে খিস্তিভরা বাক্যই বেশি চোখে পড়ে। তো এর মধ্যে আমি সুবোধরে খুঁজি। সে কি ফেরত আসছে? নাকি এখনো জন কবিরের গানে তাল দিয়া গা ঢাকার মতলবে ইধার-উধার ঘুরাঘুরি করতেছে? খুঁজি কিন্তু পাই না। হালায় কই যে আছে কে জানে!
আপনারা কি দেখছেন তারে? আমি দেখি নাই। সুনীল গাঙ্গুলীর নাদের আলীর মতো এক মাস পার হয়ে গেছে। আমরা স্বাধীন দ্বিতীয়বার। চারদিকে মুক্তির গান বাজতেছে। সুবোধ শালার খবর নাই! সে কি ফিরতে পারছে নাকি এখনো পলাতক?
. . .