মানুষ
আহমদ সায়েম
শুধু মাত্র মানুষ তুমি, ঈশ্বর নও
যা দেখানো হয়, দেখা যায় বা যা-যা দেখে সবাই, তাই দেখো
তুমি ঈশ্বর নও, মানুষ তুমি…. ঈশ্বরও
রঙ করা বিষয়গুলো নিখুঁত হয়, ব্যবহারে বেশিদিন
–টিকে থাকে
রঙ করা গল্পগুলোর সূত্র থাকে স্বর্গীয়; পাঠ ও মননে মিলে
বিশ্ব-মানচিত্রের পাসওয়ার্ড …
শুধু মাত্র মানুষ আমি, ঈশ্বর নই
যা দেখানো হয়, দেখা যায় বা যা-যা দেখে সবাই, তাই দেখি
তুমি ঈশ্বর নও, আমিও …
মানুষ—ঈশ্বর তুমি, যা তুমি দেখো, তা সঠিক নয়—কারণ
—মানুষ তুমি, যা দেখিয়া ঠিকঠাক মনে হয়, তার সবটাই ঈশ্বর
তুমি মানুষ, ঈশ্বরও …
শুধু মাত্র মানুষ তুমি, ঈশ্বর নও …
. . .
পাঠ-সংযোজন
ইশারাঘন দ্যুতি-ব্যাঞ্জনা
পাঠ-সংযোজন-১ :
আহমদ সায়েম, কবিতাটি পাঠ করে ভালো লাগল। বেশ দ্যুতি-ব্যঞ্জনাময়—বাক্যে এবং ইঙ্গিতেও।
পাঠ-সংযোজন-২ :
সায়েমের কবিতাটি ইশারাঘন। দ্বিরাভাস আছে বেশ। মানুষ যা দেখে তার কতখানি সঠিক? প্রশ্নটি কবি তুলছেন এখানে। সে কি নিজে দেখে, নাকি তার মতো আরো যারা রয়েছে তারা তাকে যা দেখায় সেটিকে ভিত্তি ধরে ঠিক-বেঠিকের হিসাব কষে মানুষ? জটিল প্রশ্ন। মীমাংসা অধিক জটিল। আমরা যা দেখি, যা ভাবি, যা সঠিক বলে মানি… তার কোনটা আসলে সঠিক… এর কিনারা করা কঠিন।
ঈগল পাখি হাজার-হাজার ফিট উঁচু থেকে শিকার নিখুঁত দেখতে পায়। তার দৃষ্টিশক্তি এতটাই প্রখর! শূকর মাটির অনেক নিচে খাদ্যের অস্তিত্ব টের পায়। তার ঘ্রাণশক্তি এতই প্রখর! মানুষের পঞ্চইন্দ্রিয় সেই তুলনায় সীমাবদ্ধ। পঞ্চইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সে ব্যবহার করে মস্তিষ্ক। যা দেখছে এবং যা দেখতে পাচ্ছে না… তার মধ্যে ঘনীভূত জটিলতা নিরসনে নেমে সে চিন্তা ও যুক্তি উৎপাদন করে, এবং এভাবে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সচেষ্ট থাকে সবসময়। এখন তার নেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক অথবা বেঠিক দুটোই হতে পারে।
এই প্রশ্নও অবধারিত সেখানে,- সে কি নিজ থেকে দেখছে অথবা নিজ মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে দেখাটাকে জাস্টিফাই করছে? নাকি অন্য কেউ যা দেখাচ্ছে তাকে বিনা প্রশ্নে মেনে নিচ্ছে? ভেবে দেখলে, মানুষ বয়ানবন্দি প্রাণী। সে স্বয়ং অথবা তার হয়ে অন্যরা বয়ান তৈরি করে, এর ওপর ভিত্তি করে ঠিক-বেঠিকের মীমাংসায় পৌঁছায়। মানুষ যে-কারণে ঈশ্বরতুল্য নয়। আবার ঈগল অথবা শূকরও নয়। সে হচ্ছে এমন জীব, ধরায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে সকলের ওপর তাকে নির্ভর করতে হয়, কিন্তু তার ওপর কেউ নির্ভর করে না।
মানবগ্রহ থেকে মানুষ বিলুপ্ত হলে অন্যদের কিছু যাবে আসবে না। অন্যরা বিলুপ্ত হলে মানুষের যেতে-আসতে বাধ্য। কারণ, তাকে সেভাবেই ঈশ্বর অথবা প্রকৃতি যাই বলি… সৃজন করেছেন। মানুষ একথা অল্পই মনে রাখার চেষ্টা করে।
. . .