কাশবন পুড়তেছে। তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে সম্যন্তক সিনহার মতো দেখতে কেউ গিটারে রিফ করতেছেন। তার চোখে কাশফুল নয়, ভাসতেছে পরবাসী ক্যাটকিনস। হ্যাজেল গাছে থোকা-থোকা ঝুইলা থাকে। মোলায়েম বাদামি অথবা স্বর্ণকেশী। বাদামি বা স্বর্ণালী যেমন হোক, দেখতে যেন কাশফুল, যদিও নয় তারা বাংলার কাশফুল। সাদা… শুভ্র… হোয়াইট বেঙ্গল ক্যাটকিনস! আগুনে ঝলসানো সাদা কাশফুল। এখন তারা মসিবর্ণ… ধূসর। জন কিটসের মাছরাঙা পাখিটার মতো দূরে ধীরলয়ে বিলীন হইতেছে অজানায়। ক্যামনে বিলীন হইতেছে কাশফুল নিজেও জানে না।
পোড়া কাশবনে নিরো বাঁশি বাজাইতেছেন। নজরুলের পাগলাভোলা বাঁশি। জন কিটসের মতো হতভম্ব বেচারামুখ যুবক কিটসপ্রায় বিষাদে নিজেরে জিগায় :
Was it a vision, or a waking dream? Fled is that music:- Do I wake or sleep?
মা দুর্গা বাপের বাড়ি নাইওরে আসছেন। কৈলাসের ঠাণ্ডি হাওয়া থেকে বাংলার গরমি হাওয়ায় নাইওর নিতে আসা মাকে বরণের ধুম ঘরে-ঘরে। ও-ও -ও আয় রে ছুটে আয়/ পুজোর গন্ধ এসেছে।/ ঢ্যাম্ কুড়কুড়, ঢ্যাম্ কুড়াকুড় বাদ্যি বেজেছে। ঢাকের বাড়িতে সরগরম পুজোমণ্ডপ। নাইওর শেষে মা পাড়ি জমাবে কৈলাস। কিটসের নকলি দেখতে যুবা অথবা গিটার হাতে স্যমন্তক বেকুবের মতো পোড়া কাশবনে দাঁড়িয়ে। বুঝতে পারতেছে না তারা কোথায় এখন! কৈলাস? নাকি কাশবনছাওয়া বাংলায়? ঘুমের মধ্যে পোড়া কাশবন ধরে হাঁটতেছে আর খোয়াব দেখতেছে। কী খোয়াব নিজেও জানে না।
কাশফুল নয় শুভ্র বা বাদামি। সে এখন মসিবর্ণ। পোড়া কয়লা। কোথায় পালাইতেছে এইসব মসিবর্ণ কাশফুল? মাটির ভিত্রে? শরৎপ্রভায় জ্বলজ্বল আসমানে? বোঝার উপায় নাই।
উপায় নাই বোঝার,- জেগে আছি, নাকি ঘুমের ভিত্রে পোড়া কাশবন ধরে হাঁটতে-হাঁটতে সাদা অথবা বাদামি কাশফুল দেখতেছি। ভ্রান্তি ছাড়া কিছু নাই। সাদা কাশবন নাই। আছে নিরোর পোড়া বাঁশি, আর ঠাকুরের একফালি শরৎ অঞ্জলি। . . .